নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে যে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র ওয়ার সিমেট্রি আছে, যার একটি কুমিল্লা ময়নামতি আর একটি চট্টগ্রামে। আপনারা যখন সেখানে ভ্রমণ করেন, কী ভাবেন মনে মনে! অথবা কোন ভাবনায় সেখানে দর্শন/ ভ্রমণ করতে যান ? এই যে ১৩/১৪ টি ভিন্ন দেশ বিভিন্ন জাতীর সৈনিকেরা নিজেদের জন্মভূমি আত্মীয় পরিজন প্রিয়জন চেনা আলো আঙিনার থেকে দূরে বহুদূরে সমাধিস্থ হলো। বিশ্ব যুদ্ধে নিজের দেশের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করতে এগিয়ে আসার সময় কি এমন কিছু তাদের প্রত্যাশায় অথবা ভাবনায় ছিলো? আচ্ছা যুদ্ধে জীবন দান করা সৈনিকদের কথা বাদ দিলাম, উনারা মৃত সকল চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে। বেঁচে থাকা সেসব যোদ্ধাদের পরিবার , মা বাবা সন্তান স্ত্রী অথবা প্রেয়সী, প্রিয়বন্ধু, ভাই বোন তাদের মনের অবস্থা বিবেচনায় আসে ? একটু যদি ভাবি পশ্চিমাদের মৃতদের সম্মান জানানোর প্রিয় রীতি সমাধিতে ফুল দেয়া, অথবা মন উদাসের বেলায় সমাধির পাশে বসে প্রার্থনা করা সেটুকু করবার ও উপায় নেই। হয়ত অনেক বছর পর চিঠিতে খবর এসেছে কোন দেশে কোথায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে কিন্তু সেখানে যাবার উপায় নেই। এসব ভেবে আমাদের মন বিষণ্ণ হয় না ! কেমন দম বন্ধ লাগে তাই না !
আমাদের মাধ্যামিক পর্যায়ে স্কুল পাঠ্য ছিল প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত ফুলের মূল্য ছোট গল্পটি, সেখানে দারুণ মুন্সিয়ানায় লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এক পরিবারের সমাধি ভ্রমণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার আকুতি তুলে এনেছেন। শৈশবের ওপেন্টি বায়স্কোপ খেলার যুদ্ধ আর সত্যিকারের যুদ্ধের মাঝের ফারাক বয়সের সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে চলছে। সত্যি বলছি স্পষ্ট না হলেই মনে হয় ভালো ছিল। সে যাই হোক যে জন্য এত গল্প কথার অবতারণা - দ্বিতীয়বারের মত নেটফ্লিক্স এ দেখা শেষ করলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে মনে ছুঁয়ে যাওয়া সত্যিকারের গল্প নিয়ে মুভি " সিক্স ট্রিপল এইট"। অস্কারের জন্য নমিনেশন পাওয়া এই সিনেমা মূলত যুদ্ধের গল্প - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সাদা সৈনিক আর জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ করতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের। সিক্স ট্রিপল এইট ১৭ বছরের লীনা আর পাইলট আব্রাহামের প্রেমের গল্প। আমেরিকার পক্ষ থেকে মিত্রবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে করতে আসা দিন মাস বছর ধরে একটা খবর এক লাইনের চিঠির জন্য অপেক্ষা করতে সন্তানদের মায়ের গল্প।
“আই ইউল রাইট ঊ এভ্রি চান্স আই গেট “ বাল্য কালের সাথী কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে লীনা কে ছোট্ট এই এক কথার আশ্বাস দিয়ে হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায় জিউ বয় আব্রাহাম। পলক পলক প্রতীক্ষা আর বিস্কুটের বাক্সে পাওয়া আংটি আঙুলে দিন কাটায় লীনা, কিন্তু চিঠি অথবা আব্রাহাম কেউ ফিরে আসে না। এদিকে সমস্ত দেশজুড়ে সৈনিকদের ক্যাম্প জুড়ে হাহাকার একটা খবরের জন্য, এক লাইনের তুমি কেমন আছো ? জানতে চাইবার অপেক্ষা। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট কে জানানো হলো, পরিবারের সাথে যোগাযোগের অভাবে সৈন্যদের মনবল ভেঙে যাচ্ছে, যুদ্ধের গতি হচ্ছে ব্যাহত। আরও জানানো হলো পর্যাপ্ত যানবাহন এবং প্রশিক্ষিত লোকবলের ওভাবে প্রায় ২বছর থেকে জমতে থাকা ১ কোটি সত্তর লক্ষ চিঠি বিতরণ করা যায়নি। বহু নাটকীয়তার পর সেই দায়িত্ব দেয়া হয় সবচাইতে অবহেলিত দুর্বল এবং অসংগঠিত ভাবতে থাকা ইউ এস আর্মির নিগ্রো মহিলা দল কে যাদের অফিসিয়াল নাম সিক্স ট্রিপল এইট ব্যাটেলিয়ান। সেই দলে যোগ দেয় আব্রাহামের চিঠির অপেক্ষায় থাকা লীনা, এবং বহু ঝঞ্ঝার পর সে হাতে পায় তার কাঙ্ক্ষিত রক্তমাখা চিঠি।
সিক্স ট্রিপল এইট এমন একটি ব্যাটেলিয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলো।২৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন চ্যারেটি অ্যাডামস এর নেতৃত্বে কৃষ্ণাঙ্গ নারী আর্মি ব্যাটেলিয়ান ও নানা অসঙ্গতি বৈরী পরিবেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করা যুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালে দেশে ফেরার পরও ব্যাটেলিয়ানের জন্য ছিল না কোন অভিনন্দন বার্তা সামাজিক স্বীকৃতি। ৯০ দিনে ১ কোটি সত্তর লাখ এর বেশি চিঠি তার প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিয়ে অসাধ্য সাধন করার পর ও যথাযথ মুল্যায়ন ছিলো না, অনেকের পরিবার জানতেন ও না এমন দুঃসাহসিক ইতিহাস। প্রায় ৮০ বছর পর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস এ ব্যাটেলিয়ানের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে সিক্স ট্রিপল এইট কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল আক্ট স্বাক্ষর করেন যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় বেসামরিক পদক।
দারুণ সব কাস্টিং চমৎকার অভিনয় সহ রেটিং এ ৬.৭ পাওয়া দুর্দান্ত এই মুভিটি আপনারা দেখতে পারেন।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪১
অঙ্গনা বলেছেন: And all at once they sang, "Our island home
Is far beyond the wave; we will no longer roam."
আহা হৃদয় নিংড়ানো বাক্য !
অসংখ্য ধন্যবাদ আমার লেখায় এত দুর্দান্ত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য !!!!!
মাঝে মাঝে কুমিল্লার এই ওয়ার সিমেট্রিতে নামতে। আমার কেন যেন এখানে দাঁড়িয়ে এই সকল অজানা সৈনিকদের প্রতি একটা ফুল আর সামান্য স্যালুট দিতে মন চায়। লজ্জা পাই বলে অনেক সময় স্যালুট দেয়া হয় না।
আমার তো ইচ্ছে করে চুপচাপ সমাধিক্ষেত্রে বসে থাকতে কিছুক্ষণ একা, হয়ত শুধু নাম আর নাম্বারে চেনা সৈনিকদের কেউ ভাবতে পারে তাদের কাছের কেউ এসেছে তাদের কাছে। মাঝে মাঝে নির্জনতা উপভোগ্য হয় এমন সব পবিত্র স্থানে।
সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুর লিখিত বিখ্যাত ইতিহাসের বই গ্লিমস অব ওল্ড ঢাকা আমার পড়া হয়ে উঠেনি। চেষ্টা করবো সংগ্রহ করতে।
আপনার মন্তব্যটি আমার লেখার চাইতে বেশি আকর্ষণীয় নিঃসন্দেহে।
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০২
শায়মা বলেছেন: লীনার কষ্টটা যেন দেখতে পেলাম লেখাটা পড়েই। যুদ্ধ যুগে যুগে অশান্তি যুগিয়ে টিকে থাকে আমাদের মাঝে। যুদ্ধে হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোর কষ্ঠ ক,জনে জানতে পারে?
