নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদেক সুমন

সােদকুর রহমান সুমন

সাদেক সুমন

সােদকুর রহমান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গিলা কইলজায় ভালোবাসা

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৪

এটি আমার জীবনের সর্বপ্রথম ছোটগল্প লেখার দুঃসাহস





স্নিগ্ধা ও শরীফ – প্রবাসে তাদের ছোট্ট একটি সাজানো সংসার। সাথে তাদের দুটি ছোট্ট ছানা পোনা। সব সংসারেই যেমন হাসি-কান্না, টানা-পোড়ন লেগে থাকে তাদেরও তা থেকে ব্যাতিক্রম নয়। স্নিগ্ধা অপরূপা সুন্দরী ও বুদ্ধিমতি এবং কথাবার্তা আর চালচলনেও ব্যাপক মার্জিত। শরীফ আবার ঠিক তার উল্টোঃ বদমেজাজী, একরোখা আর দেখতেও তেমন সুবিধার নয়। তার উপর আবার আছে বেফাসে মুখ ফুটে সত্যি কথা বলে দেবার বদভ্যাস। কার তাতে আঁতে ঘা লাগলো আর কার তাতে না এটা বোঝার মতন বোধ শক্তি সম্ভবত কোখনোই তার হবে না। আবার যেকোনো সুন্দর একটি গান কিংবা কবিতাকে আশ্লীল প্যারোডি বানানোতেও সে ভীষণ ওস্তাদ। শরীফের এই বদভ্যাসের জন্য তার মাতুল কুল আর শশুর কুলের কেউই আর তাকে দু চোখে দেখতে পারে না। আর এ নিয়েও স্নিগ্ধা আর শরীফের মধ্যে প্রায়ই খটাখট লেগেই থাকে।



তারপরেও শরীফ পাগলের মতন স্নিগ্ধা আর তার দুই ছানা পোনাকে ভালোবাসে। কিন্তু তা সে ঠিক মতন এক্সপ্রেস করতে পারে না। শরীফের মধ্যে এমন কোনো আলগা রোমান্টিসিজম ও নাটকীয়তা নেই যে ভ্যালান্টাইন ডে তে বিশটি লাল গোলাপ নিয়ে হাটু গেড়ে প্রয়সীর সামনে বসে ভাঙ্গা রেকর্ডের মতন জপতে থাকবে, “ভালোবাসী, ভালোবাসী”। উল্টো হয়তবা ভালোবাসী এর বাসী জায়গায় অন্য কোনো একটি বাংলা শব্দ জুড়ে দেবে যা ভদ্র সমাজে হয়তোবা মুখ ফুটে বলা যাবে না। কিন্তু তার ভালোবাসা অন্যরকম, এই যেমন- সকালে নাস্তা বানানোর সময় হয়তোবা দুজনের জন্যই ডিম পোচ করলো। একটি হয়তোবা দেখতে একটু এবড়ো থেবড়ো হল কিংবা লবণ বেশী হলো। সে নেবে সেই খারাপ ডিম পোচটি। অথবা এই তো সেদিন, স্নিগ্ধা আর শরীফ যখন উইকেন্ডে দুপুরে খেতে বসলো, তখন দেখা গেলো কাজের চাপে তারা কেউই সেদিন রান্না করতে পারে নি, তাই আগের দিনের ভাবীর বাসায় দাওয়াত থেকে ফেরার পথে সাথে দিয়ে দেয়া বিরিয়ানীর বাক্স খুলে দেখা গেলো যে শুধু একজনের খাওয়ার পরিমাণই আছে, তখন শরীফ ঠোট উল্টে বললো, “আমি ওই জঘন্য জিনিষ মুখেও তুইলাও দেখুম না”। স্নিগ্ধা প্রচন্ড রাগ করলেও শরীফ কিন্তু তাকে বুঝতে দিলো না যে সে আসলে স্নিগ্ধাকে রেখে খেতে পারবে না, আর তাই বেকুবটা বিশাল ঝগড়া বাধিয়ে বসলো।



তেমন কিছু একটাও আজকে তাদের মধ্যে চলছিলো। কিন্তু তারপরেও শরীফ ঠিক করে রেখেছিলো আজকে সে তার বিখ্যাত খিচুড়ী আর মুরগীর কোরমা রান্না করবে স্নিগ্ধার জন্য। কে যেনো একবার তাকে বলেছিলো, পুরুষ মানুষের ভালোবাসা থাকে তাদের পেটে, তাই বেকুবটা তার ভালোবাসা জানানোর পন্থা ঠিক করে ফেললো খাওয়া দাওয়ার মতন একটা স্থূল ব্যাপার এর মধ্যে। আজকেও একটি উইকেন্ডের দিন। সকাল থেকেই মনে মনে অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছে। স্নিগ্ধাকে কিছুই বুঝতে দেয় নি। এরমধ্যে গায়ে পড়ে একটু ঝগড়াও করে নিয়েছে, ঘটনাকে একটু স্পাইস আপ করার জন্যে। দুপুরে যখন হটাৎ স্নিগ্ধা এসে বললো যে ওর এক বান্ধবী, চৈতি ফোন করেছে বিকেলে তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য তখন শরীফও ভাবলো এই সুযোগ, স্নিগ্ধাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। ভং ধরে বললো, “তুমি যাও বাচ্চাদের নিয়ে, আমার কিছু কাজ আছে”।



