নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অভ্র

আত্মহত্যা গাধারা করে । আমি গাধার চেয়েও নিচু প্রজাতির । তাই আত্মহত্যা করার চিন্তা বা সাহস কোনোটাই আসবে না আমার মধ্যে । যার কারণে আত্মহত্যা করা হবে না আমার.....

আমি অভ্র

আমি অভ্র । বড্ড অগোছালো একজন । বড়ই বিশৃংখল, বেসামাল । মানসিক রোগী বলেও খ্যাতি আছে । ফেসবুকে আমি : www.facebook.com/badboykishor

আমি অভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কেউ না (গল্প)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪

জীবনটা বাঁচাতে হলে এখন শুধু একটা কাজই করতে হবে মনে-প্রাণে । আর সেই কাজটা হল দৌড়ানো । তবে আমি একাই যে দৌড়াচ্ছি তা না । আমার একটু পিছনেই রয়েছে ৫০-৬০ জনের মত মানুষ । যাদের বেশিরভাগেরই বিভিন্ন কারণে মাথা গরম । আর আমার উপর সেই রাগটা ঝাড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে । তবে তাদেরকে আমার প্রতি আকৃষ্ট করার পুরো কৃতিত্বটাই আমার ।

এইতো বেশিক্ষণ হয়নি, আমি একজনের পকেট মেরেছি । ব্যাগটা দেখেও বোঝা যাচ্ছে, আজকে খুব ভালোই লাভ করেছি । কিন্তু আগে পিছনের ঝামেলাটা সরাতে হবে ।

গণপিটুনি খাওয়াটা কিন্তু অতটা খারাপ লাগে না । আগে খেয়েছিও কয়েকবার । তবে তখন লোক কম ছিল । আজকে একটু বেশিই মনে হচ্ছে । এইগুলার হাতে পড়লে ক্ষতি একটা করে দেবেই । হয়ত দেখা যাবে হাত বা পা একটা ভেঙ্গে দিয়েছে । ওইটা মোটেই হতে দেওয়া যাবে না ।

পকেট মারাটাকে কোন খারাপ কাজ বলে মনে হয় না আমার । এটাকে একটা আর্ট বলে মনে করি । মনে করব নাই বা কেন ? কত কৌশল করে কত মানুষের মধ্য থেকে একজনের পকেটের জিনিসপত্র সব হাওয়া করে দেওয়া মোটেই সহজ কাজ না ।



একেবারে শেষ লোকটাকে পিছু ছাড়িয়ে যখন একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়ে পৌঁছলাম ততক্ষণে ফুসফুসটা ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা হল । ওখানে বসে পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । অবস্থা মোটামুটি ভালো হওয়ার পর ভার্সিটির দিকে রওনা হলাম । পরীক্ষার ফি দিতে হবে । মানিব্যাগটা খুললাম । যাক, বেশ কিছু টাকা বাঁচবে । কয়েকদিন আর খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না ।

ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় দোস্তগুলার সাথে দেখা হয়ে গেল ।

- কিরে কেমন আছস ?

- মনে হইতেছে ভালোই । তোদের কি অবস্থা ?

- ঠিক আছি । ফি দিছস ?

- হুম ।

- আবার...?

আমি সম্মতিসূচক হাসি দিলাম ।

- দোস্ত তোর কষ্ট হয় না ? এইগুলা ছাইড়া দে দোস্ত । আবার টিউশনি ধর ।

ওর কথা পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললাম,

- ওই আমাদের প্রেমিক পুরুষের কি খবর রে ?

ও বুঝতে পারল যে, আমি ওর কথা শুনতে বা মানতে রাজি না ।

- জাহান্নামে যাক ওই শালা । ওর কথা বলস কেন ? ওই শালা ফ্রেন্ডশীপ বুঝে ? বুঝে এর মূল্য ? তুই মাইর খাইয়াও ওর কথা মনে রাখছস কেন ?

