নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের কাছে পরাজিত শিক্ষা আজ সম্পদ নয়, বোঝা।।

অযুক্তিবাদী

হাজার যুক্তির ভীড়ে বিন্দু বিন্দু আবেগ মেশানো আমি, অযুক্তিবাদী।

অযুক্তিবাদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়ার গল্প, কিছু স্বপ্ন আর জীবনের কিছু স্বীকারোক্তি :২

০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৯

একদিন আমার কোন কথায় জানি প্রিয়া কিন্চিত রাগ মেশানো অবাক গলায় বলেছিল, “দ্যাখো, তুমি জীবনে কিছু শুরুই করতে পারলে না। শেষ করবে কি করে ? আশ্চর্য্!” শেষের কথাটায় আমি অবাক হইনি কারন ও সহজে আশ্চর্য্ হত আর এই কথাটা ব্যবহার করত। আর এই কারনেই হয়ত আমিও আর কোনও কিছুতে আশ্চর্য্ হতাম না আর এখনও হইনা। প্রিয়া আমার জীবনে অনেক কিছু দিয়ে গেছে তার মধ্যে এই অনুভূতি একটা বড় জিনিস যদিও ওর দেওয়া সবকিছুই আমার কাছে অমূল্য। ছেড়ে দিলেই সবকিছু দেওয়া যায়না তবুও ওর কথা বাদ না দিলে সারাজীবনেও ওর গল্প শেষ হবেনা ( আমি যেন ওর গল্প যেন সারা জীবনে শেষ করতে না পারি) যদিও কাউকে বলার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। অনেক না বলা কথা মনে হয় অনেক বড় কিছু বলতে পারে! ও হয়তো সেরকম কেউ ! যাক, জীবনে হয়তো কোনকিছুই ঠিকমত শুরু হয়নি। যদিও জীবনকাহিনী বলতে বসিনি তবু বই না খুললে যেমন পড়া যায়না তাই বলি আমার যেদিন জন্ম সেদিন নাকি ছিল ঘোর অমাবশ্যা। তাতে আবার মঙ্গলবার। ছেলেমানুষ নাকি চাঁদ না হলেও আলো দেয় তবু আমায় দেখে আমার এক রশিক বড় ভাই বলেছিল, “আজ রাতে ছেড়ে দিলে টর্চ্ জ্বালিয়েও আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।” আর যে বলেছিল তাঁর চোখেও কোনও সমস্যা ছিলনা। যে কারনেই হোক সৃষ্টিকর্তার অপার করুনায় ( যদিও করুনার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে) কালাচাঁদ নাম না হলেও বেশ কালোই ছিলাম। বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান আর পুত্র হিসাবে দ্বিতীয় তবু বুদ্ধি হওয়ার পর কোনও অনাদর বোধ হয়নি। কবে যেন একদিন কে বলেছিল, আমার চিত্ত তোমার মত এত চন্ঞল নয়। আর যাকে বলেছিল সে প্রত্ত্যুত্তরে বলেছিল, তোমার এখনও চিত্ত চান্ঞল্যের সময় হয়নি। যাক্ ধানের হাটে ওল নামানো মনে হলেও হতে পারে তবু বলি এখন যেটাকে অনাদর বোধ হয় সেটা কি চিত্ত চান্ঞল্যের মত কোনওকিছু! কি জানি! যাই হোক আদরে আর অনাদরে যেটাই বলি বেশ ভালভাবেই বেড়ে উঠছিলাম বেশ বিদ্যুৎবিহীন, ইটের রাস্তা আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নবগঙ্গা নদীর পাশের একটা বেশ ছোট্ট গ্রামে। গ্রামের নাম বলে তো লাভ নেই কেউ হয়তো খুঁজে না পেয়ে অস্বস্তি বোধ করবে। মোট কথা, বেশ ভালো একটা গ্রাম। ছোটবেলায় বেশ ভীতু আর গোবেচারা ছিলাম তাই গ্রামের অন্য ছেলেদের মত নদীতে ঝাঁপানো, গাছে ওঠা, মারামারি খুব একটা হোতনা আমাকে দিয়ে। তখন মেলায় গিয়েছি কিন্তু সিনেমা আর যাত্রা দেখিনি। রাস্তা আর নদীর পার্থক্য করতে পারিনি বলে মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে ভ্যানে করে নদী পার হতে চেয়েছি। নিজের দিদির সাথে দেখা হত বছরে দু-একবার। দিদিকে খুব ভাল বাসতাম কিন্তু ও সারা বছর হোস্টেলে থাকত। যখন বাড়ী আসত…তখন আমার জন্যে উৎসব। দিদি খুব একটা ডানপিটে ছিলনা তবে খুব সুন্দর গান করত। তখন দিদি বারান্দায় বসে গান গাইতে থাকত আর আমি