![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম থেকে উঠে আদনান কয়টা বাজে অনুমান করার চেষ্টা করল।ইদানিং বেলা ১২ টার আগে সে কোনভাবে বিছানার থেকে উঠতে পারে না। টাইম দেখার উদ্দেশ্যে মোবাইল হাতড়াচ্ছে । মোবাইলে ১২.২৭ বাজে , অন্যান্য দিনের মত আজকেও আবার সকালের ক্লাস মিস । ১ টায় একটা ক্লাস আছে, কিন্তু তার বিছানা থেকে নামতে নামতে , ধিরে-সুস্থে মুখ হাত ধুতে ধুতে এক ঘন্টা লেগে যায় , তাই সে একটার ক্লাসটা না করার সিদ্ধান্ত নিল ।আজ বিকেলেও একটা ক্লাস আছে তাও করতে ইচ্ছা হচ্ছে না । ধ্বংসের মাঝে এক ধরণের আনন্দ আছে , নিজেকে ধ্বংসের মাঝে মনে হয় আনন্দ আর বেশি ।পাশে টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট ধরাল । সিগারেট এর ধোয়া উড়াতে উড়াতে হঠাত্ করে তার স্মৃতি চলে গেল কলেজের দিনগুলিতে ।
মোটামুটি ভাল ছাত্র হিসেবে তার সুনাম ছিল ।খেলা-ধুলা,ডিবেট সব কিছুতেই পারদর্শি ।শিক্ষকরাও তাকে খুব পছন্দ করত, তাকে নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন দেখত ।আরও মনে পড়ল বন্ধু মহলের কথা ,সাবিহার কথা । সাবিহার কথা ভাবতে তার খুব ভাল্লাগে । সাবিহাকে অসম্ভব পছন্দ করে সে । তার মনে পড়ল সাবিহার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনা , তার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোর কথা ।এলিমেন্ট কোচিং সেন্টার , যেখানে সাবিহার সাথে তার প্রথম দেখা হয় । লাভ এট ফারস্ট সাইটে আদনান বিশ্বাস করে না , কিন্তু আজ সে সন্দেহ করে সেদিনেই হয়ত তার জীবনের চুড়ান্ত সর্বনাশ ঘটেছিল, সে সাবিহার প্রেমে পড়েছিল,, । সাবিহা , সাবিহা , সাবিহা …. আদনান আবার নস্টালজয়িক হয়ে গেল ।
প্রতিদিন যাকে দেখার জন্য সকাল সাত টার সময় ঘুম থেকে উঠা , এক্সট্রা ক্লাস করা ছুটির পর ।তার সাথে কি কথা বলবে তা প্রতিদিন ছক করে আসার ঘটনা মনে পড়ে হাসি পেল যদিও একদিন ও সাহস করে কথা বলতে পারত না । তার অপেক্ষার প্রহর অবশ্য খুব দীর্ঘ হয়নি একদিন সাবিহা এসেই তাকে বলল, ছটির পর থাকতে পারবে কিনা । সারাটা ক্লাস কি উত্তেজনায় না কেটেছিল ! সাবিহা তাকে কেন ডেকেছে,কেনই বা ডাকতে পারে ।
ঠক্ঠক্ ঠকঠক ।দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দে সংবিত্ ফিরে পেল আদনান । দরজা খুলে দেখল তার রুম-মেট ফাহাদ এসেছে । ফাহাদ, আদনানের ডিপার্টমেন্টেই পড়ে । শুধু তাই নয় , সে একিসাথে আদনানের বেস্টফ্রেন্ড ও ।আদনানকে দেখে ফাহাদ বলল , “কিরে ? আজকে ক্লাস করলি না যে ?”
- এম্নিতেই , ভাল্লাগতেছিল না
- তুই এভাবে ক্লাস ফাকি দিলে তো এক্সামেই দিবি কেম্নে ? আজকে স্যার d-block metal এর re-action mechanism দেখাইছে , অনেক ইম্পরটেন্ট ক্লাস মিস করলি , এটা না পারলে d- block metal এর কিছুই পারবি না
- তোকে আমার রুমে রাখছি কি জন্য ? তুই বুঝাবি …
- আচ্ছা , আমি না হয় বুঝাইলাম , কিন্তু তোর এত কম এটেন্ডেন্স , তুই তো পরীক্ষায় দিতে পারবি না । তুই তো জানিস, শফিক স্যারের ক্লাসে প্রক্সি দেয়া অসম্ভব ।
আদনান নিশ্চুপ । ফাহাদ বল্ল , ৩ টায় ম্যাথ ক্লাস , ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন পড়াবে । তাড়াতাড়ি উঠে খেয়ে নে ।
- না দোস্ত , আজকে যাব না
- যাবিনা মানে , আজকে আমি তোকে জোর করে নিয়ে যাব
- প্লিজ দোস্ত , আজকে কষ্ট করে আমার প্রেসেন্টটা দিয়ে দে
- না , আমি প্রতিদিন এতো রিস্ক নিতে পারব না, তুই আজকে ক্লাস করবি , মাস্ট । কোন কারণ ছাড়া তুই ক্লাস করবি না কেন ?
