![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রমাদান মাস আসলেই আমরা যাকাত নিয়ে ভাবনা শুরু করি, কাকে দেয়া যাবে ,কি পরিমান দিতে হবে এ নিয়ে মনে নানা প্রশ্নের উকি ঝুকি । অনেকের যাকাত সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় শরণাপন্ন হন কোন মাসজিদ মাদ্রাসার ইমাম সাহেবের । কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে সবাই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম নয়। এছাড়াও সব চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মানুষের যাকাত সম্পর্কে পর্যাপ্ত ইলম না থাকায় মানুষ সঠিক স্থানে যাকাত দিতে পারে না। আর যাকাতের কাজ করাতো দূরেই থাকলো। অনেকেই ভাবছেন যাকাত দেয়া না দেয়ার বিষয়টি বুঝলাম কিন্তু যাকাতের কাজ করা আবার কি ? আর উশরের কথা বললে অনেকে বলবেন নতুন শুনলাম।তাই এ নিয়েই সামনে লেখা লেখি করবো ইনশাআল্লাহ। আমরা জানার চেষ্টা করবো
যাকাত ও উশর কি
ইসলামে যাকাত উনার গুরুত্ব
যাকাত না দিলে কি হয়
যাকাত দিলে কি হয়
কাদের জন্য যাকাত দেয়া ফরয
শুধু কি দেয়া ফরয? যাকাতের কাজ করা কি ফরয নয়?
যাকাতের কাজ করলে কি ফযীলত পাওয়া যাবে
যাকাত দিলে কোথায় বা কাদের দিতে হবে
কোথায় বা কাদের দিলে যাকাত আদায় হবে না ইত্যাদি
যাকাত ফরয এ বিষয়টি সবাই জানেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ যাকাত আদায় করার কথা ঘোষণা করেছেন।কোন বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক যদি একবারও কোন আয়াত শরীফ উল্লেখ করে থাকেন তবে ফরয হবার জন্য তাই যথেস্ট। অথচ মহান আল্লাহ পাক ৩২ বার কুরআন শরীফ এ যাকাত আদায় করার কথা উল্লেখ করেছেন। ২৬ বার এসেছে নামাযের সঙ্গে আর ৬ বার আলাদাভাবে।এই বিষয়টিই যথেষ্ট যাকাতের গুরুত্ব বোঝার জন্য।
কারো অফিসের বড়কর্তা যদি কোন বিষয়ে একবার নির্দেশ প্রদান করে তবে তা পালন না করলে চাকরী চলে যাবে। আর মহান আল্লাহ পাক ৩২ বার নির্দেশ দেবার পরেও যদি যাকাতকে কেও অস্বীকার করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তবে পৃথিবীতেই রয়েছে তার জন্য আযাব গযব। আখিরাতের শাস্তি বাকীই থাকলো।
সদকা ফিতর ফরয হয় দ্বিতীয় হিজরিতে আর যাকাত ফরয হয় ৮ম হিজরিতে ,আর ৮ম হিজরিতে ফরয হবার পর ১১ তম হিজরির মধ্যে ৩২ বার মহান আল্লাহ পাক যাকাত আদায় করার ব্যপারে আদেশ দান করেছেন।
নামায, রোযা, হজ্জ যেমন ফরয তেমনি যাকাত আদায় করা সামর্থ্য বানের জন্য ফরয, আর যার সামর্থ্য নেই তার জন্য যাকাতের কাজ করা অর্থাৎ সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এনে গরীব মিসকিনদের দেয়া সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী ফরয।
যাকাত ইসলামের ভিত্তি
আমরা জানি ইসলাম উনার ৫ টি বেনা বা খুটি। অর্থাৎ ৫ টি ভিত্তি। হাদিস শরীফে যেই ধারাবাহিকতায় ইরশাদ হয়েছে তা এরকম- ইসলামের ৫ টি ভিত্তি যেমন কলেমা,নামায,যাকাত,হজ্জ এবং রোজা। তাহলে দেখা যাচ্ছে যাকাত উনার পূর্বে ২ টি বিষয় এবং পরে ২ টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।যাকাত হচ্ছে মধ্যবর্তী স্থানে। একটি তাবুর মধ্যবর্তী খুটি ছাড়া যেমন তাবু দাঁড়িয়ে থাকেনা তেমনি যাকাত ব্যবস্থা ছাড়া ইসলামও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। যাকাতের গুরুত্ব পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করেছিলেন হযরত সাহাবা-এ-কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। আর তাই, ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত সিদ্দিকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের সময় একদল যাকাত দিতে অস্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ ঘোষণা করেন।তিনি ইরশাদ মুবারক করেন “কেও যদি যাকাত হিসেবে উটের রশিও দিতে অস্বীকার করেন তবুও আমি জিহাদ ঘোষণা করবো”বাস্তবে উটের রশির কিই বা মুল্য আছে কিন্তু তিনি যাকাতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