- ও বুঝে না, কিন্তু আমরা তো বুঝি । আর মাইর খাইছি তো কি হইছে ? ও আমাদের বন্ধু । আর আমি ওরে পছন্দ করি ।

- হুহ্, পছন্দ ? ওরে পছন্দ করার চেয়ে ভালো একটা কুত্তারে পছন্দ করা ।

আমি হাসলাম । আমি মাঝে মাঝে খুব গর্ববোধ করি কিছু অসাধারণ বন্ধু পেয়েছি বলে । আমরা এখন যার কথা বলছি, সেও খুব ভালো । কিন্তু একটা ছোট ঘটনাতে ও একটু মাথা গরম করে ফেলে । আসলে ও যেই মেয়েটাকে ভালোবাসে, ওইটার আরো একটা বয়ফ্রেন্ড আছে । ওই মেয়েটা ওকে ধোঁকা দিচ্ছিল । আমি এটা জেনে ফেলি । এরপর প্রথমে ওকে জানাই । কিন্তু ও মানেনি । এরপর আমি মেয়েটাকে বুঝাই । কিন্তু মেয়েটা যখন মানলনা তখন মেয়েটাকে একটা থাপ্পড় দিই । আর তাই ও আমাকে কিছু বড় ভাইকে দিয়ে মারে । এইটাই কাহিনী, তেমন কিছু না । তবে মাইরটা হজম করতে তেমন কষ্ট হয় নি । অভ্যাস আছে তো, তাই ।

বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম । বাসা বলতে যেখানে আমি শুধু থাকি, খাই না । আমার ফুফার বাসা । ফুফার সাফ কথা, ওনার বাসায় শুধু থাকতে পারব । খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে । আগে টিউশনি করতাম । সে সময় একবার টিউশনির বেতন পাওয়ার পর বাসায় ফিরছিলাম খুশিমনে । তখন কেউ একজন আমার পকেটটাকে খালি করে দেয়, ঠিক যেমন আমি এখন করি । ওই মাসের ১৫ দিনের উপরই আমি না খেয়ে ছিলাম । মাঝে মধ্যে যখন বন্ধুদের সাথে দেখা হত, তখন ওরা খাওয়াত । ওরা অবশ্য চাইছিল পুরো মাসটাই খাওয়াতে, কিন্তু আমি নিজেই ইচ্ছে করে ওদের সাথে দেখা করিনি । তখন না খেয়ে থাকতে থাকতে একটা সুবিধা হয়েছে, এখন আর খাবার না পেলে সমস্যা হয় না ।

ওই মাসটায় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে । কিন্তু কাউকে বলতে পারিনি । জানি, আমার বন্ধুগুলোকে বললে ওরা আমাকে খুশিমনেই হেল্প করত । কিন্তু আমার খারাপ লাগে । এইটা যদি ওরা শোনে তাহলে নিশ্চিত আমাকে খুন করে ফেলবে ।

ওইদিন আমার টাকাগুলো যে নিয়ে গিয়েছিল সে হয়ত ওগুলো দুই দিনেই শেষ করে ফেলেছে । কিন্তু আমি ওগুলো দিয়ে পুরো মাসটা চলতাম ।

আপনারা আবার মনে করবেন না যে, আমার টাকা মেরেছে বলে আমিও অন্যের টাকা মারছি । আসলে এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব সহজ মনে হয়েছে । আর আগেই বলেছি, ব্যাপারটা হল আমার কাছে একটা আর্ট । আপনারা হয়ত আমাকে খারাপ বলবেন । সমস্যা নেই, বলেন । এইটা আমার শুনতে শুনতে সয়ে গেছে ।

আপনারা হয়ত চিন্তা করছেন আমার বাবা-মা কোথায় ? আমি যখন এস.এস.সি. –র পর কলেজে ভর্তি হই তখন তাদের একজন মারা যান, আর অপরজন কিছুদিন পর নতুন বিয়ে করে এখন দেশের বাইরে থাকেন । তাদের কোনটা কে বলতে চাচ্ছিনা । আমাকে নিয়ে তাদের কোন চিন্তা কখনও ছিলও না, এখনও নেই । শুনেছি আমার দুইটা ভাইও আছে ।

আর আমি এখন ঢাকা ভার্সিটিতে ২য় বর্ষে পড়ি । সাবজেক্টটা বললাম না । এবং আমি একজন পেশাদার পকেটমার । তবে এই ব্যাপারটা আমার বন্ধুগুলা ছাড়া আর কেউ জানে না ।

আমার ফুফার বাসায় একমাত্র একজনই আমার সাথে ভালভাবে কথা বলে, হাসে । সেটা হল আমার ফুফাতো বোন । তিনি আমার দু’বছরের বড় । আমি ওনার একটা বান্ধবীকে ভালোবাসি ।

বয়সে বড় হওয়ার পরও আমি ভালোবাসি । আমার বোনটাকে বলেছি, ওনার বান্ধবীকে বলতে । আমার বোন কিছুটা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারে যে, আমি আসলেই কতটা ভালোবাসি । তাই তিনি বলতে রাজি হয়েছেন । কয়েকদিন পর বান্ধবীটা আমার সাথে দেখা করতে আসলেন ।

- শুনলাম, তুমি নাকি আমাকে ভালোবাস ?

