নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮


চার্চগেট স্টেশনে একটি সন্ধা। প্লাটফর্ম।

এ. জে হুইলার; বই ও পত্র পত্রিকা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। চার্চগেট স্টেশন।

মুম্বাই CST তে একটি বর্ষাস্নাত সন্ধ্যা। অপেক্ষা ট্রেনের।

(পূর্ব প্রকাশের পর)
মুম্বাইয়ের চার্চগেট স্টেশনটা এক কথায় ভীষণ সুন্দর। স্টেশনের থেকে বেশি একে একটা বড় বুফে রেস্টুরেন্ট বলা যেতে পারে। রাজ্যের খাবার দাবার সেখানে পাওয়া যায় সবসময়। প্যাকেটজাত ও তৈরি খাবার। ছোট বড়, সরকারি বেসরকারি সবমিলিয়ে প্রায় দশ থেকে বারটি খাবারের দোকান আছে এখানে; স্টেশনের ভিতরে ও প্লাটফর্মে। বসার কোনও ব্যবস্থা নেই, খেতে হবে দাঁড়িয়েই। প্লাটফর্মে দুচারটা বেঞ্চ থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। 'ডিম্পি ফুড কর্নার' বা ডিম্পি দিয়ে এরকম কোনও নামের একটি তুলনামূলক বেশ বড় খাবারের দোকানের কথা মনে পড়ছে। সারাক্ষণই ক্রেতাদের ভীর লেগে আছে দোকানের সামনে; ধুন্ধুমার বেচাকেনা হচ্ছে সবসময়। বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি হরেক রকম জুস পাওয়া যায় দোকানটিতে। দামও নাগালের ভিতরেই। যাবতীয় পণ্য সেখানে শরীরে লেখা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এক পয়সা এদিক সেদিক করার সুযোগ নেই। মুম্বাইয়ে আইন শৃঙ্খলা খুব কঠোর। উল্টা পাল্টা কিছু করলে পুলিশি এ্যাকশন অনিবার্য। ওখানে দু'নাম্বারির প্রবণতা তুলনামূলক অনেক কম। কোলকাতার থেকে তো অবশ্যই অনেক কম। যাই হোক ওখানে, মানে ডিম্পি ফুড কর্নারে দশ রুপিতে গাজরের এক গ্লাস জুস পাওয়া যায়। বেশ কয়েকবার খেয়েছি। একদম তাজা গাজরের জুস। অর্ডার করলে ওরা বানিয়ে দেয়। চার্চগেটে গেলে, অন্তত এক গ্লাস হলেও গাজরের জুস খেতাম ওখানে। চিনি কম খেলে ওদের আগেভাগে বলতে হবে, নচেৎ সাধারণত জুসে বেশি চিনি দেয় ওরা। পাশে আরেকটা দোকানে আপেল জুস পাওয়া যায়। ওটা বোধহয় সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দোকান। নামধাম আজ আর ঠিক মনে নেই। এই দোকানটা CST (ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাল) সহ মুম্বাইয়ের আরও কিছু স্টেশনে দেখেছি। ছোট কাউন্টার ধরণের দোকান। শুধুমাত্র রেডিমেড আপেল জুস-ই বিক্রি করে। মেশিনে প্রক্রিয়াজাত হয়ে আসে জুস। চার্চগেট স্টেশনে এই জুসটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম বললে ভুল হবে না। প্রাণ ভরে খেয়েছি। খেতে দারুণ সুস্বাদু! বহুবার খেয়েছি। যতবার খেয়েছি ততবারই মনে হয়েছিল, যেন প্রথমবার পান করছি এই অমৃত তরল! পাশেই ওরকম আরেকটি দোকানে খুব ভাল চা, কফি পাওয়া যায়। দাম পাঁচ থেকে পনের রুপির মধ্যেই। ওখানে প্যাকেটজাত আট-দশ রূপি দামের এক ধরণের ছোট ডোনাটও পাওয়া যায়। খেতে দারুণ সুস্বাদু। এক হাতে কফি আর আরেক হাতে ডোনাট, দুটো একসাথে উপভোগ করতে করতে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখেছি চার্চগেট স্টেশন। ঝা চকচকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। খাবার দাবারের বিশাল আয়োজন, কোথাও বিন্দুমাত্র কোনও নোংরা আবর্জনা নেই; ঝলমলে মনোরম আলোকসজ্জা, অবিশ্রান্ত আনাগোনা ব্যস্ত মানুষের। মনে হয় যেন সবসময় উৎসব এখানে, সবসময় অনুষ্ঠান এখানে।
চার্চগেট স্টেশনে আমার অনেক সময় কেটেছে। এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা চমৎকার। একটা আধুনিক রেল স্টেশনের এরকমই হওয়া উচিৎ। নিঃসন্দেহে চার্চগেট স্টেশনটা ভারতবর্ষের অন্যান্য রেল স্টেশনের জন্যেও অনুকরণীয়। এমনকি আমাদের দেশও ওর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অমন আধুনিক, পরিচ্ছন্ন রেল স্টেশন এখানেও নির্মাণ করতে পারে। অবশ্যই এখানেও নির্মাণ করা যেতে পারে! কখনও সেখানে একটা কাগজের টুকরোও পড়ে থাকতে দেখিনি কোথাও। সবসময় নিট এন্ড ক্লিন। অথচ মুম্বাইয়ের অন্যতম প্রধান স্টেশন এই চার্চগেট। এখান থেকেই বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন যাত্রা শুরু করে। সবসময় সেখানে জনসমাবেশ, মিছিলের ভীর। মানুষ অবিরাম আসছে, যাচ্ছে; আসছে যাচ্ছে। শত শত মানুষ। তারপরও কতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন!
