নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অভ্র

আত্মহত্যা গাধারা করে । আমি গাধার চেয়েও নিচু প্রজাতির । তাই আত্মহত্যা করার চিন্তা বা সাহস কোনোটাই আসবে না আমার মধ্যে । যার কারণে আত্মহত্যা করা হবে না আমার.....

আমি অভ্র

আমি অভ্র । বড্ড অগোছালো একজন । বড়ই বিশৃংখল, বেসামাল । মানসিক রোগী বলেও খ্যাতি আছে । ফেসবুকে আমি : www.facebook.com/badboykishor

আমি অভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক উপন্যাস - অচেনা কেউ - পর্ব ৩

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৪৫

পর্ব ১

পর্ব ২





রাস্তায় হাঁটছি । সময় বিকেল চারটা । আজকে একটু অন্যরকম লাগতেছে সবকিছু । কিছু একটা আগের মত নাই । বোঝা যাচ্ছে না কি । তবে এটা বুঝতে পারছি, রাস্তায় আজকে কোন মানুষ নেই । একজনও না । বড়ই অস্বাভাবিক ব্যাপার । এরকম একটা ব্যস্ত রাস্তায় এইসময় একজন মানুষ নাই আমি ছাড়া । এটা কিভাবে সম্ভব ? এখন যদি গভীর রাত হত, তাহলেও মানা যেত । কিন্তু এখন ? এক কথায়, যে কোন কিছু একটা ঘটার সম্ভাবনা হান্ড্রেড পার্সেন্ট । সেটা ভালোও হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে ।।

সামনে একটা তিন রাস্তার মোড় । ওই মোড়ের ডানপাশের রাস্তাটায় থাকা একটা টং দোকান আমার গন্তব্য । দোকানটা সবসময় খোলা থাকে । দোকানের মালিক একটা বুড়ো লোক । বয়স কম হয়নি তার । টং দোকানেই থাকেন তিনি । যার কারণে সবসময় টং দোকানটা খোলা থাকে । কখনো কোথাও যান না তিনি । আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি তাঁকে কোথাও যেতে । হয়ত গিয়েছিলেন । আমি এখানে আসার আগে ।।

বুড়োটা খুবই রগচটা । খিটখিটে মেজাজের । হুলুস্থুল ঝগড়া করতে পারে এই বয়সেও । যাকে পছন্দ করে না তাকে একটু অতিরিক্তই অপছন্দ করে । আর যাকে পছন্দ করে তার জন্য সব করতে রাজি । সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য জানি না, আমাকে বুড়োটা পছন্দ করে না ।।

আমি শিওর, রাস্তায় আর কিছু না থাকলেও সেই টং দোকান আর সেই বৃদ্ধ থাকবে ।

মোড় ঘুরতেই খুশি হয়ে গেলাম । আছে দোকানটা । বুড়োটাকে দেখতে পাচ্ছি না । কারণ টং দোকানটা ঘিরে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । কি যেন দেখছে । হয়ত আছে বুড়োটা ভিতরে । আমিও এগিয়ে গেলাম । মানুষের ফাঁক ফোকর গলে ভিড়ের সামনে গিয়ে পৌঁছলাম ।

কেউ একজন মারা গেছে । তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে মাটিতে । পুরো শরীরটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা । মুখটাও ।

সবার আগে মাথায় যে কথাটা এল সেটা হচ্ছে, বুড়োটা মারা গেছে । আমার খারাপ লাগছে সেটা ভেবে । যদিও বুড়োটা আমার পছন্দ করত না । তারপরও কয়েকদিন বুড়োর ঝগড়াটা না শুনলে কি যেন নেই মনে হত ।

আরে আমার চোখে পানি কেন ? আমি কাঁদছি কেন ? আজিব ব্যাপার । এই বুড়ো মরলে আমার কি ? আমি কাঁদব কেন ?

আর আমি তো কখনো কাঁদি না । কারো জন্য না । আমার কান্না করা মানায় না । কান্না জিনিসটা সবার জন্য না । খুবই ব্যয়বহুল এই জিনিসটা । হাসি সবার জন্য ।।

আমি পাথর হয় থাকি সবসময় । আবেগ ছাড়া থাকি । যদিও কথাটা পুরোপুরি সত্য না ।

লাশটার পাশে বসে মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরালাম ।

নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মানে কি এটার ? আমার চেহারা কেন এটা ? আমি শুয়ে আছি কেন ? আমি কি মারা গেছি নাকি ? আর একই চেহারার দুইজন ? আগে কখনো এই এলাকায় আমার চেহারার আরেকজন দেখি নাই । এইটা আসল কোথা থেকে ??

এতক্ষণে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম । লাশটাকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর কারোরই আমার দিকে খেয়াল নেই । মানে জীবিত আমার দিকে । কেউ কি দেখতে পাচ্ছে না আমাকে ? কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে ।

এই যে শুনুন । আমি তো বেঁচে আছি । আমার চেহারার আরেকজন কোথায় পাওয়া গেল ?