স্নিগ্ধা তার গাড়ী নিয়ে চলে যেতেই শরীফ বেরিয়ে পড়লো। বুচার শপ থেকে টাটকা মুরগী আর কলিজা কিনে নিয়ে এসে শুরূ করলো রান্না-বান্না। ম্যানু হচ্ছে, ছাত্র অবস্থায় পরিস্থিতিরে শিকার হয়ে শেখা তার সেই কিংবদন্তিতে রূপ নেয়া কোরমা আর ভুনা খিচুড়ি। খুব যত্ন নিয়ে এক এক করে তেল গরম করা, মাঝখানে ফেড়ে টেসকোর রকেট চিলি গরম তেলে ছেড়ে দিয়ে ভাজা ভাজা করে যেনো ঝাল চলে যায় কিন্তু ফ্লেবারটা থাকে, পরম যত্নে বেরেস্তা ভাজা এমন আরো কত কি!! ঠিক পচাত্তর মিনিত লাগে তার রান্না শেষ হতে। তারপর কিচেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে যেই সবকিছু শেষ করেছে তখনই স্নিগ্ধার ফোন। বললো,

“এই শুনো, চৈতি তো আজকে রাতে না খেয়ে আসতে দিচ্ছে না, কি আর করবো বলো? তুমি একটা কিছু খেয়ে নিও”।



মিনমিন করে “ঠিক আছে, আচ্ছা রাখি বলে” শরীফ ভ্যাবদা মেরে কিছুক্ষন বসে রইলো। কখন যে তার চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তা সে টেরই পেলো না। মিনিট দশেক পরে রান্না করা পুরোটা কোরমা আর ভুনা খিচুড়ী ফুড বিনে ফেলে দিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠলো,



“আল্লাহ, আমগো লাহান ফহিন্নির পুতেগো গিলা কইলজায় এতো মহাব্বত দিতে গেছিলা ক্যারে????”

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
সাদেক সুমন,
গিলা কলিজায় ভরপুর ভালোবাসা, কেবল প্রকাশে নেই রঙিন ভাষা। গল্পটি বেশ উপভোগ করলাম। শুভ কামনা রইলো। আরও লিখুন ...

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

সােদকুর রহমান সুমন বলেছেন: আপনার উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩১

উদদিন বলেছেন: ৭ বছর যাবৎ ব্লগে আছেন তারপর-ও নেকামি আর বেশী কথা বলেন কেন ? এই-সব শতাব্দী পুরোনো কথা না বললে লেখা যায়-না ?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪

সােদকুর রহমান সুমন বলেছেন: ভাইরে মাত্র সাত বছর ধরে ব্লগে আমি নাই। আমি হচ্ছি এই আছি তো এই নাই। আর তাই তো কিছু কিছু "লম্ব-কর্ণ" দের অনুভুতি বুঝুতে পারি না বলেই মাঝে মাঝে নেকা হয়ে যাই।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: প্রথম লেখা হিসেবে ভালো লিখেছেন। তবে লেখায় বেশ কিছু আড়ষ্টতা আছে, আশা করি নিয়মিত যদি চর্চা করেন এবং পাশাপাশি ভালো লেখকদের বিভিন্ন বই বা লেখা যদি আরো নিয়মিট পড়েন, তাহলে সামনে অবশ্যই লেখার আড়ষ্টতা কেটে যাবে।

শুভ কামনা রইল।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

সােদকুর রহমান সুমন বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য। আমার লেখায় যে শুধু আড়ষ্টতাই আছে তাই নয়, আরো আছে অনেক ভাষা ও ব্যাকরণ মূলক ত্রুটি। প্রবাস জীবনে যেখানে প্রতিটি মূহুর্তে ভিন্ন ভাষায় ভাবের আদান প্রদান চালিয়ে যেতে হয়, তখন এই ত্রুটিগুলো কিভাবে যেনো চলেই আসে। আপনার উপদেশ এই অধমের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ছাত্র অবস্থায় পরিস্থিতিরে শিকার হয়ে শেখা তার সেই কিংবদন্তিতে রূপ নেয়া কোরমা আর ভুনা খিচুড়ি- অসাধারন বর্ননা। ভাইজান রে দেখি চিনা চিনা লাগে! :D

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১

সােদকুর রহমান সুমন বলেছেন: মখা!!!!! চিনে ফেলসো মামু!!!!!!...... :-)

৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৫

নস্টালজিক বলেছেন: আর একটু সময় দিলে এই লেখাটাই কিন্তু ভালো একটা লেখা হয়ে যেতো।


সময় নিয়ে লিখেন, সুমন ভাই।


শুভেচ্ছা নিরন্তর।


আরিশা আর আরশান-কে অনেক ভালোবাসা।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

সােদকুর রহমান সুমন বলেছেন: রানা ভাই, আপনি পড়েছেন??? আমার জীবন তো স্বার্থক!!!!!..... :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.