নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকলিওয়ালা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫০


দিন দুয়েক আগে ছুটির দিনের দুপুরে কমোডে বসিয়া হালকা হইবার কালে ফেসবুক স্ক্রল করিতেছিলাম। যাহা দিগের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নামক আজারিয়া ব্যামো রহিয়াছে, তাহারা বিলক্ষণ জানেন, উহারা নিত্য নিত্য কমোডে জীবনের কত কত মধুর ঘন্টা কাটাইয়াছেন। গৃহবধূ দিবানিদ্রা যাইতেছেন, এই মোক্ষম সময়টুকু কাজে লাগাইতে মহান ফেসবুকে ঢুঁ মারার মতো আর কী হইতে পারে? এই একখানা সময়ই গৃহবধু আসিয়া রসভঙ্গ ঘটাইতে পারেন না।

স্ক্রল করিতে করিতে হঠাৎই আমার নিজের একখানা লেখায় চোখ আটকাইয়া গেল। দেখিলাম, লেখাখানার নিচে প্রচুর কমেন্ট, লাইক, ইমো জমা পড়িয়াছে। এত এত পাঠক রেসপন্স দেখিয়া আমার চক্ষু আর্দ্র হইয়া উঠিল। পাছে ডুকরিয়া কাঁদিয়া উঠি, সেই ভয়ে মুখে কিঞ্চিত টিস্যু পেপার আলগোছে গুজিয়া দিতে গিয়াও থামিলাম। আমার লেখাগুলিতে ৭ খানা মন্তব্য আর ১১ টা লাইক পড়িলেই আনন্দে আমার বাথরুমের বেগ পায়। তায় এই লেখায় কয়েক শত রেসপন্স। আবেগে গদগদ হইয়া আমি এর, ওর, তার-সবার লাইকের প্রতিক্রিয়ায় নিজেও দুইবার লাইক মারিলাম, লাইকারদের ধন্যবাদ জানাইলাম, সমানে দুই হাতের দশ আঙুল ব্যবহার করিয়া সব মন্তব্যের বিপরীতে আবেগীয় প্রতিউত্তর দিলাম। আরও অনেক কিছু করিব ভাবিতেছি।

হঠাৎ, লেখাখানার একবারে নিচে চক্ষু আটকাইল। কমেন্টখানা ভাল করিয়া পড়িলাম-

”জব্বর লিকচোৎ তো কুদ্দুচ! তরে এমুন লেহা হিয়াইল ক্যাডায়? বুকডা ভইরা গ্যালো হালায়! তরে চুম্মা!”

আমার আবেগের বেলুনখানা সহসা চুপসাইয়া গেল। ভাল করিয়া চক্ষু কচলাইয়া স্ক্রল আপ করিয়া দেখিলাম, আমি নহি, ”জনৈক অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক” থুক্কু জনৈক কুদ্দুচ পালোয়ান উক্ত লেখাখানি লিখিয়াছেন আর তাহাতেই এত এত রেসপন্স।

আমি আরো কয়েকবার চক্ষু বুলাইয়া লইয়া লিশ্চিন্ত হইলাম, যে, লেখাখানি আমারই, তবে তাহার মালিক বদল হইয়া কুদ্দুচ হইয়া গিয়াছে। বুঝিলাম, কুদ্দুচ টুকলিওয়ালার হাতে পড়িয়া আমার সাধের লেখাখানি জাতে উঠিয়াছে, যদিও ক্রেডিটের গুড় কুদ্দুইচ্চাই খাইতেছে। অতি আয়াসে আমার সৃষ্ট লেখাখানি তিনি ক্রেডিট না দিয়া নিজের নামেই চালাইয়া দিয়াছেন। আমার ক্রেডিটের শিঁকা ছিড়িবার যোগাড়।

নিতান্ত ক্রোধে কুদ্দুইচ্চার পোস্টের নিচে তৎক্ষণাত মন্তব্য করিলাম,

”প্রিয় কুদ্দুচ সাহেব, আপনার লেখাখানি দারুন লাগিল। এইরকম একখানি রচনা বিগত তিন শতাব্দীতেও কোনো লেখক লিখিতে সক্ষম হন নাই। আপনার লেখাখানি পড়িয়া আবেগে চক্ষুতে এতই জল আসিয়াছে, যাহা এই মুহূর্তে আমার বদনাখানিতে জমা হইয়া শীঘ্রই আবার সুকর্মে নিয়োজিত হইবার অপেক্ষায় রহিয়াছে। লেখাখানির জন্য এই কমোডিয়ানের (কমোড+কমেন্টিয়ান) হৃদয়ের শ্রদ্ধামাল্যখানি গ্রহন করিবেন।”

