নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃহন্নলা: অবগুন্ঠন তোলো তোমার

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:১০

সন ১৯৮৯। মফস্বল শহর বাগেরহাটের এক সরকারী কলোনী। সময় দুপুর ১২:৩০ টা।

স্কুল যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। হঠাৎই বাইরে উচ্চকিত স্বরে আধা মেয়েলী আধা পুরুষালি কন্ঠে কেউ সজোরে এলান করল, “অয়, হায়, হায়, হায়, কার বাসায় নয়া বাইচ্চার কান্না হুনা যাআআআআয়; মোদের হাতে নাচিয়ে নিলে, গাও ভইরবে সোনাআআআআয়।”
সেই সাথে অদ্ভুৎ আওয়াজের হাতে তালি। সেই ইঁচড়ে পাকা বয়সে এই শব্দ আমাদের কানে যেন মধু বর্ষণ করল।

কারন, ওই কন্ঠ মানেই, সেদিন আর স্কুলে যাওয়া নয় যেটা মায়ের হালকা বকুনি সাপেক্ষে ’জায়েজ’। সেই আশির দশকের মফস্বল জীবনে, সেই সাদাকালো টিভি আর বিটিভির যুগে আমাদের জীবনে যে অতি সামান্য বিনোদনের উঁকি ঝুঁকি ছিল, তার অন্যতম ছিল, ’হিজড়া দর্শন’।

’হিজড়া’ নামক আধা-মানব, আধা-মানবীর নেচে, গেয়ে, রংঢং করে, নানা কসরৎ দেখিয়ে নবজাতক বাচ্চাদের নিয়ে করা নানা কান্ড তখন মফস্বলের অতি পরিচীত ও অতি কাঙ্খিত বিনোদন।
সেদিন স্কুল চুলোয় গেল। সারাটা দুপুর গেল সেই ’হিজড়া’ নাম্নী মানব ও মানবীদের আধা অশ্লীল নাচ-গান দেখে। বাচ্চাদের মায়েরা ‘হিজড়া’ দর্শনে একই সাথে ব্যাজার ও খুশি-দুটোই হতেন।

ব্যাজার, কারন, জামাইদের পকেট হতে প্রাপ্ত যৎকিঞ্চিত টাকা খসবে (সেই যুগে নারীরা স্বামীদের মানিব্যাগের দখল পেতেন না)। ওঁরা সেই যুগেও দুই তিনশো না পেলে নড়তো না।

খুশি, কারন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে, ‘হিজড়া’রা নাচালে বাচ্চার জন্য ভাল হয়-এই বিশ্বাসেরও মুরীদ কম ছিল না। সেইসব মায়েরা অপেক্ষায় থাকতেন, কবে হিজড়ারা এসে তার ছেলেকে নাচাবে। সেই সাথে আবহমান বাংলায় খ্যামটা নাচের প্রতি চিরায়ত ভক্তি বরাবরই ছিল।
হিজড়াদের আধা-যৌন অঙ্গভঙ্গি সহকারে উদ্বাহু নৃত্য ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই এক মজার খোরাক ছিল। পুরো পাড়াই তাই বাচ্চা জন্মালে একরকম অপেক্ষাতেই থাকত, কবে এই পাড়াতে হিজড়ার পদধূলী পড়ে।

যেন, বিষয়টা ছেলে বাচ্চা জন্মালে খতনা করানোর অপেক্ষার মতোই সুনিশ্চিত কিছু।

’হিজড়া’ তখনকার সমাজে (আসলে এখনও) এক ঘৃনা মিশ্রিত বিষ্ময় ছিল (ও আছে)। মনুষ্য সমাজের আপাতঃ সুস্থ মানুষেরা ‘হিজড়া’ বৈশিষ্টের মানুষদের দিকে একরকম বিকৃত জন্তু বিচারেই তাকায়।

আমার কাছে মনে হয়েছে, তথাকথিত মূলস্রোতের ওই তাকানোর ভাষাটা কতক ন-মানুষ, কতকটা বিকৃতি, খানিক অস্বাভাবিকতা, অকল্পনীয় ঘৃনা, কিঞ্চিত রহস্যময়তা, অল্প একটু সুপিরিয়রিটি ও যৌনতার আবছা হাতছানি-এই ধারনাগুলোর একটা অব্যখ্যাত মিশেল হয়ে থাকে।

যেন ঠিক মানুষ নয়, ওঁরা চিড়িয়াখানার কোনো দর্শনীয় কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী। কারো কারো কাছে ‘হিজড়া’ মানেই ’সেক্স ওয়ার্কার।’ ’হিজড়া’দের সাথে হালকা আধাযৌন বাক্য বিনিময় ও যৎকিঞ্চিত যৌন হেনস্থাসূচক কাজ করাকে এই সমাজে বরাবরই ‘হালাল’ ধরে নেয়া হয়ে থাকে।
অবশ্য ব্যতিক্রমী ও দুর্বল-উভয়ের প্রতি বঙ্গসমাজের হিংসাত্মক আগ্রাসনের চিরাচরিত অভিলাষ ও খাসলত তো নতুন নয়।

