নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একমুঠো স্বপ্ন দবো তোমায়\nশিশির ভেজা সুবাস দেবো\nকিছু কথা দেবো\n শুনতে বিষন্বতায়\nবল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম

একমুঠো স্বপ্ন দেবো তোমায়, শিশির ভেজা কাশফুলেরী সুবাস দোবো কিছু কথা দেবো শুনতে বিষন্বতায় বল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইন্দ্রজাল(গল্প)

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

ভোর হয়েছে ।
সূর্য অনেক উপরে এখন। বিল্ডিং আর বিল্ডিং। এত বিল্ডং এর ফাঁক ফোকরে তবু সূর্যি কিরণ আসে। আয়রিন নেবুর পড়ার টেবিল সূর্যের আলোয় ভরে উঠে ।
প্রচন্ড শীতের মৌসুম। সেই শীত নেই। শীত শীত ভাব আছে। কেন নেই ? এসব পরওয়ারদেগার জানে। বুঝার কারো উপায় নেই।
হালকা শীত। মৃদু মৃদু রোদ্দুর। বেগুনী রঙের চাদর মুড়িয়ে গল্প পড়তে বেশ ভালই লাগছে নেবুর।
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হল গতকালই।পরীক্ষার চাপে ভোরে উঠে পড়ার অভ্যাস। পরীক্ষা শেষ। অভ্যাস এখনো আছে। তাই গল্প পড়া।
পড়ার চাপ নেই। ফুরফুরে মেজাজ। নিজেকে গল্পের জীবনের সাথে মিলাতে ইচ্ছে করছে। কখনো ইচ্ছে করছে রুপকথার রাজপরী হয়ে রাতের তারা ভরা আকাশে ঘুরে আসতে। যেখানে সাহজাদার সাথে দেখা হবে ।তাকে দেখে অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকবে সাহজাদা । সে হাসবে ভুবন ভুলানো হাসি । প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরবে তার কাছে । পালিয়ে চলে আসাবে । সাহজাদা তার খোঁজে পৃথিবীতে নেমে আসবে ।
কি সুন্দর কল্পনা ! ভাবতেই ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠে নেবুর । অল্পক্ষণেই সে হাসি ¤øান । শীত সকালে শুষ্ক ঠোঁটের উষ্ণ হাসি । ঠোঁটে ব্যথা পেয়েছে সে ।
প্রসাধনীর বক্সটা বের করে নেবু। ভাবল মেরিল দিবেনা। লিপস্টিক দেবে। কমলা রঙের লিপস্টিক দুঠোঁটে এঁকে নেয়।
ভাবল নিজেকে কেমন কেমন লাগছে !
হয়তো সুন্দর । নীলপরীর মতো । যাকে দেখে সাদাপরীর ঈর্ষা হয়। হলদেপরী চাই সঙ্গী হতে। সাহজাদা চাই ? কি চাই নেভু ভাবতেই স্বলজ্জাই লজ্জিত হয়।

নেবু আবার পড়ছে। গল্প।
হয়তো আবার রুপকথা। নিজেকে নিয়ে ভাবা। আরেকটা গল্প হয়ে উঠাই মন চলে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত ! এমন হলে তো সে নিজেই গল্পকার হয়ে যেতে পারে। এই ভেবে নেবুর অহমিকা ভাব আসে একটু।

