নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একমুঠো স্বপ্ন দবো তোমায়\nশিশির ভেজা সুবাস দেবো\nকিছু কথা দেবো\n শুনতে বিষন্বতায়\nবল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম

একমুঠো স্বপ্ন দেবো তোমায়, শিশির ভেজা কাশফুলেরী সুবাস দোবো কিছু কথা দেবো শুনতে বিষন্বতায় বল,নেবে কি?

আসিফ ইব্রাহীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেঁধেছে এক মিষ্ট বন্ধনে: ভূজপুর স্টুডেন্টস\' ফেয়ার শিক্ষা সফর ২০১৬

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

তখনো সূর্য পাহাড়ের আড়ালে।একটু পরেই উঠে আসবে পাহাড়ের উপরে।পাহাড়েরর কুল ঘেঁসে রাস্তা।তার পাশে সাগর।ক্ষণে ক্ষণে ছোট বড় ঢেউ আচড়ে পড়ছে কূলে।হালকা শীতে মিশা এক মিষ্টি সকাল।
সামনে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে আমাদের বাস।গন্তব্য ইনানী সমুদ্র সৈকত।মাইকে চলছে কবিতা আবৃত্তি.....যদি ভালবাসা দাও/শুধরে নেবো জীবনের ভুলগুলো।

প্রকৃতি শান্ত।আমরা শান্ত।ঢেউয়ের সুর আর কবিতার ছন্দ আমাদের বেঁধেছে এক মিষ্ট বন্ধনে।
আমরা পাহাড়ের দিকে তাকায়। আমরা সাগরের বিশালতার দিকে তাকায়।ঢেউ গুলো কিভাবে ছন্দে ছন্দে আচড়ে পড়ছে তার রহস্য খুঁজি।আমরা সৌন্দর্য দেখি,প্রকৃতির রহস্যময়ী খেলা দেখি, আমাদের চোখ বার বার ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে সৌন্দর্যেরর রহস্য উন্মোচন করতে পারে না।
গাড়ি হিমছড়ির বুক ছিড়ে এগিয়ে যায় ইনানীর দিকে।

আমাদের গল্পটা এভাবেই শুরু।ভূজপুর স্টুডেন্টস' ফেয়ার কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষাসফর ২০১৬ এর সকালটা এভাবেই শুরু হয়।

শনিবার দিবাগত রাতে(২টা) চট্টগ্রাম শহর থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।সভাপতি আসিফ ইব্রাহীমের সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্যের পর স্পীকার চলে যায় সবার হাতে।কুরান তেলাওয়াত,সঙ্গীত,গান ও কবিতায় প্রকম্পিত হতে থাকে বাস।ভুজপুরের ছাত্রদের ৪৯ জনের দল মিশে যায় এক সুরে,এক প্রাণে।এ যেন একটা যৌথ পরিবার।সবাই সভার ভাই।

নতুন ব্রিজের পর হালকা আপ্যায়নের আয়োজন হয়।তখনি একটা মধুর দুর্ঘটনা ঘটে।সে খবর না দিলেও চলে।একসময় কেও কেও ঘুমুতে চোখ বুজলেও থেমে থেমে জমে উঠেছে গানের আসর।

আমরা যখন কলাতলী মোড়ে,ফজরের নামাজের সময় হয়।নামাজ আদায় করে আবার যাত্রা শুরু।সরাসরি ইনানী সমুদ্র সৈকত।এখানে টি-শার্ট ডিস্ট্রিবিউট করা হয়।এরপর সকালের নাস্তার জন্য হোটেল বুকিং দেয়া হয়।নাস্তা খেতে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল বিশাল পলিটিকাল শো ডাউন।আবু সাইদ এটি ফ্রেমে বেঁধেছে।

এরপর সবাই নেমে পড়ে বীচে।ছোট ছোট ডেউ পা ধুইয়ে দিচ্ছে।সকালের সোনালী রোদ সবাই কে উজ্জ্বল করে তুলেছে।একেক জন একেক ভাবে উপভোগ করছে সকালের সমুদ্র।কেও অল্প পানিতে হাঁটছে।কেও পা ডুবিয়ে পাথরে বসে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে।যেখানে সাগর আর আকাশ মিশে গেছে একসাথে।কেও তুলছে ছবি।
ছবির ক্ষেত্রে একটা মজার বিষয় আছে।ডিএসএলার দিয়ে ছবি তুলার সুযোগ ।এখানে দুইটা অপশন।
সিলেক্টেড এবং আনসিলেক্টেড।সিলেক্টেড হলে একটা ছবি চার টাকা।আনসিলেক্টেড হলে দেড় টাকা।আনসিলেক্টেডের ক্ষেত্রে যা তুলবে সব নিতে হবে।মজার ব্যাপার হল তারা এক পোজে পনেরটা ছবি তুলে ফেলে।