কৈশোরের সেই ইঁচড়ে পাকা বয়সে যখনই বড় কাউকে জিজ্ঞেস করতাম, “আচ্ছা, হিজড়া কী”-সবাই মুখ টিপে একটা বিশেষ ভঙ্গী করতেন। গোঁজামিল উত্তর ছাড়া কিছু পেতাম না।
তিন মাথাওয়ালা গরুর বাচ্চা, অথবা, রাস্তায় সঙ্গমরত কুকুর কুকুরীর যন্ত্রনাময় আফটার এফেক্ট-এসবের মতো করেই সবাই বিষয়টাকে দেখতেন ও দেখাতে চাইতেন।
অথবা, বিষয়টা যেন অনেকটা কোনো ভয়াল দর্শন খোঁসপাঁচড়ার মতো। বিশেষত মা’কে জিজ্ঞেস করলে থাপ্পর খেতেই হত। যেন, বিষয়টা নিষিদ্ধ মাদক।
সেই যুগে সত্য বলা ও তথ্য দেয়াকে ধরে নেয়া হত একরকম পাপ।

আমার মনে আছে, একবার এক বড় দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “দাদা, সম্মোহন বিদ্যা কী?” তিনি রহস্য করে বলেছিলেন, “বড় হও, তখন বুঝবা।”
ওই দিন তার মুখ টিপে হাসার কারন না বুঝলেও, বড় হয়ে আমি বুঝেছিলাম। কী সেটা? তিনি ওই দিন আমার প্রশ্নকে ‘স্বমেহন’ ভেবে “ছেলে পেকে গ্যাছে” ভেবে বেশ খানিকটা হৃষ্ট বোধ করেছিলেন হয়তো।

তবে, আজ বড় হয়ে আমার মাথা ছাদ ছুঁয়ে গেলেও, আমাদের জেনারেশন অথবা তার পরের যে কোনো জেনারেশনের সেই চিন্তা, বোধ ও সত্যে কিন্তু খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
আমাদের সমাজ বিগত পাঁচ দশকে অনেক বদলে গিয়েছে। আমাদের শৈশবের চেনা বাংলাদেশের সমাজ স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকের কল্যাণে অনেক ’এ্যাডভান্সড’ হয়ে গেছে।

মেয়েরা বয়ফ্রেন্ডের বাইকের পেছনে ছেলেদের মতো দু’দিকে দু’পা ”ছ্যাড়াইয়া” বসতে শিখেছে, প্রকাশ্যে ছেলেদের সাথে দাড়িয়ে বিঁড়ি ফোঁকার দুঃসাহস দেখিয়ে বাহবা নিতে পারছে, ছেলেরা প্রথম প্রথম অহমে আঘাত পেলেও যুগের বদলে সেটাকে এখন লাইফস্টাইলের গর্বিত অঙ্গ করে নিতে শিখে গেছে,

বাবা-মা তাদের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ সন্তানদের বফ ও গফ থাকাকে মেনে নিতে (হয়তো গর্ববোধ করতেও) শিখেছেন, সদ্য তারুণ্যে পা রাখা বঙ্গসন্তানরা নাইট আউট ও রুম ডেট শিখে গেছে, সমাজ তাকে মেনে নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে,

সবখানেই পরিবর্তন ও আধুনিকতার ঢেউ সব ভাসিয়ে নিচ্ছে।

কেবল বদলায়নি ‘হিজড়া’দের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী। তারা এখনো ‘হিজড়া’ই রয়ে গেছেন। ‘মানুষ’ হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি।

ওই দু’পা ‘ছ্যাড়াইয়া’ বসতে শেখা নারীকূল যাদেরকে কর্পোরেট মুৎসুদ্দীগণ নারীবাদ শেখান,

”সেই যুগ আর নেই যে, থেমে যাব,
আমি আমার মতো ঠিক এগিয়েএএএএ যাব।”

সেই নারীরা, অথবা, সেই পুরুষরাও, যাদেরকে অসংখ্যবার শেখানো হয় “আসল পুরুষ” হতে, তারাও, এখনো ’হিজড়া’ কথাটিকে একটি কুৎসিত বর্ণবাদী গালি হিসেবে দিতেই পছন্দ করেন।

ভাবুন তো, আপনার পাশের বাসাটি যদি একজন হিজড়া ভাড়া নিতে আসেন, আপনিই কি দশবার ভাববেন না? দালানের বাকিদের নিয়ে রাজনীতি করবেন না? অথবা,