- প্লিজ দোস্ত , আজকে না , আজকে ভাল্লাগতেছে না
- আমি কিচ্ছু জানি না , আমি তোর প্রেসেন্ট একটাও দিব না
বাধ্য ছেলের মত আদনান উঠে দারাল ।বলল, “তোর জন্য শান্তিতে ঘুমায়তেও পারলাম না, আল্লাহ তর বিচার করবে”
সাবিহার সাথেও সে কোনদিন তর্কে পারত না । অবশ্য সাবিহার সাথে তর্কে হারতে তার ভালই লাগত । সিগারেট খাওা নিয়ে কত কপট অভিমানেই না করত সাবিহা ।এ স্ম্রিতিগুলো এখনো তার জীবনে সুখ-স্ম্রীতি হিসেবে সংরক্ষিত ।শুধু তাকে খুশী করার জন্য সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল সে । সিগারেটের গন্ধ সাবিহা একদমেই সহ্য করতে পারত না । সাবিহার সুখী মুখের দিকে তাকালেই মনটা ভাল হয়ে যায় । কি স্নিগ্ধ কোমল তার হাসি । একজন মানুষের হাসি কোমল কেম্নে হয় তা আদনান জানে না ।কিন্তু সাবিহার হাসি তার হৃদয় এ কোমল মোলায়েম বুলিয়ে যায় । তার এখনো বিশ্বাস হয় না , সে সাবিহা কেম্নে বিশ্বাসঘাতকের মতো তার জীবন থেকে চলে গেল । একটিবারের মতো ও সরি বলার সুযোগ দিল না ।
“রেডী ?? ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্চে ”, ফাহাদের কন্ঠে তাগাদার সুর
- হুম , রেডী
আদনান ও ফাহাদ ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিল । ইউনিভার্সিটির কাছেই তাদের মেস । রিকশা করে যেতে খুব বেশিক্ষন সময় লা্গে না । রিকশাই চড়তে আদনানের ভালই লাগে ।কত দিন সে ক্লাস ফাকি দিয়ে সাবিহার সাথে সারাদিন রিকশাই চড়ে কাটিয়েছে । তাদের এত মাখামাখি দেখে ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত । কিন্তু তারা দুজন-দুজনার মাঝে এমন ভাবে ডুবে গিয়েছিল যে কারো কথা তাদের কানে যেত না ।প্রতিদিন ছুটির পরপরেই আদনান , সাবিহার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত ।অন্যান্য মেয়েরা সাবিহাকে নিয়ে খুব ঈর্ষা করত । তারা প্রায় আদনানের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করত । কিন্তু হাই ,হ্যালো ; কেমন আছ ? ভাল আছি … এর বাইরে আদনানের কথা এগুতো না । এ নিয়ে ক্লাসের মেয়েদের আদনানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ছিল । তারা প্রায় আদনান কে জব্দ করার চেষ্টা করত, কিন্তু ক্লাসের ছেলেরা তাকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাক-আপ দিত , তাই তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারত না ।
একদিন আদনান সাবিহার জন্য কি একটা গল্পের বই এনেছিল । কেম্নে কেম্নে খবরটা মেয়েদের কানে চলে যায় । ফারিয়া আদনানের কাছে গল্পের বইটা চাইল ।সাবিহা জাফর ইকবালের অনেক বড় ভক্ত , তাই তাকে সারপ্রাইস দেবার জন্য আদনান নতুন বই গিফট দিতে চাচ্ছিল । তাই ,সে ফারিয়াকে অপরাগতা জানিয়ে বলল , “আমিতো এই বইটা আমি একজনের জন্য আনছি ,তুই কয়েক দিন পরে নে”। পরের দিন ফারিয়া ইমন ভাইয়ের ক্লাসে আদনানের নামে অভিযোগ জানাল , “স্যার,আমি আদনানের কাছে একটা বই খুজছি আমাকে দে নাই অথচ সাবিহাকে সুরসুর করে দিয়ে ফেলেছে ”। ইমন ভাই ছিলেন প্রচন্ড ফানি একজন পার্সন , ক্লাসের সবাই তাকে পছন্দ করত আর যে কোন কিছু তার সাথে শেয়ার করত । তিনি ফারিয়াকে বললেন , “আদনান , সাবিহাকে বই দিছে ভাল কথা , তোমার এত জ্বলতেছে কেন ?” ফারিয়া কোন জবাব দিতে পারিনি । লজ্জায় ফারিয়ার মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিল ।