ক্রিং ক্রিং।
টেবিলের উপর মোবাইলটা বেজে উঠল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে রবি সার্কলের এসএমএস। কেও তার সাথে জয়েন হতে চাই। নিকন্যামটা বিদগুটে ধাঁচের। কোন নাম না। সাংকেতিক কিছু ।
জয়েন করবে না নেবু। বিদগুটে , সাংকেতিক কিছুই তার পছন্দের না।
মাঝে মাঝে পছন্দও হয়। জট খুলতে ভাল লাগে। এ যেন মনের খেলা। যেখানে যুক্তিগুলো ফিকে হয়ে যায়। জয়েন করতেই প্রথম এসএমএস আসে Ñ আমি ঈন্দ্রনীল।
ইন্দনীল ? কেসে ইন্দ্রনীল ? নেবু এ নিয়ে আর ভাবে না। সার্কলে কত কেও তো হতে পারে। নজর আবার গল্পের বইয়ে। দুমিনিট পর সেই নিক ন্যাম থেকে পোক আসে
আমি ইন্দনীল । পড়াশোনা এইচ এস সি । সিটিজি।
সিটিজি মানে চিটাগাং। নেবু বোঝতে পারল। বিশ্বাস করতে পারল না কথা গুলো সত্য। সার্কলে মিথ্যা কথার ধুম চলে। সঠিক পরিচয় খুব কমই ব্যবহার হয় । প্রথম পরিচয় সবাই কত না সাধু!
নেবু ভাবল রিপলাই না দিলে হয়তো সে আবার পোক করবে। কিন্ত আর পোক করেনি।
নেবু একা। গল্প পড়ছে। বাকিরা এখনো মুষের মতো ঘুমাচ্ছে। প্রচুর অলস সময় তার। ইচ্ছে হয় কিছুক্ষণ চ্যাট করবে। আবার ভাবল না। আবার গরল্প পড়া শুরু করল নেবু।
কি অদ্ভুত ! তার এখন গল্প পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না । গল্পের সাথে নিজেকে মিলাতেও না । নীলপরী হতেও না। যা দেখে সাদাপরীর ঈর্ষা হয়। হলদেপরী চায় সঙ্গী হতে। সাহাজাদা চায়... ...
কি চায় ভাবতে স্বলজ্জায় লজ্জিত হয় নেবু।
অনিচ্ছায় টেবিল থেৃকে মোবাইলটা তুলে নেয়। কি এক অজানা রহস্য যেন দানা বাঁধতে শুরু করল।
ইন্দ্রনীল কে ? এ প্রশ্ন কি তাকে এমন করেছে ? বুঝতে পারে না নেবু । উদ্দেশ্যহীন মোবাইলটা নড়াছড়া করছে।

মোবাইল আবার বেজে উঠল। স্ক্রীনের দিকে থাকাল। ইন্দ্রনীলের কমেন্ট।
জানেন, আমি এক লাফে দশফুট যেতে পারি। গোলিয়াত ব্যাঙের মতো। বিশ্বের সব চেয়ে বড় ব্যাঙ। তের ইঞ্চি লম্বা। আপনি ?

এমন কথায় নেবু কিছুটা অবাক। খুব আওয়াজ করে হাসতে ইচ্ছে হল। হাসল না। ওরা যদি ঘুম থেকে উঠে যায় !
প্রথম এসএমএস । এমন কথা ? কি রিপলাই দেবে সে ? নাকি দেবে না। Ñ ভাবছে নেবু । তখন আরেকটা কমেন্ট আসে । এটার প্রতি কৌতূহল যেন একটু বেশী । একপলক দেখ নেয় সদ্য আসা কমেন্ট।

না, আপনি অপোসাম । বেশ অভিনয় করতে জানেন। আপনার ইচ্ছে করছে রিপলাই দিতে। দেন নি ।

সত্যিই নেবুর ইচ্ছে করছিল রিপলাই দিতে। সে দেয়নি। কিন্তু ইন্দ্রনীল বলতে পারল কিভাবে ? ও পাচারকারী নাতো ?ওরা মেয়েদের মানসিক অবস্থা ভালই বুঝতে পারে। ঠিক সে ভাবে কথা বলে। এক সময় প্রেম হয় উঠে। তারপর দেখার ভান। এরপর ঠিক ভারতের কোন পতিতালয়ে। তবু ওর সাথে কথা বলবে নেবু। সব ফাইজলামু করবে। সমস্যা দেখলেই সি স্টপ। ব্যস , সব কিছু মিটমাট। এই ভেবে পোক করল নেবু। ইন্দ্রনীলের দুটা কথার বাইরে গিয়ে।

আমি ঋতু। আচ্ছা আপনি কয়জন মেয়ে পাচার করেছেন ?

