নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবেকের ফাঁসি!

আজাদী আকাশ

সাদা মনে বলছি। পেশায় আইনজীবী। ভাবতে ভালবাসি। ভাবাতে ভালবাসি। ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করনি!

আজাদী আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষের বাচ্চা হয়ে জন্মাইও না, পারলে পশুর বাচ্চা হয়ে জন্মাও

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৩


বর্তমান পৃথিবীতে মানুষরূপি প্রাণী টি এতটাই বর্বর, হিংস্র, জঘন্য, আর নিষ্ঠুর আচরণ করছে যে তাদেরকে পশুকুলের সাথে তুলনা করলে পশুকুল লজ্জায় মরে যাবে। সভ্য যুগের মানুষের এহেন পাশবিক আর নিষ্ঠুর আচরনে পুরো মানব জাতি বার বার লজ্জিত হয়েছে। দুধের বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত কেউ বাদ পড়ছে না এই সব নর পশুদের হাত থেকে। সম্প্রতি দিনাজপুরের পার্বতী পুরের পৈশাচিক আর বর্বর ঘটনাটি আরো একবার জাতির বিবেককে ভীষনভাবে নাড়া দিয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের জমিরের হাট হিন্দুপাড়ায় নেতাসু নামের এক পিকআপ ড্রাইভারের ৫ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষনের শিকার হয়েছে।

গত ১৯ তারিখ বুধবার ভোর ৫টায় গ্রাামের লোকজন একটি হলুদ ক্ষেত থেকে অজ্ঞান অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে শিশুটির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।জমিরের হাট এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা নুর বকত্ত জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটি হঠাত বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। অনেক খোজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মেয়েটিকে উদ্ধারের সময় তার পড়নের কাপড় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেছে। পরে জানা গেছে যে মানুষটি ( মানুষ বললাম এই জন্য যে তাকে পশু বললে পশুদের প্রতি অন্যায় করা হবে, কারণ আমার জানা মতে এক পশু সাধারনত আর এক পশুকে ধর্ষন করে না) ঐ শিশুটিকে ধর্ষণ করে তাকে শিশুটি বড় আব্বু বা বড় চাচ্চু বলে ডাকত। মেয়েটির বাবাও তাকে তার আপন বড় ভাই য়ের মত দেখত। মেয়েটির অবস্থা এখন আশংকা জনক। সে সবাইকে এখন অবিশ্বাস করতে চাইছে। ভাবছে সবাই তাকে ব্যাথা দিবে। মাত্র পাচ বছরের একটি শিশু যার না জীবন সম্পর্কে এখনো ধারণা হয়েছে না যৌন বিষয়ে। কিন্তু মানুষ সম্পর্কে তার একটি ধারনা হয়ে গেল যা অত্যন্ত ভয়াবহ।

শুধু এ ঘটনাই প্রথম নয়। এ বছরের ই আগস্ট মাসে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের ৫ বছরের এক শিশুকে নির্মম ভাবে ধর্ষন করা হয়।এপ্রিলে সৈয়দপুরের রিক্সা চালক পিতা পারভেজের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষন করা হলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনায় অবশেষে সৈয়দপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত মে মাসে নীলফামারীর ডোমারে পঞ্চম শ্রেনীর এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া জুলাই মাসে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১২বছরের এক শিশু কন্যাকে ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আর এই ঘটনায় থানায় মামলা দেওয়া হলে ধর্ষিতাকে প্রাণনাস করাসহ তার পরিবারকে উল্টো মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালী শিশু ধর্ষক ও নির্যাতনকারী। ধর্ষিতা ও নির্যাতিত শিশু কন্যার নাম জুয়েনা আক্তার(১২)। সে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের মৃত জলিল মিয়ার মেয়ে। শিশু ধর্ষক ও নির্যাতনকারীর নাম রফিক মিয়া(৩৮)। সে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজারের বাসিন্দা ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে। এক শিশু ও অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী বন্ধুর বাসায় খেলতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল এ বছরের জানুয়ারিতে। একই মাসে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশীর ধর্ষণের শিকার হয় গোপালগঞ্জ সদরের তৃতীয় শ্রেণীর এক শিশু। পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর রাজধানীর ট্রপিকানা টাওয়ারে কর্মজীবী শিশু ঋতুর লাশ উদ্ধার হয় ওই ভবনের বাথরুম থেকে। পুলিশ বলছে, ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিউম্যান রাইটস মনিটরিং রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৮ সালে ৪৫৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়। এদের মধ্যে ২০২ জন নারী ও ২৫২ জন শিশু। ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার ৪৫৬ জনের মধ্যে ২১৩ জন ছিল নারী ও ২৪৩ জন শিশু। ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা ছিল ২৯৯ জন ও শিশু ৪৭৩ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, শুধু ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে নয়জন নারী ও ২৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে আটটি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএফ) এক সংবাদ সম্মলনে শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে। এতে দেখা যায়, দেশে শিশুর নিরাপত্তা গত ১৬ মাসে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৫ সালে শিশু গণধর্ষণ বেড়েছে ৩৫০ ভাগ। অন্যদিকে ওই সময়ে ধর্ষণের পর শিশু হত্যা বেড়েছে ৪২ ভাগ। সামগ্রিকভাবে ধর্ষণ বেড়েছে ১৬১ ভাগ। ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণ বেড়েছে ২০১৫ সালের প্রথম চার মাসের চেয়ে ১৪ ভাগ বেশি। সংগঠনটি জানুয়ারি ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০১৬ এই ১৬ মাসের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে এই তথ্য তুলে ধরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারহীনতা এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণেই দেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো বর্বরতা বাড়ছে। ১৮ বছর আগের কথা। বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে নিম্ন আদালত আসামি শুক্কুরের মৃত্যুদণ্ড দিলেও, ২০১৪ সালে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তার রিভিউ রায়ে সাজা কমিয়ে দেয় ২০১৪ সালে। ধর্ষণের সময় আসামি শুক্কুরের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তাই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১২ জুলাই মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুক্কুরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এই মামলাটিই প্রমাণ করে যে একটি ধর্ষণের মামলার চূড়ান্ত রায় পেতে ১৮ থেকে ২০ বছর লেগে যায়। আর এই দীর্ঘসূত্রতা ধর্ষণের মামলায় বাদিকে হতাশ করে দেয়। অনেকেই মাঝপথে মামলা পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ান।

