![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মূলত কবিতা লেখালেখি করি বেশি, তবে পাশাপাশি কিছু গল্প লিখেছি।এছাড়া মাঝে মাঝে আমার ফেসবুক আইডিতে যেকোনো বিষয়ে মাঝে মধ্যে নিবন্ধ লিখে থাকি। অনার্স কমপ্লিট করেছি বি,জি,এম,ই,এ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি থেকে ২০১৩ সালে, এখন এম,বি,এ তেঁ ভর্তি হওয়ার চেষ্টায় আছি
বিত্তশালী মা-বাবা'র একমাত্র নয়নমণি "কোমল।" কিশোর থাকতেই প্রতিনিয়ত কয়েক মাস পরেই একটু আধটু জ্বরে ভুগতো। তার চরম ব্যস্ত থাকা মা-বাবা শুরুর দিকে তেমন আমল দেয় নি ব্যাপারটাকে। জ্বরের ওষুধ খেয়ে কয়েক দিনের ভিতর ভালো হয়ে যেত কোমল। অনার্সের শুরুর দিকে কোমলের জ্বর লেগেই থাকতো মাসে মাসে, তখনি তার মা-বাবা তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যায় ডাক্তার দেখাতে, অবশেষে সব পরীক্ষার পর ডাক্তার বললো তাদের নয়নমণি খুব ছোট থেকেই লেউকেমিয়ায় আক্রান্ত এবং অবস্থা এতই গুরতর যে তার বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের দরকার পড়লো এবং করাও হলো, কিন্তু তবুও তাতে কিছুই হলো না। বেশ কয়েক মাস পর সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে থাকার পরে ডাক্তাররা অবসেশে আশা ছেড়ে দিয়ে তার মা-বাবা কে বললো কোমলের সার্বিক রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়া তবুও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং তার জীবনের মেয়াদ আর হয়তো হাতে গোনা কয়েকটা দিন।
মা-বাবা গোপন করার চেষ্টা করেও শেষ অবধি পারলো না, কোমল ঠিকই জেনে নিলো যে তার ভোরের সূর্য দেখার জন্যে হাতে খুব বেশী সময় নেই। সে তার মা-বাবাকে বললো তাকে যেন এই কয়েকটা দিন নির্ঝঞ্ঝাটে কাটাতে দেয়। তার কথা অনুযায়ী তারা সবই মেনে নিলো, কোমল তার প্রিয় বন্ধু সুহান ব্যতিত আর কাউকেই ব্যাপারটা শেয়ার করে নি পাছে সবাই করুণার দৃষ্টিতে যেন তাকাতে না শুরু করে। কোমলের ভার্সিটিতে সবচেয়ে কাছের বন্ধু সুহান ছাড়াও আরও দুজন বন্ধু আছে, সিমিয়া ও ঐবন্তি। মজার ব্যাপার হল সিমিয়া ও ঐবন্তি দু'বোন না হলেও চেহারা দেখে মনে হবে তারা দু'জন আপন বোন।
কোমল দেখতে রোগা পাতলা হলেও একটা সম্মোহনী ভাব তার ভিতর থেকেই যেন ফুটে উঠে।
সিমিয়া ও ঐবন্তি দুজনে কোমলের বন্ধু হলেও ওদের মনের এক কোণে কোমলের জন্যে কেমন যেন এক অপ্রকাশিত ভালোবাসার অনুভূতি কাজ করে। তারা কোমলের মুহূর্তেই করে ফেলা কোন মানুষের স্কেচ আঁকা দেখে প্রবল ভাবে সম্মোহিত হয়ে থাকে। সুহান ছাড়া কেউই কোমলের বাসা চিনে না। কোমল অনেক দিন ক্যাম্পাসে না আসাতে তাদের চিন্তা হতে শুরু হল, তারা সুহানকে কোমলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাও করেছিল কিন্তু সুহান তাদের মিথ্যে করে বলেছিল কোমল সিঙ্গাপুর তার চাচার কাছে কয়েক মাসের জন্যে ঘুরতে গিয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরার পর কোমল ক্যাম্পাসে যখন ফিরল তখন স্বাভাবিক ভাবেই ওর বন্ধুদের সাথে মিশছে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে কিছুই। একদিন সুহান, সিমিয়া ও ঐবন্তি আড্ডায় বসলো সুহানের বাসায়। তখনই সিমিয়া আচমকা জিজ্ঞেস করে বসলো কোমলকে, "তোর ভালোবাসার মানুষ নেই?", সিমিয়ার এই প্রশ্নের সাথে সাথে ঐবন্তিও একি প্রশ্ন জিজ্ঞেশ করে উঠলো।
