![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথমেই বলি, আমি বিশেষ কোনও জ্ঞানী ব্যক্তি নই। অনেক কিছু না বোঝা, অনেক কিছু না জানা দেশের সাধারন জনগনের ভীড়ে মিশে থাকা নিতান্তই একজন সাধারন নাজানা মানুষ। আমি আস্তিও নই, নাস্তিকও নই। নই রাজনীতিবীদ। উপরের উল্লেখিত অসাধারনত্বের কোনটাই আমার নেই্। আর এই সাধারনত্বের সুবিধা আর অসুবিধা দুটোই আছে। অসাধারন না হওয়ার কারনে আমি অনেক জিনিস সম্পর্কে জানিনা আর সাধারন হওয়ার জন্যে আমি স্বচ্ছন্দে সবার কাছে না জানা কথাগুলো জানতে চাইতে পারি।
প্রথিতযশা লেখক, ব্লগার, নাস্তিক অভিজিৎ রায় খুন হয়েছেন। সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন চলছে। ফেসবুকের আর পত্রপত্রিকার পেজের উপর দিয়ে অগ্নিস্রোত বইছে। তার প্রধান দোষ বলে ধরা হচ্ছে তিনি নাস্তিক।
নাস্তিক শব্দের আভিধানিক অর্থ্ ‘ন’ আস্তিক অর্থাৎ যে বা যিনি কোনও কিছুতে বিশ্বাস করেন না। আর ধর্মগত অর্থে নাস্তিক বলতে বোঝায় যিনি প্রচলিত ধর্ম্ বা ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী নন। আমার অসাধারন না হওয়ার সুবাদে অভিজিৎ রায় আমার ব্যক্তিগত পরিচিত কেও নন। তাঁর হাতে গোনা দুই-একটা লেখা বাদে পড়ার সুযোগ বা সুবিধাও কোনওদিন হয়নি। তাই তার আস্তিকতা বা নাস্তিকতা নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতাও নেই্। কিন্তু যথাযত বিনয় বজিয়ে রেখে বলতে চাই, নাস্তিক বলে কি আদতেই কিছু আছে ? জন্মগতভাবে কেও একটা না একটা ধর্মের অনুসারী। তাই জন্মগতভাবে সবাই আস্তিক। একজন মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করার পরে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের ষ্ট্যাম্প মা-বাবার বদৌলতে তার উপরে পড়ে। এর মানে কি এই যে ধর্মের সকল নিয়ম(সুনিয়ম+কুনিয়ম+অনিয়ম) তার মুখ বুজে মেনে নিতে হবে? নিজের মাথায় আসা চিন্তাগুলোকে মনের মাঝেই কবর দিতে হবে ?প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে নাস্তিক আখ্যা দেওয়া হবে? ধর্মের যুক্তিগুলোকে ভুল প্রমান করার উল্টো যুক্তি প্রয়োগ করলেই তার জীবন পথে-ঘাটে ধারালো চাপাতির কোপে শেষ করে দিতে হবে? অতিসাধারন মানুষ হিসাবে এর উত্তর আমার জানা নেই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক যে শিক্ষা দিয়েছিলেন, কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকগন যে শিক্ষা দেন, জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ মনীষি যে শিক্ষা দেন তা কি কখনও ভুল হতে পারেনা? বা তিনি যে শিক্ষা দিয়েছিলেন অপরের ভুল ব্যাক্ষা কারনে তা কি আমাদের কাছে ভুলভাবে উপস্তাপিত হতে পারেনা ? যখন জানব বা বুঝব তখন কি আমি তাকে মেরে ফেলব্। না বিশ্বাস না করার কারনে আমাকে মেরে ফেলা হবে ? আমার জানা নেই কারন আমি সাধারন।
