![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অভ্র । বড্ড অগোছালো একজন । বড়ই বিশৃংখল, বেসামাল । মানসিক রোগী বলেও খ্যাতি আছে । ফেসবুকে আমি : www.facebook.com/badboykishor
পর্ব ১
চারতলা বিল্ডিংটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখন । এটাই আমার ঠিকানা । এই বিল্ডিঙেই থাকি আমি । ছয় মাস হল ছাদের কোণে থাকা একটা রুম ভাড়া নিয়েছি । এভাবে থাকার অনেক ইচ্ছা ছিল । সবসময় কল্পনা করতাম এভাবে থাকব । পুরা একা । কারো কথা শুনতে হবে না । যখন যা ইচ্ছা তাই করব । রাত বিরেতে বাইরে বের হব । শাসন করার মত কেউ থাকবে না । নিজেকে রাজা রাজা মনে হবে ।
তবে এখনও রাত বিরেতে বের হতে প্রবলেম হয় । কারণ এই বিল্ডিঙে রাত বারটা বাজার সাথে সাথে মূল গেট বন্ধ করে দেয় । চোর ডাকাতকে বেশ ভয় পান আংকেল । আংকেল মানে বাড়িওয়ালা । তিনি সারাদিন পাঞ্জাবী পড়ে থাকেন । নিচে কি পায়জামা পড়বেন নাকি লুঙ্গি পড়বেন নাকি কিছুই পড়বেন না, তা নিয়ে অতটা চিন্তিত হন না । নিচে যাই পড়েন না কেন, পাঞ্জাবী তাকে পড়তেই হবে । অতিমাত্রায় পাঞ্জাবী ভক্ত । রং বেরঙের পাঞ্জাবী পড়েন তিনি । সত্যি কথা বলতে তাকে পাঞ্জাবী পড়লে মোটেই সুন্দর দেখায় না । একটা অদ্ভুত বিশ্রী প্রাণীর মত দেখায় । কোন প্রাণী জানি না । এমন প্রাণী পৃথিবীতে আছে কিনা তাও জানি না । থাকতেও পারে । পৃথিবীতে তো পশুপাখির অভাব নাই । কয়টাকেই বা চিনি আমি ।
আংকেল আবার পান জিনিসটা একদমই দেখতে পারেন না । পানের সাথে সাথে যে পান খায় তাকেও পছন্দ করেন না । তাই তার বাসায় পান খাওয়া নিষেধ । একেবারে খুন টাইপের অপরাধ । যার কারণে আন্টি চাইলেও পান খেতে পারেন না । কিন্তু তাই বলে তো পান খাওয়া ছেড়ে দেয়া যায় না । বিয়ের আগে থেকে পান খেয়ে আসছেন তিনি । এখন তো স্বামীর জন্য খেতে পারেন না । তাই প্রায় সময় তাদের ছোট ছেলেটাকে দিয়ে সামনের টং দোকান থেকে পান কিনে এনে খান । তাও ঘরে না । বিল্ডিঙের নিচে গেটের ভিতরে একটা ছোট খালি জায়গা আছে । ওই জায়গায় দাঁড়ালে বিল্ডিং থেকে কেউ দেখতে পায় না । সেখানে দাঁড়িয়ে খেয়ে তারপর ঘরে যান । ব্যাপারটা এমন যে মায়ের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে ছেলে বাইরে থেকে সিগারেট খেয়ে বাসায় যায় । ঘরের ভিতর খায় না ।।
অনেক কষ্ট হয়েছে আসতে । একে তো মাথাটা হালকা ঘুরছে । তার উপর পুরো পথটা হেঁটে আসতে হয়েছে । পকেটে একটা টাকাও নেই । হেঁটে আসার সময় বাম পায়ের স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেছে । ওটা নিয়ে হাঁটতে আরেক কষ্ট । কষ্ট হলেও ওগুলো পায়ে দিয়েই এসেছি । আমার খালি পায়ে হাঁটতে ভালো লাগে না । আমি তো হিমু না । আমি রোদ । নামটা রোদ হওয়ার কারণেই হয়ত রোদ জিনিসটা তেমন গায়ে লাগে না আমার । রোদটাকে নিজের মনে হয় । আসলে নিজের করে নিয়েছি ওটাকে ।।
সিঁড়ি দিয়ে উঠা শুরু করলাম । বাড়িওয়ালা আংকেলরা থাকেন দুই তলায় । প্রায় প্রতিদিনই সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় আংকেলের সাথে আমার দেখা হয় । আমি দুই তলায় উঠলেই তিনি দরজা খুলেন । ব্যাপারটা একেবারে নিয়মিত ঘটে । ওনার সাথে দেখা হয়নি এমন কোন দিন আছে কিনা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না । আমার মনে হয় তিনি আমার জন্য দরজার পাশে ওঁত পেতে থাকেন, কখন আমি আসব আর তখন তিনি দরজা খুলবেন । কিন্তু তিনি এমন করবেন কেন ? আমার সাথে দেখা না হলে কিইবা হবে ? তবে কখনো নামার সময় দেখা হয় না । শুধু উঠার সময় হয় । আজকেও এর ব্যতিক্রম হল না ।
