নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একমুঠো স্বপ্ন দবো তোমায়\nশিশির ভেজা সুবাস দেবো\nকিছু কথা দেবো\n শুনতে বিষন্বতায়\nবল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম

একমুঠো স্বপ্ন দেবো তোমায়, শিশির ভেজা কাশফুলেরী সুবাস দোবো কিছু কথা দেবো শুনতে বিষন্বতায় বল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিনের বাঙ্গালি ও মঙ্গলশোভাযাত্রার পেঁচা

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৭

শর্পি খুব ভোরেই জাগলো আজ।লাল সাদা শাড়ি পড়ে প্রস্তুত।বৈশাখি জোয়ারে মাতাবে নিজেকে।আয়নার সামনে নিজেকে দাড় করিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিরীক্ষা করে- কোথাও খুঁত নেই তো!

আইফোন নিয়ে আয়নাকে পিছ দিয়ে দাঁড়ায় শর্পি।ঠোট ফোলিয়ে সেলফি নেয়।বন্ধুদের ট্যাগ করে শিরোনাম দেয়-মঙ্গলশোভা যাত্রার জন্য আমি প্রস্তুত,তোমরা?

একটু পরেই বেশ কটা মন্তব্য এল।সো সেক্সি, সো হট,বিউটিফুল ড্রেসআপ এন্ড ইউ এসব।একটা মন্তব্যে তার চোখ আটকে যায়।

"আপু,আপনি অনেক সুন্দর।আচ্ছা,একটু বলবেন বাংলা কোন মাস কত দিনে?যেমন ধরুন,ইংরেজি সনের কোন মাস ৩০ দিনে কোন মাস ৩১ দিনে"।

হতচকিয়ে যায় শর্পি।একেমন প্রশ্ন!
উত্তর না দিলেও মানে কাদা লাগবে মনে হচ্ছে তার।কিন্তু বাস্তবেই সে সন্দিহান।কি হবে উত্তর?
দৌড়ে গিয়ে দেয়ালে আটকানো পঞ্জিকা উল্টায় শর্পি।নিজের রুমে, বাবার রুমে,মায়ের রুমে,ভাইয়ের রুমে।কোথাও বাংলা সনের গন্ধ নেই।শেষ ভরসা পড়ার রুমের টেবিল পঞ্জিকা।
দ্রুত হাতে নেয়।উল্টায় আর উল্টায়।জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি হয়ে ডিসেম্বর আসে।বৈশাখ-চৈত্রকে বুঝি জানুডি গলাধকরণ করে ফেলেছে।পঞ্জিকার কোথাও পাচ্ছি না কেন?এই বলে শর্পির ভাবনার ঘর গুলোর দরজা খোলে যায়।

টেবিল পঞ্জিকা ভালোভাবে দেখে শর্পি।তার সপ্তাহ,মাস, বছর কেটে যায় ইংরেজি সনের পরিকল্পনায়।তার কলেজ রুটিন,কোচিং রুটিন ইংরেজিতে।ঈদুল ফিতর,ঈদুল আযহা,রমজান আরবিতে।

শর্পি কি করবে এখন?অনুভূতি সব যেন গুড়িয়ে দিচ্ছে কেও।ডায়েরিটা টেনে নিল টেবিল থেকে।এটা তার নিত্যকার অভ্যাস।মন খারাপ হলেই ডায়েরি পড়ে, ডায়েরি লেখে।
পাতা উল্টালো।একটা দুটা...

মা ডাক এলো অন্যরুম থেকে-শর্পি, দ্রুতু রেডি হ।পান্তা ইলিশ শেষ হয়ে যাবে।দ্রুত বেরুতে হবে।

পান্তা শব্দটা কানে আসতেই রাকিবের কথা মনে পড়ল।
সাথে সাথে বিরক্তিও আসছে।নিজের উপর।
ধ্যাত!আজ কেন এসব মনে পড়ছে।তাড়াহুড়ার সময় একধম মানাচ্ছে না শর্পিকে-এসব বলতে বলতেই আরো গভীরে চলে যায়।ভাবনার গভীরে।রাকিবের প্রতিদিন সকালে পান্তা ভাত খাওয়া নিয়ে ক্লাসে হইহুল্লোড়ের কোলাহলে।বেচারা কেমন যেন লজ্জা পেয়েছিল সেদিন।

কে একজন তাকে বলেছিল-"তুই কি চাষা? চাষাভুষা যারা,বিলে পান্তাভাত নিয়ে খায় তারা"।
হা হা হা.....