পোকটা করে নেবু চিন্তিত হয়েপড়ল। সে যদি ভাল ছেলে হয় তাহলে কি ভাববে ? আমি বাজে মেয়ে ? আমি পাচার হওয়া কেও ? তাই এ বিষয়ে আমার ধারণা পাকাপোক্ত ? তখন ইন্দ্রনীল পোক করল ।

আমি দশ জন সুন্দরী পাচার করেছি ।

নেবু চোখে মুখে যেন একটু স্বস্তির ভাব। যাক তার ধারণাটা অমুলক।ভাবল,পাচারকারী যেহেতু সাবধান হতে হবে।
কিন্তু স্বস্তিবোধটা দীর্ঘস্থায়ী হলনা। মনের পর্দায় অন্য ভাবনা এসে হাজির। পাচারকারী কখনো অকপটে স্বীকার করবে না Ñ দশজন পাচার করেছি।
সে মিথ্যা বলল ? আমার সাথে রাগ করে ? এই ভেবে পোক করল নেবু।
আপনি পাচারকারী না। রাইাট ?
হুম।
মিথ্যা বলছেন কেন ?
সত্য বললে আপনার বিশ্বাস হতো না।
আমিও একটা মিথ্যা বলেছি।
সে বিষয়ে আমি মিথ্যা বলিনি।
কোন বিষয় আমি তো এখনো বলিনি।
তবু বুঝলাম,আপনার নাম ঋতু না ।
হুম,আমি নেবু।
তাহলে তো লেবু ডাকা যায়।
লেবু ?
আচ্ছা ঠিক আছে লেবু না,কমলা।
না কমলা আমার পছন্দ না। এটার প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই।
তাহলে তেঁতুল। এটার প্রতি তো প্রবল আকর্ষণ থাকে।
তেঁতুল এত কম দামি একটা ফল ! আপনার সাথে কথাও বলবো না।

নেবু আর পোক করল না। মাথাটা যেন গেল। এই মাত্র পরিচয়। নাম নিয়ে যতসব। মোবাইলটা টেবিলে রেখে বসা থেকে উঠে নেবু।

মা,ছোটবোন,বাবা সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। মা নাস্তা তৈরী করে সবাই এক সাথে খাওয়ার অপেক্ষায়। সবাই এলো,খেলো। খাওয়া বসা ফ্রেস হওয়া সব সময় নেবুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ইন্দ্রনীল কি বলবে ? হয়তো একটার পর একটা পোক করে যাচ্ছে,যেখানে লিখছে সরি টু দ্যা পাওয়র হান্ড্রেট। আর তেঁতুল বলবো নাতো। রাগ করো না প্লিজ। অথবা ভিবিন্ন ধরণের ক্ষমার অমিয় বাণী।

খুব তাড়াহুড়া করে খাওয়া শেষ করে মোবাইল হাতে পড়ার রুমে বসে নেবু। পোক কমেন্ট কিচ্ছু নেই। উল্টো সার্কল বন্ধ করে দিয়েছে। ইচ্ছে করছে মোবাইলটা পাঁচতলা থেকে ফেলে দিতে। কিন্তু পারা যাবে না। মা বকবে। বলবে Ñ ইন্টার পড়–য়া মেয়ে,কান্ডজ্ঞান কিছু থাকলে হয় ! বাবা কিছু বলবে না। বাবা খুব বন্ধুসুলব। তাই মাঝে মাঝে নেবুর বাবাকে নিয়ে গর্ব হয়।
আবার ভাবে নেবু। কেন সে শুধু শুধু নিজের টেম্পার জিরু টলারেন্স নিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প পরিচযের একটা ছেলে। জানা নেই। শুনা নেই। যাকে প্রথম পাচারকারী মনে হয়েছিল। পরে মনে হয়েছিল......... । কী মনে হয়েছিল ? কিছুই তো না। তবু কেন তাকে নিয়ে এত ভাব না।
তার গল্প পড়া হচ্ছে না। নীরলপরী সাদাপরী হলদেপরী সবাই হাওয়া হয়ে গেল। সাহাজাদা হয়তো পৃথিবীতে আর আসবে না।
ফেলে দেওয়ার মতো কওে মোবাইল টেবিলে রাখে নেবু। আবার দেখে আঘাত বেশী লাগেনি তো !

