নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অভ্র

আত্মহত্যা গাধারা করে । আমি গাধার চেয়েও নিচু প্রজাতির । তাই আত্মহত্যা করার চিন্তা বা সাহস কোনোটাই আসবে না আমার মধ্যে । যার কারণে আত্মহত্যা করা হবে না আমার.....

আমি অভ্র

আমি অভ্র । বড্ড অগোছালো একজন । বড়ই বিশৃংখল, বেসামাল । মানসিক রোগী বলেও খ্যাতি আছে । ফেসবুকে আমি : www.facebook.com/badboykishor

আমি অভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - হারিয়ে যাওয়ার গল্প

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৫

(এই গল্পটা লেখা হয়েছিল অনেক আগে । কিন্তু এতদিন প্রকাশ করিনি । কখনো করার ইচ্ছা ছিলও না । আজ হঠাত কেন জানি ইচ্ছা হল দিতে । তাই...)





#

আমি অভ্র । একটু গাধা টাইপের ছেলে । মনের ক্রিয়াগুলো একটু ধীরগতিতে হয় । জটিল বিষয় কম বুঝি । আর এই কারণে অনেক প্রবলেমেও পড়তে হয়েছে । মাঝে মাঝে আমার বন্ধুদেরকেও কষ্ট দিয়ে ফেলতাম, ওদেরকে অপমান করতাম, ওদের মান-সম্মান হুমকির মুখে পড়ত আমার এইরকম হওয়ার কারণে ।



আমি এখন সবার কাছ থেকে দূরে, আড়ালে থাকি । আমি সবার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি ।



অনেকদিন হয়ে গেছে ওদের কারো সাথে দেখা হয়না । করিনা ইচ্ছা করে । নিজেকে সবার মাঝ থেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি । প্রায় এক বছর দেখা না করে আছি । এক বছর হয়ত তেমন বেশি কিছু না, কিন্তু আমার জন্য এটাই এক যুগের মত । দোস্তদের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে খুব ইচ্ছা করে । কিন্তু নিজেকে এটা বলে বুঝাই যে, আমি না থাকলে ওদের জন্য ভালো হবে । যদিও আমি শিওর না আসলেই ভালো হয় কিনা ।



এইচএসসি পরীক্ষার পর যখন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম, তখন থেকেই সব যোগাযোগ বন্ধ । আমার বাবা-মা সবাই গ্রামে থাকে এখন । আমি মোবাইলের সিম পাল্টে ফেলেছি । ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ওদেরকে রিমুভ করে দিয়েছি । এমনকি আমি কোথায় ভর্তি হচ্ছি ওইটা পর্যন্ত জানাইনাই । ওরা কেউ জানে না আমি এখন কোথায় থাকি, কোথায় পড়ি । আমিও জানি না ওরা এখন কেমন আছে । খোঁজ-খবর নিই নাই । হয়ত বেশ ভালো আছে, আর নয়ত বেশ খারাপ ।



#

আজকে আমার জন্মদিন । তারিখটা ৪ সেপ্টেম্বর । সময়টা রাত সাড়ে ১০টা । ঘরের মাঝখানে ছোট্ট টেবিলটাতে একটা কেক রাখা, ছোট্ট কেক । কেকের উপর একটা ছোট মোমবাতি, জ্বলছে । আমি ঘরের জানালাটা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি । অপেক্ষা করছি । মোমটা জ্বলে শেষ হওয়ার অপেক্ষা । ওটা ফুঁ দিয়ে নেভাবার কোন ইচ্ছা নেই । শেষ হোক, তখন কাটব কেক ।

আর কেউ নেই ঘরে । যাদের উপস্থিতি মনে প্রাণে চাই, তারাও নেই । যদিও এতে ওদের দোষ নেই কোনো । ওরা তো জানে না আমি কোথায় আছি । সিমটা পাল্টে ফেলাতে কোন মেসেজও দিতে পারেনি কেউ, উইশ করে ।

এটা আমার জন্য একেবারে নতুন একটা অভিজ্ঞতা । আগে কখনো এভাবে জন্মদিন পালন করিনি ।

রাত বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় মানুষ কমে যাচ্ছে । আস্তে আস্তে নির্জন হয়ে পড়ছে চারপাশ । হালকা বাতাস হচ্ছে । ভালো লাগছে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে ।



#

নিশু, নিশাতকে সংক্ষেপে নিশু ডাকতাম । আমার সাথে একসাথে একই কলেজে পড়ত । সত্যি বলছি, অনেক অনেক সুন্দর মেয়েটা । আর আমার মতে সবচেয়ে ভালো মেয়ে ।

অনেক ভালোবাসতাম মেয়েটাকে । এখনও বাসি । কিন্তু আমি হলাম ওর সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত মানুষ ।

ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ফেসবুকে । তখন টেস্ট পরীক্ষা চলছিল । ক্লাস টেনে । ওকে আমার ভালো লাগত তখন । কারণ ওই ছিল একমাত্র মেয়ে যে কিনা আমার সাথে এত ভালোভাবে কথা বলত । এর আগে তেমন মেয়ের সাথে কথাও বলতাম না ফেসবুকে । ব্যাপারটা তখন ভালোলাগা পর্যন্তই ছিল । এস.এস.সি. পরীক্ষার সময় হঠাত করে গায়েব হয়ে যায় ও । প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ওকে ।

এস.এস.সি.র রেজাল্ট দেওয়ার পর আবার ওর সাথে কথা হয় । দূর্ভাগ্যক্রমে নাকি সৌভাগ্যক্রমে বলব বুঝতেছিনা, দুইজনই একই কলেজে ভর্তি হই । কলেজে ওকে দেখার পর ভালোলাগাটা কয়েকগুণ বেড়ে গেল । পুরোপুরি ভালোবাসা বলা যায় না সেটাকে । ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝামাঝি একটা জায়গা । তবে সেটা ভালোবাসায় পরিণত হতে বেশিদিন লাগেনি ।

ওর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল । ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হতে চাইতাম আমি । তবে ওর একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল কলেজে । ওই ছিল ওর জন্য সব । ওদের সবকিছু আমি জানতাম । নিশু প্রেম-ভালোবাসা পছন্দ করত না । ও কখনো কোনো রিলেশনে জড়াতে চায় না । এর কারণে আগেও অনেক ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ও । আর ওর ফ্রেন্ডসদের মধ্যে কেউ যদি ওকে প্রপোজ করে, তাহলে ও আস্তে আস্তে তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় ।

ঠিক এই কারণে ওরে কখনো বলতে পারিনি কিছু । জানি, বললেই ও আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে । একটু কথাও বলতে পারব না । যেটা আমার জন্য অনেক কষ্টের হবে । ওর বন্ধু হয়েই সবসময় থেকে যেতে চেয়েছি । দরকার নেই ভালোবাসার । আমিই না হয় মনে মনে ভালোবাসলাম । তারপরও ওর সাথে তো থাকতে পারব । ওর বন্ধু হয়ে থাকতে চাইতাম সবসময় ।

ও যখন ওর সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা বলত, তখন খুব খারাপ লাগত, কিন্তু কিছু বলা সম্ভব ছিল না । আমি কখনো ওর অমতে, ওর বিপক্ষে কিছু করতে পারব না । ও যেটা বলবে ওটাই মেনে নিব ।

এভাবেই চলছিল সব । ভালো ছিলাম না, কিন্তু খারাপও যে ছিলাম তা বলতে পারব না । কারণ ও আমাকে একটু হলেও পছন্দ করত, বন্ধু হিসেবে । আমার জন্য একটু হলেও চিন্তা করত ।

একদিন সব ওলটপালট হয়ে গেল । আমার ভুলেই ও সব জেনে গেল । এরপর সব পালটে গেছে । আগের নিশুকে খুঁজে পাইনি আর ।

এরপর আমাকে আর ওকে নিয়ে একটা গল্প প্রকাশ হল ফেসবুকে । যেটাতে বাস্তব সবকিছু তুলে ধরা হয়েছিল । তবে ওটাতে কিছু ভুল ছিল । দুয়েকটা শব্দের ব্যবহার সঠিক জায়গায় হয়নি । কিন্তু আমি ওসব ঠিক করে দিই নি । প্রকাশিত হওয়ার পর নিশু লেখাটা দেখে । ওখানে করা কমেন্টগুলো ওর অনেক খারাপ লাগে । অনেক কষ্ট পেয়েছে । এরপর ও আমাকে অনেক বড় একটা মেসেজ পাঠিয়েছে । যেখানে ও ওই গল্পের প্রতিটা লাইন বিশ্লেষণ করেছে । অনেক কিছুকে মিথ্যা বলেছে ।

ও কখনো ভাবেনি ওর সম্পর্কে কিছু আমি ফাঁস করব । ও আমাকে অনেক বিশ্বাস করেছিল । আমি ওর বিশ্বাস ভেঙ্গেছি । আমার জন্য ও অনেক কেঁদেছে । শুধু আমার কারণে । যেই আমি কখনো চাইনি ও একটু কষ্ট পাক, সেই আমার কারণে ও কেঁদেছে । সব দোষ আমার । শুধুই আমার...