সিনেমাটা শুধু এখ লীনার গল্প, অনেক অনেক লীনার প্রতিচ্ছবিও।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:০২
অঙ্গনা বলেছেন: পর্দায় লীনা মেয়েটাও এত চমৎকার তুনে এনেছে যে ফীল করা যায়। হ্যাঁ যুগে যুগে যুদ্ধ আমাদের এই যে জুলাই আন্দোলন সব গল্পের কষ্টগুলো লীনার প্রতিচ্ছবি।
৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৫৬
জাদিদ বলেছেন: ব্লগে ঢুকেই আপনার পোস্টটি চোখে পড়ল। চমৎকার রিভিউ পড়লাম। আমি কিছুদিন আগে এই সিনেমার একটা ক্লিপ দেখেছিলাম যেখানে সোলজাররা ৬৮৮৮ বলে ডাক দিয়ে তাদেরকে স্যালুট করে। দৃশ্যটা আমার বেশ ভালো লেগেছিলো।
তবে পোস্টের শুরুতে আপনি সত্যি বেশ ভাবনার একটা কথা বলেছেন। মাঝে মাঝে আমি ভাবি কোন দুর দেশের এই লোকগুলো এখানে শায়িত হয়ে আছে। আমি যখন ব্যক্তিগত যানবাহনে আমার গ্রামের বাড়িতে যাই তখন চেষ্টা করি মাঝে মাঝে কুমিল্লার এই ওয়ার সিমেট্রিতে নামতে। আমার কেন যেন এখানে দাঁড়িয়ে এই সকল অজানা সৈনিকদের প্রতি একটা ফুল আর সামান্য স্যালুট দিতে মন চায়। লজ্জা পাই বলে অনেক সময় স্যালুট দেয়া হয় না।
কুমিল্লা বা চট্রগ্রামের ওয়ার সিমিট্রিতে গেলে একজন বিখ্যাত ইংরেজ কবি আলফ্রেড, লর্ড টেনিসন এর কথা মনে পড়ে। তাঁর একটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে লোটাস ইটার। মুলত ট্রয়ের যুদ্ধ থেকে যে সকল নাবিক নিজ দেশে ফিরতে ব্যর্থ বিভিন্ন দ্বীপ বা অঞ্চলে আটকা পড়েছিলো তাদের সান্তনা দেবার জন্য তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে এই কবিতা লিখেন। এই কবিতার দারুন একটা ব্যবহার দেখেছিলাম সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুর লিখিত বিখ্যাত ইতিহাসের বই গ্লিমস অব ওল্ড ঢাকা। সেখানে বাংলার বর্ষাকালে যেকল ভীনদেশীরা দেশে ফিরতে পারত না তারা বাংলার রুপ দেখে বিমোহিত হয়ে যেত। স্বর্গসম সৌন্দর্যের কারনে তারা নিজ দেশ, পরিবার সবাইকেই ভুলে যেত। কবিতাটা অনেকটা এমনঃ
They sat them down upon the yellow sand,
Between the sun and moon upon the shore;
And sweet it was to dream of Fatherland,
Of child, and wife, and slave; but evermore
Most weary seem'd the sea, weary the oar,
Weary the wandering fields of barren foam.
Then some one said, "We will return no more";
And all at once they sang, "Our island home
Is far beyond the wave; we will no longer roam."
আমি যখন এখানে নিরিবিলি দাঁড়াই, তখন মাঝে মাঝে মনে হয় কারা যেন এই কবিতা ফিসফিস করে বলছে।
ভালো থাকবেন। পোস্টে প্লাস।