সবে মাত্র আবার গল্প পড়া শুরু করল ।যেটা অর্ধেকে রেখেছিল।ক্রিং ক্রিং।
আবার ম্যাসেজ । হয়তো আবার চিনÍা । এমনটা ভাবেনি নেবু ।ছোট ছোট রাগগুলো হয়তো অনুরাগে রুপ নিচ্ছে খুব দ্রæত। খুব কৌতুহলে ইনবক্স দেখে নেবু। দুটা কমেন্ট।
আপনি ঠিকই অপোসাম। পাচারকারী ভূতটা এখনো আছে। শিকারী থেকে বাচার জন্য অপোসাম এমনি অভিনয় করে , যেন মৃত। আপনিও তাই পোক বন্ধ রেখেছেন।

নেবু রিপলাই দিল Ñ না , খেতে গিয়েছিলাম।
তেঁতুল ডাকায় নিশ্চয় রাগেননি !
রেগেছিলাম। খেতে খেতে রাগ চলে গেছে।
রাগ খেতে পারেন ?
না,বুঝতে পারলাম তেঁতুল ডাকাটা অমুলক নয়।
মানে ?
তেঁতুল খুব আকর্ষনীয়। আমাকে তেঁতুল ডাকা মানে আমিও আকর্ষণীয়।
বাহ,বেশ বুঝেন তো ! তেঁতুল আর ডাকবো না। নেবু ডাকবো। এটাই সুন্দর।
আপনার ইচ্ছে যা ডাকেন। আচ্ছা, যদি বন্ধু ভাবেন আপনার নাম্বানটা দেবেন ?
কে বলছে আমি আপনাকে বন্ধু ভাবি ?
আপনি মানুষ না।
অমানুষ ?
না।
কি ?
আমার সাথে কথা বলছেন কেন ?
কেন, বোনের সাথে কথ বলা যায় না ?
বোন ?
হুম। বন্ধু প্রেম যায় বলুন,এসবের মাঝে অপবিত্রতা আসার সুযোগ থাকে। ভাই বোনোর স¤পর্কে কোন অপবিত্রতা আসার সুযোগ থাকে না।
সত্যি এখন ভালো লাগছে। ইউ আর সো গ্রেট। বোনকে নাম্বার নিশ্চয় দেয়া যাবে।
না।
কেন ?
আমার ভয়েস খুব মিষ্টি। সব কিছু ভুলে প্রেমে পড়ে যাবেন।
প্রেম ?
গভীর প্রেম। এক সময় বলবেন চলুন ঘুরতে যাবো। হয়তো কক্সবাজার যাওয়া হবে। তারপর... ...
তারপর ?
দুজনে প্রবল ঢেউয়ে মারা যাবো। এজন্য নাম্বার দেবো না।
লাগবে না।
লাগবে।
কি ?
আমার মোবাইল নাম্বার।
না,আর কখনো চাইবো না।
রাগ করছেন ?
করছি।
কিছু খান। খেতে খেতে রাগ চলে যাবে।
মজা নিচ্ছেন ?
হুম।
কেন ?
বোনেরা নাকি রাগলে আরো সুন্দর হয়। আপনাকে সুন্দর বানানোর জন্য।
মা ডাকছে। পরে কথা হবে।
নেবু আর পারছে না। পোক বন্ধ করে দিল। মা ডাকছে এটা মিথ্যা কথা। এক আধটু রাগ আসছিল। মুহুর্তেই তা ইন্দ্রনীলের প্রতি অনুরাগে রুপ নিচ্ছে। তার আগে এমন কোন সময় হয়নি। তাই কিছুর সাথে তুলনা করতে পারছে না অনুভুতি গুলো। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখে আয়মান। নেবু উৎফুল্ল হয়ে উঠে। অন্তত কারো সাথে শেয়ার করা যাবে। আনন্দঘন মুহুর্তগুলো নাকি শেয়ার করলে আরো মধুময় হয়ে উঠে। আয়মান নেবুর সহপাঠী। দুজনের বন্ধুত্ব খুব ভাল। সে নেবুদের বিল্ডংয়ের পশ্চিমে কয়েক বিল্ডিং পর সাদা রঙেনর বিল্ডিংটাতে থাকে।