হয়তো আমি আস্তিক, তাই অন্যান্য আস্তিকদের মতে আমরা জানি সৃষ্টিকর্ত্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে দিয়েছেন বুদ্ধি, বিবেক আর আত্মসংযম। এই তিনগুনের অধিকারী বলেই আমরা মানুষ। আমাদের কি নিজের বুদ্ধিবলে কোনও যুক্তি দেখানোর অধিকার নেই ? মিথ্যা বলা মহাপাপ। আমরা কি প্রচলিত ধর্মের পদ্ধতি মিথ্যা বা ভুল জেনেও মেনে নিয়ে চুপ করে থেকে সেই মহাপাপী হব। আমরা কি নিজের বিবেক বিষর্জন দিয়ে আত্মসংযম ভুলে চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত করে কারও মৃত্যু নিশ্চত করব ? আমার জানা নেই কারন আমি অসাধারন কেউ নই।
একজন মানুষ তখনই ধর্মের বিরুদ্ধে যায় যখন সে ধর্মের খুঁতগুলো দেখতে পায়। সে সেই খুঁতগুলোকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যুক্তির পাহাড় তৈরী করে। প্রচলিত ধর্মের মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। আমরা যখন রাতে লম্বা ঘুম দিই তখন তারা মানবধর্ম্কে রক্ষার চেষ্টা করে। মানুষকে ধর্ম্-ব্যবসায়দের হাত থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করে। সারারাত জেগে আমাদের জন্যে আরো আনার চেষ্টা করে। আর আমরা, হ্যাঁ আমরা বুঝি তার পুরষ্কারও দিই। ধারালো চাপাতির চকচকে কোপ, একটা দুটো নয় সমস্ত রাগ উজাড় করে, অগুনতি। কেন দিই? আমার জানা নেই কারন আমিতো সাধারন একটা মানুষ। অনেক জ্ঞানী কেউ নই। অনেক কিছুই আমার অজানা।
অসাধারন না হলেও একটা জিনিস বুঝি, অন্ধকার আছে বলেই আলো এত দামী। শয়তান আছে বলেই ভগবানের অস্তিত্ব আছে। উষ্ণতা না থাকলে শীতলতার মূল্য থাকত না্। বুদ্ধিচর্চা না থাকলে বাঁদর আর মানুষের পার্থক্য থাকত না। নাস্তিকরা না থাকলে আস্তিকদের জায়গা হত গাছতলা। নাস্তিকদের নাস্তিকতাই আস্তিকদের আলোচনায় এনেছে। তাদের যুক্তি-বুদ্ধি প্রচার আর প্রসারের সুযোগ করে দিয়েছে। আর তাদের তথাকথিত আস্তিকদের শুভেচ্ছা, কয়েকটা চাপাতির কোপ। আস্তিকরা তাদের আস্তিকতা বজায় রেখেছে উপহার দেওয়ায়, হোকনা সেটা চাপাতির কোপ। উপহারতো বটে, নেই মামার চে’ কানা মামা ভাল না ? অনেকে জানলেও, আমি জানিনা।
আমার মনে হয়( নিতান্তেই ব্যক্তিগত মতামত) এমন দিন আসবে, তখন মানুষ চিন্তা করতে ভয় পাবে। ধর্ম্ ব্যবসায়ীগনের মুখের কথাকে বিশ্বাস না করাকে মহাপাপ বলে গন্য করা হবে। আর পাপের শাস্তিস্বরুপ অভিজিৎ রায় এর মত নাস্তিকদের ভয়ঙ্কর মৃত্যুর ছবিগুলো দেখানো হবে। পৃথিবী হবে নাস্তিকতাশূন্য। কিন্ত তখন কি ধর্মকে মানুষ শ্রদ্ধা করবে না ভয় পাবে? ধর্মীয় আচরনকে ভালবাসবে না ভয়যুক্ত বিরক্তি হিসাবে দেখবে? ধর্মের দাম বা প্রয়োজন কি আদৌ থাকবে ? উত্তরগুলো জানিনা, খুব জানতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমি সাধারন, আর অসাধারন হতে খুব ভয় পাই। কি জানি, যদি নাস্তিকতার লিস্টে নাম উঠে যায়। যদি কয়েকটা চাপাতির কোপ পুরষ্কার হিসাবে পাই। নাস্তিক হব কিনা জানিনা, কিছুদিন ভাবি, আর কিছুদিন না হয় সুন্দর পৃথিবীতে আস্তিক হয়েই বেঁচে থাকি।
©somewhere in net ltd.