মহিলা আইনজীবী সমিতির এক জরিপে জানা যায়, নানা কারণে ধর্ষণ মামলার ৯০ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে থাকে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনে দলীয় লোক থাকার কারণে এসব ঘটনার অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাওয়ার আরেক কারণ। এ ছাড়া ফৌজদারি আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয় না।
অথচ বাংলাদেশের আইন প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়েও শক্তিশালী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তবে সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই আইনের ৯(২) ধারায় আছে, ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। একই সাথে জরিমানার কথাও আছে। সর্বনিু জরিমানা ১ লাখ টাকা। ৯(৩) ধারায় আছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং উক্ত ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশু মারা যায়, তা হলে প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, কমপক্ষে ১ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ভারতে এক্ষেত্রে শুধু যাবজ্জীবনের কথা বলা আছে।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশের শিকার হয়েছে শিশুরা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে সরকারের মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রামের তথ্য হলো, গত ১০ বছরে ধর্ষণসহ যত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলা হয়নি। বিচারের হার এক শতাংশেরও কম। শিশুদের জন্য পরিবেশ এখন আগের চেয়েও বেশি অনিরাপদ। শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সমাজের। কিন্তু সমাজ এগিয়ে আসছে না।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য হলো, রাজশাহীতে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের চার হাজার ১৬৯টি ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪১৪টি, শাস্তি হয়েছে ২৫ জনের। চট্টগ্রামে দুই হাজার ৩৭টি ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৯৯টি, শাস্তি হয়েছে পাঁচজনের। সিলেটে দুই হাজার ২১৯টি ঘটনায় মামলা ৩৮৬টি, শাস্তি হয়েছে দুটিতে। খুলনায় দুই হাজার ৩১টি ঘটনার মধ্যে ২৯৩টি মামলা হয়েছে, শাস্তি হয়েছে দুটিতে। বরিশালে এক হাজার ২০০টি ঘটনায় মামলা হয় ৩৫৩টি, শাস্তি হয়েছে চারটিতে।এ ছাড়া পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগও তুলেছে ভুক্তভোগী বেশ কিছু পরিবার। রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী আফরোজা আক্তার (১৪)। গত ২০ জানুয়ারি একই গ্রামের লেবু মিয়া মেয়েটিকে ধর্ষণ করে বলে পরিবারের অভিযোগ। পুলিশ এখনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কর্তৃক এমন জঘন্য কুকর্মের কথা চিন্তা করলে শরীর শিউরে ওঠে। শিশুরা নিষ্পাপ হয়। কিভাবে মানুষ হয়ে এমন নিষ্পাপ সৃষ্টিকে যৌন লালসার শিকার বানিয়ে যৌন বাসনার চরিতার্থ করে? আমার মতে দ্রুত ট্রাইবুনালে এসব অপরাধের বিচার করে গোপনে নয় সৌদি আরবের মত প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে এ সব নরপশুদের মুন্ডু শরীর থেকে আলাদা করে দেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কোন নরপশু এমন জঘন্য পাপ করার আগেে একশ বার ভেবে নেয়। আমার জানা মতে পশুর বাচ্চারা অন্য কোন দিক থেকে নিরাপদ থাকুক আর না থাকুক, কিন্তু যৌন অত্যাচারের দিক থেকে সম্পূর্ণরুপে নিরাপদ থাকে। তাই অজাত মেয়ে শিশুদের উদ্দেশ্যে বলি তোমাদের যেন মানুষের বাচ্চা হয়ে জন্মানোর দুর্ভাগ্য না হয়, বরং তোমরা পশুর বাচ্চা হয়ে জন্মাও তাহলেই তোমরা এমন বর্বর, হিংস্র, জঘন্য, আর নিষ্ঠুর আচরণ থেকে বেচে থাকতে পারবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.