নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাপ্নিক এই আমি

আমি কাল্পনিক সজল

আমি মানুষ হিসেবে খুবই সরল কারণ আমার মনে অত্যাধিক প্যাঁচ।

আমি কাল্পনিক সজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ফ্যান ফিকশনঃ হিমু,মিসির আলী ও অন্যান্য...(অষ্টম ও নবম অংশ)

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

আগের অংশ



১০.

খুব ক্ষুধা পেয়েছে। এই ক্ষুধাকে বলে ঘুম ক্ষুধা। ঘুম থেকে উঠেই এই ক্ষুধা লাগে। যদি এই ক্ষুধা জয় করা যায় তাহলে সারাদিন আর ক্ষুধা লাগে না। কিন্তু এই ক্ষুধা জয় করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তাই রিকশা থামিয়ে একটা টং এর দোকানের বেঞ্চে বসলাম। শুভ্রও পাশে এসে বসে রুবিক্স কিউব মিলাচ্ছে। অন্য কোন দিকে মন নেই। শুভ্র এত সরল কেন?



সকাল সকাল মন ভালো করতে খবরের কাগজের বিকল্প নেই। যেন তেন দৈনিক খবরের কাগজ হলে চলবে না, স্থানীয় দৈনিক খবরের কাগজ হতে হবে। এদের লোকবল থাকে কম, তাই সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেও কম। তাই পৃষ্ঠা ভরাতে এদের ভুয়া খবরের বিকল্প নেই। আর ভুয়া খবরগুলো কার্টুনিস্ট শাহরিয়ারের বেসিক আলীর চেয়ে কম হাস্যরসাত্মক নয়।



টং এর দোকানে সাধারণত দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় না। তবে এটায় একটা পেলাম। তবে পুরনো। ভিতরের পাতায় একটা খবর এরকম,



"গোপন খবরের ভিত্তিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী পাগলা হালিমকে র‍্যাব গ্রেফতার করে। পরে পাগলা হালিমের দেওয়া তথ্যমতে তার গোপন সুপ্ত গুপ্ত কালা অস্ত্রের ধলা মাইজদারী ভান্ডার খুঁজতে রওনা হয়। পথে পাগলা হালিমের কিছু পাগলা সাঙ্গ পাঙ্গ তাকে মুক্ত করার জন্য পাগলা হামলা চালায়। এই সুযোগে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে পাগলা হালিম গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালাতে ধরে। এই সময় র‍্যাবের নিখুঁত নিশানায় ডাবল ক্রসের ট্রিপল ফায়ারে তার ভবলীলা পুং পাং ভাবে সাঙ্গ হয়, (আহারে!)। তার বুকপকেট থেকে দুই প্যাকেট আনসারের ক্যান্সার বিড়ি আর এক ডজন নাইন এম এম রকেট লাঞ্চার পাওয়া গিয়েছে।"



আহ! কি সুন্দর সংবাদ। সাংবাদিক অনুপ্রাস,কল্পনা, বাস্তবতায় সংবাদ একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া করে দিয়েছে। আবার "আহারে" লিখে নিজের অনুভূতিও ব্যক্ত করেছে।



আচ্ছা, বুকপকেটে এতকিছু লুকায়ে রাখলো কিভাবে?



যাই হোক, আবার রিকশায় উঠলাম। আজকের দিনটা অনেক সুন্দর। অনেক ভালো লাগছে।



'শুভ্র।'



'জ্বি।'



'একজন মৃত মানুষের কাছে কিভাবে উপহার পাঠানো যাবে, বলতো?'



'ফিডেক্স ব্যবহার করতে পারেন। অনেক সার্ভিস অনেক ভালো।'



ইয়া খোদা! এই মানুষটাকে সরল বানিয়েছ ঠিক আছে, তাই বলে এত বোকা কেন বানিয়েছ?



'বাদ দাও। কৈ মাছ সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে বল। মিসির আলিকে জানাব। খুশি হবেন।'



'অনেক কিছু জানি। বলি?'



'বল'



'কৈ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Anabas testudineus। মাছটিকে ইংরেজিতে Climbing perch বলে। এটি Anabantidae পরিবারের অন্তর্গত। এটি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের স্থানীয় মাছ।



জগৎ: Animalia ,

পর্ব: Chordata,

শ্রেণী: Actinopterygii,

বর্গ: Perciformes,

উপ-বর্গ: Anabantoidei,

পরিবার: Anabantidae,

গণ: Anabas..."



