নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার হন্তারক রাতুল দুটি হাত কোথায় লুকোবে

২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:৫৫

আমার বন্ধু ফয়সাল। ওর বাড়ি বগুড়ায়। অত্যন্ত সহজ সরল হাসি খুশি উদার মনের একটি ছেলে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের বেশ কয়েকটি দিন ওর পরিবারের সঙ্গে ওদের বাড়িতে কাটানোর দারুণ সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। একেবারে মহাসড়কের পাশেই ওদের বাড়ি। ওর পরিবারের বাকি সদস্যরাও অত্যন্ত অমায়িক, নিপাট ভালো মানুষ। সত্যি, দারুণ সুখদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে দিনগুলো। খুব শীত পড়েছিল সেবার বগুড়ায়। মধ্য ডিসেম্বর। আমার বন্ধুর স্থানীয় একজন প্রেমিকা ছিল। বগুড়ায় বেশ দীর্ঘসময় উভয়ের সম্পর্ক ছিল। ফয়সালের পরিবারও জানতো ব্যাপারটা। তাদের সকলের স্পষ্ট সম্মতিও ছিল। মেয়েটির সঙ্গে ওর পরিবারের সদস্যদের একসাথে বেশকিছু ছবি আমি দেখেছি। ফয়সাল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পড়ালেখা শেষপ্রান্তে। এরকম একটি আবহ ছিল যে, আগামীতে বিয়ে করতে চলেছে দুজন। মেয়েটিকে ভীষণ ভালবাসতো ফয়সাল। যতোটুকু ভালবাসা সম্ভব একজন প্রেমিকের তার প্রিয়তমাকে- মনপ্রাণ উজাড় করে ততোটাই ভালবাসতো। আর একেবারে নিষ্কাম, পবিত্র, বিশুদ্ধ ছিল ওর এই ভালবাসা। আমাকে ও বলেছিল, মেয়েটিকে কখনও সামান্যতম অসম্মান করবার চিন্তাও ওর কল্পনাতে আসেনি কোনওদিন। এভাবে সুখেই কেটে যাচ্ছিল ওদের দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ আচমকা এক আমেরিকান প্রবাসী ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। দারুণ মুষড়ে পড়ে আমার বন্ধুটি। ও তখন ঢাকায় ছিল। হঠাৎ বগুড়ায় যেয়ে এই অনভিপ্রেত, অকল্পনীয় দুঃসংবাদ পেয়ে যারপরনাই ভেঙে পড়ে। অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল বেচারা। মেয়েটার আমেরিকা প্রবাসী ফুফু নাকি জোর করে বিয়ে দিয়েছিলল, এতে তার মত ছিল না ইত্যাদি নানান কথা ভাসছিল বাজারে। পাশাপাশি এক গ্রামের দূরত্বে দুজনের বাড়ি। যাই হোক এক পর্যায়ে মেয়েটি স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা চলে যায়।

মনে পড়ছে, বগুড়া রেল স্টেশনে একদিন বিকেলবেলায় মেয়েটির কথা বলতে বলতে দারুণ শীর্ণ, ভাবুক, উদাস হয়ে পড়েছিল ফয়সাল। আমাকে বলছিল: এই স্টেশনেই বহুবার ও ওর প্রেমিকাকে নিয়ে এসেছিল, ওকে ঘরে ফেরার ট্রেনে তুলে দিয়েছিল।
সে সময়কার ওর সেই করুণ ব্যথাহত মুখটি বড্ড মনে পড়ছে। কথা বলতে বলতে দারুণরকম স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েছিল ও, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছিল অবিরত, চোখেমুখে নেমে এসেছিল বিষাদের নিকষ কালো অন্ধকার।