যাকাতের সাথে ঈমানের সম্পর্ক
পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৭৭ নম্বর আয়াত শরীফে , মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আমলে ছলেহ করেছে, নামায কায়িম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে, তাদের জন্য তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রতিদান রয়েছে।”
এই আয়াত শরীফের মধ্যে স্পস্ট বোঝা যায় যাকাতের সাথে ঈমানের সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়টি ঘুরিয়ে বললে বলা যায় যাকাত কে যারা অস্বীকার করবে, অবজ্ঞা করবে, মনগড়া ব্যখ্যা করবে, সঠিকভাবে আদায় না করবে তারা অবশ্যই ঈমানদার নয়।এবং যারা এরূপ করবে তাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার কাছে কোন প্রতিদান নেই। এখানে প্রতিদানের বিষয়টিকে পুরস্কার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যারা যাকাত আদায় করবেনা, যাকাতের কাজ করবেনা (সম্পদশালী মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এনে যাকাত পাবার উপযুক্তদের দিবে না ) তাদের প্রকৃতপক্ষে ঈমান নেই আর ঈমানহীন মানুষদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
যাকাত অর্থনৈতিক মুক্তির শর্ত
কোন মানুষ রচিত মতবাদ এযাবত পৃথিবীতে টিকে নাই। সমাজতন্ত্র ও পুজিতন্ত্র দুটোই পৃথিবীতে আজ অচল।৯০ দশকে সমাজতন্ত্র অকার্যকর প্রমানিত হয়েছে ফলে রাশিয়া ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েছে। অনেক আরব দেশের নেতারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটাবে বলে নিজ দেশে বাথ পার্টি আমদানি করেছিল কিন্তু সে দেশগুলোতে তাও আজ নেই। পুজিতন্ত্র চলে ব্যঙ্কিং এবং শেয়ার বাজার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে।আর বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে হাজার হাজার ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়েছে, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে।ইউরো আজ ইউরোপের মাথা ব্যথার কারণ তবু অর্থনীতির মন্দা ভাব কাটছে না।
অথচ হযরত আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করেন উনাদের সময় যাকাত ব্যবস্থায় এতই সাফল্য এসেছিল যে উনারা কাত্তানের কাপড় দিয়ে নাক মুবারক পরিস্কার করতেন। কাত্তানের কাপড় ছিল রাজকীয় কাপড়, সোনার সুতা দিয়ে সেলাই করা থাকতো(আজও তুরস্কের তোপকাপী মিউজিয়ামে কাত্তানের কাপড় সংরক্ষিত আছে) তখন মানুষের ঘরে ঘরে কোটি কোটি দিনার দিরহাম থাকতো।যাকাত শব্দের অর্থই হচ্ছে বৃদ্ধি এবং মুক্তি। তাই উনাদের সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছিল এবং অর্থনৈতিক মুক্তি এসেছিল।
আজও পৃথিবীতে যদি যাকাত ব্যবস্থা চালু করা যায় তবে অবশ্যই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে পৃথিবীতে যাকাত ব্যবস্থা চালু না হলেও ব্যক্তিগত ভাবে যারা হিসেব করে নিজের যাকাত আদায় করবেন এবং সঠিক জায়গায় দিবেন অথবা যাকাতের কাজ করবেন তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনাদেরও অর্থনৈতিক সাফল্য দিবেন।মুক্তি দিবেন।
যাকাত না দিলে কি হয়ঃ