'আস্তে বাপ, আস্তে। এগুলো না। কোন ফ্যাক্ট জানা থাকলে বল।'



'তা জানি না।'



বাঁচা গেল। মিসির আলির বাসা এসে গিয়েছি। রিকশা থেকে নেমেই চৌকাঠে পা রাখতে দেখা পেলাম রূপার। বেশ গম্ভীর ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে আছে। মিসির আলি বিছানায় বসে। তার পাশে বাকের ভাই।



মিসির আলি বললেন, 'এরকম সময়ে হিমুগিরি না করলেও হত। মুনার মোবাইল ট্রেস করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মোবাইল বন্ধ। সর্বশেষ যেখান থেকে তার মোবাইলের সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল সেটা হলো তার বাসা। তারমানে...'



মিসির আলি কথা শেষ করার আগেই বাকের ভাই হু হু করে কেঁদে উঠে বললেন, তাকে বাসার সামনে থেকেই গুম করা হয়েছে। সি ইজ গুম ইনফ্রন্ট ফর্ম হার হাউজ। প্লিজ ফাইন্ড হার।'



আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। পরিস্থিতি অনেক ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। কেউ একজন আড়ালে থেকে জল ঘোলা করছে। সে কে?



মিসির আলি বসা থেকে উঠে বললেন, 'আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। বিকালের আগেই ফিরব। কেউ চলে যেও না। ফিরে এসে দেখি ঘটনার কোন কূল কিনারা করতে পারি কিনা।'



মিসির আলি চলে গেলেন। আমরা অপেক্ষায় রইলাম। মিসির আলিকে তো বলাই হলো না, আমি বাদলের সবিতাকে দেখেছি। সে আমাকে কিছু দেখাতে চাচ্ছিল। জনসমুদ্রে সে কিছুর দিকে ইশারা করছিল। অবশ্যই সে কিছু দেখাতে চাচ্ছিল। কিন্তু কি দেখাতে চাচ্ছিল?



যদি এই বাক্সের সাথে মুনা আপুর হারিয়ে যাওয়ার যোগসূত্র থাকে, তাহলে মৃত সবিতার ইশারা নিশ্চয়ই মুনা সম্পর্কিত হবে। নাহ, আমাকেও বেড়িয়ে পড়তে হবে। সবিতাকে খুঁজতে হবে। জীবিত মানুষকে খুঁজে বের করা সম্ভব, কিন্তু মৃত মানুষকে কিভাবে সম্ভব?



সবকিছু কেমন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। আর ভাবাভাবিতে কাজ নেই। সময় যতই গড়াবে ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে।



আমিও বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু যাব কোথায়? হাতে একদম সময় নেই। একদম নেই।



১১.

আমার হাতে একটা বই। বইটার নাম "How to think like sherlock holmes" লেখক Daniel smith. বইটার নাম হওয়া উচিৎ ছিল "How to think like Sir Arthur Conan Doyle". কারণ, শার্লক হোমস তো আর্থার ডয়েলের লেখা একটা চরিত্র মাত্র।



বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ গিরীন্দ্রশেখর বসু বলেছিলেন, "লেখকরা যত চরিত্রই সৃষ্টি করুক না কেন-তা তাঁর নিজেরই চরিত্রের বা মনের এক একটা দিক। নিজেদের মানসিক গঠনের বাইরে কিছু কল্পনা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব না। Authors always re-create themeselves."



এর মানে হলো, শার্লক হোমস আসলে ডয়েলের মানসিকতারই একটা বহিঃপ্রকাশ। তবে একটা ঘটনা না বললেই নয়,



এক দ্বাদশবর্ষীয় বালক অসাধারণ অভিনয় করল। অভিনয় দেখে আর্থার কোনান ডয়েল মুগ্ধ।



ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, তুমি লেগে থাকো। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।



বালকটি বলল, স্যার, আমি খুব গরিব। আপনার এক বছরের উপার্জন যদি এখন আমায় দেন, তাহলে আমার আগামী পাঁচ বছরের উপার্জন আপনাকে দিতে রাজি আছি।



কোনান ডয়েল মুখে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ছেলেটি পরে আমেরিকায় গেল। এক বছর পর তার উপার্জন কোনান ডয়েলের উপার্জনকে ছাড়িয়ে গেল। ছেলেটি চার্লি চ্যাপলিন।



বইটা পেলাম মেসে এসে। রুমে ঢুকতেই ম্যানেজার জয়নাল এসে বলল, হিমু ভাই আপনার কাছে একটা পার্সেল এসেছে।



আমি তো অবাক। আমাকে আবার কে পার্সেল করবে? তাই আমি বললাম, ঠিক বলছেন তো? আমার নামেই কি এসেছে?