কোমল তখন বলল,'' খুব ছোট থেকেই আমি একটা স্বপ্ন দেখি, যেখানে সাগরের তীর ঘেঁষে মৃদু বৃষ্টিতে এক অষ্টাদশী মনের আনন্দে নেচে যাচ্ছে, কিন্তু আমি ঐ মেয়েটির চেহারা দেখতে পাচ্ছি না, অনেকবার দেখেছি স্বপ্নটি কিন্তু তবু মেয়েটির মুখাবয়ব দেখা হয়ে উঠেনি, আমার কাছে মনে হয় ঐ না দেখা মুখাবয়বই আমার ভালোবাসার মানুষ।"
ঐবন্তি তখন বলে উঠলো," তুই তো কতো মানুষেরই স্কেচ আঁকিস, আমার টা এঁকে দিবি কি?"
সাথে সাথে একই আবদার করে বসলো সিমিয়াও। সুহান তখন বললো তাহলে সে বাদ যাবে কেন তারও একটা করে দিতে স্কেচ। কথা গুলো শুনার পর কোমল স্মিত হেসে উঠে বললো, ''আমার কাছে যখন যা ভালো লাগে তখন তাই আঁকতে পছন্দ করি, এমন অর্ডার করা কথায় আঁকতে পারি না।" কোমল দিনকে দিন সিমিয়া ও ঐবন্তি উভয়ের উপরই কেন জানি বন্ধুর থেকেও বেশী কিছু ভাবার অনুভূতি অনূভব করতে শুরু করলো। ব্যাপারটা তার কাছে একরকম আশ্চর্য লাগলো, একি সাথে দুটি মেয়ের উপরই কিভাবে একি রকম ভালোলাগা অথবা ভালোবাসা কাজ করে?
হঠাৎ কিছুদিন পরে একদিন রাতে সে ঐ স্বপ্নটি আবার দেখলো, কিন্তু এইবার সে সেই মেয়েটির মুখাবয়ব দেখতে পারলো। অবাক করা ব্যাপার হল মেয়েটির চেহারা সিমিয়া ও ঐবন্তির মিশ্রণের মতো সে আবিষ্কার করলো, এবং ভোরে উঠেই সে ঐ মুখাবয়বটি এঁকে ফেললো। তখনি সে বুঝতে পারলো সে সত্যিকারে সিমিয়া ও ঐবন্তি উভয়ের জন্যেই হৃদয় হতে ভালোবাসার অনুভূতি লালন করছে। কিন্তু তার যে হাতে আর সময় নেই, গত এক সপ্তাহ থেকে সে বিছানায় পড়ে আছে প্রবল জ্বরে। এক ভোরে সে একটি চিঠি লিখল সিমিয়া ও ঐবন্তি দুজনকে, চিঠির ভাষা হুবুহু একি রকম, সে লিখলোঃ
"তোরা দুজনেই আমার ভালোবাসার মানুষ কে জানতে চেয়েছিলি, আমি তোদের আমার স্বপ্নের কথা বলেছিলাম, অবাক করা ব্যাপার হলো আমার স্বপ্নে দেখা মেয়েটির চেহারা দেখতে তোদের দুজনেরই চেহারার মিশ্রণ। ঝেড়ে কেশে বললে ব্যাপারটা হলো, আমি তোদের দুজনকেই একই সঙ্গে এক হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। এক হৃদয় দিয়ে দুই নারীকে ভালোবাসা কতোটা যুক্তিযুক্ত আমি জানি না, তবে এটাই সত্য। তবে সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমার হাতে খুব বেশী ভোরের সূর্য দেখার সময় নেই, সুহান তোদের সব বলবে, আর এই চিঠিটা আমি ইচ্ছে করেই তোদের আমার জীবনের আলো নিভে যাওয়ার পর পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি কারণ, আমি চাই না তোদের দুজনকে বিব্রত করতে এবং তোদের বিব্রত করে আমিও বিব্রত হতে, দেখা হবে স্বর্গলোকে "