১) মাল সম্পদ নষ্ট হয়। হাদিস শরীফ এসেছে, যাকাত না দিলে যমিনে ও পানিতে মাল সম্পদ নস্ট হয় ।যমীনে-পানিতে বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে যে কোন জায়গায়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এই হাদিস শরীফ বর্ণনা করেন যা তাবারানি শরীফ এ এসেছে ।উনি অনেক কম হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন কিন্তু তার মধ্যে তিনি যাকাতের হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন।প্রথম সারীর সাহাবা আজমাইনগণ যাকাত সম্পর্কে হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন। যাকাত না দিলে যমিনে ও পানিতে মাল সম্পদ নস্ট হয় এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, যে যাকাত আদায় করে না এবং যার কাছ থেকে আদায় করার কথা ছিল অবহেলা করে আদায় না করে সঠিক জায়গায় পৌঁছান না হয়ে থাকে তবে উভয়েরই মাল সম্পদই বিনস্ট হবে।
দেখা যায় মালবাহী জাহাজ ডুবে কেও নিঃস্ব হয়, কেও আগুনে পুড়ে সর্বস্বান্ত হয়, তলিয়ে দেখলে দেখা যায় যাকাত আদায়ের ব্যপারে তাদের উদাসীনতা রয়েছে। অবশ্য অনেক সময় মহান আল্লাহ পাক কারো মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষা হিসেবে বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন তবে সে রকম মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা।
২) হারাম মিশ্রিত হয়ে হালাল কেও হারাম করে দেয়। যে মালে যাকাত দেয়া হয়নি তা অন্য মালের সাথে সংমিশ্রন করলে উভয় মালই ধ্বংস হবে ।উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে মালে যাকাত মিশবে নিশ্চয়ই তাকে ধ্বংস করে দিবে (শাফেয়ী ও বুখারী শরীফ)।ইমাম হুমায়দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে মালে যাকাত দেয়া হয়নি অথচ সে মালের যাকাত ফরয ছিল তা অন্য মালের সাথে সংমিশ্রন করলে উভয় মালই ধ্বংস হবে।”(মিশকাত শরীফ)।হারাম হতে বর্ধিত এক টুকরা গোশতও জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামে যাবে।
ধরা যাক এক ব্যক্তির এক বছর ধরে চার লক্ষ (৪০০,০০০)টাকা জমা ছিল তাহলে সঠিক হিসাব করার পর তার যাকাত হয়েছে দশ হাযার (১০,০০০) টাকা।কিন্তু সে ব্যক্তি ৯০০০ টাকা যাকাত আদায় করলো,তাহলে তার অনাদায়ী ১০০০ যাকাতের টাকা তার তিন লক্ষ নব্বই হাযার টাকার (৩৯০০০০) সঙ্গে মিশে সমুদয় টাকাকেই হারাম করে দিবে (নাউযুবিল্লাহ)। আর সেই হারাম অর্থে শরীর প্রতিপালিত হলে সেই শরীর নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে।
৩) নামায কবুল হয় না,পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (তাফসীরে কুরতবী, রুহুল মায়ানী, তাফসীরে খযীন ও বাগবী শরীফ)
এবার আসুন সহজ একটা ক্যলকুলেশন করি।হিজ্রী সন হয় ৩৫০ থেকে ৩৫৫ দিনে।আর আমরা একদিনে বিতরের ওয়াজিব নামায সহ ৬ ওয়াক্ত নামায আদায় করি।তাহলে এক আরবী বছরে নামায আদায় হয় ৩৫০x৬=২১০০ বার থেকে ৩৫৫x৬=২১৩০ বার। তাহলে এক বছর যাকাত আদায় না করলে এই ২১০০ থেকে ২১৩০ বার নামায কবুল হবে না ।
হাদিস শরীফে এসেছে এক ওয়াক্ত নামায ইচ্ছাকৃত কাযা করলে ২ লক্ষ ৮৮ হাযার বছর জাহান্নামে জ্বলতে হবে আর যদি ২১৩০ বার নামায আদায় না হয় তাহলে তার শাস্তি কিরুপ হবে।আর তা হবে কেবল যাকাত আদায় না করার কারণে। আর যাকাতের সাথে নামাজের এরুপ গভীর সম্পর্ক আছে বলেই মহান আল্লাহ পাক ৩২ বার কুরআন শরীফ এ যাকাত আদায় করার কথা উল্লেখ করেছেন আর এর মধ্যে ২৬ বারই এসেছে নামাযের সঙ্গে আর মাত্র ৬ বার আলাদাভাবে।
নামায প্রসঙ্গে বলা হয় যে পাচ ওয়াক্ত নামায আদায় করলো সে যেন পাঁচবার কোন নহরে নেমে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করলো।আর যাকাত আদায় না করলে যেহেতু নামায কবুল হয়না এর অর্থ যাকাত আদায় না করে নামায পড়া আর পাঁচ বার কোন অপবিত্র পানির মধ্যে নেমে পবিত্র হবার চেস্টা একই কথা।