নাহ কেউ শুনছে না আমার কথা । দেখছে না আমাকে । হঠাতই চারদিকটা ঠান্ডা হয়ে এল ।

আমার একটা আয়না দরকার । আমি নিজের চেহারা দেখতে চাই । আমি বেঁচে আছি । আয়না কোথায় পাব এখন ? আয়না ? আমি দেখতে চাই আমাকে ।

চারপাশটা খুব দুলতে শুরু করল । আমার মাথা ঘুরছে নাকি ? আমার আয়না দরকার...



চারদিক অন্ধকার । চোখ মেলার পর কিছুই দেখতে পেলাম না । অপেক্ষা করলাম । কিছুক্ষণ পর সব দেখার মত পরিষ্কার হল । সিলিংটা পরিচিত লাগছে । আমি এখন আমার ঘরে আছি । মোবাইলে সময় দেখলাম । রাত বারটা । ছয় ঘন্টার বেশি ঘুমিয়েছি । আমার জন্য এতক্ষণ ঘুমানোটা তিন চার ঘন্টার তুলনায় কিছুটা বেশিই । ক্ষিদা লেগেছে । কিন্তু এখন খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না । কারেন্ট নাই ।



একটু আগে গেছে । সিলিং ফ্যানটা এখনও অল্প অল্প ঘুরছে । গরমটা তেমন লাগছে না । যদিও এখন গরমের সময় ।

বিছানায় বসে রইলাম চুপচাপ কিছুক্ষণ । মাথায় স্বপ্নটা ঘুরছে । পুরো স্বপ্নটা স্পষ্ট গেঁথে গেছে মগজে । অনেক স্বপ্নই তো দেখি, যেগুলো জেগে উঠলে আর মনে থাকেনা । কিন্তু এটা স্পেশাল স্বপ্ন । প্রতিটা মুহূর্ত মনে আছে । সবসময়ই এমন হয় । শুধু জায়গা পাল্টায় । এই স্বপ্ন আমার জন্য নতুন না ।।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ছাদে বেরিয়ে এলাম । চাঁদ উঠেছে । এক্কেবারে পুরো একটা চাঁদ । পূর্ণিমাতে নাকি পুরো চাঁদ ওঠে । এইসব চাঁদের সময়সূচী জানা নাই আমার । কখন পূর্ণিমা, কখন অমাবস্যা, কখন কি, কিচ্ছু জানিনা । এসব ব্যাপারে পুরো অজ্ঞ । তবে হ্যাঁ চাঁদের সাথে আমার ভাব আছে । তার সাথে আমার নিয়মিত আলাপ হয় । বিশেষ করে যেদিন পুরো চাঁদ উঠে । যদিও একটা সমস্যা আছে । তার আলাপের মুড থাকতে হবে । নাহলে সে কথা বলে না । একটু অহংকারী টাইপের । অন্যদের কাছে কি মনে হয় জানি না । কিন্তু আমি তার সাথে কথা বলে এটাই বুঝেছি ।

ছাদের রেলিং এর উপর উঠে বসলাম । সবসময়ের মত বাতাস আছে । আশেপাশের বিল্ডিঙে দুয়েকটা জেনারেটারের লাইট জ্বলছে । চাঁদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা দরকার । লাইটগুলো বন্ধ থাকলে ভালো হত । শুধু চাঁদের আলো থাকবে । আর কোন আলো না ।



-কি খবর ?



বলে চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ । চাঁদ কিছু বলে কিনা শুনার অপেক্ষা । নাহ বলছেনা । আবার ডাক দিতে যাব, তখনই সে সাড়া দিল ।



-মেজাজটা কিছুটা খারাপ আবার কিছুটা ভালো ।

-কেন ? কাহিনী কি ?

-কোনটা বলব আগে ? ভালো না খারাপ ?

-ভালো । মিষ্টিমুখের মত ব্যাপার । তারপর যা হওয়ার হবে । বলেন

-দুইটা ছেলে মেয়ের প্রেম আলাপের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি । ছেলেটা বারবার মেয়েটাকে আমার সাথে তুলনা দিচ্ছে । মেয়েটা লজ্জায় লাল হচ্ছে । যদিও এটা আমার সাথে মিলে না । আমি লাল হই না কখনো ।

-ও আচ্ছা । সমস্যা নাই । ছোট মানুষ তো, আবেগের চোটে গুলিয়ে ফেলছে ।

-হুম বুঝি । এরকম আরো অনেক আছে ।

-এবার খারাপের দিকে যাই । বিসমিল্লাহ । বলেন

-একজন কবি আমার সৌন্দর্য উপভোগ করছিল । সাথে আমাকে নিয়ে কাব্য রচনায় ব্যস্ত ছিল । ঠিক ওই সময়ে তার বুড়ো বাপ তাকে ঝাড়ি দিয়েছে । কেন জানো ? রাত জেগে চাঁদ দেখার কারণে । এটা নাকি পাগলের কাজ । আচ্ছা তুমিই বল, আমার সৌন্দর্য ওই বুড়োয় কি বুঝবে ?

-হুম । ঠিক..

