![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশ চুম্বি স্বপ্নের দারপ্রান্তে দাড়িয়ে।
গত বছরের শেষের দিকে গাজীপুরের হাইওয়ের একটা বাসের মর্মান্তিক একটা একসিডেন্টের পর চারিদিকে শুধু ভাসমান আর্তনাধের সুর। কলাহলময় হয়ে যাচ্ছে চারিপাশ। কেউ কেউ সাহার্যের জন্য এগিয়ে আসছে। না না কেউ কেউ না,.. রফিক আসছিল সাথে তার ঐ ছোট ছেলেটাও আসছিল ধান ক্ষেতের মোড় থেকে। ও বাড়ীর ওপাশ থেকে পারুক হাক চেড়ে ডাক দিলো বাড়ীর সবাই আয়। আমাগো বাই বোনেরে বাচাইতে হবে। এভাবে এক একে সবাই এলো। বাধ গেলো না কেউই। জানতে জানতে সবাই জানলো। আসতে আসতে সবাই আসলো। কেউ দাড়ীয়ে থাকতে পারল না, সবারই মনে একটা গভীর সংঙ্কা কাজ করছিলো। সলিম ভাইয়ের ভেন গাড়ীটা ও শেষ পর্যন্ত কাজে দিলো। অসুস্থ বলা যাবে না, ভাগ্যের পরিহাসে নির্মম পরিহাসে মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়া মানুষ জনকে নিয়ে সে একের পর এক ছুটে চলছে পাশের সরকারি হাসপাতালে। তার দেখাদেখি সব রিক্সা চালক ভেন চালক এগিয়ে আসলো। বাড়ীয়ে দিলো সবাই সাহয্যের হাত। আস্তে আস্তে স্থানিয় গন মাদ্যম কর্মীরা এসে ক্যাপচার আর ভিডিও পুটোজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সলিম ভাই তার ভেজা জামাটা চেজ্ঞ করতে চাচ্ছে, কারন তার একটা পটো তুলবে ঢাকার সাংবাদিক গন। তাই চেচিয়ে তার ছোট বয়সি বাচ্ছাটারে কইলো যা যা গর থেকে ঐ লাল রঙ্গের শার্টটা নিয়ে আয়। আর এ দিকে সলিম ভাই ভেজা জামা খুলে হাতের মধ্যে নিয়ে দাড়ীয়ে আছে তার লাল জামার অপেক্ষায়। কিন্তু সাংবাধিক গন তার ঐ অবস্থায়ই একটা ছবি নিয়ে পেলেছে। তারা এখন যাবে হাসপাতালে যারা যারা একসিডেন্ট হইছে তাদের সাথে দেখা করার জন্যে, উচ্চ সরে বলে উঠল সলিম ভাই,
- ভাই ভাই আমার না ছবি নেবেন?
হ্যাঁ ছবি নেওয়া হইছে তো।
- কি কন কখন নিলেন?
এই যে দেখেন।
- ভাই এইডা কি করলেন ! আমি তো লাল জামাডা পরলামই না। আর আপনি আমার খালি গায়ের ছরি নিয়ে নিলেন?
আরে ভাই আপনি এমন করেন কেনো। আমরা কি আপনার নামে কোনো হারানো সংবাদ দিবো নাকি?
- না ! আমি কি হারিয়ে গেছি নাকি, এইটা দিবেন কেন?
ভাই এতো জামেলা করেন কেন ! ধুর যান তো।
পরে সলিমের ছেলে লাল জামাটা নিয়ে আসছিলো। মেজাজ খরাপ থাকায় জামাটা নিয়ে ছুড়ে পেলে দিলো সামনের দিকে।
পরের দিন চারিদিকের পত্র পত্রিকায় শোক নিয়ে বার্তা প্রকাশিত হলো। যারা যারা না জানার তারা ও জেনে গেলো। এই বাঙলার পরিবেশটা আবারো ভারি হয়ে গেলো। রাজনৈতিকবীদরা সবাইকে টাকা দিয়ে তাদের দুঃখে দুঃখ প্রকাশ করবে, এই বলে প্রতিশ্রুতি দিলো। পত্রিকার শিরোনামে আসার কথা ঐ সলিমের ছবি যা প্রকাশিত হবে, সলিমের সাহায্যের তোড়ে সবাই এগিয়ে এসেছে। কিন্তু হেড লাইনে এসেছিলো, বাসের ড্রাইবার আর হেলপার পলাতক, ৪ জনের মৃত্যু।
আজকে বসে বসে চায়ের দোকানের সামনে পত্রিকা পড়ছিলাম, হঠাৎ করে একটা আমার বয়সির একটা ছেলে দুই হাতের বোগলের নিছে স্ট্যান্ড নিয়ে বলল ভাইজান আমাকে একটু সাহায্য করেন। তাকিয়ে দেখলাম শুকনো মুখে একটা হাসি নিয়ে দাড়ীয়ে আছে, পায়ের দিকে নজর পড়তেই দেখলাম তার বাম পাটা অর্ধেক পরিমান কাটা।
এই সব ব্যাপারে আমি তেমন একটা জিজ্ঞাসাবাদ করিনা। কিন্তু আজকে মুখ পষকে বের হয়ে গেলো,
-কিভাবে হলো?
ও বলতে শুরু করল... ঐ দিনটার কখা।
- ভাই ঐ একসিডান্টা আমার লাইফটা পুরো এলোমেলো করে দিছে। আমার এই ছাড়া কোনো পথ নাই। নতুন হেলপারি শুরু করছিলাম। আজ আমার এক পা নাই।
বললাম, তোমরা দু'জন না পলাতক ছিলে?
- ভাই আমারে মহিন নামের এক রিক্সা ওয়ালা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো, রিক্সা ওয়ালা ওখানে যেতে যেতে সাংবাদিকগন ঢাকায় চলে গেছে।
আর আমার ওস্তাদ মানে ড্রাইবার উনি হাসপাতালেই মারা গেছেন। কিন্তু কোনো পরিচয় না থাকায় উনি ড্রাইবার বলে পরিচয় পায় নাই।
একটা হাসি দিয়ে বলল , এ কারনেই আমরা পলাতক ছিলাম। সব কপাল ভাই সবই কপাল।
অনেকক্ষন কথা বললাম, আমার চেয়ে ও সে আমার সাথে কথা বলতে উৎসুক ছিলো। যাওয়ার সময় বলল ভাই অনেক কখা বললাম আমার কথা কেউ শুনতে চায় না। আমার ব্যাথা কেউ বুজতে পারে না। আবারো একবার হাত বাড়ীয়ে আমার সাথে হেন্ড সেক করল। ঘুরে যাওয়ার সময় একজন পেন্ট শার্ট পরা ভদ্র লোকের সাথে খানিকটা ঘেসা খেলো।
আর উনি বলে পেলল ছোট লোকের বাচ্চা, ঠিক ভাবে হাটতে পারো না। আমি দাড়িয়ে গেলাম..!
ও বলল: ঠিক ভাবে হাটবো কি করে আমার তো পা নাই সার।
- ও সরি সরি আমি বুজতে পারি নাই।
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি দিলো। আমিও তার সাথে সাথে একটা হাসি দিলাম। সে চলে যেতে লাগলো ... আমার চারপাশের আবহাওয়াটা একটু সতেজ মনে হতে লাগলো। দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে আমিও অন্য পথে হাটতে লাগলাম।
©somewhere in net ltd.