৪) মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট হন ও জিহাদ ঘোষণা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, ওই সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার জন্য, তাদেরকে কতল করে দেয়ার জন্য, যারা এটা ঘোষণা করবে না, স্বীকার করবে না, মহান আল্লাহ পাক তিনি এক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাবীব এবং রসূল। এবং নামায কায়িম করবে না, যাকাত আদায় করবে না।” (পবিত্র মিশকাত শরীফ)
যদি কোন বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট হন ও জিহাদ ঘোষণা করেন তাহলে সেই বান্দার মুক্তিরতো আর কোন পথ খোলা থাকলো না। তাহলে বান্দা এমন কাজ কেন করবে যাতে বান্দার মালিক
অসন্তুষ্ট হবেন।
আরো একটি বিষয় উপলব্ধির তা হচ্ছে আমাদের যার যা ধন সম্পদ রয়েছে তার কোনটারই মালিক আমরা নই। ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীতে অল্প সময়ের জন্য আমাদের জিম্মাদারীতে দেয়া হয়েছে এ সকল সম্পদ। তাহলে যিনি এই সম্পদের মালিক উনার নির্দেশ অমান্য করে যাকাত না দেয়ার স্পর্ধা কার। অথচ যার সম্পদ তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন সেখান থেকে যাকাত দিলে তিনি আমাদের সুখ দিবেন, জান্নাত দিবেন, অন্তর প্রশান্ত করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরো একটি বিষয় মনে রাখার মত তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কিন্তু জিহাদ করেন না বরং জিহাদ ঘোষণা করেন অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়ার, ভুলের জন্য আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দেন। সুতরাং অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে সঠিক জায়গায় , নির্ভুল গননা করে যাকাত আদায় করা উচিৎ এবং যাকাতের কাজ করা উচিৎ।
যাকাত দিলে কি হয়
আমরা প্রথমেই জেনেছি যাকাত না দিলে কি হয়। যেমন ১) মাল সম্পদ নষ্ট হয় ২) হারাম মিশ্রিত হয়ে হালাল কেও হারাম করে দেয় ৩) নামায কবুল হয় না ৪) মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট হন ও জিহাদ ঘোষণা করেন।
তাহলে যখন কেও যাকাত আদায় করবেন এবং যাকাতের কাজ করবেন প্রথমত তিনি উপরের চারটি ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন।
অর্থাৎ ১) মাল সম্পদ হিফাযত হবে। শুধু হিফাজত হবে তা নয় মাল সম্পদ বৃদ্ধি পাবে ২) হালাল মালে বরকত হবে এবং হালাল রোজগারের ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে। ৩) শুধু নামায নয়, সকল ইবাদত কবুল হবে এবং ইবাদতে একাগ্রতা বাড়বে।৪) মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট হবেন এবং উনারা উত্তম অভিভাবক হবেন। আর যাকাত দাতা হাবিবুল্লাহ (আল্লাহ পাক উনার বন্ধু) হবেন আল্লাহ ওয়ালা হবেন।
এছাড়াও যাকাত দিলে আরও অনেক অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন বলা যেতে পারে, যখন মানুষ গুনাহ করে তখন শুধু গুনাহ লিখা হয় আর যখন নেকি করে তখন তা ১০ গুন বাড়িয়ে লিখা হয়।আর যখন মাল সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করা হয় তখন মানুষের অন্তরের বিশুদ্ধতা অনুযায়ী ৭০০, ৭০০০, ৭০০০০০ গুন এভাবে বাড়িয়ে লিখা হয়। সুবহানাল্লাহ।
যাকাত দিলে কি হয়-২
আসুন এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি কি ইরশাদ মুবারক করেছেন তাই আমরা শুনি। সুরা তওবার ১০৩ নম্বর আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক , নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ
“আপনি তাদের যাকাত, ফিতরা ,দান, সদকা,উশর গ্রহন করুন।এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও ইছলাহ করুন ।আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন, নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তির কারন।আর আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞাতা”।