ধরুন, প্রার্থনালয়ে গিয়ে যদি দেখেন, প্রধান পুরোহিত একজন হিজড়া, রায়ট লেগে যাবার সমূহ সম্ভাবনা।

যদিও স্বাভাবিক মানুষ (মূলত নারী ও পুরুষ হিসেবে) হিসেবে আমরা যারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারি, তারা চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখেও মাথা নিচু করে, নজরের হেফাজত করে পাশ কাটিয়ে যাই অবলীলায়।

কিন্তু, একজন ন-মানুষ হিজড়া সেটা না করে রুখে দাড়ায়। রুখে দেয় একজন মুক্তমনা তথা একজন সাহসী বক্তাকে চাপাতির নিষ্ঠূর আঘাতে গর্দানহীন করার দানবীয় জঙ্গী হামলা। যখন, স্বাভাবিকেরা দুরে দাড়িয়ে মজা দেখে।

মজাই তো। ‘বোলগার’ কতল হবার মজা তো গোটা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ দারুন উপভোগই করত (ও করে)।

সরকার বাহাদুর জঙ্গীদের ধরে ধরে আংশিক নিকেশ করায় অবশ্য এই মজাক প্রিয় জাতি সেই সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করে। (এবং, সেই বঞ্চনার ক্ষোভ ভোটাধিকার হারানোর ক্ষোভের চেয়ে কম কিছু নয়।)

চোখের সামনে ’বোলগার’ অভিজিত অথবা দীপনকে গরুর মতো কুপিয়ে কুপিয়ে ঘাড়, কাঁধ, মস্তক আলাদা করার দৃশ্য ক্রমশ অসুস্থ হতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর কাছে দারুন বিনোদন ছিল হয়তো।

কী জানি, ফেসবুকে প্রথম আলো অথবা বিবিসির পেইজের নিচে সরকারকে নিয়ে ব্যাখ্যার অতীত সব হিংসাত্মক অথচ হাস্যকর বিরোধীতার কলরবের মাত্রা দেখলে আমার মনে হয়,

বোলোগ দিয়া ইন্টারনেট চালানো ওইসব নাস্তিকদের কোপানোর দৃশ্য উভভোগের ওই মজাপ্রাপ্তি হতে জাতিকে বঞ্চিত করার ক্রোধও বোধহয় তার একটা কারন।

’হিজড়া’ নামক শব্দটিতে আমার ব্যক্তিগত আপত্তিবোধ থাকায়, লেখার বাকি অংশে আমি ‘বৃহন্নলা’ শব্দটি দিয়ে চালিয়ে যাব। ওই বিশেষ একটি শব্দ ‘বৃহন্নলা’ দিয়ে প্রয়াত ড. হুমায়ুন আহমেদ এই অবহেলিত ও সমাজের চোখে অস্পৃশ্য মানব সন্তানদের ভদ্রোচিত একটি পরিচয় দেবার প্রয়াস পেয়েছিলেন।

’হিজড়া’ ছাড়াও তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ, উভলিঙ্গ কিংবা মিশ্র লিঙ্গ হিসেবেও দেখানো হয়।

যদিও, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কোনো বিশেষ নামেই কোনো মানুষকে ছাপ দিয়ে পরিচীত করা অনুচিত (রাজাকার বাদে)। মানুষের ’মানুষ’ পরিচয়টিই যথেষ্ট। সে নারী, নাকি পুরুষ, নাকি মিশ্র কিছু-সেটা জানার দরকার তো কেবলমাত্র যৌন সম্পর্কের জন্য। নিয়মিত সমাজব্যবস্থায় সেই পরিচয় সন্ধানের দরকারটাই তো আমার কাছে বোধগম্য নয়।

চাকরি, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র কিংবা যেকোনো দাপ্তরিক কাজে আজও যে আমরা লিখি, ১. নারী ২. পুরুষ ৩. অন্যান্য (টিক চিহ্ন দিন), কেন করি সেটা? কী প্রয়োজন মানুষের লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট জানার?

বায়োলজির স্বাভাবিক বা কিছু খেয়ালি নিয়মে বিধাতা যদি কাউকে মিশ্র বৈশিষ্টের করে সৃষ্টি করেই থাকেন, তাকে নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ, সেই ’রেচন’ ও ’জননের’ কিছু অঙ্গ মানুষের পরিচয় নির্ধারনে এত বেশি মাত্রা পাওয়াটা কি খোদ বিধাতাকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল মনে হয় না?