মন্তব্যখানি করিয়া কিয়ৎক্ষণ তব্দা মারিয়া বসিয়া রহিলাম। কমোডকর্ম চুলায় যাক। কমোড আর ইনটেস্টাইন-উভয়েই তব্দা মারিয়া বসিয়া রহিল-আমার মেজাজ কোনদিকে যায়-তাহা নির্নয় করিতে। মনে হইল, জগত থামিয়া রহিল কুদ্দুচের গর্হিত নির্লজ্জতার উচিত জবাব খুঁজিতে।

তবুও মিনিট তিনেক পরেই ’টুপ’ করিয়া একটা শব্দ শুনিতেই প্রথমেই কমোডের তলদেশে দৃষ্টি করিয়া কোনো পরিবর্তন দেখিতে না পাইয়া মুঠোফোনের স্ক্রীনে ঠাহর করিয়া দেখি, কুদ্দুচ সাহেবের কৃত প্রতিউত্তর মোবাইলের স্ক্রীনে ভাসিয়া উঠিল। ‘টুপ’ শব্দের উহাই রহস্য। কুদ্দুচ লিখিয়াছেন,

”ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ হে কমোডিয়ান। আমার এই বহু যত্নে স্বহস্তে রচিত রচনাখানি আপনাকে আনন্দ দান করিতে পারিয়াছে শুনিয়া হৃষ্টচিত্ত হইলাম। ভবিষ্যতেও আমার লেখা পড়িলে কৃতার্থ হইব। বহু আয়াসে সযত্নে রচিত এই সাহিত্যকর্মটুকু আপনাদিগের মতো পাঠকের ‘ফিডব্যাক’ পাইলে আরও ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিবে।”

আমি আর ক্রোধ সম্বরন করিতে না পারিয়া তৎক্ষণাত স্থান, কাল, পাত্র ভুলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলাম, “তবে রে *শালা................*বা..............ৎ”

[সেই দিন সেই চিৎকার ও খিস্তির মধ্য দিয়া কুদ্দুইচ্চার গুষ্টি উদ্ধার করিতে গিয়া গৃহবধূর ঘুম ভাঙাইয়া মোবাইল সমেত কমোডে ধরা পরিয়া, পরের কতগুলা দিন নিদারুন নির্যাতন আর মোবাইলবিহীন কাটাইতে হইয়াছে, সেই বর্ননাখানি কোনো আরেকদিন লিখিবার খাহেশ হইতেছে। তবে হইতে পারে, উহাও আবার কোনো নির্লজ্জ টুকলিওয়ালা ইদ্রিচ্চার লোলুপ দৃষ্টির কবলে পড়িয়া যাইবে।]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হা হা হা। এই জাতীয় মানুষে আশেপাশে ভরে গেছে।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৩৮

বেচারা বলেছেন: সেরকম একজনকে বাস্তবে দেখেই লিখলাম।

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: ওয়াশ রুমে মোবাইল ব্যবহার আমার খুব অপছন্দ।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৩৯

বেচারা বলেছেন: লেখালিখির নেশা থাকলে, সময়টা কাজে লাগে। এমনিতে সোশ্যাল ট্যাবু ব্যতিত ওয়াশরুমে মোবাইল বা অন্য কাজ করাতে দোষ কিছু নেই।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:০০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার সমস্যার অনুরূপ হলে আমি বাথরুমে ইমদাদুল হক সাহেবের বই পড়ি। যদি আগে একটা সময় তিনি দারুন লিখতেন। পরে সব হয়ে গেছে কোষ্ঠ কাঠিন্যের ঔষুধ।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৪০

বেচারা বলেছেন: সমস্যা কাল্পনিক। তবে প্রেক্ষাপটটি সত্যি। অনেকবারই ধরেছি টুকলিদের। কালকেও।

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪১

পদ্মপুকুর বলেছেন: ঘটনা কি সত্যি? মানে রিপ্লাইয়ে নিজে লিখেছে বলে উল্লেখ করলো?

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৪০

বেচারা বলেছেন: অনেকবারই এমন চোরদের ধরেছি। পুরোই এরকম, যেমনটা লিখেছি।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪২

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: ফেইসবুকে এরোকম টুকলিওয়ালা অভাব নেই।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৪০

বেচারা বলেছেন: সব ফেসবুক আইনস্টাইন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.