১) আপনি তাদের যাকাত, ফিতরা ,দান, সদকা,উশর গ্রহন করুন।
এখানে গ্রহন করুন অর্থ মানুষ যেন তাদের যাকাত, ফিতরা ,দান, সদকা,উশর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পৌঁছায়।কারন উনার কাছেই পৌঁছাতে হবে কারন তিনিই একমাত্র বন্টনকারী।
২) এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও ইছলাহ করুন।
এখানে দুটো শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে “পবিত্র” ও “ইছলাহ” করুন।
আমরা যখন নামায পড়ি তখন অযু করি অর্থাৎ অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা হাসিল করি কিন্তু তাতে কিন্তু অন্তর বিশুদ্ধ হয়না। কিন্তু যিকিরের মাধ্যমে অন্তর ইছলাহ হয়।যাকাত দিলে বা যাকাতের কাজ করলে অন্তরের পবিত্রতা এবং ইছলাহ দুটোই হবে ।
৩) আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন, নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তির কারন।
এখানে মহান আল্লাহ পাক, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সরাসরি যাকাত দাতার জন্য দোয়া করতে বলেছেন এবং এই দোয়া কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। আর এই দোয়ার কারনে যাকাত দাতার অন্তর প্রশান্ত হবে যা মহান আল্লাহপাক তিনিই বলে দিলেন।একটু উপলব্ধি করুন, যিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি দোয়া পাবেন তার আর কি প্রয়োজন।আর আমরাতো আমাদের অন্তর প্রশান্ত করতেই চাই। যাকাত দেবার মাধ্যমে এবং যাকাতের কাজ করার মাঝেই রয়েছে সেই প্রশান্তি।
৪) সবশেষে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করলেন “আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা”।
এর অর্থ কেও যাকাত দিলো কি দিলোনা , যাকাতের কাজ করলো কি করলো না , যাকাত বিষয়টিকে কেও গুরুত্ব দিলো কি দিলোনা মহান আল্লাহ পাক তিনি সবই জানেন,দেখেন, শুনেন।
কাদের কে যাকাত দিতে হয়ঃ ( হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ৮ টি খাত, তবে যে কোন ১ টি খাতে দিলেই যাকাত আদায় হয়)
১) ফকির ( যার একবেলার খাবার থাকলে অন্য বেলার থাকেনা )
২) মিসকিন ( যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী )
৩) নও মুসলিম
৪) যাকাত আদায় কর্মচারী
৫) জিহাদকারী,আল্লাহপাক উনার রাস্তায়। (ইসলামের নামে গণতন্ত্রকারী কখনো জিহাদকারী হবে না।)
৬) মুসাফির
৭) ঋণমুক্তির জন্য
৮) দাস মুক্তির জন্য
পরবর্তীতে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
গরীব আত্মীয়
গরীব প্রতিবেশী
তলিবে ইলম( যারা ইলম অন্বেষণ করেন উনাদের দিলে লক্ষ-কোটি গুন বেশী সওয়াব) কারণ উনারা আলেম হয়ে হকের প্রচার প্রসার করবেন।
কাদের যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবেনা
১) যাদের ঈমান আকিদা বিশুদ্ধ নেই
২) শরীয়ত উনার খিলাপ কাজ যারা করে।
৩) যারা ফাসিক ফুজ্জারি কাজ করে ।
৪) নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুর পাক সল্লাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সম্পর্কে যাদের ভ্রান্ত আকিদা।যেমন তিনি মাটির মানুষ, ইলম গাইব নেই এইসব যারা বলে তাদের যাকাত দেয়া যাবে না।
৫) যারা যাকাত কে তুচ্ছ তাচ্ছিল করে তাদের দেয়া যাবেনা।
৬) যারা নবী আলাইহিমুস সালাম , হযরত সাহাবা আজমাইন রদিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সমালোচনা করে তাদের দেয়া যাবেনা।
৭) “কোয়ান্টাম”( রক্ত কেনা-বেচার, যোগ সাধনার প্রতিষ্ঠান)। কোয়ান্টামের মুল ব্যক্তি তথাকথিত মহাজাতকের সাথে ইসলামের কোন সংযোগ নেই।
৮) “জাকির নায়েক” পিস টিভির সম্প্রচারের লক্ষ্যে।