যতদিন না আমরা মানুষ নামক হোমোসেপিয়েনদের ওই সব রেচন কাম জনন অঙ্গকে স্রেফ ’রেচন ও জনন’ অঙ্গ হিসেবে দেখতে শিখব,

যতদিন না রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা উঠতি তরুণ, নষ্ট কিশোর অথবা অতৃপ্তকাম মধ্যবয়স্ক পুরুষ বা নারী রাস্তাতে চলতে থাকা আপাতঃ আকর্ষক যৌন বৈশিষ্টের ধারক নারী বা পুরুষের দিকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে তার শারিরীক গঠন ও পরিমাপ বুঝে নেবার চেষ্টা না করার মতো মানসিক পরিপক্কতা অর্জন করব,

ততদিন বৃহন্নলারা পাবে না ’মানুষ’ হিসেবে স্বাভাবিক সামাজিক দৃষ্টিমানতা। ততদিন, যৌনাঙ্গ অথবা যৌনানুভূতির ভিন্নধর্মীতা বা মিশ্রতা সমাজে ট্যাবু ও দ্রষ্টব্য হিসেবেই রয়ে যাবে।

দাপ্তরিক কাজে ততদিন নির্লজ্জের মতো আমার, আপনার, তার যৌন পছন্দ ও যৌন বৈশিষ্টের তথ্যপ্রদান চলতেই থাকবে। ততদিনই বৃহন্নলারা একরকম জান্তব বস্তুর মতোই, ছুড়ে ফেলা কন্ডোমের মতোই ঘৃনিত রয়ে যাবে সমাজে। কৌতুহল ও কৌতুকের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে মানুষ তাদের ট্রীট করতেই থাকবে।

এমনকি ’স্বাভাবিক’ সমাজের একজন পুরুষ মানুষও যদি অন্যান্য গড়পড়তা পুরুষদের মতো না হয়ে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন নারীর সঙ্গে মানুষের মতো মানবীয় হয়ে থাকে, তার প্রতিবাদী সত্ত্বাকে পিষে না মারতে পারে, তাহলে বৃহত্তম সমাজ সেই পুরুষকেও ‘হিজড়া’ বলে গালি দিতেই থাকবে।

অন্ধ এই সমাজ ব্যবস্থায়, আজও, পুরুষেরা, বিশেষত যদি কেউ নৃত্যশিল্পী হয়, তাকে ব্যঙ্গ করার জন্য বলা হয়, “ব্যাডা মানু, হিজড়াগো মতো নাইচ্চা বেড়ায়।” যেন ’বৃহন্নলা’ মানেই এক রকম বিকৃতি, এক রকম গোপন অকর্মন্যতা। বিকলাঙ্গতা। আসলেই কি বিকলাঙ্গ তারা? পরে বলব।

বঙ্গসমাজে ‘সেক্স’ বা ‘যৌনতা’ এক বিরাট ট্যাবু। এই জিনিস বা এর সাথে দূরতম সম্পর্ক আছে-এমন কোনো কিছু নিয়ে কথা বলাও এখানে এক বিরাট মুশকীল। উন্মুক্ত মাধ্যমে এই নিয়ে কিছু লিখতে গেলে, লেখার শুরুতে হাজারটা গলা খাকারি দিয়ে লেখা শুরু করতে হয়।
এই গলা খাকারি হল, ছিটকিনিবিহীন টয়লেটে আমরা যেই বিশেষ গলাখাকারি দিয়ে ভেতরে জনমানুষের অস্তিত্ব জানান দিই। অথবা, সেই বিশেষ গলাখাকারি, যেটা আগের দিনে ‍পুরুষ মানুষ ঘরে আসলে দিতেন, এটা বুঝিয়ে দিতে, যে, বাইরে ব্যাটাছেলে আছে, সাবধান। পর্দায় আবদ্ধ হও।
সেই সমাজে, ‘বৃহন্নলা’ কিংবা ‘যৌনকর্মী’ (পপুলার মেজরিটির চোখে ’বেশ্যা’) বিষয়ে কিছু লিখতে গেলে বাড়ির চালে ঢিল পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। তবু লিখছি। হয়তো, সেই ঢিল পড়ার ঘটনা ঘটলেই অবাধ্য আঙুলগুলোকে কিছুদিনের মতো থামাতে পারতাম। বহুদিন হতেই ভাবছি, প্রবন্ধ লেখা থামাবো। তার চেয়ে কা কা ডাকা কবি হয়ে যাব।

ঋতুপর্ণ ঘোষকে কি আপনাদের মনে পড়ে?

