নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা আমাকে ভালবেসেছিলে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১



গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠ। সাল মাস তারিখ অত কিছু আজ আর মনে নেই। মনে রাখার প্রয়োজনও দেখি না। খুব সম্ভবত রোজার মাস ছিল। গনগনে আগুন তপ্ত এক দুপুর। আমি ক্লাবের অফিসের সামনের খোলা বারান্দায় একটি চেয়ারে অলস বসে স্মার্টফোনে খেলছিলাম। তখন লক্ষ্য করলাম, মাঠের চারিদিকে একজন ভিনদেশি শেতাঙ্গিনী, স্বর্ণকেশী মেয়ে রাউন্ডের পর রাউন্ড দিচ্ছে। অসাধারণ ফিটনেস ছিল মেয়েটার। তিন থেকে চার মিনিটের ভিতরেই অতো বড় মাঠটা পুরো দৌড়ানো খেলা কথা নয়! হতে পারে মেয়েটা একজন এ্যাথলেট ছিল। ক্লাবে বা মাঠে সেসময় মানুষ ছিল না বললেই চলে। ও একাই দৌড়াচ্ছিল তখন। আমি সেভাবে লক্ষ্য করিনি মেয়েটিকে। আমার দৃষ্টি সীমার মধ্যে বারবার শুধু ও আমাকে দৌড়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। কয়েকবার কেবল মুখ তুলে তাকিয়ে দেখেছি। ব্যস এটুকুই। এভাবে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলো। এক পর্যায়ে আমি ফিরে আসছিলাম ওখান থেকে। নিজের মনে হাটছিলাম গেটের দিকে। হঠাৎ এসময়, মেয়েটি দৌড়ে আমাকে অতিক্রম করার সময় চোখে চোখ রেখে, মিষ্টি হেসে, চোখ নাচিয়ে 'হ্যালো কেমন আছ?' ইশারায় জানতে চাইলো। হয়তো 'হাই হ্যালো' কিছু বলেওছিল। আজ আর অতো এ টু জেড মনে নেই। প্রচ্ছন্ন প্রেমের আহ্বান ওর অবয়বে, দুষ্টু মিষ্টি চাপা হাসিতে। অবশ্য বাইরের কেউ দেখলে নির্ঘাত ভাববে, আমি মেয়েটির অনেকদিনের জানাশোনা কেউ। আমারও তৎক্ষনাৎ এমন মনে হয়েছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি খুব অবাক!
স্থাণু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম সেখানেই। এরকম কিছুর জন্য তখন মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এভাবে দৌড়ে আমাকে অতিক্রম করল মেয়েটি। আমি পিছু ফিরে দেখতে লাগলাম ওকে। আমি তখন অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আরে এটা কি! মন চাইল ইশারা করলাম, সম্পর্ক করলাম, তারপর টাটা বাই বাই। এটা কি জেমস বন্ডের সিনেমা চলছে নাকি এখানে! বিড়বিড় করে বললাম। উপস্থিত মুহূর্তে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলতে চলতে তখন দাঁড়িয়ে পড়েছি। ভাবছিলাম, আমি যদি এরকম পথেঘাটে কোনও মেয়েকে একা পেয়ে এমন সরাসরি চোখে চোখ রেখে টুই টুই করি, মেয়েটা যদি সিন ক্রিয়েট করে বসে, মানুষ তখন আমাকে শুধু মারবে না একেবারে তুলাধুনা করে ছাড়বে।
তারপর আবার মেয়েটা দৌড়ে ঘুরে আসলো আমার কাছে। আমি ওভাবেই দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে। তবে এবার আর অন্যমনস্ক নই। এবার অপলক, উৎসুক, তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে লাগলাম মেয়েটিকে। জানি না আমার এক্সপ্রেশনে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝল কিনা মেয়েটা! দেখলাম ইশারা তো দূরের কথা, এবার আর চোখে চোখও রাখল না, মুখেও আগের সেই ঈষৎ, মিষ্টি হাসির লেশমাত্র নেই। উল্টো এবার আমাকে খানিকটা পাশ কাটিয়ে গেল, উপেক্ষা করলো। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওর ব্যবহারটা খুব-ই খারাপ লাগল, কিঞ্চিৎ অপমানজনকও; যেন আমার প্রতি ওর আর বিন্দুমাত্র কোনও আগ্রহ নেই! কে বলবে এই মেয়েটাই গেলবার কেমন চোখে চোখ রেখে মিষ্টি হেসেছিল, স্পষ্ট ইশারা করেছিল! বুঝলাম না ওরকম একটা হাই স্পিডে দৌড়রত মেয়ের ইশারায় সাড়া দিব কীভাবে! পিছনে পিছনে দৌড়ানো তো আর সম্ভব নয়! অতো ফিটনেস বা প্রস্তুতি কোনটাই ছিল না! আর যাই হোক কোনও মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। উহু অসম্ভব! তবে... আর মেয়েটারও অমন একবার ইশারা করে পরের বার আবার শীতল, নির্লিপ্ত মুখে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে যাওয়াটাও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আমি এতে খানিকটা কষ্ট পেয়েছিলাম বৈকি। বুঝলাম না ওইটুকু মুহূর্তে আমার কাছ থেকে কোনও ব্যথা পেল কিনা মেয়েটি! খুব সম্ভবত ভেবেছিল আমি ওর ইশারা করাটা পছন্দ করিনি, কিংবা পরবর্তীতে নিজেই নিজেকে সামলে নেয় স্থান, কাল, পাত্র অনুধাবন করে। আসলে সেদিন যে কী ভাবছিল ও, কি যে খেলা করছিল ওর মনে, তা জানার আগ্রহ আমার কোনদিন যাবে না। কিন্তু কিছু করার নেই; জানি, সেটা আর কোনদিন জানাও যাবে না!
উহু না, এভাবে একবার ইশারা করে, পরেরবার আবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া চলবে না! এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কিছু হলো! এবার তুমি ফিরে আস, আমি তোমাকে ইশারা করবো। ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবলাম আমি। মাথায় সেদিন কি যে ভূত চেপেছিল! তারপর এক পর্যায়ে মেয়েটা তৃতীয়বারের মতো মোড় ঘুড়ে আমার দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো। এবার করলাম কি, ওকেও আমার মতো অপ্রস্তুত করতে আমি ওর বিপরীতে ওকে ধরার মতো করে হঠাৎ জোরে দৌড়তে লাগলাম। এতে মেয়েটা দারুণ ঘাবড়ে যায়! সেসময় ও 'ইইইইই...' করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ভীষণ জোরে চিৎকার করে ওঠে। আমি দৌড়তে দৌড়তে ওকে দেখলাম, ভয়ে ওর চেহারা তখন একেবারে কাঁদ কাঁদ! দৌড় থামিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দু'তিনজন ছোট ছোট ছেলে সেসময় নেটে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করছিল, মেয়েটির অমন বিকট চিৎকার শুনে ছেলেগুলো খেলা থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে দেখতে লাগল আমাদের। জানি না বাচ্চা ছেলেগুলো কী ভাবছিল সেসময়! আমি নিজেও তখন ভয় পেয়ে দৌড়তে থাকি দরজার দিকে। মেয়েটা অতো জোরে চিৎকার করবে স্বপ্নেও ভাবিনি। 