'জ্বি, হিমু ভাই। তবে আমি একটা অপরাধ করে ফেলেছি।'



'আপনি খুলে দেখেছেন,তাই না?'



'জ্বী, হিমু ভাই। এখন দিনকাল ভালো না। কেউ যদি আপনাকে মারতে টাইম বোমা পাঠায়? তাই আমি আগে খুলে নিশ্চিন্ত হয়েছি।'



'তাহলে আমি এখন নিশ্চিন্ত মনে খুলতে পারব তো?'



'অবশ্যই পারবেন। একখানা ইংরেজি কিতাব আছে। কোন বোমা নাই।'



আমি প্যাকেট খুলতে ধরতেই জয়নাল বলে উঠল, 'আমি আগে যাই। তারপর খোলেন। ব্যক্তিগত জিনিস অন্য কারো সামনে খোলা উচিৎ না।'



'আচ্ছা, তাহলে আপনি যান। আমি দরজা জানালা সব বন্ধ করে কাথার তলে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে পড়ব।'



'খুব ভালো বুদ্ধি। দুপুরে খেয়ে যাবেন কিন্তু। ইম্প্রুভ ডায়েট। প্লেইন পোলাও, মুরগির রোস্ট, সালাদ আর ফিরনি।'



'আচ্ছা, দেখি। এখন আপনি যান।'



জয়নাল চলে গেলে পার্সেলটার ঠিকানা দেখলাম। প্রেরকের ঠিকানায় শুধু নাম লেখা, অবাঞ্চিতা অতিথি। এই নামের কাউকে চিনি বলে তো মনে হয় না। নীল কাগজে মোড়া। ভিতরে যত্ন করে বেগুনী কাগজে প্যাকেট করা। প্যাকেট খুলতেই বইটা পেলাম, "How to think like sherlock holmes"



কভার উল্টাতেই গোটা গোটা অক্ষরে সুন্দর করে লেখা, "আমি কে তা কিন্তু আপনি জানেন। তাই "আমি কে" তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। আপনাকে একটা ধাঁধা দিচ্ছি। যদি এটা সমাধান করতে পারেন তাহলে আপনি যাকে খুঁজছেন তাকে পেয়ে যাবেন। তবে আগে আপনাকে ধাঁধাটা খুঁজে বের করতে হবে।'



আমি পুরো বই উল্টালাম। কোন ধাঁধা পেলাম না। একেবারে শেষের পাতায় লেখা,'আপনি সবসময় এন্টিলজিক নিয়ে কাজ করেন। তাই আপনাকে এই লজিক্যাল বইটা দিলাম। এখান থেকে লজিক ধার করে আপনাকে ধাঁধাটার সমাধান করতে হবে।'



এখন কথা হচ্ছে, এই মানুষটাকে আমি চিনি না, কিন্তু সে বলছে আমি তাকে চিনি। কে হতে পারে এই মানবী? আবার মুনা আপুর খোঁজ পাওয়ারও একটা ইঙ্গিত আছে।



সবিতা আমাকে দেখা দিয়েছিল ময়ূরাক্ষীর তীরে আর জনসমুদ্রে। কল্পনায় আর বাস্তবে। কিন্তু মানুষটা ছিল অবাস্তব। বাস্তব-অবাস্তব-কল্পনা। এখন ধাঁধাটা কি সেটা খুঁজে বের করতে হবে।



ধাঁধাটা কি? ধাঁধাটাই কি ধাঁধা হয়ে আছে। চোখ ধাঁধানো ধাঁধা নাকি... খুঁজে পেতেই হবে। যে করেই হোক খুঁজে পেতেই হবে। সবাই অপেক্ষা করছে এর সমাধানের জন্য।



আমার ইনট্যুশন ক্ষমতা যা বলছে তা হল, এই অবাঞ্চিতা অতিথি হলো সবিতা। সে মারা যাওয়ার আগে কোন একটা খেলা চালু করে দিয়ে গিয়েছে। এখন কথা হচ্ছে আমরা সেই খেলার খেলোয়াড় নাকি দর্শক?



(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৪

আশি৩৪৫ বলেছেন: eagerly waiting for next part.

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৭

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: পরের অংশ

আগামীকাল আরেকটা পার্টটা দিব। :)

পড়ার নিমন্ত্রণ রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.