![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের অংশ
১৩.
অবাঞ্চিতা অতিথি মানে সবিতাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে আবার মিসির আলির বাসায় চলে এলাম। আমি "How to think like sherlock holmes" বইটা হাতে নিলাম। শুভ্র ঘুমাচ্ছে, তার পাশে মিসির আলি দেয়ালে হেলান দিয়ে পেন্সিল আর খাতা নিয়ে তখনো কোড ডিক্রিপ্ট করার চেষ্টায় আছেন।
অবাঞ্চিতা অতিথি মানে সবিতা আমাকে লজিক্যাল হতে বলেছে। একটু লজিক্যাল হওয়া যাক। ব্রেইল অক্ষরগুলো দেখছি, যেহেতু আমি ওটা জানি না, তাই অন্য কিছু দেখা দরকার যা আমি জানি।
একেক পাতায় একেক অক্ষর। তবে ধারাবাহিকভাবে লেখে নাই। কখনো বাম পৃষ্ঠায় কখনো ডান পৃষ্ঠায়। মিসির আলিকে জানাতেই, মিসির আলি খাতা থেকে বিরক্তের সাথে মুখ তুলে বললেন,'বইটা দাও।'
মিসির আলি বইটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখলেন। কিছু হিসাব নিকাশ করলেন। তারপর বললেন, 'আমার মনে হচ্ছে এখানে একটা না দুইটা শব্দ আছে। বিজোড় পৃষ্ঠায় যেসব নাম্বার তাদের নিয়ে একটা নাম্বার, জোড় পৃষ্ঠার শব্দগুলো নিয়ে আরেক শব্দ।'
'তাহলে একটু দেখেন তো, কি কি শব্দ পাওয়া যায়।'
'হুম দেখি। তাহলে আমরা পাচ্ছি 'COXDE' আর 'GAGSI'. এগুলোও তো এলোমেলো। তবে আমি বোধহয় শব্দ দুটো বুঝতে পারছি।'
আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, 'ইউরেকা, ইউরেকা।'
আমার চিৎকার শুনে শুভ্র ধড়পড় করে উঠে চশমা চোখে দিতে দিতে বলল, 'কি হয়েছে? কি হয়েছে?'
আমি দন্ত বিকশিত করে বললাম,'ইউরেকা'। মিসির আলি শব্দ ডিক্রিপ্ট করতে পেরেছেন।'
শুভ্র চশমা খুলে বাম হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলল, 'ইউরেকা' মানে তো 'আমি পেয়েছি'।
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, তাহলে 'মিসির আলি ইউরেকা'
'তাও তো হয় না।'
'না হলে নাই। এখন মিসির আলির কাছে শুনি উনি কি পেয়েছেন।'
আমরা দুজনই মিসির আলি দিকে দৃষ্টি ফেরালাম। মিসির আলি পেন্সিল দিয়ে খাতায় কিছু লিখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,' শব্দ দুটো হয়তো 'Codex Gigas' কোডেক্স গিগাস/জিগাস।
শুভ্র আর আমি দুজনই একসাথে বললাম, 'কোডেক্স গিগাস? এটা আবার কি?'
মিসির আলি সিগারেটের মতো করে দুই আঙ্গুলে পেন্সিল ধরে উপরে-নিচে নাচাতে নাচাতে বলতে লাগলেন, লাতিন ভাষায় কোডেক্স গিগাস, ইংরেজিতে 'বৃহৎ পুস্তক' আর বাংলায় যাকে বলা যায় শয়তানের বাইবেল।
শুভ্র বলল, 'শয়তানের বাইবেল!'