ভারতের এই বহুমূখী প্রতিভাধারী শিল্পী একাধারে পরিচালক, লেখক, নির্মাতা। এই ভদ্রলোক সেইসব দুঃসাহসী মানুষদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, যিনি তার বৃহন্নলা পরিচয় নিয়ে মোটেও কুঞ্চিত ছিলেন না, পরিচয় প্রকাশেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না।

নিজের খেয়ালমতো জীবনকে নিয়ে নানা এক্সপিরিমেন্ট করে, তার অনন্য সাধারন কিছু সৃষ্টি দিয়ে ভারতের সিনেমা শিল্পকে সমৃদ্ধ করে দিয়ে চলে গেছেন। অবগুন্ঠন ভেদ করে বৃহন্নলাদের কন্ঠ ও বুকচাপা কষ্টকে সমাজের ঠুলি পরা চোখের সামনে তুলে আনার যাত্রায় তিনি অন্যতম অগ্রপথিক।
আজকে যখন প্রথম মিশ্রলিঙ্গ মানব ডাক্তারী পাশ করেন, অথবা বাংলাদেশের সরকার, মিশ্রলিঙ্গ মানবদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ করেন পরম মমতায়, তখন আমার অনেক কিছুই মনে পড়ে যায়।

আমার সেই বৃহন্নলাদের মনে পড়ে যায়, যারা প্রতিদিন ফ্লাইওভারের সিগন্যালে গাড়ি থামলেই গাড়ির কাঁচে টোকা দেয়, “ভাইয়া, স্যার, একটু সাহায্য করবে ভাইয়া?”
সার্বিকভাবে কর্মক্ষম অথচ সমাজের মূলস্রোত হতে ছুড়ে ফেলে দেয়ায় যারা অচ্ছুতের চেয়েও বেশি কিছু, তারা ভিক্ষাকেই সহজতম রাস্তা হিসেবে বেঁছে নেয়।

অথবা, ঋতুপর্ণ’র সতেজে দাড়ানোর বিপরীতে আমার মনে পড়ে যায়, হেয়ার রোডের অভিজাত আমলা পাড়ায় রাতে ল্যাম্পপোস্টের আবছাঁয়ায় কাস্টমারের জন্য দাড়িয়ে থাকা ’কুন্দল হিজড়া’র কথা।

কুন্দল-কী দারুন বুদ্ধিদীপ্ত নাম-ছেলে, নাকি মেয়ে বোঝার কোনো ঝামেলা নেই। পদবী বোঝার হ্যাপা নেই। বংশ তো কোনোকালেই নেই।
সেই ছোটবেলায় যেদিনই বাবা-মা জেনেছে, সন্তান ‘বৃহন্নলা’, সেদিনই তাকে নিক্ষেপ করেছে আস্তাকূড়ে। পিতৃমাতৃত্বের চির মাধুর্যকে এক লহমায় স্বতিচ্ছেদার মতো ছিড়ে ফেলে, লোকলজ্জার দাস এই বাঙালী সমাজের বাবা ও মা নিজ সন্তানকে বের করে দেয় পৃথিবীর নিষ্ঠুর পথে।
সবকিছুর সাথে যুঝে নিজের জন্মপাপকে নিজেই মোকাবেলা করে টিকে থাকার সংগ্রামে। কী নিষ্ঠূর এই বাস্তবতা! কী নিদারুন!

’বৃহন্নলা’দের শারিরীক বৈশিষ্ট নিয়ে বলব বলেছিলাম। আসলেই কি তারা বিকলাঙ্গ? না। আমি বলব, তারা ’বিশেষাঙ্গ’। তারা স্রষ্টার এক অদ্ভুৎ খেয়ালের বহিঃপ্রকাশ।
শারিরীক বৈশিষ্ট নিয়ে বলার আমি কেউ নেই। তাছাড়া আমি বিশেষজ্ঞও নই, সেরকম কিছু তথ্য এখানে সন্নিবেশ করায় ইচ্ছুকও নই। বিধায়, শুধু এতটুকু বলব, বৃহন্নলা একরকম মিশ্র শারিরীক ও মানসিক/মনোজাগতিক বৈশিষ্টের নাম।

একজন মানুষ প্রকৃতির গড়পড়তা নিয়মে হয় পুরুষ না হয় নারী হয়ে জন্মাবেন। যাদের থাকে সুস্পষ্ট শারিরীক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং মানসিক/মনোজাগতিকভাবে নির্দিষ্ট যৌন হরমোন ও অনুভূতি।

এই পৃথক বৈশিষ্ট যখন একই মানুষের মধ্যে শেয়ারড হয়ে কেউ জন্মান, তাকেই আমরা বৃহন্নলা আখ্যা দিই। সেই মিশ্রতা হতে পারে-

এক; শারিরীক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট পুরুষের, অথচ মনোজাগতিক বিন্যাস ও যৌন অনুভূতির দিক দিয়ে তিনি ভেতরে ভেতরে একজন নারী। দেখতে পুরুষ হলেও নারীর আচরণ বিন্যাসের সাথে তার থাকবে অনেক মিল। তিনি সে কারনে দেখতে পুরুষ হলেও তিনি মানসিকভাবে একজন নারী এবং তিনি পুরুষের প্রতিই আবার আকর্ষন অনুভব করবেন।

