নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে আর কি লিখবো, অন্যেরা যা ভাবছে তা-ই শেয়ার করবো...
স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কাটার চেষ্টা অনেক ভয়ঙ্কর। স্রোতের এক ধাক্কাতেই পানির অতলে তলিয়ে যেতে হতে পারে। তবুও মানুষ স্রোতের প্রতিকূলে যাত্রা করে। উপায়ান্তর না দেখে কেউ এরকম যাত্রা করে। কেউবা ইচ্ছে করেই এরকম করে। ২০১৫ সালের ১২ জুন। লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী ঘাট থেকে ভোলা ফিরছিলাম। বিশাল নদীতে ছোট্ট একটা ট্রলার। ট্রলার মাঝি এবং তার হেল্পার সহ সর্বমোট ২৭ জন যাত্রী । কেউ ঢাকা থেকে, কেউ চিটাগাং থেকে এসেছে। লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা যাওয়ার একমাত্র পথ এটি। বিকেলের ফেরিটি বিকল হয়ে যাওয়ায় আর কোনো উপায় নেই। ট্রলারই একমাত্র ভরসা।
একটি মৃত শিশুকে বুকে করে এক মা উঠেছে ট্রলারে। শিশুটি সকাল বেলায়ই মারা গিয়েছে। ঢাকার মহাখালী হাসপাতালে ছিল। ট্রলারটি যখন ছেড়েছে তখন বেলা ৪ টা বাজে। শিশুটির পুরো শরীর সাদা দেখাচ্ছিল। গ্রামের বাড়িতে কবর দিবে বলেই এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসা। সেদিন ঝড়ো আবহাওয়া ছিল। উপায়ান্তর না দেখেই ট্রলারে করে যাত্রা। উত্তাল নদীপথ পাড়ি দেওয়ার জন্য সবাই উঠেছে পনের ফুট লম্বা এই ট্রলারটিতে।
আমরা যখন যাত্রা শুরু করি একটু জোরেই বাতাস বইছিল। প্রথম একঘন্টা নদীর তীর ঘেঁষেই চলছি। পাড় থেকে ঢেউ বাড়ি খেয়ে ট্রলারে আছড়ে পড়ছে। ট্রলারে প্রচণ্ড দুলুনি হচ্ছে। সামনে উত্তাল মেঘনা আড়াআড়ি পাড়ি দিতে হবে। প্রায় এক ঘন্টা চলা শেষে মূল মেঘনা নদীতে পড়লাম। এপার থেকে ওপারে কিছুই দেখা যায় না। কূল নাই কিনার নাই অবস্থা । উত্তর কোনে বড় একটা মেঘ জড়ো হয়ে ক্রমশঃ কালো হচ্ছে।
ট্রলারটি নাচছে খেলনা নৌকার মতো। বাম দিক থেকে ঢেউ এসে আছড়ে পরে ট্রলারের গায়ে। ট্রলারটি ডানদিকে হেলে যায়। অভিজ্ঞ মাঝি নিপুণ দক্ষতায় তা সামলে ওঠে। নদীর মধ্যে বাতাস ঘুরপাক খায়। তাই ডানদিক দিয়ে ও ঢেউ এসে বাড়ি খায়। ট্রলার আবার বামে কাত হয়।
ট্রলারের গলুইয়ের মাথায় কয়েকজন বসেছে। এর মধ্যে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক একেবারে গলুইয়ের চুড়ায় বসেছে। মাথায় নকশা আঁকা গোল টুপি। মুখে ছোট করে ছাঁটা চাপদাঁড়ি। আমার দিকে তাকিয়ে অভয়ের ভঙ্গিতে একটু হাসলেন। আমিও হাত উঠিয়ে প্রত্যুত্তরে অভয়ের হাসি ফিরিয়ে দিলাম। সামনে থেকে ঢেউ এসে সামনে বসা সবাইকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। যুবকটি ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে।
মৃতশিশুটিকে বুকে আগলে রাখা মায়ের চোখে কান্নার পানি শুকিয়ে যাওয়ার দাগ স্পষ্ট। ভাবলেশহীন চোখে ক্লান্তির ছায়া। শিশুটিকে কবর দেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি লালমোহন নিয়ে যাচ্ছে। সাথে আরও কয়েকজন আত্মীয় মহিলা আছেন। কয়েকজন বমি করে ট্রলারের মেঝে ভাসিয়ে দিয়েছে। দুইটি চঞ্চল শিশু ছিল তারা এখন চুপ করে গেছে। মৃত্যুভয় তাদের হয়নি। এই অবুঝ শিশুরা ট্রলারডুবিতে পানিতে তলিয়ে যাবে তা ভাবছেনা।
ভাবনাগুলো আমার হচ্ছে। এই বিশাল নদীর মধ্যখানে আছি। ট্রলারটি ডুবে গেলে কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নাই। উত্তাল নদীর ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে কেউ বাঁচাতে পারবে না। উদ্ধার করতেও কেউ আসতে পারবে না। আশেপাশে মাছ ধরার নৌকাগুলো নিরাপদে চলে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বিশাল নদীতে আমাদের নিয়ে ট্রলারটি এগিয়ে যাচ্ছে। স্রোতের প্রতিকূলে ঢেউয়ের সাথে লড়াই করতে করতে ট্রলারটি এগুচ্ছে। প্রচণ্ড এক ঢেউ ছুটে আসছে সামনে থেকে। এবার আর রক্ষা নাই। মনে হলো ট্রলারটি ঢেউয়ের আঘাতে কাত হয়ে ডুবে গেল। পানির অতলে তলিয়ে গেলাম সবাই। ধাক্কাটা সামলে ট্রলারটা আবার যখন সোজা হলো দেখলাম সবাই ভিজে গেছি। তারপরই শুরু হলো আমাদের নিয়ে নিয়তির ছেলেখেলা।
(চলবে)
২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
ভাইয়ের বাড়ি কি ভোলা?
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০২
আজমান আন্দালিব বলেছেন: না ভাই। বাড়ি ভোলা নয়। কর্মস্থল ভোলা।
৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উরাব্বাস!
ভয়ংকর এক ভ্রমন দেখছি!!!!
যাই পরের পর্বে শেসটা দেখে আসি ...
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
আজমান আন্দালিব বলেছেন: আসলেই ভয়ঙ্কর এক ভ্রমণ ছিল এটি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু। শুভকামনা জানবেন।
৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভয়ঙ্কর!
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬
জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: ভাই,
স্টার জলসার সিরিয়ালের মত হইয়া গেলোনা ?