'হুম। শয়তানের বাইবেল। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে লেখা সব থেকে বড় রহস্যময় বই এই কোডেক্স গিগাস। কোডেক্স জিগাস একটি কাঠের তৈরি কভার দিয়ে ঢাকা, যাতে চামড়া আর কিছু ধাতু দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে।
এটি ৯২ সেন্টিমিটার (৩৬.২ ইঞ্চি) লম্বা, ৫০ সেন্টিমিটার (১৯.৭ ইঞ্চি) চওড়া এবং ২২ সেন্টিমিটার (৮.৬ ইঞ্চি) পুরু, যে কারণে এটি মধ্যযুগীয় বৃহত্তম পাণ্ডুলিপি হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এটি ওজনে ৭৫ কেজি (১৬৫ পাউন্ড), এতে ৩১০টি চামড়ার কাগজ যা তৈরি করতে ১৬০টি গাধা বা খচ্চরের চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে।
কমপক্ষে ২ জন মানুষ লাগে এই বইকে স্থানান্তারিত করতে।
শুরুতে এতে ৩২০টি পাতা (৬২০ পৃষ্ঠা) ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে এর থেকে ৮টি পাতা গায়েব হয়ে গিয়েছে। কিসের উদ্দেশ্যে বা কারা এই পাতাগুলো গায়েব করেছে তা অজানা। ধারণা করা হয় সে পাতাগুলোতে বেনেডিক্ট সন্ন্যাসীদের নিয়ম ছিল।'
আমি বললাম,'ও, আচ্ছা। ভালোই তো।'
মিসির আলি আবার বলা শুরু করলেন,' এই বইটা নিয়ে এক মিথ আছে। মিথটা হলো,
ধারণা করা হয় হারম্যান রিকুলাস (Herman the Recluse) নামক চেকোশ্লাভাকিয়ার এক মোনাকো এই কোডেক্স গিগাস লিখছে। এই মোনাকো এক দূর্বল মুহুর্তে মঠের নিয়ম ভঙ্গ করে বসে। এবং সাথে সাথে ধরা পরে। এরপর তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।
শাস্তি হল একটা খুপরির মাঝে তাকে আজীবন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে।
এই কঠোর শাস্তি থেকে নিবৃত্তি পাওয়ার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি করেন যে তিনি এক রাতের মাঝে এমন একটি বই তৈরি করবেন যা তার মঠের নাম চিরকালের জন্য খ্যাতি লাভ করাবে এবং যেখানে মানুষের সমস্ত জ্ঞান থাকবে।
মঠাধক্ষ্য হারম্যান এর আর্জি মেনে নেন। হারম্যান-কে প্রয়োজনীয় লেখার উপকরণ মানে খচ্চরের চামড়া আর কালি দেওয়া হয়। হারম্যান খচ্চরের চামড়া আর কালি নিয়ে লিখতে বসে। মাঝ রাত আবধি এসে দেখতে সে পায় মাত্র অর্ধেক পাতা লিখতে পেরেছে। হতাশায় হারম্যান মাঝ রাতে নিজের রক্ত দিয়ে তাতে সে শয়তানের সাহায্য কামনা করে একটা চিঠি লেখে। সে লেখে, শয়তান যদি তাকে এই বই লিখে দেয় তবে তার আত্মা সে শয়তানকে দিয়ে দেবে।
সাড়া দেয় শয়তান।
শয়তান স্বশরীরে দেখা দেয়। শুরু হয় কোডেক্স গিগাস লেখা। মাঝ রাত থেকে লেখা শুরু করে ভোর হবার আগেই লেখা শেষ হয়ে যায়। নিজের প্রমাণ দেবার জন্য নিজ হাতে শয়তান তার ছবি একে রেখে যায় কোডেক্স গিগাসে। যা ৫০সেমি লম্বা।
আমি তালি দিতে দিতে বললাম, 'জটিলস। শয়তানকে দেখতে ইচ্ছা করছে।'
মিসির আলি গম্ভীর গলায় বললেন, 'আরো কাহিনী আছে।'
আমরা দুজনই উৎসাহের সাথে বললাম, 'শুরু করেন, শুরু করেন।'
মিসির আলি শুরু করলেন।
১৪.
