নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীঃ যেমন দেখেছি মায়া নগরীকে

০১ লা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮


ঈশ্বর ভূবন হিন্দু হোটেল। বামের ভদ্রলোক কাটিং চা খাচ্ছে। সামনে আমিও খাচ্ছিলাম।
আন্ধেরির এই সেই হোটেল যেখানে পচিশ রুপি চায়ের দাম আমাকে খুব অবাক করেছিল।

(পূর্ব প্রকাশের পর)
চা চায়ে চাহা

আন্ধেরি ম্যাকডোনাল্ডস'র পাশে ছোট্ট একটি হোটেল। অল্প সিটিং ক্যাপাসিটি, তেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও নয়। সেখানে গিয়েছি চা খেতে। মুম্বাইয়ে প্রতিদিন গড়ে ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট বড় বিভিন্ন হোটেলে, রেল স্টশনে পনের-বিশ কাপ চা-কফি খেতাম। মূলত চা-ই।
যাই হোক এক কাপ চা পান করলাম সেখানে। কাপ প্রিচ দুটোই ছিল নোংরা ও অনেক পুরনো। এমন দৈন্য দশা ওই দুটো বস্তুর যে যদি কেউ বলে ওগুলো শতবর্ষ পুরনো, তা হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না! হয়তো কোনও এক সময় জিনিস দুটি শাদাই ছিল, এখন নেই। এখন দীর্ঘ ব্যবহারে রং চটে কালচে হয়ে গেছে। এছাড়াও কাপ প্রিচের দুয়েক জায়গায় পলেস্তারা ধসে পড়েছে। ওতেই ওদের নির্বিকার চা পরিবেশন! বোধহয় সেভাবে পরিষ্কারও করা হয় না; কোনরকম পানিতে চুবিয়ে ওতে চা ঢেলে তা পরিবেশন করে থাকে খদ্দেরদের। হোটেলটিতে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। ওখানকার স্টাফদের ব্যবহার খুব-ই ভাল, কিন্তু তেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়! শুধু শুধু স্টাফদের দোষ দেয়াটাও হয়তো ঠিক সমীচীন হচ্ছে না, হোটেলটাই অমন। হোটেলের সাজসজ্জা বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
শুরুতে ভেবেছিলাম কাপের ব্যাপারটা জানিয়ে অন্য কোনও নতুন, ভাল কাপ আনিয়ে নেই পরক্ষণে মনে হলো আমি ভাই পর্যটক মানুষ, দুদিন থেকে চলে যাব, আমার কী! আমার ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর আদৌ কোনও দরকার নেই। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এভাবেই ভাঙাচোরা, রং ওঠা কাপে চা খাচ্ছে। আমি একদিন খেলে কিছু হবে না!
চা পান করলাম চুপচাপ। হোটেলের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা যাই হোক চা'র মান অতো খারাপ নয়। আমার কথার অর্থ হলো পরিবেশনটা যেমন তেমন হলেও চা খেতে সুস্বাদু ছিল। ধীরে সুস্থে বেশ সময় নিয়ে পান করলাম চা। ভাল লাগলো, তৃপ্তি পেলাম! শরীর ও মন দুটোই চাঙ্গা হয়ে উঠলো।
এক পর্যায়ে চা পান শেষে বেরিয়ে আসছিলাম সেখান থেকে। কাউন্টারে দাঁড়িয়েছি বিল দেব বলে। এসময় ওয়েটার অবলিলায় জানাল 'পাচ্চিস রুপিয়া।'
পাচ্চিস রুপিয়া! আরে ভাই শুধু এক কাপ চা-ই তো খেয়েছি আর কিছু নয়! এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছ নাকি, যে এক কাপ চায়ের দাম বলছ পচিশ রুপি, তাও আবার তোমাদের এই মানের হোটেলে! চা'র দাম শুনে মেজাজটা গেল খারাপ হয়ে!
'এখানে এক কাপ চা পচিশ রুপি!' বিস্ময় লুকোতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করে বসলাম কাউন্টারে।