কি অট্টহাসির রব উঠেছিল সেদিন! শর্পি আটকে গেল।আসলে পান্তাভাত খায় কারা?আজ আমরা কেন খাবো? আমরা তো চাষা হতে চায় না।তাই কি ইলিশ যোগ করে তফাৎ দাড় করিয়ে দিই?মাছে ভাতেই তো বাঙ্গালি।ইলিশ কে আলাদা করে দেখা হচ্ছে কেন?আমরা বুঝায় দিই কি,আমরা পান্তাভাত খেলেও চাষাভুষার পান্তা না,আমরা পান্তা ইলিশ খাই,আমার নিচে নামিনি উপর তলাই আছি।

এই চিন্তাগুলো শর্পির ভাবনার জগৎকে আরো নড়বড়ে করদিল।মাদের বলে দিল সে বেরুবে না।ভাল লাগলে একটু বেলা করে বেরুবে।
তখনি ফোন এল।রায়ানের ফোন।শর্পির দুই বছরের প্রেমিক।পাশের বিল্ডিং-এ বাসা।

ছাদে আসো।প্লিজ আসো প্লিজ প্লিজ....
তোমাকে শাড়ি পড়লে কেমন লাগে দেখবো।ফোন রিসিভ করলে এটুক বলেই লাইন কেটে দেই রায়ান।

শর্পি অনেক আগে থেকেই কৌতূহলী ছিল।রয়ানের সাথে সময় কাটাবে, ঘুরবে,খাবে।আজাইরা ভাবনা গুলো যেন তাকে উলট-পালট করে দিল।

ইচ্ছে না করলেও ছাদে এলো শর্পি।দু বিল্ডিং পরের ছাদে ক্যামেরা হাত রায়ান।ছাদে উঠতেই ক্লিক ক্লিক করে কটা ছবি নিল।একটু এগিয়ে আসতে আসতে চিল্লাই বলল-এই যে বাঙ্গালি। শুভ নববর্ষ।
শর্পিও জানাল-শুভনববর্ষ।
-তোমাকে লাগছে। রায়ান বলল।
-কেমন? শর্পি চিল্লানি দিতে পারেনি।হাতের ইশারায় ভাব প্রকাশ করলো।
-বাঙ্গালি বধু
-তোমাকে বর।

দুজনেই হেসে উঠে।হা হা...
আমি যাচ্ছি বলে শর্পি ফিরলো।রায়ান তখনি চিৎকার দিয়ে বলল-একটু ওয়েট।একটু পরেই এই রাস্তা দিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রা যাবে।ছবি নেবো,সেলফি নেবো শোভাযাত্রাকে ফোকাস করে।

একটু পরেই শোভাযাত্রা এলো।রায়ান ছবি নিচ্ছে,শর্পি সেলফি।বেশ কয়েকটা নিয়ে শর্পি ছবি নেওয়ার জন্য ফিরলো।শোভাযাত্রায় টিটু আজাদকে দেখে আঁতকে উঠে।এই সে ছেলে না? যে কদিন আগে নিজেকে বিজ্ঞানমষ্ক জাহির করে ধর্মকে কুসংস্কার বলে তাচ্ছিল্য করেছিল!আজ সে পেঁচা আর দেবদেবীর মুর্তি নিয়ে মঙ্গলকামনায় মঙ্গলশোভাযাত্রা করছে!

শর্পি আর ভাবতে পারে না।
সে নিজেওতো আজ বাঙ্গালি বাঙ্গালি সেজেছে,একদিনের বাঙ্গালি।

একদিনের বাঙ্গালি
১৪২৩ বঙ্গাব্দ

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৩

দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: ৯৯% জানেনা আজকে কত বাংলা কত সাল, কয়দিন পরে ৯৯.৯৯% বলতে পারবে না বাংলা কত তারিখ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২২

আসিফ ইব্রাহীম বলেছেন: ঠিক বলেছেন।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: লেখায় বাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে। ভালো লিখেছেন। আমরা হুজুগে অনেক কিছুই করে ফেলি।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২৩

আসিফ ইব্রাহীম বলেছেন: প্রেরণার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: বেশ, মানলাম মঙ্গল শোভাযাত্রা যাঁরা করছেন তাঁদের মধ্যে আপনার গল্পের নায়িকার মতোও কেউ কেউ আছে, বা অনেকেই আছে। যেমন যাঁরা মসজিদে যান তাঁদের মধ্যেও অনেক ভণ্ড ধার্মিক থাকে। তাতে কী ধর্ম ভণ্ডামী হয়ে যায়? যদি না যায়, তাহলে আপনার এই লেখাটার মানেটা কী? কী যে বলতে চান, নিজেও বোঝেন না! :(

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: সোজোন বাদিয়ার মন্তব্যের সাথে একমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.