নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪৩


মুম্বাই মেট্রো স্টেশনের প্লাটফর্ম। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চিত নই কোন স্টেশন!

(পূর্ব প্রকাশের পর)
মুম্বাই মেট্রো সমাচার
আন্ধেরিতে প্রথম মুম্বাইয়ের পাতাল রেল মানে মেট্রোতে চড়ি। এখানকার মেট্রো কোলকাতার মতো মাটির নীচ দিয়ে চলে না, রাস্তার ওপর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় চলে। রাস্তা দিয়ে মেট্রো ট্রেনের আসা যাওয়া দেখা যায়। কোলকাতার তুলনায় মুম্বাইয়ে মেট্রোর ভারা দ্বিগুণ। এখানে দশ রুপি থেকে টিকিট শুরু, তারপর যথাক্রমে বিশ, ত্রিশ, হয়তো চল্লিশেরও টিকিট থেকে থাকবে; এখন ঠিক মনে পড়ছে না! কোলকাতায় ভারার তালিকা পাঁচ থেকে শুরু হয়ে যথাক্রমে দশ, পনের, বিশ, পচিশ... কোলকাতার থেকে মুম্বাইয়ের মেট্রো ঢেড় আধুনিক ও উন্নত। তাই ভারার ব্যাপারটা সহজেই হজম করা যায়। বড়, টিপটপ, পরিপাটি স্টেশন ও প্লাটফর্ম। ছোট ছোট কাউন্টার টাইপের খাবারের দোকান, সেখানে হরদম বেচাকেনা চলছে; চা কফি, জুস, হরেক রকম বার্গার ইত্যাদি রকমারি খাবার। ওখানকার সত্তর শতাংশ খাবার মূলত বার্গার ও পাউরুটি দিয়ে বানানো অন্যান্য খাবার। দাম বাইরের থেকে কিছুটা বেশি। মুম্বাইয়ের মানুষের মতো পাউরুটি প্রিয় মানুষ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। পাউরুটিকে ওরা সংক্ষেপে পাও বলে। বড়া পাও ওদের একদম জাতীয় খাবার! সবখানে বড়া পাও পাওয়া যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে, চায়ের দোকানে, হোটেল রেস্টুরেন্ট সবখানে বড়া পাও ও পাউরুটি দিয়ে তৈরি করা অন্যান্য খাবার যেমন ভাজ্জি পাও, বার্গার, হট ডগ ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার তৃপ্তিভরে খাচ্ছে লোকজন। মুম্বাইয়ে পাউরুটি দিয়ে বানানো খাবারের জনপ্রিয়তা আমাকে অবাক করেছে। মুম্বাইয়ের অনেক সাধারণ মানুষ দুপুর রাতের মিল সারে এইসব বড়া পাও ও পাউরুটি দিয়ে বানানো অন্যান্য খাবার খেয়ে। আমি নিজেও প্লাটফর্মে একবার দুপুরে দুটো বড়া পাও আর দু'গ্লাস পানি খেয়ে দেখলাম, পরে আর এক প্যাকেট বিস্কিট খাবারও জায়গা নেই পেটে। হয়ে গেল লাঞ্চ। এই ছোট ছোট বড়া পাওগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই পেট ভরাতে এগুলোর ক্ষমতা কী প্রবল! কিছুই না ছোট, গোল একটা পাউরুটির মাঝখানে গোল একটা আলুর চপ, ওই বার্গারই আর কি। দুটো খেয়ে দিব্যি পুরো দুপুর পাড় করা যায়। ব্যাপারটা শুনতে কিছুটা অস্বাভাবিক শোনালেও, সেদিন দুপুরে আমার জায়গায় আপনি পরপর দুটো বড়া পাও খেলে আপনিও আমার সাথে সুর মেলাতেন, দেখতে ছোট্ট হলেও পেট ভরাতে এগুলোর কার্যক্ষমতা অসাধারণ। মুম্বাইয়ে প্রাণভরে বড়া পাও খেয়েছি। দাম আকৃতি ও স্থান ভেদে আট থেকে বিশ রুপির ভিতরে। স্টেশনের প্লাটফর্মে আট রুপিতে পাওয়া যায়। পরিপূর্ণ স্বাদ পেতে হলে বড়া পাও গরম গরম খাওয়া ভাল।
উহ্ আমি লাইনচ্যুত হয়ে যাচ্ছি। লিখতে বসেছি মুম্বাইয়ের পাতাল রেল মানে মেট্রো নিয়ে, চলে গেছি বড়া পাওয়ে! বড়া পাও ও মুম্বাইয়ের খাবার দাবার নিয়ে সামনে একটা লেখা লিখবো আশা করি। আপাতত লাইনচ্যুত না হয়ে মেট্রো রেলেই থাকি, সঠিক লাইনের ওপর!
সকালবেলা আন্ধেরি মেট্রো স্টেশনে যেয়ে মানুষের ভীর দেখে মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল। এই সেই মানুষ, সহস্র মানুষ, বিরাট জনস্রোত! শত শত মানুষ সার বেধে অনবরত আসা যাওয়া করছে স্টেশনে। অনেক উচু থেকে দেখলে নির্ঘাত সার বাধা পিঁপড়ে বাহিনী মনে হবে। মুম্বাই শহরের অত্যন্ত চমৎকার একটি দিক হলো, এখানকার মানুষ খুব ডিসিপ্লিন্ড। নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা ওদের নেই বললেই চলে। এতো এতো মানুষের ভীরও বিরক্তি উদ্রেক করে না, যখন সবাই একজন আরেকজনের পিছনে সার বেধে চলে। সবাই নিয়ম মেনে চলে। এটা একটা বিরাট শান্তনা। সময় মতো আমার নাম্বার এলেই আমি ট্রেনে উঠবো, টিকিট কাটব, ভিতরে ঢুকবো, বেরিয়ে যাব; পিছন থেকে অভদ্র, অসভ্য, ইতর কেউ আমাকে স্কিপ করে আগে যাবে না। শুধু মেট্রোই নয়, অন্য সব ক্ষেত্রেই মুম্বাইয়ের মানুষের নিয়মানুবর্তিতা অতুলনীয়। সেখানকার লোকাল ট্রেনেও লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন যাওয়া আসা করে। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও তারা অনেক সভ্য ও সুশৃঙ্খল। দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের দেশে বা কোলকাতায় এমন হয় না! কোলকাতায় দেখেছি রেল স্টেশনে পানি খেতেও মানুষ ধাক্কাধাক্কি করে, ঝগড়াঝাঁটি হয়!