জবাবে কাউন্টার থেকে জানানো হলো হ্যা এক কাপ চায়ের দাম 'পাচ্চিস রুপিয়া'!
আরে তোমরা সবাই কি পাগল হয়ে গেলে নাকি, লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছ যে এক কাপ চায়ের দাম বারবার বলছ 'পাচ্চিস রুপিয়া'! তোমরা ম্যাকডোনাল্ডস'র সাথে খ্যামটা নাচ নাচছ মনে হয়! ওখানে এক কাপ ক্যাপুচিনো খেয়েছিলাম ভ্যাট ও সার্ভিস ট্যাক্সসহ দেড়শ' প্লাস রুপি। তবু বিন্দুমাত্র কেনও আফসোস নেই। ওদের পরিবেশ আর তোমাদের পরিবেশ কী এক হলো! আরে বোকা ওরা পৃথিবী বিখ্যাত ব্র্যান্ড। ওদের ওখানে খাওয়া মানে শুধু খাওয়া না, এটা একটা অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে ম্যাকডোনাল্ডস নেই। ওদের ওখানে সেই ক্যাপুচিনো খাওয়ার মধুর স্মৃতি সারাজীবন মনে থাকবে। দেড়শ' প্লাস রুপি দিয়ে ওখানে শুধু কফি খেতে যাইনি, গিয়েছিলাম ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। ওদের সাথে প্রতিযোগিতা করে তোমরা চা'র দাম রাখছ 'পাচ্চিস রুপিয়া'! অথচ ওদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ধারেকাছেও নেই তোমদের হোটেল। ওদের কাপ আর তোমাদের কাপ দেখ, তোমাদের নোংরা ভাঙাচোরা কাপ প্রিচ দেখে শুরুতে তো চা পানের আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছিলাম! ইচ্ছে ছিল কথাগুলো বলি, কিন্তু সাহস হলো না।
'হ্যা ভাই, ঠিক আছে রাখেন আপনার পাচ্চিস রুপিয়া।' বলে চলে আসলাম হোটেল থেকে।
আসলে ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, জায়গা। হোটেলটা ভিতরে বাইরে যেমন তেমন হোক, পড়েছে একদম প্রাইম স্পটে; আন্ধেরির প্রধান সড়কের পাশেই। সাথে লাগোয়া ম্যাকডোনাল্ডস'র একটি বড়সড় শাখা। লাগোয়া মানে লাগা, একেবারে পাশাপাশি। একারণে এই সাধারণ মানের ছোট হোটেলেও চা-সহ ইত্যাদি খাবারের দাম তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। মুম্বাইয়ের অন্যান্য জায়গায় এর থেকে ঢের ভাল পরিবেশের সুসজ্জিত হোটেলে খাবার, পানিয় পাবেন এর তিন ভাগের দুভাগ দামে। যেমন মসজিদ বন্দরের কাছে খুব ভাল একটা রেস্টুরেন্টে এই এক-ই চা খেয়েছি সতের-আঠার রুপিতে। মসজিদ বন্দরের ওই হোটেলটাও ছিল রাস্তার পাশে। আরেকটু ভিতরে গেলে ওরকম ছোট ছোট রেস্টুরেন্টে চায়ের দাম পড়বে দশ থেকে বার রুপি। অনেক হোটেলে কাটিং চায়ের ব্যবস্থা আছে; মানে হাফ কাপ চা, হা হা! কাটিং চা মুম্বাইয়ে ব্যাপক প্রচলিত। রাস্তা, ফুটপাতের দোকান ও বিভিন্ন ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট এই কাটিং চায়ের ওপর দারুণরকম নির্ভরশীল। প্রতিদিন দেদারছে অসংখ্য কাটিং চা বিক্রি হয় সেখানে। দাম চার থেকে আট রুপির মধ্যেই। আমি নিজেই মুম্বাইয়ে যেয়ে নাম্বার ওয়ান ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম এই কাটিং চায়ের, যেখানে যখনই মন চাইত বসে পড়তাম কাটিং চা নিয়ে। মুম্বাইয়ের যেখানেই গিয়েছি আর কিছু না হোক অন্তত কয়েক কাপ কাটিং চা না খেয়ে আসিনি।
'এক পিয়ালি কাটিং চায়ে দে না। অর এক পিয়ালি কাটিং চায়ে দে না।' এভাবে অর্ডার করতাম। কখনও দু'বারও। 'দে না' মানে আবার তুইতোকারি ভেবে বসবেন না। হিন্দিতে 'দে না' বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় দিন না।