দুজনে সোফাতে মুখোমুখি বসা। চা খাচ্ছে। নেবু হাসছে। মিটিরমিটির। আয়মান বুঝতে পারল কিছু ঘটেছে। আয়মান বলল
কিছু বলবি নিশ্চয় !
আগে তুই বল কেন আসছিস ? খুব উৎফুল্ল চিত্তে নেবু বলল।
কোন কাজ নেই,তাই। তুর কথাটা বল না !
না , বলবনা।
তুই এমাত্র বরলতে চাইছিস ?
হ্যাঁ , এখন বলছি বলবনা।
তাহলে যাচ্ছি। বলেই উঠল আয়মান। কিন্তু তা কি হয় ? নিজেই উদগ্রীব নেবু। আয়মানকে টেনে বসাই নেবু। বলল
ঠিক আছে বলব। শর্ত হল কমেন্ট করা যাবে না , ইর্ষা বোধ করা যাবে না। এক মনে শুনতে হবে।
নিশ্চয় কারো প্রেমে পড়েছিস ?
মন্তব্য ক-রা যা-বে-না।
ঠিক আছে বল।
ছেলেটা খুব স্মার্ট। ভয়েস খুব মিষ্টি। অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতে পারে। ফাইজলামিতেও বেশ পটু। তোর মতো সেকেলে না।
সাহাজাদার সাথে কোথায় দেখা হল জানতে পারি ?
দেখা হয়নি। ফোনে.. .. ..
কথা হয়েছে ?
না। সার্কলে পোক করেছি।
চমৎকার! কথা হয়নি,দেখতে খুব স্মার্ট,ভয়েস খুব মিষ্টি .. .. ..
সবাই তোর মতো ? আমি কথা বললেই বুঝতে পারি কে কেমন।
ঠিক আছে মানলাম তুই খুব পটু। তার নামটা বলা যাবে ? মোবাইল নাম্বারটা দে। ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবো।
না দেবো না।
দেবো না নাকি তোকেই দেইনি ?
মানে ?
ফোন নাম্বার চেয়েছিলি। তুই ওর মিষ্টি কথায় প্রেমে পড়ে যাবি।
কি ?
তারপর বলবি ঘুরতে যাবি। এরপর সমুদ্রে ডুবে মারা যাবি।
তুই জানিস কিভাবে ? নিশ্চয় অন্য নাম্বার থেকে আমাকে বোকা বানিয়েছিস। দাড়া মজা দেখাচ্ছি .. . .
নো , রিলাক্স। এই যে আপনার মোবাইল। যখন চা আনতে গিয়েছিলেন সব সেভ করা এসএমএস দেখেছিলাম।
ওহ ! তাই বল। তোর মতো মখা ইন্দ্রনীল হতে পারবি ? তোর খুব ঈর্ষা হচ্ছে,তাই না ?

উনত্রিশ দিন পর ।
সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠল নেবু ইন্দ্রনীলের। ভাই বোন কি বন্ধু সেটা বলা মুশকিল। প্রতি দিন-রাতে পোক হয়। মজা হয় অনেক। আজ ইন্দ্রনীল আসবে। নেবুর ছোট ভাইয়ের আকীকা। নেবুর আবদার রাখতেই ইন্দ্রনীল আসছে। পারিবারিক অনুষ্ঠান শেষ হলেই সে আসবে। সময়টা নেবুই ঠিক করেছিল। যেন নির্জন কিছু সময় ওকে নিয়ে উপভোগ করা যায়।

ইন্দ্রনীল। সত্যিই কি আসবে ? দেখবে দুজন দুজনকে ? কথা হবে ? কেমন হবে ইন্দ্রনীল ? আমাকে কিভাবে নেবে সে ? বিছানায় গড়াগড়ি করছে আর ভাবছে নেবু। আরেক বার ঘড়ি দেখে। এখনো বিশ মিনিট বাকি। ঘড়ি কি আজ খুব ধীরগতিতে চলছে ? নাকি অপেক্ষার মুহুর্তগুলো এমনি হয়। নেবু অস্থির। তর সইছেনা যেন।বিছানা থেকে উঠে নেবু। রুমটা নবম বারের মতো সাজালো। পড়ার টেবিলটা হয়তো আরো বেশি। থরে থরে বই গুলো সাজিয়েছে সে। সামনে রাখছে একটা কবিতার বই Ñ সোনালী কাবিন। একপাশে তার পাওয়া বার্থডে গিফ্ট। কাঁচের বেইজমেন্টের উপর দুটা গোলাপ,ক্রস ফিগারে। খুব সুন্দর লাগছে।

