| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলার ডাক-হরকরা
রাতের পর রাত ক্লান্তিহীন মানুষের সুখ দুঃখের খবরের বোঝা বয়ে সে পৌছে দেয় দোরে দোরে কিন্তু তার খবর কে রাখে?
একটা সময় দূর-দূরান্তের মানুষের মধ্যে ভাব আদান-প্রদানের প্রধান সহায়ক ছিল ডাক বিভাগ। ডাক হরকরা চিঠির বোঝা পিঠে ঝুলিয়ে ছুটে চলতেন। এ ডাক হরকরাদের এখন আমরা বলি, ‘পোস্টম্যান’। যিনি দরজার কড়া নাড়েন- বাসায় আছেন? আপনার চিঠি। পোস্টম্যানের ডাক শুনে মন চমকে ওঠে! চিঠিতে কী সংবাদ লুকিয়ে আছে! চিঠিখানা খোলার আগেই হৃৎকম্পন তৈরি হয়। পোস্টম্যানরা কতটা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রাপকের কাছে চিঠি পৌঁছে দিতেন, তার বর্ণনা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতায় রয়েছে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/ রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে।’ এক সময় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের মতো এত উন্নত ছিল না। রাস্তাঘাট ভালো ছিল না। পরিবহন ব্যবস্থা গড়েই ওঠেনি। নৌপথ ছিল চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। সেই অবস্থায় ডাক হরকরা চিঠির বোঝা নিয়ে ছুটে যেতেন। বর্তমান সময়ে এসে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। মানুষের চিঠি লেখার প্রবণতা নেই বললেই চলে। কিন্তু চিঠির মধ্য দিয়ে মনের যে অব্যক্ত ভাষা ফুটিয়ে তোলা যায়, তা কিন্তু অন্য কোনো মাধ্যমেই সম্ভব নয়। এখনও হয়তো কেউ কেউ একখানা চিঠি লিখে পোস্টবক্সে ফেলে আসেন। কিন্তু দিন দিন তার সংখ্যা কমে আসছে। আগামীতে এমনও হতে পারে চিঠি লিখে পোস্ট করার বিষয়টি কাহিনী-গল্প হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হাজির হবে। এখন মোবাইলে দু-তিন লাইনের মেসেজ-ই চিঠির জায়গা দখল করেছে। কিন্তু এটা যে চিঠির বিকল্প কোনোদিনই হতে পারে না, তা জোর দিয়েই বলা যায়।
চিঠি লেখা উঠে যাওয়ায় সাহিত্য এক ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’ তো চিঠিগুচ্ছ, যা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ বোটে করে পদ্মা ভ্রমণ করছিলেন আর বোটে বসেই চিঠির পর চিঠি লিখে চলছিলেন, যা নিয়ে পরে ‘ছিন্নপত্র’ গ্রন্থাকারে বের হয়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবে মানুষের চিঠি লেখার ইচ্ছে বা প্রবণতা কমে গেলেও ডাক বিভাগের আরও নানামুখী ভূমিকা রয়েছে। ডাক বিভাগ মানুষের সেবায় সেই কাজগুলো চমৎকারিত্বের সঙ্গে করতে পারে। এর জন্য ডাক বিভাগের উন্নয়নে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডাক বিভাগের সেবার মান নিচের দিকে নেমে এসেছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও বিশ্বের অনেক দেশের ডাক বিভাগ লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের ডাক বিভাগ লোকসানের পর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে ডাক বিভাগের লোকসান প্রায় সাড়ে ১৩শ’ কোটি টাকা। এই বিপুল অংকের টাকা লোকসান ঘাড়ে নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য মূলত ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্টরাই দায়ী। বাংলাদেশের ডাক বিভাগ আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এক দশকেও কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। উন্নয়নের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এক মেয়াদ শেষে নতুন মেয়াদে নবায়ন করা হলেও দেখেনি আলোর মুখ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলছে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও আধুনিকায়ন। এশিয়া মহাদেশের চীন, থাইল্যান্ড, ইউরোপের স্পেন, গ্রিসসহ অনেক উন্নত দেশে সরকারি ডাক বিভাগ এখনও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে।
