নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৮


লোকাল ট্রেনের ভিতরের দৃশ্য।

স্যান্ড হার্ট রোড স্টেশন। প্রায় মধ্যরাত। আমি আর ওই বৃদ্ধ ভদ্রলোকই শুধু ছিলাম সেসময় প্লাটফর্মে।

আন্ধেরিতে বর্ষাস্নাত এক সন্ধ্যায় ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত মানুষ! কোনও কারণে সেদিন ট্রেন আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। সকলের চেহারায় বিরক্তি।

প্লাটফর্ম, ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী। ঠিক নিশ্চিত নই কোথায়, যতদূর অনুমান করতে পারি মসজিদ বন্দর!

শেষ রাতের ট্রেন। আমরা অল্প কয়েকজন মাত্র যাত্রী। বড্ড নীরব!

এক.

লোকাল ট্রেনের শহর

মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেন আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে! প্রতি দুমিনিট পরপর বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন আসছে, যাচ্ছে। সাথে প্লাটফর্মজুড়ে অগণিত মানুষের দুদ্দাড় ছোটাছুটি সর্বক্ষণ, গন্তব্যে যাওয়া আসার তাড়া। পুরো মুম্বাই শহরকেই যেন অনেকটা অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে রেল লাইনগুলো। আপনি মুম্বাইয়ের সর্বত্র যেতে পারবেন লোকাল ট্রেনে। সত্যি পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে! একটু পর পর এক-ই রেল লাইন দিয়ে একাধিক ট্রেন একের পর এক আসছে যাচ্ছে সারা শহরজুড়ে। কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটছে না; একটা আরেকটাকে ধাক্কা দিচ্ছে না। কী চমৎকার সমন্বয়! নিঃসন্দেহে ঢাকাতেও যদি মুম্বাইয়ের মতো এমন বৃহৎ ও ব্যাপক রেল সুবিধা দেয়া যাও, তাহলে সাধারণ মানুষ দারুণ উপকৃত হবে। মুম্বাইয়ে যেয়ে বুঝেছি ট্রেনকে সেকেলে, পুরনো, ধীর গতির বাহন বলে হেসে উড়িয়ে দেবার কোনও সুযোগ নেই। আজও মাথা উঁচু করে বীর দর্পে পু ঝিকঝিক পু ঝিকঝিক শব্দ তুলে রাজকীয় ভঙ্গিতে অগণন মানুষকে বুকে নিয়ে রাতদিন ছুটে চলে মুম্বাইয়ের একেকটি লোকাল ট্রেন! ফাস্ট মেইল ট্রেনগুলো খুব দ্রুত গতির। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই বোঝা যাবে এর গতির প্রচণ্ডতা। মুহুর্মুহু বাইরের দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। মনে হয় যেন বাতাসে শীষ কেটে যাচ্ছে ফাস্ট মেইল ট্রেনগুলো। অল্প কয়েকটি স্টেশনেই এগুলো দাঁড়ায়। যেমন নাম, কাজেও তেমন।
মুম্বাইয়ের আমার সিংহভাগ সময় কেটেছে এসব ট্রেনের ভিতরে। ট্রেনে চড়েই সারা মুম্বাই ঘুরে বেড়িয়েছি। তিনদিনের আনলিমিটেড রেল ভ্রমণের নিশ্চিন্ত ট্যুরিস্ট টিকিট ছিল পকেটে, যার বদৌলতে যখন তখন যেখানে যেমন খুশি ট্রেনে চেপে বসতাম। এভাবে অনেক স্টেশন, অনেক প্লাটফর্মে থেমেছিলাম। সেসবের অনেক স্মৃতি জমে আছে। সত্যি এতো এতো স্মৃতি মনে রাখাও কঠিন। সবমিলিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি মুম্বাইয়ে এই দীর্ঘ রেল ভ্রমণে। হয়তো প্লাটফর্মে দুয়েক কাপ চা-কফি, লেমন বা কোকোম জুস, ক্ষুধা পেলে বড়া পাও, রগড় (চটপটিকেই ওরা রগড় বলে), কেক, বিস্কিট, সামোসা ইত্যাদি খেয়েছি। দেখেছি মানুষ, তাদের রকমারি জীবনধারা আর প্রকৃতি। একটা ব্যাপার আমাকে উপস্থিত মুহূর্তে বেশ বিস্মিত করেছিল, তা হলো আমরা যেটাকে সিঙ্গারা বলি, ওরা সেটাকে সামোসা বলে। একই জিনিস, আটার ত্রিভুজ বলের ভিতর আলুর তরকারি; শুধু এখানে নাম সিঙ্গারা ওখানে সামোসা। জিনিস এক-ই। আমরা আবার আরেক ধরণের খাবারকে সামোসা বা সামুচা বলে থাকি। যা হোক মুম্বাই রেল কর্তৃপক্ষকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ তাদের এই ট্যুরিস্ট টিকিট ব্যবস্থার জন্য। আমার দারুণ কাজে লেগেছে। আর হ্যা এই যে এতো আনন্দঘন দীর্ঘ রেল ভ্রমণ, এটা কিছুতেই সম্ভব হতো না, যদি না কোলকাতা থেকে মুম্বাই আসার পথে ট্রেনে একজন ভাল বন্ধু জুটতো। উহু, স্মৃতি সত্যি বড় প্রতারক, কিংবা একে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিশক্তির দৈন্যতাও বলা যেতে পারে। সেই বন্ধু, সুহৃদের নাম আজ আর কিছুতেই মনে করতে পারছি না। পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদে ওর বাড়ি। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে ট্যুরিস্ট টিকিটের ব্যাপারটা ও-ই আমাকে জানিয়েছিল। এলেখায় ওর প্রতি আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ও না হলে কিছুতেই জানতে পারতাম না ব্যাপারটা। অনেক, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় বন্ধু, সুহৃদ। আপনার জন্য আমার ভরপুর শুভকামনা।
এসব লোকাল ট্রেনগুলো খুব অল্প সময় প্লাটফর্মে থাকে, তিন থেকে চার মিনিট। এর মধ্যে উঠতে না পারলে পরের ট্রেন ধরতে হবে। পিক আওয়ারগুলোতে, মানে সকাল নটা দশটার দিকে পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ হয়ে ওঠে; অনেকটা ঢাকার লোকাল বাসের মতোই শোচনীয় অবস্থা। শোচনীয় মানুষের জন্য। ট্রেনে ওঠার জন্য সেকি ভীষণ দৌড়ঝাপ, ছোটাছুটি আর শেষ চিত্র কোনরকম হ্যান্ডেল ধরে বাদুড়ঝোলা হয়ে দরজায় ঝুলে আছে কিছু যাত্রী, ওই চলন্ত ট্রেনেই। ভিতরেও একদল হোমো সেপিয়েন্স কোনরকম জড়াজড়ি করে দাঁড়ানো। যারা বসে আছে তাদের দিকে ঈর্ষান্বিত চোখে, হা করে হতাশ তাকিয়ে থাকা ছাড়া এসব পিক আওয়ারগুলোতে দাঁড়ানো যাত্রীদের আর তেমন কিছু করার থাকে না। মানুষের ঠাসাঠাসিতে মোবাইলে কল রিসিভ করাও এসময় কষ্টকর ও বিড়ম্বনার হয়ে দাঁড়ায়। বেশ কয়েকবার ট্রেনে এভাবে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। কী যে বিরক্তিকর ব্যাপারটা, তা বলে বোঝানো যাবে না! নিজেকে কেমন যেন জড়বস্তু জড়বস্তু বলে মনে হয়।
শুধু মানুষ আর মানুষ। এক কথায় বিরামহীন জনস্রোত আন্ধেরি, দাঁদড়, চার্চগেট, বান্দ্রা ইত্যাদি মুম্বাইয়ের বৃহৎ, গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে। দিন রাত সবসময়। সত্যি-ই তাই। মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে হয়তো শুধু চার ঘন্টারই বিরতি মাঝরাতে; একটা থেকে পাঁচটা। পাঁচটায় বা তারও আগে, সূর্য ওঠারও আগে সেখানে আমি প্রথম ট্রিপ নিয়ে ছুটতে দেখেছি ট্রেন। আমি নিজেও ছিলাম ওরকম কোনও ট্রেনে। আবার রাত একটার পরেও নিঃসঙ্গ একা বসে থেকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখেছি মধ্যরাতের মায়া নগরীকে।
(চলবে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ঢাকার মতোই মানুষের ঘনত্ব?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০

অর্ক বলেছেন: অবশ্যই ঢাকার থেকে বেশি। ধন্যবাদ।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১১

রানা আমান বলেছেন: পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি ।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। হয়তো লিখবো শীঘ্রই।

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৫

কালীদাস বলেছেন: ভাল লাগল আপনার ট্রাভেলগ :)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: ট্যুরিস্ট টিকিটের দাম কত?

৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪

সঞ্জয় নিপু বলেছেন: সব কিছু যেন ট্রেনের মতই খুব দ্রুত গতিতে ছুটে চলল, আরো বিস্তারিত থাকলে ভাল হতো, কোথা থেকে কই গেলেন, কি খেলেন, কি দেখলেন ইত্যাদি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.