সারা উঠোন সেই গান দৌড়ে গেয়ে বেড়াতাম। দিদির গানের ওস্তাদ যখন আমার দিকে তাকাত আমার একটুও ভয় করত না কারন একটাই, দিদি আছেনা ? দিদির গানের ওস্তাদ ছিলেন খাঁটি ব্রাহ্মন। তাকে আমি কখনও ময়লা কাপড় পরতে দেখিনি। আর যখনই আসতেন মিষ্টি নিয়ে আসতেন। আমি তাকে খুব জ্বালালেও বাড়ীতে ঢুকে আমারই খোঁজ করতেন। আমিও মিষ্টিটা এ আর আনার কি দরকার ছিল? ভাব করে অর্ধেক প্যাকেট একাই…..। যদিও এ নিয়ে বাড়ীতে বেশ হাসাহাসি হোত। কিন্তু বললামনা বছরে দুই-একবার। দিদির ছুটি থাকত খুব অল্প। যাওয়ার দুই একদিন আগে থেকেই বাবা দিদির জন্যে কলম, খাতা, বিস্কুট, গুঁড়োদুধ অনেক কিছু কিনতেন। গুঁড়োদুধের কৌটা সিল করা থাকলেও কলম, খাতা ,বিস্কুট সবকিছু থেকেই দিদি আমার জন্যে রাখত আর আমি নেব না নেব না করে সব নিতাম। একদিন খুব সকালে দিদি রওয়ানা দিত। আমি তখন গভীর ঘুমে। মাঝে মাঝে মা বলত যে তোর দিদি তোকে কত করে জাগানোর চেষ্টা করেছিল। তোকে ধ্যাবড়া করে একটা চুমুও খেয়েছে। দিদি কালো ছিল বলেই নাকি জানিনা কালো এই বেশ বিশ্রী চেহারার ভাইটাকে খুব ভালবাসত। আমার মত পেটুকেরও দিদির যাওয়ার দুঃকে দুই একদিন খাওয়া কমে যেত। আমার জীবন ছিল তরঙ্গহীন। কোনও নতুন ঘটনা কখনই ঘটতনা। আমার দাদার কথাতো বলাই হয়নি। আমার দাদা ছিল আমার ঠিক উল্টো। বেদম ডানপিটে মনে হয় ওকেই বলে। একটা চায়না ফনিক্স সাইকেল ছিল যেটাকে ও স্নান করার সময়ও সাথে নিয়ে যেত। সকালে ওটার পিঠে চেপে পড়তে যেত একটু বাদে আসত খেত স্কুলে যেত, আবার আসত টিফিনের সময় কিছু মুখে দিয়ে আবার স্কুল তারপর বাড়ী। বিকালে বাড়ীর পাশের মাঠে ফুটবল খেলত। সেটা আর দেখা হোতনা কারন তখন আমার পড়ার সময় কারন সন্ধ্যা হলেই তো ঘুম পেত। আমি পড়তাম আর দাদাকে নিয়ে সন্ধ্যার পর বাবার পড়ানো। আর মাঝে মাঝে বেদম মার খেত দাদা। বাবার ধারনা ও নাকি পড়েনা। আমি আধো ঘুমে ভাবতাম ও যদি নাই পড়ে তাহলে প্রতি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয় কি করে কে জানে ? আমার পরে মনে হয়েছিল বাবার মারের কারনে একটা বেপরোয়া ভাব তৈরী হয়েছে দাদার ভেতর। আমাকে বাবা পড়াতনা পড়াত বড়দা। বড়দা ছিল একা মানুষ ঠিক একা নয় উনি আর ওনার মা। আমরা ছাড়া দুনিয়ায় বড়দার কেউ ছিলনা। বড়দার শাসন পেয়েছি আর ভালবাসা পেয়েছি যা বাবার থেকে অনেক অনেক বেশি। আমার ঘুম দূর করার উপায় বের করল বড়দা হাতে এসে পড়ল একখানা পুরাতন কিশোর মহাভারত। আমার তরঙ্গহীন জীবনে এটাই বড় ধরনের কোনও ঘটনা যা আমাকে রাতজাগা শেখাল। তখনও জীবনে প্রিয়া আসেনি তবু মিল করলে ওর বলা কথাটা সত্যি হয়ে গেছিল। রামের জীবনের ষাটহাজার বছর আগে যেমন রামায়ন লেখা তেমনি ঘটে গেল এই ঘটনার মাঝেও। তুমুল উত্তেজনায় খেয়ালই করা হয়নি বইখানার শেষ বেশ কয়েকটি পৃষ্টা নেই। সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে অনেক মন খারাপ লাগলেও এখন মনে হয় জীবনে প্রথমাবস্থায় কোনও ঘটনা ভালভাবে শুরু না করলে তার শেষও ভালভাবে হয়না কারন শুরুও ভালভাবে হয়নি, প্রথম দুটো পৃষ্টাও ছিলনা। যদিও তখন প্রিয়া ছিলনা তবুও মনে হয় আশ্চর্য হইনি যদিও আশ্চর্যও না হওয়াটা আমার জন্মগত না প্রিয়ার দেওয়া। নিশ্চয়ই বাচ্চা ছিলাম। আসলেই কি বাচ্চারা অবাক হয়না? ওঃ ! আমি তো কিছু ঠিকমত শুরু করতেই পারিনা তাই হয় তো অবাক হইনি। আশ্চর্য্!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.