- হুম ।

- আমি তো তোমার বড় ।

- ওইটা আমার কাছে কোন প্রবলেম না ।

- কিন্তু আমার কাছে তো প্রবলেম । আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । কিছুদিন পর বিয়ে । তারপর জামাইকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাব । তখন কি করবে তুমি ?

- কি করব জানি না । তবে আত্মহত্যা করব না । কারণ ওইটা গাধারা করে ।

- তাহলে তুমি গাধা না ?

- না, গাধার চেয়েও নিচু প্রজাতির । আর তাই আত্মহত্যা করার চিন্তা বা সাহস কোনোটাই আসবে না আমার মধ্যে ।

- হুম, এইটা অবশ্য ভালো ।

ওইদিন ওনার সাথে আর কথা হয়নি । কিছুদিন পর ওনার বিয়ের খবর শুনলাম ।

যেদিন ওনার বিয়ে হয়, ওইদিন আমি অল্প কিছুক্ষণের জন্য কেঁদেছিলাম । তবে ওইটাই অনেক কিছু । কারণ এর আগে যত প্রবলেমই হোক না কেন, আমি কখনো কাঁদিনি । আমার বাবা-মা এর একজন যখন মারা যায় আর অপরজন যখন নতুন বিয়ে করে আমাকে এখানে ফেলে দূরে চলে যায়, তখনও আমি কাঁদিনি । শুধু অবাক হয়েছিলাম একটু ।

যখন ফুফা-ফুফুর অতি মাত্রার আদর পাচ্ছিলাম, তখনও কাঁদিনি ।

আমার বন্ধু যখন আমাকে মারছিল, তখনও আমি কাঁদিনি ।

যখন দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছি, তখনও আমি কাঁদিনি ।

শুধু ওনার বিয়ের দিন কেঁদেছি । জানি না কেন ? হয়ত ভালোবাসাটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল ।

ওনার সাথে আমার সম্পর্কটা হয়েও যেতে পারত, কিন্তু ওটাতো শুধু গল্পে হয় । বাস্তবে এমনটা হয় না । বাস্তব সবসময় গল্পের এক কাঠি উপরে অবস্থান করে ।



আমি আজও নেমেছি কোনো একজনের পকেট খালি করতে । কোনো একজনকে দুঃখে ফেলতে । এবং পেয়েও গেলাম ।

তবে এবারও ব্যাড লাক । মানিব্যাগটা পকেট থেকে বের করার পরই ধরা খেয়ে গেলাম ।

এরপর আর কি ? আবার সেই একই কাজ । প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ছুটছি আমি । এই সুন্দর পৃথিবীটাতে আরো কিছুদিন বাঁচার আশায় ছুটছি । আর আমার পিছে যারা আছে, তারা সবাই আমার সেই আশাটাকে মিথ্যা করার চেষ্টায় ব্যস্ত ।



##the end##

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: ভালই লাগল।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

আমি অভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । সামুতে এইটা আমার প্রথম লেখা । ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম । @ সুস্মিতা শ্যামা

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৩

জেমস বন্ড বলেছেন: ভাল লাগল :)

প্লাস টিপি দিলাম ।

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৫

শূন্য পথিক বলেছেন: ভালো লাগা! ++

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২২

ফারজানা শিরিন বলেছেন: প্রথম লেখা মন ছুঁয়ে দিলো । শুভেচ্ছা । :)

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

আমি অভ্র বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ...

৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৭

এম ই জাভেদ বলেছেন: কাহিনী সত্য মনে হইল। জীবন্ত লেখা

৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

আমি অভ্র বলেছেন: বাস্তবে এমন কেউ আছে কিনা, তা তো জানি না । কিন্তু এইটা শুধু আমার চিন্তাধারার একটু বহিঃপ্রকাশ । ধন্যবাদ ভাইয়া । @ জাভেদ ভাই

৯| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

এখানে তমসা বলেছেন:
বাহ, ভালই তো লিখেন আপনি।

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৩০

আমি অভ্র বলেছেন: হয়ত লিখি । যদিও নিজের কাছে তেমন ভালো মনে হয় না । তারপরও অনেক ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.