যাই হোক আমি অনেক কাপ কাটিং চা খেয়েছি মুম্বাইয়ে। দরকার হলে একবারের জায়গায় দুইবার খাব। কিন্তু কাটিং চা-ই খাব, ফুল খাব না! এই নীতি নিয়েছিলাম। ঢাকা কোলকাতার মতোই মুম্বাইয়েও চায়ের রমরমা বাজার। সর্বত্র চা পান করছে মানুষ; ফুটপাত, স্টেশন, হোটেল রেস্তোরা সর্বত্র চায়ে চায়ে চায়ে।
বাংলায় চা হিন্দিতে চায়ে বুঝলাম কিন্তু মুম্বাইয়ের অনেক দোকানের সাইনবোর্ডে দেখলাম হিন্দিতে পরিষ্কার লেখা, 'চাহা'। ওটা মারাঠিতেও হতে পারে। হিন্দি ও মারাঠি লেখায় মধ্যে বেশ সামঞ্জস্য আছে। অনুমান করতে পারি চা-কে মারাঠিতে বোধহয় চাহা বলা হয়ে থাকে! আমার ভুলও হতে পারে। এব্যাপারে কারও কাছে সঠিক তথ্য থাকলে তা জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো, চা-কে মারাঠিতে কি বলে?
চা খাওয়া নিয়ে মজার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল বান্দ্রায়। এখন মজা লাগলেও উপস্থিত মুহূর্তে ব্যাপারটা মোটেই মজার ছিল না, বরং প্রচুর বিরক্ত হয়েছিলাম। বান্দ্রা বিচের পাশে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের বাড়ির কাছাকাছি একটি ফ্রাঞ্চাইজ ধরণের ছোট দোকানে ওয়ান টাইমার কাপে চা খেয়ে কাপটা নিকটবর্তী ডাস্টবিনে ছুড়ে মারতে যেয়ে দেখলাম বিচের দ্রুতগতির বাতাসের ঝাপটা লেগে ওটা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়ে গেল পাশে। মিস থ্রো! মিথ্যে বলবো না জায়গাটা ছিল বাড়াবাড়িরকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একগাদা কাপ ডাস্টবিনের ঝুড়িটার ভিতর। আমারটাই শালা বেমক্কা বাইরে পড়ে গেল! পাশে একদল কিশোর কিশোরী সেসময় আড্ডা দিচ্ছিল। ওদের মধ্যে থেকে দেখলাম বেশ দীর্ঘাকৃতির একটি মেয়ে শুরুতে কটমট করে তাকাল আমার দিকে তারপর আমার বাইরে ফেলা কাপটি আবার কুড়িয়ে নিয়ে ঝুড়ির ভিতর ফেললো সযত্নে। ঘটনা বর্ণনার শুরুতেই বলেছি উপস্থিত মুহূর্তে প্রচুর বিরক্ত হয়েছিলাম, মেজাজ খিচড়ে উঠেছিল। উহু ওই বিষয়ে আর কিছু বলতে এখন এমুহূর্তে আমার খুব লজ্জা লাগছে। যথারীতি সেদিনও দোষটা ছিল আমার-ই। আমার-ই উচিৎ ছিল দ্রুততম সময়ে কাপটা সেখান থেকে ফের কুড়িয়ে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলা এবং অবশ্যই তা দু'কদম হেটে হাতে হাতে, অমন ছুড়ে মেরে নয়। পাতার মতো ওজনের পলকা এক রত্তি কাপ, বান্দ্রা বিচের সেই ঝড়ো বাতাসের ভিতর ডাস্টবিনে দু'ফিট দূর থেকে ছুড়ে মারলেও তা দিকভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় আশি শতাংশ। তা জেনেও যদি সে চেষ্টা করি, তা হলে লোকজন আমাকে অসভ্য ভাববেই বৈকি! (চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩

জল্লু ঘোড়া বলেছেন: আপনার কাহিনী পছন্দ হলো। হিন্দি বেশ ভালো বুঝি। (আমি হিন্দি সিরিয়াল দেখি না)। চায়ের হিন্দি "चाय "। মারাঠিতে কি জানি না। তবে হিন্দি মারাঠি দুটোই দেবনাগরীতে লেখা হয়।

০১ লা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.