-বলে রাখা ভালো যে, সেই কবির বয়স তেমন বেশি না । পনের ষোল হবে ।

-চিন্তা করবেন না চাঁদ খালু । বুড়ো একদিন তার ভুল বুঝতে পারবে ।

-খালু ?

-হুম খালু

-আমার এই চাঁদ জীবনে প্রথম এইভাবে আমারে কেউ ডাকলো ।

-এমন অনেক কিছুই হবে যা কখনো হয়নি আগে ।

-শুনতে কেমন জানি লাগতেছে ।

-প্রথমবার তো তাই । আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে ।

-আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে রসিকতা করার চেষ্টা করছ ?

-চেষ্টা না, রসিকতাই করছি ।

-হাহ । অনেক সস্তা রসিকতা ।

-জ্বী আমি জানি ।



সবকিছু চুপ হয়ে গেল হঠাত । চাঁদ খালুর আর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না । মনে হয় আমার সস্তা রসিকতায় বিরক্ত এবং সাথে কিছুটা রাগান্বিত হয়েছেন । আজ আর কথা হবে না । তিনি একবারের বেশি কথা বলেন না ।।



এখানে রেলিংটা বেশ চওড়া । অনায়াসে শুয়ে পড়া যাবে । সমস্যা সেটা না । সমস্যা হল ঘুমিয়ে পড়াটা । যদি শুয়ে পড়ি এখানে, তাহলে যে হালকা ঠান্ডা বাতাসটা বইছে, সেই বাতাসে এতক্ষণ ঘুমানোর পরও আবার ঘুম এসে যাবে চোখে । আর তখন ঘুমের মধ্যে হয়ত দেখা যাবে বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে গেছি । এত রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না । এত তাড়াতাড়ি মরে যাওয়ার ইচ্ছা নাই । এখনো অনেক কাজ রয়ে গেছে ।

ভোর হতে আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা বাকি । বসে থাকতে ভালো লাগছে । আজকে আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে না..



সময় সকাল ৯টা । ওই বুড়োর দোকানটাতে বসে আছি । স্বপ্নটা সত্যি হয় নাই । যদিও এটা আমার জন্য কিছুটা অন্যরকম ।

বুড়োটা এখনো আগের মতই আছে । মরার কোন লক্ষণই নাই । বরং আগের চেয়ে শক্তি বেড়েছে মনে হচ্ছে । কারণ আজকে তার গলার আওয়াজ অন্য দিনের চেয়ে বেশি জোরালো শুনাচ্ছে । আমি তার টং দোকানের ছোট বেঞ্চটার এক কোণায় বসে আছি চুপচাপ । আর হাসছি । সে নিজের মত আমাকে বকেই যাচ্ছে । সত্যি কথা বলতে তার এভাবে বকার পিছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আমি । এমনকি বুঝতেও পারছি না সে কি নিয়ে এত বকাঝকা করছে । তারপরও আমি শুনছি । ভালো লাগছে শুনতে ।

কিছুক্ষণ পরপর বন্ধ হয়ে যায় তার বকবক । আমার পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় । তখন আমি একটু গলা পরিষ্কার করার আওয়াজ করি । এরপর আবার শুরু হয়ে যায় । আমি শুনি আর হাসি ।

ছোটবেলায় বাড়িতে যখন ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না, তখন আব্বু বা আম্মু যার সাথেই রাতে ঘুমাতাম না কেন, তাঁর কাজ ছিল সারারাত আমাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা । না হলে ঘুম আসত না । তাই তাঁরাও হাতপাখাটা এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরিয়েই যেতেন । তখন জানতাম না এভাবে সারারাত একভাবে বাতাস করাটা কতটা কষ্টের । এখন বুঝি । এখন আর এভাবে বাতাস করতে হয় না । সব জায়গায় ইলেক্ট্রিসিটি আছে । আর হ্যাঁ, আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি ।।

তো ওইসময় রাতে একনাগাড়ে বাতাস করতে করতে মাঝে মাঝে তাঁরা থেমে যেতেন । হয়ত ঘুমের কারণে । যখন থেমে যেতেন তখন আমি আস্তে করে একবার তাঁদের হাতটা ধরে নাড়া দিতাম । ফলে আবার তাঁরা নতুন উদ্যমে বাতাস করতেন । ওই মুহূর্তে বাতাস করার স্পিডটা বেড়ে যেত কিছুটা । আস্তে আস্তে কমে যেত । এরপর আবার আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত ।

এখন এই বুড়োর ক্ষেত্রেও আমার গলা পরিষ্কার করার আওয়াজটা সেই হাত নেড়ে দেওয়ার কাজটা করছে ।।

আমি মানুষটাকে দেখতে এসেছি । বেঁচে আছে কিনা দেখতে এসেছি । স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে কিনা দেখতে এসেছি । কিন্তু আমাকে হতাশ করে, স্বপ্নটাকে মিথ্যে করে বুড়োটা এখনও বেঁচে আছে । এভাবে বলার কারণ আছে । আমার স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যে হয় ।।



(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চলুক।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

গ্রীনলাভার বলেছেন: চাঁদ খালুর সাথে কথোপকথন ভাল লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.