দুই; শারিরীক বৈশিষ্ট বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (প্রধানত ও দৃশ্যত রেচন ও জননাঙ্গ) নারীর, অথচ মানসিকতা, যৌন পছন্দের ক্ষেত্রে তিনি একজন পুরুষের মানসিকতা ধারন করেন। পুরুষের মনোজাগতিক বিন্যাস নিয়ে জন্মানো এই (শারিরীকভাবে) দৃশ্যমান নারীরা নিজের সঙ্গী হিসেবে অন্য একজন নারীকে তখন তিনি কামনা করেন।

তিন; শারিরীক বৈশিষ্ট নারী ও পুরুষ-উভয়ের মিশ্রতায় গড়া। সেক্স বা যৌন হরমোন ও যৌন অনুভূতি নারীর বা পুরুষের-যেকোনো একটি তার ভিতরে থাকে।

এর বাইরেও আছেন ট্রান্সজেন্ডার-যারা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে নানা বাস্তবতায়ই নিজেদেরকে সার্জনের ছুরি কাঁচির নিচে নিয়ে নিজেদের যৌন, জনন ও রেচনাঙ্গ অথবা যেকোনো রকম যৌনপছন্দ, যৌন অনুভূতি অথবা যৌনবৈশিষ্টের মেডিক্যাল ট্রান্সফরমেশন/রুপান্তর ঘটিয়েছেন।

ট্রান্সজেন্ডারদের রাজধানী বলা চলে থাইল্যান্ডকে, যেখানকার মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট জেন্ডার ট্রান্সফরমেশন বা এলাইনমেন্টের কাজে বেশ সিদ্ধহস্ত। আবারও বলছি, এই যে, জেন্ডার ট্রান্সফরমেশন, সেটি নানা বাস্তবতার, বিশেষত মেডিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল বাস্তবতার কারনে ঘটে থাকে।

প্রিজুডিসড এজাম্পশন ও পারসেপশন দিয়ে তাকে চিহ্নিত করলে মুশকীল। Click This Link;)

আমরা জেনে বা না জেনে এই তিন সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্টের মানুষদের প্রায়শই ’হোমোসেক্সূয়াল’ হিসেবে ঘৃনার চোখে দেখি। যেটা তারা নন। হোমোসেক্সূয়াল ভাল নাকি খারাপ-সেটি অন্য আলোচনার বিষয়। আর সেটি সুস্থ ও নিয়মিত পুরুষ ও নারীর ইস্যু। সেটির সাথে এই বৃহন্নলাদের যোগ নেই। আমি শুধু সেটি বলছি। গড়পড়তা আমাদের ধারনা, বৃহন্নলা মানবরা সন্তান ধারন করতে বা সন্তান ঔরশজাত করতে একদমই অক্ষম। যা একদমই সঠিক নয়। আমরা অনেক কিছুই জানি না, যা আমাদের জানা উচিত। অনেক কিছুই জানি বলে জানলেও আসলে ভুল জানি।

এই বিষয়ে পাঠকদের ভিতরে বায়োসায়েন্স বা রিপ্রোডাকটিভ সায়েন্সের কোনো প্রজ্ঞাবান ও উপযুক্ত কেউ যদি থাকেন, তিনি ইনপুট দেবেন আশা করি। বা, তাদের দেয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত। আমি সামান্য লিখিয়ে। ধান ভানতে শীবের গীত গাইব না।

যা বলছিলাম।

শৈশবে বা সদ্য কৈশোরে, যেদিনই প্রকাশ পায়, নিজ গৃহের আদুরে সন্তানটি গৌরাবান্বিত বিশেষত্বের, অর্থাৎ বৃহন্নলা, সেদিনই তাকে ঠেলে দেয়া হয় রাস্তায়। প্রথমে মানসিকভাবে, তারপর শারিরীকভাবে। এই ত্যাজ্যকরণ অবশ্য অনেকটাই সমাজের রক্ষচক্ষূ এবং সমাজে অপাংক্তেয় হয়ে যাবার ভয়ে।

অসহায় কৈশোরে সেই ভিতচকিত মানব সন্তানের ঠাঁই হয় না পরিবারে। মহব্বতের বাবা-মাই তাকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। দুই চারদিন লাথি ঝাটা খেয়ে তারা ঠাঁই নেয় বৃহন্নলাদের কোনো একটা স্থানীয় কমিউনিটিতে।

কীভাবে ঘটে সেই খুঁজে নেবার দূরহ কাজটা-তা নিয়ে আমার কোনো ধারনাই নেই। কী পরিমান গঞ্জনা সহ্য করতে হয় নিজ গৃহ হতে স্বজাতীয় ব্রাত্যদের কূলে ঠাঁই খুঁজে ও স্থান করে নিতে-সেই যাত্রার পথ নিয়ে আমি ভাবতেও পারি না।

শুরু হয় তার নতুন জীবন। টিকে থাকার চরম সংগ্রামে নামা সদ্য কূলহারানো কিশোর বা যুবক/যুবতী ধীরে ধীরে মেনে নেয় ও মানিয়ে নেয় নিজের ভাগ্য এবং সমাজের নিষ্ঠূরতাকে।

টিকে থাকার আদিম সংগ্রামের মতোই, জীবন এখানেও নিষ্ঠূর এবং কঠোর।

নিজ কমিউনিটিতে ঠাঁই মিললেও, সেটা টিকে থাকা ও টিকিয়ে রাখা নেহাতই প্রাঞ্জল নয়।
অভাব ও সংগ্রামের যৌথ যুদ্ধ যেখানে, সেখানে নতুন একজন প্রতিযোগী আসাটা নিশ্চয়ই সাদরে গৃহিত হয় না?