ইনানী সমুদ্র সৈকতে দুইঘন্টা চলে যায়।খুব তৃষ্ণার্থ অবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার মতো।পনি শেষ হয়ে যায়,তৃষ্ণা থেকে যায়।
রওনা দিই হিমছড়ির উদ্দেশ্যে।অসাধারণ ভৌগোলিক গঠন হিমছড়ির।সমুদ্রের পাড়ে পাহাড়।আকাশ, সমুদ্র ও পাহাড়ের সুনিপুন কারুকাজ সত্যিই সৃষ্টিকর্তার কারিশমা ঘোষণা করে নিয়ত।পাহড় থেকে সমুদ্রের দিকে ভিউটা যে কোন পর্যটকের নজড় কাড়বে।

বেশ কিছুক্ষণ হিমছড়িতে চষে বেড়ায় ভুজপুর স্টুডেন্টস' ফেয়ারের টিম৪৯।এরপর কলাতলীর উদ্দেশ্যে যাত্রা।পূর্বেই বুকিং দেয়া হয়েছিল হোটেল আই বীচ।ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার সম্পন্ন হয় এই রেস্টুরেন্ট এন্ড হোটেল এ।পরিচিত থাকায় ম্যানেজ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি।খাওয়ার পর রেস্ট নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলাম।

বিশ্রাম শেষে সৈকতে।প্রথমে সুগন্ধা।তখন দেড়টার কাছাকাছি।ব্যাগ একটার উপর আরেকটা পড়তে থাকে বালির উপর।একসময় গড়ে উঠল ব্যাগের পাহাড়।পোশাক পরিবর্তন করা সবার শেষ।

এবার উল্লাসের পালা।সবাই সমুদ্রে।সমুদ্রস্নান যেন চূড়ান্ত আনন্দের কেন্দ্র।কেও ভাসছে,কেও সাঁতরাচ্ছে।কেও দৌড়াচ্ছে, কেও স্পীড বোডে ছুটছে তীব্র গতিতে।পানি মারছে,পানি খাচ্ছে।ছবি তুলছে,সেলফি হচ্ছে।হাজার মানুষের ভিড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও ছুটি দিতে চাই সকল দুঃখ-বেদনা, বিষন্বতা,চিন্তা ও ব্যস্ততাকে।এ সময়টা যেন একান্তই নিজের জন্য।নিজেকে নতুন করে উজ্জীবিত করার জন্য।
প্রায় দুই ঘন্টা কেটে যায়।একে একে উঠে আসে সবাই। পোষাক পরিবর্তন করে ঢেউয়ের ছন্দে হেঁটে যায় লাভনী পয়েন্টের দিকে।

ছাউনির নিছে আধশুয়া হয়ে শুনি সমুদ্রের গর্জন, পানির নিরন্তর শব্দ।কত রঙের মানুষ,কত ঢঙের মানুষ খেলছে নিজের মতো।সব কষ্ট সমুদ্রের কাছে জমা দিয়ে দিতে চাই।নাকি সমুদ্রের কষ্ট আমাদের থেকেও বেশি!নয়তো তার এত অশ্রু কেন?

বেলা গড়িয়ে যায়।সমুদ্রের উত্তর না নিয়ে আমরা চলে যায় বার্মিজ মার্কেটে।কিছু না নিয়ে যাওয়া একদম ভালো দেখায় না।
আমাদের মার্কেটের চেয়ে এখানে ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার মতো।যেমন; আচার আর শূটকির রাজত্ব। চাকমা মেয়েদোকানির কথাও বলা যায়।
কিছু আমের আর তেতুলের আচার কিনলাম।ঘুরলাম, খেলাম।ঘড়ি দেখি তখন চারটা ত্রিশ বাজে।সূর্যাস্ত উপভোগ করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল।দ্রুত মার্কেট থেকে ফিরলাম সুগন্ধা।
তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে দিগন্তের কাছাকাছি।বউ বা প্রেমিকা সূর্য হাতে নেওয়ার ঢং করে দাড়িয়েছে।জামাই ক্যামরা হাতে নানান ভাবে ছবি নিচ্ছে।কেও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সূর্যের ডুবে যাওয়ার দিকে।কেও বা অবাক হচ্ছে সমুদ্রের সূর্যাস্তের রুপ দেখে।
হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।যখন সন্ধ্যা হতো,পশ্চিমাকাশ লালচে রুপ ধারণ করতো।আমরা বলতাম এসব হাসান হোসেনের রক্ত।কারবালার মাঠের রক্ত।যদিও এর কোন ভিত্তি নেই।গ্রামের কথা মনে পড়তেই মা বাবার কথা মনে পড়ে।একদিন সবাইকে নিয়ে আসবো, এমন আশা তৈরি হয় মনে কোণে।

সূর্য ডুবে যায়।গোধূলি গিয়ে অন্ধকার রাজত্ব কায়েমের জন্য উদ্ধত হয়।আমরা কোন একদিন পুনরায় সমুদ্র জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কুল ঘেঁসে ঢেউয়ের ছন্দে এগুতে থাকি।ব্যাগ কাঁধে হেঁটে চলে এক মুসাফির দল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.