সে নিজেই হারাম ছবি তুলে, বেপর্দা হয়,ইসলামের অপব্যখ্যা করে।
৯) যে সকল মাদ্রাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং ( এতিম খানা ) নেই সেখানে যাকাত
দিলে যাকাত আদায় হবে না।
ওশরঃ শস্য, ফল ফলাদির যাকাত কে ওশর বলে।
যা বিনা কষ্টে অর্জিত হয় তার ১০ ভাগের ১ ভাগ ওশর আদায় করতে হয়।
আর যা কস্ট করে ফলানো হয় তার ২০ ভাগের ১ ভাগ ওশর আদায় করতে হয়।
এখন আপনার বাড়ীর সামনে যে ফলের গাছ গাছালি আছে তারও ওশর আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আপনার বাড়ীর আঙ্গীনায় বেড়ে উঠা কাঠাল গাছ থাকলে আর সেখানে ৪০ টি কাঠাল হলে, আপনাকে ৪ টি কাঠাল ওশর হিসেবে দিতে হবে।( যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত তারা ওশর পাওয়ারও উপযুক্ত)
যাকাত ওশর সংগ্রহকারীর আরও ফযিলতঃ
১) যাকাত আদায় করা খাস সুন্নত
২) যত হাত ঘুরে আসে তত ফযীলত
৩) নিজের অর্থ খরচ না করেও ফযীলত
৪) হকের প্রচার প্রসার হয়।
৫) জুলুমের প্রতিবাদ হয়।
৬) দুনিয়া আখিরাতে প্রশান্তি পাওয়া যায়।
৭) সদকা এ জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যায়।
৮) অবধারিতভাবে রিযিকে বরকত হয়।
যাকাত দেবার উপযুক্ত স্থান (নিঃসন্দেহে):
সব আলোচনার শেষে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে ১) কোথায় দিলে ফরয যাকাত আদায় হবে ( অর্থাৎ আপনার মাল পবিত্র হবে) ২) কোথায় দিলে মুখ রক্ষা না হয়ে বরং মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে।৩) কোথায় দিলে বাস্তবিক সদকায়ে এ জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। ৪) আর সে স্থানের পরিচয় কি?
উত্তর হচ্ছে “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা ও এতিমখানা” যাকাত দেবার একমাত্র উপযুক্ত স্থান (নিঃসন্দেহে)
ইলম ও আমলঃ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসার কোনটা হয়তো কোন নেতার, কোনটা কোন শিল্পপতির, কোনটা কোন বিদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তির। আর কোনটা ব্যবসার উদ্দেশ্যে। “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা ও এতিমখানা” একমাত্র মাদ্রাসা যা কিনা মহান আল্লাহ পাক উনার একজন লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ উনার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।ফলে ছাত্রদের যেমনি ইলম বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি তৈরি হচ্ছে উন্নত মানস।
এই মাদ্রসায় শিখানো হয় বিশুদ্ধ আকিদা।
কুরআন শরীফ, হাদিস শরীফ উনার খিলাপ কোন আমল নেই।
পাঁচ বছরের কোন ছেলে মহিলাদের সামনে যায় না।
পাঁচ বছরের কোন মেয়ে পুরুষের সামনে আসেনা।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকাগণও তাহাজ্জুদের নামায পড়তে অভ্যস্ত।
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার গবেষণা কেন্দ্রে হাজার হাজার কিতাব আছে।এত দলিল ভিত্তিক ফতোয়া পৃথিবীর আর কোথাও থকে প্রকাশিত হয় না।
পাঁচটি ভাষার উপর গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়।(বাংলা, ইংরেজি,উর্দু, আরবী,ফারসী)
ব্যবহারিক তালিমের জন্য, মাইকের সামনে আলোচনা করা, পাঠ করা কমপক্ষে সপ্তাহে ১ দিন বাধ্যতামুলক।
এখানে হামদ,নাত,কাসিদা চর্চা করানো হয়, যা পাঠ করা , শোনা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে অনন্তকাল ব্যপী সাইদুল আইয়াদ শরীফ (ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন করা হয় যা শুধু এই সিলসিলার তলিবে ইলম যারা উনারাই শিখছেন। ফলে যারা বড় হয়ে এ আমল জারী রাখবেন এবং যারা এই মাদ্রসায় সহযোগিতা করবেন সবাই সদকা এ জারিয়ার সওয়াব পাবেন।
©somewhere in net ltd.