![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের উল্টোদিকের ছবি তুলতে তুলতে ভাবি/ একদিন এই জুনে পাঠিয়েছিলে চিঠি/ মর্চে পড়া লাল বাক্স অচল পড়ে সেই থেকে/ তুমি দাঁড়াও না ঝুল বারান্দায় সেদিনের মতো
চিত্রগ্রাহকঃ এলেনা কজলোভা। আমি যখন মারিয়াকে দেখি তখন ও ঠিক এই মেয়েটির বয়সী ছিলো। শারীরিক গঠন ও চেহারাতেও মিল আছে। ওর ভাইদের সাথে তোলা দুয়েকটা গ্রুপ ফটো আছে আমার কাছে। কিন্তু সেগুলো পোস্ট করা কিছুতেই শোভন হবে না। হাজার হোক অন্যের পারিবারিক ছবি।
আমার বয়স তখন ছাব্বিশ। ওর বারো। সুতরাং শিরোনাম দেখে কোনওরকম বিভ্রান্তির কোনও সুযোগ নেই। এ ভালবাসা একজন ছোটো বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা। কিংবা বলা যেতে পারে যে, আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটো একজন বন্ধুর প্রতি ভালবাসা। খুব মিষ্টি একটি মেয়ে মারিয়া। ওর বয়সের এতো বিনয়ী লক্ষ্মী মেয়ে আমি আমার এযাবতকালের জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। বেশ বুঝতে পারছিলাম যে, আমার সেখানে থাকাতে ওর খানিকটা হলেও সমস্যা হচ্ছিলো। যতোটা নিরীহ শান্তশিষ্ট শাকের পোকা দেখেছিলাম, ওর বয়সের ছেলেমেয়েদের সাধারণত ওরকম থাকার কথা নয়। নেহায়েত বাইরের একজন লোক থাকাতে অমন সুবোধ বালিকাটি হয়ে থাকতে হয়েছিলো। এছাড়াও ওর বড়ো ভাই বন্ধু ফয়সালও একবার জানিয়েছিলো যে, মারিয়া ভয়ঙ্কর দুষ্টু।
মারিয়া তখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ে। হঠাৎ কোনও উপলক্ষ্য ছাড়াই সেবার ওদের বাড়ি বগুড়া থেকে বেড়িয়ে আসি। সে সময় এখানে প্রকাশিত বগুড়ার ডায়েরি শিরোনামের ছোটো লেখাটি ওদের বাড়ি থেকে পোস্ট করা। প্রথম পোস্ট। মনে পড়ছে, দ্বিতীয় দিন ওর নানির চল্লিশার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অটোতে করে প্রায় দু'ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে সাড়িয়াকান্দিতে ওর নানা বাড়ি গিয়েছিলাম। মারিয়া সারা রাস্তা আমার পাশে বসে ছিলো। অটোর সময়টা প্রায় ঘুমিয়েই কাটাই। আনন্দ হাসি গানে মুখর দারুণ দুটো দিন কাটিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে। মহাস্থানগড়, বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসরঘর, প্রেম যমুনার ঘাট, শাহ আলির মাজার ইত্যাদি বগুড়ার দর্শনীয় স্থানগুলো মনের সুখে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলাম। প্রেম যমুনার ঘাট ভ্রমণ নিয়েও পৃথক একটি লেখা আছে এখানে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস। দারুণ শীত পড়েছিলো সেবার বগুড়ায়। আরে সে বছর বিজয় দিবসটাই তো উদযাপন করেছিলাম সেখানে! হা হা হা। ভুলে গিয়েছিলাম।
ঠিক যেদিন ওদের বাড়ি থেকে চলে আসবো, সেদিনকার কথা। আমি কাপড়চোপড় মালপত্র গুছিয়ে একেবারে প্রস্তুত বেরোনোর জন্য। ওর বাবার কাছ থেকে বিদায়ও নিয়েছি। ওর আরেক ভাই তখন খুব সম্ভবত স্কুলে ছিলো, নাহলে খেলতে গিয়েছিলো। ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪। জানি না, বিশেষ কোনও ছুটি ছিলো কিনা সেদিন। মারিয়া বাড়িতেই ছিলো, স্কুলে যায়নি। হয়তো কোনও কারণ ছাড়াই স্কুল কামাই। হে হে হে। ওর বড়ো ভাই বন্ধু ফয়সাল ঠিক সে সময়টায় বাড়ির বাইরে ছিলো, নাহলে বাথরুমে। অতো পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে নেই। ভিতরের ঘরে ওর মা ছিলো। আমি মারিয়াকে রুমের বাইরে দেখতে পেয়ে ডাকলাম। গেলো রাতে দুষ্টুমি করে বন্ধু ফয়সালের নাক ডাকার ছোটো একটি ভিডিও ধারণ করেছিলাম সেল ফোনে। ওটা দেখানো উদ্দেশ্য।
মারিয়া এলো আমার কাছে। দাঁড়ালো মুখোমুখি। ভীষণ শীর্ণ, দুঃখী চেহারা। বিষাদের মলিন কালো ছায়া সেখানে।
'মারিয়া, দেখো, তোমার ভাইয়া কীভাবে নাক ডাকে, দেখো।' বললাম আমি। ওর পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের ভিডিওটা অন করে দিলাম। রাতের টিভি নিউজের সাথে শুরু হলো ফয়সালের নাক ডাকা। মিনিট খানিক দেখেই হি হি হি করে হেসে উঠলো মারিয়া। মিনিট খানিকই হবে বা সামান্য কিছু বেশি। তারপর দেখলাম যেতে উদ্যত হলো। চোখ দুটো টকটকে লাল। অশ্রু টলমল করছে। আমার দিকে কিছুতেই তাকাতে পারছে না। মাথা নামিয়ে রেখেছে তো রেখেছেই। হঠাৎ ভিডিওটা অসমাপ্ত রেখেই আমাকে ছাড়িয়ে এক পা দু’পা করে যেতে লাগলো। আমি আবার ডাকলাম মারিয়াকে। ‘মারিয়া, দাঁড়াও, আরেকটু বাকি আছে। একটু পরে দেখবে, আরও জোরে একেবারে ব্যাঙের মতো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে নাক ডাকছে তোমার ভাইয়া। হা হা হা। দেখে যাও।’