মুম্বাইয়ের মেট্রো স্টেশনের রুট কোলকাতার মতো অতো বড় নয়। কিছু স্টেশনের নাম মনে আছে, সাকিনাকা, মোরলনাকা, আন্ধেরি... উমম এই তিনটাই। চার্চগেট বা বান্দ্রায় মেট্রো স্টেশন আছে কিনা এখন ঠিক মনে পড়ছে না। হয়তো নেই! মেট্রোতে ঘটে যাওয়া একটা মজার অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করছি। না, কোন স্টেশন কোথায় যাচ্ছিলাম সেসব বিস্তারিত আজ আর মনে নেই, শুধু ঘটনাটাই মনে আছে। এটা সহযে ভুলবো বলে মনে হয় না। ঘটনা বর্ণনার স্বার্থে কিছু নাম শুধু উপস্থাপন করা হবে রুপক অর্থে। ধরুন আন্ধেরি স্টেশনে আমি টিকিট কাটলাম, যাব মোরলনাকা। মেট্রো স্টেশনগুলো যেমন হয়ে থাকে বিপরীতমুখী টু ওয়ে; অনবরত ট্রেন আসা যাওয়া করছে দুদিকে। তো আমি এক প্রান্তে যেয়ে দাঁড়ালাম মোরলনাকা যাবার উদ্দেশ্যে। সন্ধাবেলা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেখলাম ভীষণ নির্জন চারপাশ। কয়েকজন যাত্রী বিরাট প্লাটফর্মজুরে যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে আছে আনুমানিক বছর পচিশের একজন মেয়ে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'আচ্ছা এদিক দিয়েই তো মোরলনাকা যেতে হয় তাই না?'
উত্তরে ও বললো, 'উহু মোরলনাকার ট্রেন ওদিক দিয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি যান।'
হিন্দিতে আমাদের কথাবার্তা হয়েছিল। যা হোক একথা শুনে পড়িমরি করে ছুটলাম বিপরীত প্রান্তে। আবার সিঁড়ি দিয়ে নামা, কড়িডোর ধরে হাটা, তারপর সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা। আমার অবস্থা তখন কাহিল! প্লাটফর্মের ওপ্রান্তে গেলাম। নিশ্চিত হবার জন্য আবার আরেকজন সমবয়সী যুবককে জিজ্ঞেস করলাম, 'আসন্ন ট্রেন মোরলনাকা যাবে কিনা?'
উত্তরে বিস্ময়ের সাথে সে বলল, 'উহু মোরলনাকার ট্রেন এদিকে নয় ওদিক দিয়ে যাবে।'
আমি রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বললাম, 'আপনি নিশ্চিত তো ট্রেন ওদিক দিয়ে যাবে?'
'হ্যা ভাই আমি শতভাগ নিশ্চিত, মোরলনাকার ট্রেন ওদিক দিয়েই যাবে।'
আমি ধপ করে প্লাটফর্মের চেয়ারে বসে পড়লাম। তারপর ওনাকে বললাম, 'কিছুক্ষণ আগে ওদিকে একজন মেয়ে আমাকে মোরলনাকার ট্রেন এদিক দিয়ে যাবে বলে এদিকে পাঠাল!'
সে তখন বললো, 'কোনও কারণে মেয়েটা খুব টেন্স থেকে থাকবে। এসময় তার মাথা ঠিকভাবে কাজ করছে না। এরকম হয় মানুষের। কিন্তু মোরলনাকার ট্রেন ওদিক দিয়েই যাবে।'
বুঝুন অবস্থা! আবার সেই সিঁড়ি দিয়ে নামা, কড়িডোর ধরে হাটা, তারপর সিঁড়ি ভেঙে আবার প্লাটফর্মে ওঠা। এই নিয়ে তৃতীয়বার। আমার অবস্থা তখন খুব-ই করুণ। কোনরকম পা টিপে টিপে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম। বলা বাহুল্য শেষবার ক্লান্তিতে বড্ড শ্লথ ও ঋজু ছিল চলার গতি।
মেট্রোর ওপ্রান্তে যেয়ে মেয়েটাকে আর দেখলাম না কোথাও। ইচ্ছে ছিল জিজ্ঞেস করি, জেনেশুনে আমাকে বিদেশ বিঁভুইয়ে এরকম মুরগি বানালো কিনা! কিন্তু সম্ভব হলো না। তিনি নিজে ঠিক ঠিক আগের ট্রেনে চড়ে চলে গেছেন নিজের গন্তব্যে, বোধহয় মোরলনাকাতেই, হে হে হে!# (চলবে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:১৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বারগারের অনরূপ।। অমন দুটি খালা!! আর ভারতীয় খাবার বরাবরই সংক্ষিপ্ত এবং রোচক।। পেট ভরে যয়।। যা পর্যটকদদের জন্য আকর্ষনিয়।।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১২