মেয়েটির ব্যাপারে আমার কোনওরকমেরই কোনও ধারনা নেই। সত্যি হয়তো সেখানে তখন তার অনিবার্য পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছিল, সেই প্রবাসী ছেলেটিকে বিয়ে করবার, কিংবা হতে পারে ইচ্ছে করলেই সে সবকিছু সামলে প্রেমিককে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারতো, নিদেনপক্ষে বিদ্রোহ তো করতে পারতো, পালিয়ে আসতে পারতো ফয়সালদের বাড়িতে, যেখানে ওদের পরিবার বিষয়টা জানে এবং তাদের নিঃশর্ত সমর্থন ছিল, কিংবা হতে পারে পরিষ্কার প্রতারণাই করেছে সে- আমেরিকা, চকচকে বিলাসবহুল উন্নত জীবনের লোভে, বেকার ছাত্র প্রেমিককে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছে! আসলে এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র কোনও ধারনা নেই। মেয়েটির কথা আমার কখনও শোনা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা আমার জন্যে মোটেই ঠিক হবে না। শুনেছিলাম, মেয়েটির সেই আমেরিকা প্রবাসী ফুফুই নাকি দীর্ঘদিন ধরে ওর যাবতীয় খরচ বহন করে আসছে। যাই হোক, সব ছাপিয়ে আমার মনে পড়ছে, ফয়সালের সেই দুঃখাহত বিষণ্ণ, রক্তশূন্য, পাণ্ডুর মুখ। যার শুধুমাত্র একটি পার্থিব শরীরই আছে কিন্তু প্রাণ নেই। মেয়েটি কি কখনও বুঝবে, কতোটা কষ্ট দিয়েছে সে ফয়াসালকে, কতোটা রক্ত ঝরিয়েছে ওর প্রেমিক হৃদয়ের, কতোবার গলা টিপে হত্যা করেছে সে একজন নিষ্পাপ প্রেমিকের সুকুমার হৃদয়!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:০৭

সনেট কবি বলেছেন: বর্ণনা ভাল লেগেছে।

২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:১৩

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় শ্রদ্ধেয় কবি।

২| ২৪ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:১০

অচেনা হৃদি বলেছেন: পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ তাদের প্রিয় মুখটিকে আপন করে পায় না ।
আপনার বন্ধু ফয়সাল ভালো থাকুক ভাইয়া, এই কামনা করছি ।

২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০১

অর্ক বলেছেন: ও এখন ভালো আছে। অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:১৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ২০১৩ সালের ঘটনা হলে তো ততদিনে আধুনিকক প্রজন্ম প্রেম ভালোবাসা সিরিয়াসলি নেয়ার যুগ থেকে বেরিয়ে আসার কথা। অবশ্য কিছু ব্যতিক্রম থেকেই যায়। এখন কার ছেলে মেয়েরা অনেক রিয়েলিস্টিক। প্রিয়ার জন্য মূষড়ে পড়ে না...

২৪ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

অর্ক বলেছেন: একমত হতে পারছি না, বরং আমি এর উল্টোটাই বলবো! এটা যে সময়ের ঘটনা, সে সময় একটি ছেলে প্রেমিকার সাথে মনোমালিন্য থেকে বসুন্ধরা শপিং মলের আট তালা থেকে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। মানুষের আবেগ অনুভূতি আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে। এখন বরং আরও বেশি হয় এসব। বাংলাদেশেরই খুব প্রতিশ্রুতিশীল একজন তরুণী গায়িকা নাফিসা হক প্রেমিকের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়নের এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করেন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। আমি তো মনে করি, এখনকার তরুণ তরুণীরা বরং আরও বেশি আবেগপ্রবণ, সামান্যতেই হুলস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। পার্টি নাইট, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড এগুলো প্রেম ভালবাসা নয়!

ধন্যবাদ।

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:২৮

মায়ের ভালবাসা বলেছেন: সুন্দর লেখা!!!!

২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০১

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

কাইকর বলেছেন: ভাল লাগলো পড়ে। সুন্দর লেখা

২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০০

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮

গরল বলেছেন: ভাই আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম স্ট্রিট ফটোগ্রাফির জন্য কোন লেন্সটা ভাল হবে? ২৪, ৩৫, ৫০ এমএম প্রাইম নাকি জুম লেন্স আর জুম লেন্স হলে রেঞ্জ কত। আপনি কোন উত্তর দেন নি।

২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

অর্ক বলেছেন: ৩৫ এম এম প্রাইম লেন্স সবচেয়ে ভালো, তবে ২৪-ও অনেকের মতে ভালো। ৫০’র ব্যবহার এক্কেবারেই সীমিত (দরকার নেই)- ৩৫ প্রাইম লেন্সটাই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত।

শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.