ডাক বিভাগে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ডাক হরকরা তথা পোস্টম্যানরা। তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই দিনে তাদের ছোটাছুটির ব্যস্ততা ঝিমিয়ে পড়েছে। সরকারি ডাক বিভাগের অধীনে ‘পোস্টম্যান’ পদে কর্মরত প্রায় ২৪ হাজার ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারীই হলেন রানার বা ডাক হরকরা। আজও তারা ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামে। ডাক হরকরাদের নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন শুধু কবি সুকান্তই নন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাংলাভাষার বহু কিংবদন্তি সাহিত্যিক। পরম মমতায় তাঁদের রচনায় তুলে ধরেছেন রানারের দিনলিপি। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’র সুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংগ্রহ করেছিলেন গগন হরকরা রচিত একটি গানের সুর থেকে। গগন হরকরা ছিলেন বিশিষ্ট বাউল গীতিকার। জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের আড়পাড়া গ্রামে। তাঁর পেশা ছিল শিলাইদহ ডাকঘরে চিঠি বিলি করা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়–ক’ ও ‘আমার সোনার বাংলা’ গান দুটি গগন হরকরার যথাক্রমে ‘মন অসার মায়ায় ভুলে রবে’ এবং ‘আমি কোথায় পাব তারে’-গান দুটির সুর ভেঙে রচিত হয়।
চলতিকালে রানারদের খোঁজ রাখেন না কেউ। এমনকি খোদ ডাক বিভাগও! বাংলাদেশের ডাক বিভাগের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে ১৭টি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এর একটিতেও ঠাঁই পায়নি ‘পোস্টম্যান’দের জীবনমান উন্নয়নের প্রসঙ্গ। আমরা মনে করি, ডাক হরকরাদের জীবনমান উন্নয়ন করা জরুরি। আশা করি সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।
ডাক বিভাগের সেবার মান ক্রমাগত নিচের দিকে নামলেও বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের ধারণা, বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই ডাক বিভাগকে আধুনিক করা হচ্ছে না। সাধারণ চিঠির চেয়ে এখন পার্সেল ও টাকা পাঠানোর চাহিদা বেশি। বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এই ব্যবসা লুফে নিয়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগ এ দুটি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। আমরা মনে করি, এই অবস্থার অতিদ্রুত পরিবর্তন দরকার। বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে টাকা লেনদেন করছে। এ দিকটি দায়িত্বশীলদের নজরে নিতে হবে। বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়া শুধু মোবাইল-টেলিফোনে শাখা অফিসে কল করে মোটা অংকের চার্জ নিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়াকে বলা চলে দেশের ভেতরে হুন্ডি কিংবা মানিলন্ডারিংয়ের মতোই ব্যাপার। দায়িত্বশীলদের চোখের সামনে এসব ঘটছে। অথচ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, যদি ডাক বিভাগের মাধ্যমে যথাযথ নিয়মে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।
২|
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫২
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
যেমন নিক নিয়েছেন তেমন লিখেছেনও।
শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৪
বেঙ্গল রিপন বলেছেন: আজই নতুন এলেন বুঝি সামহোয়্যার ইন ব্লগে? আপনাকে স্বাগতম!
ভালোই লিখেছেন।
আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’র সুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংগ্রহ করেছিলেন গগন হরকরা রচিত একটি গানের সুর থেকে। গগন হরকরা ছিলেন বিশিষ্ট বাউল গীতিকার। জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের আড়পাড়া গ্রামে। তাঁর পেশা ছিল শিলাইদহ ডাকঘরে চিঠি বিলি করা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়–ক’ ও ‘আমার সোনার বাংলা’ গান দুটি গগন হরকরার যথাক্রমে ‘মন অসার মায়ায় ভুলে রবে’ এবং ‘আমি কোথায় পাব তারে’-গান দুটির সুর ভেঙে রচিত হয়। এই কথাটা প্রথম জানলাম