এ দেখে ইন্দ্রনীল কি ভাববে ? কেমন বলবে নেবুর রুচিবোধ ? নিজেকে আরেকবার আয়নার সামনে দাড় করায় নেবু। প্রথমে কপালো টিপ দিয়েছিল। আবার তুলে ফেলছে। ভাল লাগছে না। হয়তো ইন্দ্রনীলেরও ভাল লাগবে না।
আজ সকালে দুটা পোক করেছিল ইন্দ্রনীল।একটিতে ফোন নম্বর। আরেকটিতে লিখলো Ñ ছোট এর জন্য কমলা রঙের ড্রেস গিফ্ট।
ফোন করে চাইবে নেবু ? ইন্দ্রনীল কতটুকু আসছে ? কোন রঙের ড্রেস পড়ে আসছে ? দেখতে মিষ্টি কন্ঠের মতো মিষ্ঠি লাগছে তো ? না নেবু চাইবে না। যদি আগ্রহটা হারিয়ে যায়,উত্তেজনা ভাবটা চলে যায়। নেবু চায় সে আরো অস্থির হোক। এ এক কষ্ট মজা।
নেবু জানালার ফ্রেম ধরে দাড়িয়েছে। দৃষ্টি বাইওে। অনেক দূরে। নীল আকাশে। যে আকাশ বিশাল। নেবুর চোখে স্বপ্ন নেমে এলো। রাতের তারা ভরা আকাশ। সে নীলপরী হয়ে ঘুরছে।
হঠাৎ বুঝলো কলিংবেল বাজছে।
হ্যাঁ, নেবু এখন আরো এক্সাইটেড।আরো কষ্টমজা হচ্ছে হয়তো। ইন্দ্রনীল কি জানতে চাইবে কষ্টমজা কেমন ? ভাবছে নেবু। দরদজা খুলে কি বলবে ?
না, কোন পরিকল্পনা কাজ করেনি। এই পরিস্থতিতে সবার প্রতিক্রিয়া হয়তো এমনি হয়। দরজা খুলল নেবু। আগন্তুকের মুখের দিকে থাকাতে পারেনি। নিচের দিকে থাকিয়ে আছে। লজ্জা রাঙা মুখ। দেখল তার হাতে একটা বেবি গিফ্ট বক্স। যেখানে কমলা রঙের ড্রেস আর কিছু খেলনা। তাহলে কি ইন্দ্রনীল চলে এলো ? ভার্চুয়াল মানুষটা রিয়্যাল হলে গেলো ?
আগন্তুকের কথায় শিউরে উঠে নেবু। পরিচিত কন্ঠ। পরিচিত মুখ আয়মান। ইন্দ্রনীল নয়। নেবু অবাক। হা হয়ে তকিয়ে আছে আয়মানের দিকে। দুজনে হেসে উঠে । হা হা হা.. .. .. ..
রুমে ঢুকে দুজন। আয়মান সোফায় বসে আছে।নেবু এদিক সেদিক পায়চারি করছে। আর সহ্য হচ্ছে না নেবুর। মোবাইল নাম্বার টিপে নেবু। আবার মুহুর্তেই মুছে ফেলে। সাহস হচ্ছে না।
শালাটা এখনো আসছে না কেন ? মনের অজান্তেই বলে ফেলে নেবু।
শালাটা হয়তো আসবে না। তোকে চিট করছে। আয়মান সায় দেয়।
তুই শালা বলছিস কেন ? নেবুর কন্ঠে ক্ষীপ্রতা।
তো তুই বলছিস কেন ? হেসেই বলল আয়মান।
আমি বলবো। একশো বার বলবো।
ঠিক আছে বল।
শালা,শালা,শালা ।
তিন বার । আরো ৯৪ বার .. .. .. ...
শালা শালা। বলে আবার পায়চারি শুরু করল নেবু। আয়মান বুঝতে পারল নেবু ক্ষেপে গেছে। কিছু একটা করা দরকার।
মেহমান আসলাম। অনুষ্ঠান। কিছু খেতে দিবি না ? বলল আয়মান।
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে একটায়। এখন দিবনা। ইন্দ্রনীল আসুক। নেবু আবার পায়চারি করছে।
চল না তাহলে,ততক্ষণে ছাদে ঘুরে আসি।
না,ইন্দ্রনীল আসবে।
আসুক,ছাদ থেকে তো দেখা যাবে।
তাইতো। চল।