কিন্তু মারিয়া দাঁড়ালো না। আসলে ও কিছুতেই চাইছিলো না যে, আমি ওকে কাঁদতে দেখে ফেলি। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, আমার পাশে আর কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই কেঁদে ফেলতো। ঘটনার আকস্মিকতায় হত বিহ্বল হয়ে পড়ি। এরকম কিছুর জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না। নিছক মজা করার জন্য এসব করা। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে। মারিয়া ঋজু হয়ে শ্লথ পা'য়ে যেতে লাগলো ঘরের দিকে, ওর মা'র কাছে।
না, কিছুই কিছু নয়। দু’দিন ওদের সঙ্গে থাকাতে আমার প্রতি একধরণের ছেলেমানুষি মায়া জন্মেছিলো ওর অবুঝ শিশু মনে। ও বুঝতে পারছিলো যে, ওদের বাড়ি থেকে চলে গেলে, আর কোনওদিন আমাদের দেখা হবে না। শুধু মারিয়াই মেনে নিতে পারছিলো না ব্যাপারটা। আহা, অবুঝ শিশু মন!
তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে। মারিয়া নিশ্চয়ই আজ আর সেদিনের সেই ছোট্ট শিশুটি নেই। ও এখন পনেরো ষোলো বছরের কিশোরী। হয়তো আমার কথা, সেদিনের কথা আজ আর মনে নেই ওর। না থাকাই স্বাভাবিক। যা হোক, এ সামান্য লেখার মাধ্যমে মারিয়ার প্রতি, আমার সেই ছোট্ট বন্ধুর প্রতি, হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে গভীর ভালবাসা জানাচ্ছি। দারুণ উপভোগ্য রোমাঞ্চকর সে উজ্জ্বল ভ্রমণের কথা আজ যখন কোনও অবসরে ভাবি, তখন সবার আগে আমার মনে পড়ে যায় মারিয়াকেই। সেই ফেরার দিন ওর সঙ্গে কাটানো তীব্র সে মুহূর্তেগুলোর স্মৃতি।
২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:৫১
অর্ক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্য ঠিক আছে। এখন ওর বয়স ২০/২১ হবে। কিন্তু লেখাটা চার পাঁচ বছর আগে লিখেছিলাম। পুরনো লেখা। সংক্ষিপ্ত আকারে, যথাসম্ভব গুছিয়ে নতুন করে প্রকাশ। শিরোনামে যেমন উল্লেখকৃত, ‘আর্কাইভ থেকে’।
২| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:১৪
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আর দেখা হয়েছে মারিয়ার সাথে ??
কেমন আছে সে !!
২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:৫৭
অর্ক বলেছেন: না, আর দেখা হয়নি।
আমি আশা করি, প্রার্থনা করি যে, আপনজনদের নিয়ে খুব ভালো আছে ও।
ধন্যবাদ ভাই।
৩| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১:১২
কামাল১৮ বলেছেন: দরুন এক স্মৃতি কথা।যা হৃদয়ে নাড়া দেয়।অনেকের মনে পড়ে যাবে নিজের জীবনে ঘটা এমন ঘটনা।
২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:৫৫
অর্ক বলেছেন: আপনার মন্তব্য আপ্লূত করলো। প্রেরণা পেলাম।
অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২৭ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮
শায়মা বলেছেন: আহা স্মৃতি!
২৭ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
৫| ২৭ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
শাওন আহমাদ বলেছেন: এই স্মৃতি গুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, ভাবতে শেখায়। আমিও ছোটবেলায় এমন ছিলাম। আমার কোনো রিলেটিভ বাসায় এসে কদিন থেকে চলে গেলে, আমিও খুব করে কান্না আটকে রাখতে গিয়ে কেঁদে ফেলতাম।
২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:০৯
অর্ক বলেছেন: সুন্দর বলেছো। খুব কোমল স্নিগ্ধ পর্যায় জীবনের। সুখের তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনও কিছুও হারানো গভীর বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়। সত্যি, অতুল্য ও অমূল্য সে পর্যায়। আমার শৈশব কৈশোর ভীষণরকম উপভোগ্য, রোমাঞ্চকর ছিলো।
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:১০
আহমেদ জী এস বলেছেন: অর্ক,
সুস্দর আর আবেগী স্মৃতিচারণ।
একটা খটকা - ২০১৪ সালে যদি মারিয়ার বয়স ১২ হয় তবে ২০২৩ সালে তার ২০/২১ বছর হওয়ার কথা। কিন্তু আপনি লিখেছেন - " ও আজ পনেরো ষোল বছরের কিশোরী। "
আমি কি মিস করে গেছি কিছু ?