আজ কোমলের সন্ধ্যা থেকেই কেমন জানি লাগছে, এতদিন তার ভিতর বেঁচে থাকার এক তীব্র তাড়না কাজ করতো, আজ তা করছে না, সে ভাবছে ঠিক এখন মর্ত্যলোক থেকে বিদায় নিলেই তার আত্মার প্রশান্তি হবে। কোমল ফোন করে সুহান কে আনালো বাসায়, সুহান কে দুটি চিঠি ও সাথে তার ভালোবাসার মানুষের মুখাবয়বের দুটি স্কেচ দিলো এবং সুহান কে বুঝিয়ে বলল যে এই চিঠি ও স্কেচ যেন সিমিয়া ও ঐবন্তির হাতে তার পৃথিবী থেকে প্রস্থানের পরেই যেন পৌঁছায়। সুহান যাওয়ার ঠিক ঘণ্টা দুয়েক বাদেই বিধাতা কোমল কে মর্ত্যলোক থেকে উঠিয়ে আকাশের উজ্জ্বল তারা করে দিলো।
সিমিয়া ও ঐবন্তি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠিক একই কথা ভাবছে," আকাশের উজ্জ্বল তারাটি দেখতে আসলেই কোমলের মত অবিকল কোমল।"
০৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০
অশ্রু হাসান বলেছেন: কোমলেরা বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজের মনের আবেগ প্রকাশ করে বিব্রত হতে চায় না, কোমলের প্রতি আপনার ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করেছে
২| ০৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪
আম্মানসুরা বলেছেন: দুই মেয়েকে এক সাথে ভালবাসার অপরাধ ঘুচাতেই কি কোমল কে লেখক এই পরিণতি তে নিয়ে গেল?
০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৪
অশ্রু হাসান বলেছেন: কোমল কে আসলে তার অনারোগ্য ব্যাধি ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে গেছে তবে দুই মেয়েকে একই অনুভূতি দিয়ে ভালোবাসা টা কে আমি অপরাধ মনে করছি না, মানব চরিত্রের এক নিপুন বিচিত্রতা আমি এখানে বুঝাতে চেয়েছি যেই বিচিত্রতায় একটা ছেলে দুই টা মেয়েকে অ্যাট এ টাইম একই সাথে এক মন দিয়ে দুইজন কেই ভীষণ ভালোবাসে তাই তো তার তৈরিকৃত স্কেচ টা দেখতে দুই মেয়ের চেহারার সমন্বয়ে তৈরি।
৩| ০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
আম্মানসুরা বলেছেন: দুজনের স্কেচ আঁকতে গিয়ে সঠিক ভাবে কিন্তু কাওকেই আকা হয় নি। আমার মনে হয় একসাথে দুজনকে পছন্দ করা যায় কিন্তু প্রেম নয়।
০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
অশ্রু হাসান বলেছেন: কোমল দুইজনের স্কেচ আঁকতে যায় নাই, ও রাতের বেলায় স্বপ্নে একটা মেয়ের মুখছবি স্বপ্নে দেখতে পায় তখন সে স্কেচে আকে সেই স্বপ্নের মেয়ের ছবি, যখন স্কেচ আঁকা হয়ে যায় তখন সে দেখে যে স্কেচে আঁকা ছবিটা টার দুই বান্ধবির চেহারার সংমিশ্রণ।
স্বাভাবিক ধারণা তাই বলে তবে ছেলেটা হয়তো বেঁচে থাকলে সেই স্বাভাবিক ধারণা ভেঙ্গে দিতো, রেয়ার কিছু ঘটনা পৃথিবীতে কিন্তু থাকে আপা
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
আম্মানসুরা বলেছেন: এই চমৎকার সন্ধ্যায় মন খারাপের গল্প মন কে কিছুটা খারাপ করে দিল। কোমলের জন্য ভালবাসা!