আমি দুই তলায় উঠার সাথে সাথেই তিনি দরজা খুলে তাকালেন আমার দিকে । একটা লাল রঙের পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি তার পরনে । পাঞ্জাবীর বুকে আর হাতে হালকা কারুকাজ আছে । পাঞ্জাবীটা সুন্দর হত, যদি তিনি না পড়তেন ।
আমি একটা হাসি দিলাম ওনার দিকে তাকিয়ে । উনি হাসলেন না । উনার হাসিটা সুন্দর । এমনিতে উনাকে যত খারাপই দেখাক না কেন, হাসলে মুখটা সুন্দর লাগে । তবে শর্ত আছে । মুখ থেকে নিচের দিকে তাকানো যাবে না ।
-আস্লামুআলাইকুম আংকেল ।
-ওটা আস্লামুআলাইকুম না , আসসালামুআলাইকুম ।
-জ্বী আংকেল ।
-শুদ্ধ করে বল আবার ।
-আসসালামুআলাইকুম আংকেল ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
-ভালো আছেন আংকেল ?
-বারবার আংকেল আংকেল করবে না ।
-জ্বী আংকেল ।
আর কিছু বললেন না আংকেল । আমার মুখের দিকে আরেকবার তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন ।
এটাও সবসময় করেন । যেভাবে হঠাত্ করে দরজা খোলেন, সেভাবেই বন্ধ করে দেন ।।
আমি সিঁড়ি দিয়ে আবার উঠা শুরু করলাম । সিঁড়ির ধাপগুলো বেশ উঁচু উঁচু । একসাথে দুই ধাপ পার হওয়াটা মোটামুটি সহজ । কিন্তু এর চেয়ে বেশি মোটেই সম্ভব না । আমার অত তাড়া নাই । আস্তে আস্তে একটা একটা ধাপ পার হচ্ছি ।।
চারতলা পর্যন্ত উঠে থামলাম । এই বিল্ডিঙের প্রতি তলায় দুইটা করে বাসা । একটা সিঁড়ির ডানে, আরেকটা বামে । মনে মনে ডানপাশের বাসাটাকে এক ধরলাম । তারপর বামপাশেরটাকে দুই । আবার ডানেরটা তিন, বামেরটা চার । এভাবে তের পর্যন্ত গুণলাম । তের সংখ্যাটা আমার অনেক পছন্দের । যদিও এই তের কে আনলাকি বলা হয় । কিন্তু তের আমার জন্য লাকি ।।
বাম পাশের বাসাটার কলিং বেল দিতে গিয়েও দিলাম না । দরজায় টোকা দিলাম ।
গণনায় ডানপাশেরটা হয়েছিল তের নাম্বার । সে হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী ডানের বাসায টোকা দেওয়ার কথা । কিন্তু আমি সবসময় উল্টোটা সিলেক্ট করি । মানে যেটা টসে জিতবে না, সেটাই বিজয়ী ধরি ।
দরজা খুলছে না কেউ । আবার টোকা দিলাম । দাঁড়িয়েই আছি । কেউ দরজা খুলছে না । এবার ধাক্কা দিলাম । একটু জোরেই দিলাম । তারপরও কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় যখন আবার ধাক্কাতে যাব, তখনই ভিতর থেকে আওয়াজ এল
-আসছি
আমি একটু পিছে সরে এলাম । ভিতরে হাঁটাচলার শব্দ পাচ্ছি । আসছি বলার পরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে কিছুক্ষণ । কেউ একজন দরজার ওপাশে এসে দাঁড়াল । ছায়া দেখা যাচ্ছে । বুঝতে পারলাম, দরজার ফাঁকে চোখ রেখে দেখা হচ্ছে আমাকে । তারও একটু পর দরজা খোলার শব্দ হল । শেষ পর্যন্ত দরজা খোলা হল ।
মধ্যবয়স্কা একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন এক হাতে দরজা ধরে । ওনাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে । হালকা ভয়ও পাচ্ছেন মনে হয় ।
-আন্টি বাসায় তো কেউ নেই তাই না ?