'ওহ্ নো।' পিছনে বলতে শুনলাম মেয়েটিকে। সেসময় খুব হাঁপাচ্ছিল ও। সত্যি বলতে কি সেই ঘটনার জন্য আমি আজ অনুতপ্ত। সেদিন ওকে ওভাবে দৌড়রত অবস্থায় ভয় দেখানোটা মোটেই ঠিক হয়নি। এমনকি সেসময় মেয়েটি ভয় পেয়ে সেখানে জ্ঞানও হারাতে পারতো! এই লেখার মাধ্যমে আমি ওকে আন্তরিক সরি বলছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার লিখতে! মেয়েটির সেই প্রথমবার ইশারা করা মুখটা বারবার মনে পড়ছে। রুগ্ণ, পরিশ্রান্ত, দুধের মতো সাদা শীর্ণ, নিষ্পাপ একটি মুখ, ভাঙা চোয়াল ও মুখে ভাজের কারণে মূল বয়সের থেকে বেশি বয়স্ক দেখাচ্ছিল, যা অতিরিক্ত দৌড়ের ফলে হয়েছিল, পেশাদার দৌড়বিদদের যেমন হয়; উস্কোখুস্কো সোনালী চুল, সেই আন্তরিক স্মিত হাসি, চোখে চোখে ইশারা করা, প্রচ্ছন্ন আমন্ত্রণ প্রেমের। আমি দরোজার কাছে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। চোখে চোখ পড়তে আমার দিক থেকে লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিল ও। তারপর আস্তে আস্তে আবার দৌড়তে লাগল। ও বুঝতে পেরেছিল, ওর ইশারার উত্তরে নিছক মজা করার জন্য আমি এমন করেছি। আমি ক্লাব থেকে বেরিয়ে হাটতে লাগলাম সড়কে।
ঘটনাটা এটুকুই। সেদিন ভরা দুপুরবেলায় ঘটেছিল বলে কোনও জল ঘোলা হয়নি। এটা যদি বিকেলে বা সন্ধ্যায় হতো অনেক মানুষের উপস্থিতিতে, তাহলে মেয়েটির চিৎকারে বড় কোনও দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে দাঁড়াত। ওখানে আনসারদের ক্যাম্প আছে। সিকিউরিটি সিস্টেম খুব টাইট। তবে আমার মনে হয়, তেমন কিছু হলে মেয়েটি সত্য স্বীকার করে নিত, ও-ই প্রথমবার আমাকে ইশারা করেছিল, আমি নই। যাই হোক ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটে যায়। ওর অমন বিকট চিৎকারের পর আমার আর ওখানে অবস্থানের কোনও সুযোগ ছিল না। ক্রিকেট প্র্যাকটিসরত ছেলেগুলো ক্লাবের স্টাফদের কাছে ব্যাপারটা জানাতে পারে! তাই দ্রুততম সময়ে ক্লাব ছাড়লাম। সত্যি সেদিন সেই ঘটনার আগে এবং পরে সেই স্বর্ণকেষী বিদেশিনী যে কি ভাবছিল আমাকে নিয়ে, তা খুব জানতে ইচ্ছে করে। ওর জন্য আমি আমার হৃদয়ের গভীরতম স্থান থেকে ভালবাসা জানাচ্ছি। আজ যখন সেই ক্ষণগুলো চোখের সামনে ভাসছে, মনে হচ্ছে, সেদিন ওর চোখে চোখে ইশারা করায় সামান্যতম অশ্লীলতা ছিল না; কাম লোভ লালসা কিচ্ছু না। ছিল তো ছিল শুধু নিটোল প্রেম, পবিত্র ভালবাসা। এভালবাসাকে ফিরিয়ে দিব এমন নরাধম আমি নই। এর স্থান হৃদয়ের গভীরতম স্থানে। আমি তা সেখানে নিলাম। আর যারা ভালবাসে, তাদের ভাল না বেসে পারা যায় না। তুমিও আমার হৃদয় নাও। তোমাকে আমার হৃদয় দিলাম। তোমাকে, তোমাদেরকে, তোমরা যারা আমাকে ভালবেসেছিলে, সেভালবাসা ব্যক্ত করেছিলে; তোমাদের সবার জন্য আমার অনেক, অনেক শুভ কামনা, অনেক ভালবাসা। তোমাদের ভালবাসা আজ আমার জীবনে বাঙ্গময় একগুচ্ছ ফুল। যতবার মনে পড়ে, ফুলের নির্মল ঘ্রাণে ভরে ওঠে আমার চারপাশ। এই জীবন, এই পৃথিবী, এই বেঁচে থাকাকে তখন বড় বেশি ভাল লাগে। কারণ এখানে তোমরা ছিলে, আছ, থাকবেও।#

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: অর্ক সুন্দর লিখেছেন!:)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫৬

একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: ভাল লাগলো ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৩

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.