'শয়তানের বাইবেলে যেমন ঈশ্বরের বিপক্ষে লেখা আছে, তেমনি মৃগী রোগ,কালাজ্বর ইত্যাদি কিভাবে ভালো হবে সে ব্যাপারেও লেখা আছে। আবার কিভাবে চোর ধরা যাবে, কিভাবে ডাইনি চেনা যাবে সেসবও লেখা আছে।
এই বইটা নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে,হচ্ছে। তবে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে এই কোডেক্স গিগাস একজন মানুষের হাতে লেখা। যা আধুনিক হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করেছে।
তবে এর লেখার ব্যাপ্তিকাল নিয়ে মতভেদ আছে, কেউ কেউ বলেন এটা লিখতে ৫ বছর লাগছে আবার ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এক প্রতিবেদনে বলেছে ২৫ বছরের মতো লেগেছে।
তবে কথা হচ্ছে, সময় যতই লাগুক না কেন, এটা যে একজনের হাতে লিখিত এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। সেই একজন কি হারম্যান না কি শয়তান নিজে সেটা এখনো কেউ জানে না।
হিসাব অনুযায়ী এই বই ১২২৯ সালের শেষের কোন এক রাতে এটা লেখা শেষ হয়।
কোডেক্স গিগাস যে মঠে লিখিত হয়েছিল সে মঠ ১৫ শতকে “হুসাইত বিদ্রোহ”র যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়। এর পর এই বই ১৪৭৭-১৫৯৩ পর্যন্ত ব্রেভনভ মনাষ্টরিতে (Břevnov Monastery) ছিল। এরপর ১৬৯৪ সালে প্যারাগুয়ের রাজা রুডলফ দ্বিতীয় এই বইটার সংগ্রহশালায় নিয়ে যান।
প্যারাগুয়ের সাথে ত্রিশ বছরের যুদ্ধ শেষে বিজয়ী সুইডিশ আর্মি এই বই লুঠ করে ১৬৪৮ সাথে ষ্টকহোমে সুইডিশ রয়াল লাইব্রেরীতে নিয়ে যায়।
৭ ই মে ১৬৯৭ সালে সুইডেনের রাজার প্রাসাদে যেখানের লাইব্রেরীতে এই বই রক্ষিত ছিল সেখানে এক মারাত্মক আগুন লাগে। আগুনে বইটির পুরো পুড়ে যাবার আগেই জানালা দিয়ে এটাকে উদ্ধার কর্মীরা নীচে ফেলে দিতে সমর্থ হয়। কিন্তু ক্ষতি ততক্ষনে অনেক হয়ে গেছে।
কিছু পাতা পুড়ে গেছে। কিছু পাতা নীচে পড়ার সময় বাতাসে উড়ে যায়। এই পৃষ্টাগুলো এখনো পাওয়া যায় নাই।
৩৫৯ বছর পর এই কোডেক্স গিগাস এক বছরের চুক্তিতে প্রদর্শনীর জন্য সুইডেন থেকে আবার প্যারাগুয়ে আনা হয় ২০০৭ সালে। পরে ২০০৮ সালে আবার সুইডেন কর্তৃপক্ষ আবার তাদের বই ফিরিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত ওটা সুইডেনেই "সুইডেন রয়্যাল মিউজিয়াম"-এ রয়েছে।
এই হলো কাহিনী।'
'পুরাই ঝাক্কাস।'
শুভ্র চশমা ঠিক করতে করতে বলল, তাহলে এই বাইবেলের সাথে মুনা আপুর হারিয়ে যাওয়ার সূত্র কোথায়?'