আন্টি কারেন্টের শক খেলেন মনে হল । বাসায় যে কেউ নেই এইটা আমি জানব তিনি ভাবেননি । আমি জানতামও না । আন্দাজে ঢিল মেরেছিলাম । আন্টিকে দেখে মনে হচ্ছে লেগে গেছে জায়গামতই ।
তার চেয়ারায় ভয়ের ছাপটা আরো স্পষ্ট হল । তিনি আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছেন । যে কোন সময় দরজা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত তিনি । সিঁড়ির দিকেও একবার তাকালেন আর কেউ আছে কিনা দেখার জন্য । এভাবেই তো ডাকাতি করা হয় । আমাকে তেমনি একটা প্ল্যানের অংশ মনে করছেন হয়ত তিনি ।
-তোমার জানার কি দরকার ?
তার কথার জবাব দিলাম না । যার কারণে ওনার সন্দেহ আরো বাড়ল ।
-আন্টি এক গ্লাস পানি খাওয়াবেন ? পুরো পথটা রোদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে এসেছি ।
আন্টি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কি করবেন ? আমি মুখে একটা একটা সরল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । হঠাত্ একবার সিঁড়ির দিকে তাকালাম । সাথে সাথে আন্টিও তাকালেন । কিছুই নেই । আমি হাসিমুখে দাঁড়িয়েই থাকলাম । শুনতে আজব হলেও সত্যি যে আমাকে আন্টি কখনো আগে দেখেন নি । যদিও আমি এই বিল্ডিঙে ছয় মাস হল এসেছি ।
-এখানেই দাঁড়াও । আনছি...
আন্টি দরজা বন্ধ করে গেলেন । একটু পর পানি নিয়ে এসে দরজা খুললেন । তবে এবারও দরজা খোলার আগে ফাঁক দিয়ে দেখে নিলেন । হয়ত দেখছিলেন আমি আমার দলবল নিয়ে এসেছি কিনা ।
পানি খেয়ে গ্লাসটা আবার ফিরিয়ে দিলাম । আন্টি সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন । আমি থামালাম
-আন্টি আমি উপরে থাকি ।
-উপরে মানে ? কোন উপরে ?
-মানে ছাদে একটা রুম আছে না । ওইটাতে..
-ও
আর কিছু বলার আগেই বন্ধ হয়ে গেল দরজা । আমি মনে মনে হাসলাম একটু । আন্টি ভয় পাচ্ছেন এখনো । আমিও চলে এলাম ছাদে । ছাদে উঠার সাথে সাথেই মনটা জুড়িয়ে গেল । অসাধারণ বাতাস হচ্ছে । এই ছাদে সবসময় বাতাস থাকে । প্রতিটা ঘন্টায়, প্রতিটা মিনিটে, প্রতিটা সেকেন্ডে । বৃষ্টি হোক বা প্রচন্ড রোদ, বাতাস থাকবেই । তাই আমিও প্রায় সময় ছাদে বসে থাকি, হাঁটি, গান গাই ।
কিন্তু এখন আমার কোনটাই করতে মন চাইতেছে না । ঘুম পাচ্ছে অনেক । ঘুমাতে হবে । গতকাল রাতেও ঘুমাইনি । ইচ্ছা করেই ঘুমাইনি । এখন আমি নিজের ইচ্ছায় রাত জাগি । রাত জাগতে ভালো লাগে । চিন্তাগুলো সব মাথায় ঘুরে । একটা একটা করে চিন্তাগুলো নিয়ে আবার চিন্তা করি, ভাবি । কিছু কিছু চিন্তার সমাধান পাই । বেশিরভাগই আগের মত রয়ে যায় ।।
রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম । বেশি কিছু নেই ছোট্ট রুমটাতে । একটা সিঙ্গেল বেড । একটা চেয়ার আর একটা টেবিল । রুমের আরেক কোণে একটা মাঝারী আকারের ট্রাংক আছে । এসব ছাড়া বলার মত আছে কয়েকটা কাপড় ঝোলানোর হুক । দেয়ালে আটকানো ওগুলো ।
কোনমতে দরজাটা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । চোখ দুটো খুলে রাখতে একটুও ইচ্ছা করছে না । কয়েক মিনিটও লাগলো না আমার ঘুমিয়ে পড়তে ।।
(চলবে)
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০০
আমি অভ্র বলেছেন:
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
আরজু পনি বলেছেন:
বাহ্ পড়ে তো বেশ লাগলো ....
এতো কম বয়সে ধারাবাহিক উপন্যাস লেখায় মনোযোগ দিয়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো ।
আর আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড যেন সবারই বেস্ট ফ্রেন্ড হয় ।
চালিয়ে যান...অনেক শুভকামনা রইল ।
পরের পর্ব গুলি চোখে পড়লে মিস করবো না ইনশাহআল্লাহ ।।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩
আমি অভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া । দোয়া করবেন যাতে ঠিকঠাক মত শেষ করতে পারি
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চলুক।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:৪২
গ্রীনলাভার বলেছেন: ++++++
পরের পর্বের অপেক্ষা করছি।