অর্ক বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:১১

শুভ_ঢাকা বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে ভাল লেগেছে। সুন্দরভাবে মুম্বাইয়ের লোকদের বড় পাও প্রীতি ও মেট্রো ট্রেইনের বর্ণনা দিয়েছেন। ধন্যবাদ লেখককে।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বেশ ধোঁকা খেয়েছেন।

পোস্ট ভালো লাগলো। ধন্যবাদ অর্ক।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৪

অর্ক বলেছেন: বিরাট ধোঁকা হা হা! ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪

ভাললাগে না বলেছেন: আপনি ১টা জিনিস ভূল করেছেন। মেট্র আর পাতাল রেল এক জিনিষ না।
মেট্র মাথার উপর দিয়ে যায়,যাকে উড়াল রেলও বলে।
আর পাতাল রেল মাটির নিচ দিয়ে যায়, একে সাবওয়ে বলে।

০২ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০০

অর্ক বলেছেন: হ্যা একদম ঠিক। আসলে কোলকাতারটা মাথায় ঘুরছিল। পাতাল রেলকে কোলকাতায় মেট্রোই বলা। এক্ষেত্রে আমার প্রচলিত শব্দ ব্যবহার যথাযথ বলে মনে করি। মুম্বাইয়ের ক্ষেত্রে পাতাল রেল উল্লেখ ভুল, যা শীঘ্রইই ঠিক করব। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.