মিসির আলি কাপড়ে চশমা মুছতে মুছতে বললেন, 'সেটাই এখন খুঁজে দেখার বিষয়।'
ঠিক এই সময় দরজায় বাকের ভাইয়ের চেঁচামেচি শুনিতে পেরে আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিলাম। বাকের ভাই একজন মধ্যবয়স্ক লোকের কলার ধরে রুমে ঢোকাতে ঢোকাতে বললেন, 'মিসির সাহেব, এই লোকটা চোরের মতো এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছিল। আই কট হিম অ্যান্ড বিট হিম কেয়ারফুলি।'
মিসির আলি বললেন,'এই লোকটারই আসার কথা বলেছিলাম। এ হলো সবিতাদের বাড়ির দারোয়ান।'
আমরা বাকি সবাই প্রায় একসাথে উত্তেজিত হয়ে বললাম, 'সবিতাদের বাড়ির দারোয়ান!'
মিসির আলি স্বাভাবিক গলায় বললেন,'হুম। এর কাছে থেকে সবিতা সম্পর্কে কিছু জানা যাবে।'
আমি বুঝলাম, লজিকওয়ালা মানুষগুলো লজিক অনুযায়ী ভাব প্রকাশ করে না। বাকের ভাইয়ের ভাষায়, ইটস সো উইয়ার্ড।
মিসির আলি দারোয়ানকে বললেন, 'আচ্ছা, সবিতার সম্পর্কে যা জানেন বলেন তো।'
দারোয়ান মুখ চোরের মতো করে ভীত কন্ঠে বলল, 'আমি তেনাদের বাড়িতে আছি প্রায় দুই যুগ ধইরা। বইলতে গেইলে সবিতা ম্যাডাম আমার চোখের সামনেই বড় হইছেন, আবার আমার চোখের সামনেই...। যাই হোক, আল্লাহ যা করেন ভ্যালার জন্যই করেন। অনেক ভ্যালা মাইয়া, কাউকে দুক্কু দিতে দেহি নাই। কেন যে আল্লাহ এমুন করল কে জানে।'
মিসির আলি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,'এসব না। কবে,কিভাবে মারা গিয়েছে সেটা বলেন।'
'মরার তো প্রায় এক মাস হইয়ে গেইলো। কি জানি অসুখ হইলো...।'
ধমকের সুরে মিসির আলি বললেন, 'ধেৎ। যা আমাকে বলেছিলেন সেটা বলেন, সবার জানা দরকার।'
দারোয়ান মাথা নিচু করে বলল,'সবিতা ম্যাডামের মাথায় হালকা সমস্যা আছিল। অসুখ হবার পর একবার গলায় দিবার ধরছিল। তারপরই তো অজ্ঞান হইয়া হাসপাতাল গেইলো, আর আইলো না।'
'গলায় কেন দড়ি দিয়েছিল?'
দারোয়ান হাতজোড় করে বলল,'অন্দরের কথা আমি অত জানি না। আমারে মাফ করেন।'
মিসির আলি অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন। আর আমি যা বুঝলাম, ঘটনা আরো জটিল হয়ে উঠছে। সবিতা খানিক হলেও সাইকো ছিল। আমরা হয়তো তার কোন এক খেলায় খেলার সামগ্রী হয়ে পড়েছি।
সবিতাকে এখন আসলেই এখন খুব দরকার। তাকে দেখেছিলাম ময়ূরাক্ষীর তীরে। আমাকে সেখানেই যেতে হবে। সে সেখান থেকে চলে যাবার আগেই যেতে হবে। জানতে হবে রহস্যের সমাধান, জানতে হবে মুনা আপুর অন্তর্ধানের রহস্য, জানতে হবে বাদলের পাঠানো বাক্সে কি আছে। অনেক কিছু জানতে হবে।
সময় যে হাতে খুব কম।
(চলবে)
কোডেক্স গিগাস/জিগাসের তথ্যসূত্রঃ
রহস্যময় বইঃ কোডেক্স গিগাস বা শয়তানের বাইবেল
Codex Gigas
কোডেক্স জিগাস
Codex Gigas Devils. Bible
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: বেশ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০০
রাবার বলেছেন: ্চলুক ।।সাথে আছি