কিছুদিনের মধ্যেই তাকে আবার নামতে হয় পথে। এবার অবশ্য বেঁচে থাকার সম্বল যোগানোর যুদ্ধে। হয় ভিক্ষা (প্রায়শই সেটা চাঁদাবাজির রূপ নেয়),
থবা দলবেঁধে নবজাতকদের নাচানোর (অন ফোর্স-পেমেন্ট) কাজে, অথবা শেষ পথ-যৌনদাসত্ব। যার কোনোটিই সমাজে খুব শ্রদ্ধার চোখে দৃষ্ট হয় না। বিশেষত শেষোক্ত পেশা নিয়ে তো নয়ই।

যদিও, তাদের যারা খদ্দের হিসেবে আবির্ভূত হন, তাদের সামাজিক পরিচয় ও স্টাটাস নিয়ে কখনো টানাটানি পড়েছে বলে শুনিনি।

বৃহন্নলা হিসেবে জন্ম নেয়া কি বিকৃতি? নাকি একে বলব Glorious variation? মানুষের বানানো সমাজের বিশ্বাস, বোধ ও দৃষ্টিভঙ্গী তো চিরাচরিত নিয়মে তার মনের মতো করেই লেখা হবে।
তার বিপরীতে বৃহন্নলাদের সোজা ব্যাটে খেলে বিকৃত মানব সন্তান হিসেবে দেখানোটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, বিষয়টাকে অন্য চোখেও দেখা যায়।

যেহেতু আমরা সুনির্দিষ্ট ও চিরাচরিতভাবে নারী ও পুরুষকে নির্ধারিত কিছু বৈশিষ্টের মধ্যেই দেখে অভ্যস্ত, তার মানেই কিন্তু এটা প্রমানিত হয় না, বা এটা অবশ্যম্ভাবি হয়ে যায় না,
যে, অমনটা ঘটাই স্বাভাবিক আর তার ব্যতিক্রম মানেই তা বিকৃতি। বিকৃতির স্বাভাবিক চোখ দিয়ে এই বিষয়টাকে দেখলে অন্তত অন্যায় হবে।
শুরুতেই যেটা বলছিলাম, একজন মানুষ ঠিক কী ধরনের শারিরীক ও মানসিক বৈচিত্র/বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মেছেন,

তার দরকার পরে কেবলমাত্র দৈহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যা নর ও নারীর একান্তই ব্যক্তিগত চয়েজ।

সমাজ ও রাষ্ট্রের সেই ব্যক্তিগত যৌন বৈশিষ্ট ও অনুভূতি প্রকাশ্যে জানান দেবার দরকারটা ঠিক কেন পড়ল, কবে হতে পড়ল-আমার জানা নেই।

ভাবুন তো, একটি অফিসে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বা ধরুন এইচআর কর্মকর্তা) নেয়া হবে। তো, তিনি স্বাভাবিক নারী/পুরুষ নাকি বৃহন্নলা-সেটা তার কাজে কীভাবে সংশ্লিষ্ট হল?
তো, সেটা জেনে নেবার দরকারটাই বা তাহলে কী? তার কাজ তো যৌনতা সংশ্লিষ্ট কিছু না।

তাহলে তার যৌন পছন্দ ও যৌনগঠন জানার বা জানানোর আয়োজন কেন? (হ্যা, একটা কারন আছে। সেটাও আবার সেই পপুলার সেন্টিমেন্টই। ‘মানুষ কীভাবে নেবে’-সেই চিন্তা।)

তাছাড়া, আমি মনে করি, একজন মানুষ বা যেকোনো প্রাণীরই জৈবিক বৈশিষ্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তাকে বিকৃতি আখ্যা দেয়া অথবা

তাকে কোনো বিশেষ লেবেল এঁটে দিয়ে তাকে সমাজের চোখে ট্যাবু ও ঘৃনিত হিসেবে প্রতীয়মান করা প্রকারান্তরে স্রষ্টাকে চ্যালেঞ্জ জানানোরই শামিল।
বৃহন্নলা স্রষ্টারই বিচিত্র খেয়ালের ব্যতিক্রমী সৃষ্টি, যা স্রষ্টার গৌরাবান্বিত বৈচিত্রের অংশ।

তাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা, বা তার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতাকে অস্বীকার করার সংবিধান রচনা নেহাতই সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ মানব সমাজের বিকৃতি হিসেবে আমার কাছে প্রতীয়মান। https://www.bbc.com/bengali/news-48457301

গণহারে ‘হিজড়া’ কথাটার উচ্চারনের মধ্যেই আপনি সেই গণ-সামাজিক ঘৃনা ও অস্পৃশ্যানুভুতির গন্ধ পাবেন। একটু গভীরভাবে দেখলেই বুঝতে পারবেন, বৃহন্নলাদের প্রতি তথাকথিত স্বাভাবিক সমাজের চোরা অস্বস্তি। যদিও, তার ব্যতিক্রম আছে।

সবাই এই গণ-অন্যায়ের কাছে যেমন মাথা নত করেন না, নিজেকে তথাকথিত স্বাভাবিকদের সমাজ থেকে আলাদা করে ‘বিশেষ’ সম্প্রদায়ের দলভূক্ত করার সামাজিক গণ-দাবীর কাছে মাথা নোয়ান না (যেমন ঋতুপর্ণরা),

ঠিক তেমনি অনেকে আছেন, যারা জনতার কাতারে মিশে একজন মানুষকে বা একদল মানুষকে ‘হিজড়া’ লেবেল লাগিয়ে দূর দূর বলে দূরে না রেখে তাদেরকে মূল স্রোতের ভিতরে থেকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ও বাঁচতে দেবার দাবীকে সমর্থন করেন। আমি তখন মি. আশিকদের মতো আলোকিত মানুষদের স্মরন করি।

সেই আশিক, যিনি একজন ’স্বাভাবিক’ পুরুষ হয়ে বিয়ে করেছেন একজন বৃহন্নলাকে।https://fb.watch/3Hs4MHyyzT/ ভালোবেসে। পারিবারিকভাবেই। সংসারও করছেন অনেকদিন।
আশিকদের দেখে আমাদের আবার বিশ্বাস হয়, যে, সমাজে কেবল আমাদের মতো ভন্ড ও প্রতিহিংসুক ‘কাস্টমার’রাই থাকেন না, সেখানে আশিকদের মতো ‘স্বাভাবিক’ ও ‘পুরুষ’রাও বসবাস করেন।

একইসাথে যারা ‘আপন’ নামক বৃহন্নলাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখান। ‘আপন’দের জন্য বিশেষায়িত মাদ্রাসা বানান। https://www.bbc.com/bengali/news-54822329

আবার আমরা আশান্বিত হতে পারি, যে, বিগত বহু দশকে রাষ্ট্র নানা আয়োজনের ভিতর দিয়ে তার অন্যতম যোগ্য নাগরিকদের মূলস্রোতে রেখে মানবীয় অধিকার ফিরিয়ে দেবার নানা চেষ্টা করেছে। তারই একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প:

https://www.facebook.com/Hasan.Jahid.Tusher/videos/10158881702184705

এইসব আয়োজন দেখে আমাদের আশান্বিত হবার, স্বপ্ন দেখবার কারন ঘটে। মানুষকে কেবলমাত্র মানুষ হিসেবেই দেখবার ও পরিচীত করে তোলার কাঙ্খিত স্বপ্নযাত্রায় আমরা এগিয়ে যাই আরেকটু। যদিও লক্ষ্য এখনো বহু দূর।

নিঃসন্দেহে জগতের সকল জীব একই ঈশ্বর, একই আল্লহ'র সৃষ্টি।

একই মাটির, একই সত্তায় সৃষ্টি। একই সুরে সৃষ্টি।

তাকে নারী-পুরুষ-মিশ্রলিঙ্গ নামে ভেদাভেদ করেছে ধান্দাবাজ মানুষেরা। নাম দিয়েছে নানা নামে।

'লিঙ্গ'র ভূমিকা শুধু প্রজননে আর রেচনে। মানবের পরিচয় ও স্টাটাস নির্ণয়ে নয়।

জগতে কেউ লৈঙ্গিক 'হিজড়া' নয়। বরং শত সহস্র অন্যায়, পাপ চোখের সামনে দেখেও মাথা নিচু করে চলে যাওয়া আমরাই বুদ্ধিবৃত্তিক 'হিজড়া'।

অমিতাভ ও রাণীর মূভী ‘ব্ল্যাক’ এর একটি খুব প্রিয় ডায়লগ অনেকবার বলেছি, বারবার বলতে ইচ্ছে করে আমার---
”You should be proud, that you are DIFFERENT”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২০

রাজীব নুর বলেছেন: অযোথাই পোষ্ট টা টেনে লম্বা করেছেন।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩১

বেচারা বলেছেন: টানি নাই তো!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.