দুজনে ছাদে এলো। নেবু হাফওয়ালের সাথে টেক দিয়ে দাড়িয়েছে। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে পথের দিকে। হয়তো ভাবছে ইন্দ্রনীল আসছে। কালো চশমা পড়ে। যার কন্ঠ অনেক মিষ্টি। যে অনেক দুষ্টু করে কথা বলে। আয়মান তার পাশে। দেখছে উদগ্রীব নেবু কে।
দুজনের নিরবতায় কেটে গেল অনেক্ষণ। আয়মান তার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল
মনে কর তুই একটা বেলুন নিয়ে খেলছিস। অনেক মজা হচ্ছে। এখনো খেলছিস। এক সময় দেখবি ছুঁতে ছুঁতে, ছুঁতে পারছিস না। এক আধটু উপরে উঠে গেছে। তবে কাছা কাছি। কিছুক্ষণ পর হাওয়াই ভেসে বেলুন অনক উপরে উঠে গেছে। এরপর অদৃশ্য। আচ্ছা,ইন্দ্রনীলকে খেলার বেলুনের সাথে তুলনা করা যায় ?
না ! তুই একটা গাধা। তুর ভাব না গুলোও গাধা গাধা। তোর খুব ঈর্ষা হচ্ছে তাই নারে ? আচ্ছা ইন্দ্রনীলকে খারাপ বানাচ্ছিস কেন ?
দেখ না কত দেরি হল ! এখনো আসেনি। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। আঁধার নামবে।
ঠিক আছে , কল দিচ্ছি।
লাভ হবে না। মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে।
তাহলে ভবিষ্যৎ বাণীও করিস ! নেবু কল দিতে দিতে বলল।
আয়মানের ভবিষ্যদ্বানী-ই ঠিক হল। ইন্দ্রনীলের মোবাইল বন্ধ। নেবু আর স্থির থাকতে পারছে না। মনে হচ্ছে যেন ভেঙ্গে পড়া অট্টালিকার মতো তার সব স্বপ্ন। চোখের কোণ ভিজে উঠল নেবুর। একটু হলেই গড়িয়ে পড়বে পানি।
কি করবে আয়মান ? কি করে সামালাবে নেবুকে ? মাথা যেন কাজ করছে না। কিছু একটা ভেবে আয়মান বলল Ñ এখন কল দিয়ে দেখ। মোবাইল চালু করতে পারে।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন প্রশ্ন তোলেনি নেবু। আয়মানের দিকে একটু করে তাকালো। আবার কল দিল ইন্দ্রনীলের নম্বরে।
রিং হচ্ছে। মুহুর্তেই উল্লসিত হয়ে উঠে নেবু। আয়মান নেবুর সামনে গিয়ে দাড়াল। তার মোবাইলটা নেবুর সামনে করে ধরে বলল Ñ দেখ।
কি ? নেবু জানতে চাইল।
স্ক্রিনের নম্বরটা। খুব শান্তভাবে বলল আয়মান।
নেবু দেখল। আবার দেখল। আরো দেখলো। দেখতে দেখতে নেবুর মুখ লাল হয়ে উঠে। ফর্সা মানুষগুলো রাগলে হয়তো এমনি হয়। শীতের সন্ধ্যা। সূর্য প্রায় ডুবে গেছে। তবু ঘেমে যাচ্ছে নেবু। কিছু বলল না আয়মানকে। বলল না আমায় নিয়ে খেলছিস কেন ? শার্টের কলার ঝাপটে ধরল।টেনে রুমে নিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করের দিল।
তারপর কি করল নেবু !
শুধু একটু হাসির শব্দ শুনা গিয়েছিল। আর কিছু জানা যায়নি। হয়তো জানাও যাবে না কোন দিন।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.