আনুমানিক রাত ন'টা। মুম্বাই CST (ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাল)। বিরাট স্টেশন! মুম্বাইয়ের প্রধান রেল স্টেশন। এই স্টেশন থেকে মুম্বাই-ই শুধু নয়, অন্যান্য সকল আন্ত রাজ্যের ট্রেনও পাওয়া যায়। সেসময় কোথায় যাচ্ছিলাম এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। ট্রেনের কামড়ায় আমি একা। ট্রেন এই ছাড়ে আর সেই ছাড়ে, নড়াচড়া শুরু করেছে। ঠিক এমন সময় একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে অনেকটা লাফিয়েই উঠে পড়লেন আমার কামড়ায়। মাথায় স্থানীয় মারাঠিরা যে এক বিশেষ ধরণের সাদা টুপি পড়ে থাকে, সেই টুপি। কামড়ায় একা আমাকে দেখে কান পর্যন্ত বিস্তৃত হাসি ছড়িয়ে এক নাগাড়ে মারাঠিতে কিছু বললেন ভদ্রলোক। আমাকে স্থানীয় মারাঠিভাষী ভেবেছিলেন। আমি হিন্দিতে তাকে হিন্দিতে বলার জন্য বললাম। ভদ্রলোক তখন আমার কাছে হিন্দিতে জানতে চাইলেন, 'এই কামড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত কিনা?'
'না, না, প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়। জেনারেল কামড়া। আপনি বসুন।' জবাবে হিন্দিতে আশ্বস্ত করলাম তাকে। ততদিনে আমার মুম্বাই রেলের নারী নক্ষত্র সব জানা হয়ে গেছে। প্রত্যেক ট্রেনেই কিছু কামড়া নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সেখানে সেই বিশেষ ধরণের মানুষ ছাড়া, সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। নারীদের কামড়া দেখলেই বোঝা যায়। সেখানে সব নারীরা অবস্থান করছেন। ভুল হবার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের কামড়া বাইরে থেকে অতো বোঝা যায় না। ওদের কামড়ায় ভুল করে উঠে পড়া অসম্ভব কিছু নয়! কিন্তু কোনও চেকার ধরলে তৎক্ষনাৎ পাঁচশ' রুপি ফাইন দিতে হবে। এরকম একটা ঘটনা আমার নিজেরই ঘটেছিল। মুম্বাইয়ে শুরুর দিকে ভুল করে আমি একবার প্রতিবন্ধীদের কামড়ায় উঠে পড়েছিলাম। সেখানেই যাত্রীদের কাছে জেনেছিলাম ফাইনের ব্যাপারটা। ফাইনের ভয় দেখিয়ে আমাকে নামিয়ে দিয়েছিল সবাই। মজার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এখন মজা লাগলেও উপস্থিত মুহূর্তে আমি নিজেও খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ওই ঘটনায়। সেটা নিয়ে আগামীতে কখনও লেখার ইচ্ছে রইলো। যা হোক যেখানে ছিলাম, সেদিন CST তে আমাকে একা কামড়ায় দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। পরে আমার কাছ থেকে শুনে আশ্বস্ত হয়ে, নিশ্চিন্ত মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ট্রেনে সফর করতে লাগলেন। পরে কাছাকাছি কোনও স্টেশনে নেমে যান।
আমার পুরো মুম্বাই ভ্রমণে সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে এই ঘটনাটি। ঢাকা থেকে মুম্বাই প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে। সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ আমরা। অথচ ট্রেনে সেদিন আমাকে একজন মারাঠি ভেবে বসেছিলেন ভদ্রলোক। ব্যাপারটা সেদিন উপস্থিত মুহূর্তে আমাকে দারুণ আনন্দ দিয়েছিল। সারাদিনের ভ্রমণের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর করে দিয়েছিল সেদিন লোকটার সেই আন্তরিক মিষ্টি হাসি ও মারাঠি ভাষার কথাগুলো। আজ মনে পড়লে, আজও তেমনি সুখানুভূতিতে ভরে ওঠে মন। ইশ শুধু যদি আমি মারাঠি জানতাম, তাহলে সেদিন মারাঠিতেই জবাব দিতে পারতাম; কষ্ট করে তাকে আর হিন্দি বলতে হতো না!
(চলবে)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: নতুন কিছু জানলাম

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৩

অর্ক বলেছেন: জেনে সুখী হলাম। ধন্যবাদ।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪০

কালীদাস বলেছেন: বাংলাদেশের অনেক লোক বলত ইন্ডিয়ানরা অনর্গল ইংলিশ বলতে পারে। বাস্তবে মনে হয়েছে পুরাই চাপা। বোম্বেতে কি অবস্হা?

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

অর্ক বলেছেন: মুম্বাইয়ে হিন্দি না জানলে, দোভাষীর সাহায্য ছাড়া কিছু করা সম্ভব না। আমি মূলত সাধারণ যে সব মানুষের সাথে, তাদের মনে হয়নি তারা ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারে। আমি অবশ্য অনর্গল হিন্দি বলতে পারি, তাই তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৬

তাওহিদ হিমু বলেছেন: লোকটার একটা ছবি নিয়ে ফেললে পারতেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.