আমি ওকে আর কিচ্ছু বলিনি । হয়ত ওর কথাগুলোর জবাব দিতে পারতাম, বলতে পারতাম ওগুলো মিথ্যে না । কিন্তু কিছুই বলিনি । থাক না কিছু ভুল না শোধরানো অবস্থায় ।

সেই মেসেজে ও বলেছিল, ও এখন আমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে । আমার নামটা পর্যন্ত ও শুনতে চায় না কখনো ।

নিশু আর আমার আরেকটা বন্ধু কলেজের একটা অঙ্গ-সংগঠন, একটা ক্লাবের মেম্বার ছিল । সেখানকার বড় ভাই একটা এসব ব্যাপার জেনে যায় । নিশুই বলেছিল । এরপর সেই বড়ভাই এসে আমার ওই বন্ধুটাকে আমার সম্পর্কে এসব বলল । উনি এমনভাবে সব করছিলেন যে আমার বন্ধুটাও অনেক কষ্ট পাইছে । এমনকি কেঁদেও দিছে ।

যেখানে আমি চাইছিলাম সবকিছু শেষ হয়ে যাক, সেখানে আবার এসব শুরু হয়েছে । আমার বন্ধুটা জানে না যে আমি ওর আর ওই ভাইয়ের ব্যাপারটা জানি ।

আমার বন্ধুটা আমাকে কিছু বলবে না জানি, কিন্তু আমি যখনই ওর সামনে যাব তখনই ওর ওসব মনে পড়বে । আমার নিজেরও মনে হবে সব ।

ফেসবুকে প্রকাশিত লেখাটা লিখেছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । এর কারণে নিশু ওকেও কিছু কথা বলেছিল । যার কারণে সেও কষ্ট পেয়েছে অনেক ।

অর্থাৎ, কয়েকমাসে আমি আমার বেশ কিছু প্রিয় মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি । যেটা আমি কখনো চাইনি ।

হঠাত ইচ্ছে হল সবার মাঝ থেকে হারিয়ে যাওয়ার । সবকিছু নতুন করে শুরু করার । সবাই যেন আমাকে ভুলে যায় । একটা কালো স্মৃতি হিসেবে যেন মুছে যাই আমি । ওদেরকে আর কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছিল না ।



#

মোমবাতিটা শেষ হয়ে গেছে জ্বলে । কেক কাটলাম । এক টুকরো কেক নিয়ে মুখের কাছে ধরলাম । নিজেই নিজেকে উইশ করলাম, “হ্যাপি বার্থডে অভ্র” ।

সারারাত চিন্তা করে এক্টাআ স্বিদ্ধান্ত নিলাম । নাহ, আর থাকতে পারব না ওদের ছাড়া । কালই রওনা দেব চট্টগ্রাম । সবার মাঝে...



#

অক্ষর আর অংকন । অনেক চেষ্টা করেছিল অভ্র এর খোঁজ বের করার জন্য, পারেনি । হঠাত করেই কোথায় যেন চলে গেছে ছেলেটা । ওরা জানে ওদের বন্ধু আছে কোন এক জায়গায় । ওদের সাথে দেখা হবে আবার সেই পাগল ছেলেটার ।

অনেক কথা বলার আছে অভ্রকে । আগে কখনো বলেনি । সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছিল । ওকে যে ওরা কতটা ভালোবাসে তা কখনো বলা হয়নি । তবে যেদিনই দেখা হবে ওইদিনই সব বলে দেবে । আর সারপ্রাইজ রাখবে না ।

পরদিন ওরা টেলিভিশনে একটা অনেক বড় রোড-এক্সিডেন্টের খবর দেখল । পাত্তা দিল না । এমন তো অহরহই ঘটে ।

কিন্তু ওরা জানে না, সেই এক্সিডেন্টে ওদের বন্ধু অভ্র ওদের কাছে ফিরতে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে । ওরা কখনো জানবেও না যে অভ্র আর কখনো ফিরবে না । ওরা জানে ওদের বন্ধু বেঁচে আছে । আসবে একদিন । ওকে যে অনেক কথা বলা বাকি । কিন্তু ওরা জানে না, ওদের সারপ্রাইজগুলো সারপ্রাইজই থেকে যাবে আজীবন । কখনো জানানো হবে না অভ্রকে ।

অভ্র পেরেছে ওর ইচ্ছা পূরণ করতে । ওর চেষ্টা সফল হয়েছে । ও পেরেছে হারিয়ে যেতে ।

এটাই ওর হারিয়ে যাওয়ার গল্প...।



##The enD##

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩২

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: Sundor sundr

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

আমি অভ্র বলেছেন: থ্যাংকু থ্যাংকু

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০০

নূর আদনান বলেছেন: বুঝলাম গল্গটা আসলেই আগের লেখা, লেখ-লেখি চালিয়ে যান

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

আমি অভ্র বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.