এ-কথা ও-কথা ভাবতে ভাবতে আদনানের মুখটা খুশী খুশী হয়ে গেল । কখন যে তারা ক্লাসে এসে পৌছাল টেরই পেল না । তাদের একটা গ্রুপ আছে ,সাত-আটজনের নাম xebu । ক্লাসের পিছন দিকে এক কোণায় তারা বসে । আদনান ,সেখানে গিয়ে বসল। এই গ্রুপের কাজ ক্লাসে স্যার যা বলবে তা ফানি সেন্সে নিয়ে যাওয়া , তা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা , সারাদিন ক্রিকেট খেলা আর সারারাত মুভি দেখা , ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে তাস খেলা , গল্পের বই পড়া ।আদনান অবশ্য দরকারি কাজের চেয়ে এসব আজাইরা কাজে বেশি এ্কটিভ থাকে ।
৩ টায় যথারিতি ক্লাস শুরু হল । ক্লাসে এসে আদনান টের পেল , সে খাতায় আনিনি । অঙ্কগুলো না তুলে সে লেখার ভান করে বসে থাকল । কোচিং সেন্টারেও সে কোনোদিন খাতা-কলম নিয়ে যেত না । তাই সাবিহাই তার জন্য খাতা কলম নিয়ে আসত ।খুব কেয়ারিং ছিল মেয়েটি ,তার এই গুনটিই আদনানের সবচে বেশী ভাল লাগে ।আচ্ছা , সাবিহা এখন এখানে থাকলে কি করত ? – আদনান ভাবতে লাগল । নিশ্চয় তাকে প্রচুর বকা দিত । সাবিহার বকা খেতে আদনান এর খুব ভাল লাগত । শুধুমাত্র সাবিহার ঝারি খাওয়ার জন্য সে অনেক উল্টা-পাল্টা কাজ করত ।
“এ্যাই ছেলে এ্যাই , দাড়াও” – স্যার , আদনানকে দাড় করাল
- জ্বী স্যার
- মনোযোগ কই ? দেখি , এই ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশনটা সল্ভ কর দেখি
ছোটবেলা থেকেই আদনানের জীবনের স্বপ্ন ছিল সে বুয়েটে পড়ব ।তার বাবাও একজন বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার ।তারও স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বুয়েটে পড়াবে, তাই ছোট থেকেই তিনি আদনানকে ম্যাথের উপর তিনি অনেক জোর দিতেন । আদনান , ম্যাথে তাই অনেক ভাল ও ।কিন্ত সমস্যা হল , এখন সে কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না । অবশেষে ১০ মিনিট পর , সে স্যারকে অঙ্কটা সলভ করে দিল । তার খাতা দেখে স্যার বলল, “ একটা অঙ্ক করতে এতক্ষন লাগ্লে হবে ? পরীক্ষায় ফুল এন্সার করবি কেম্ননে ?
আদনান নিশচুপ ।
স্যার আবার বললেন , তোর তো মেধা ভাল,কিন্তু ক্লাসে মনোযোগ দিস না, পিছনে বসে ঝিমাস , কাল থেকে এই সিটে বসবি । স্যার ঘোষণা করলেন, কাল থেকে যারা ক্লাসে মনোযোগ দিতে চাই ,পড়তে আসে তারা যেন সামনে বসে , আর যারা ঘুমানোর জন্য ক্লাসে আসে তারা যেন মাঝখানে বসে, আর যারা ক্লাসে কথা বলতে চাই তারা যেন শেষে চলে যায় , যাতে ভাল ছাত্রদের ডিস্টার্ব না হয় ।
পিছন থেকে আসাদ বলে উঠল , না স্যার , যারা কথা বলে তাদেরকে সামনে পাঠান , আর যারা ঘুমাতে চাই তাদেরকে শেষে পাঠান , না হলে তাদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে ।তার কথা শুনে হাসির রোল উঠল ক্লাসে । আসাদ হল এ ক্লাসের সবচে ফাজিল ছেলেদের একজন , কোন কিছুতেই সে সিরিয়াস হতে পারে না , সব কিছু নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ।
সাবিহাও ছিল অনেকটা এই টাইপের , সারাদিন উল্টা-পাল্টা কাজ । বলা নেই , কওয়া নেই মানুষের বাড়িতে ঢুকে যেত , দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খেয়ে আসত, আন-নোন নাম্বারে ফোন করে একে-ওকে চাইত , রাস্তার পথচারীদের দেখে হঠাত বলে উঠত , আরে , বর্না কি খবর ? আরে সৌরভ , কি অবস্তা ? পথে-ঘাটে টোকাই পথশিশুদের সে প্রায় চকলেট ,চিপ্স এসব কিনে খাওয়াত ।তাদের সাথে খেলতে, গল্প-গুজব করতে সাবিহা খুউব পছন্দ করত ।এসব দেখে আদনান খুব বিরক্ত হয়ে বলত, তুই কি এখানে আমার সাথে সময় কাটাতে আসছ নাকি তোর টোকাইদের সাথে ?সাবিহা বলত , দেখ , তুই ওদের টোকাই বলবে না , ছোট বাচ্চারা হল একেকজন ফেরেশ্তা, তাদের কোন পাপ নেই , তার উপর এরা এসেছে পুওর ফ্যামিলি থেকে , আমরা যদি তাদের জন্য একটু সাহায্য না করি , কে করবে? ওদের সাথে কথা বললেই সাওয়াব হয় ।
- খোজ নিয়ে দেখ , তোর এই ফেরশ্তাগুলা রাতে কি করে ? একেকজন স্মাগ্লিং , মাদক ব্যাবসা , দালালি এসবের সাথে জরিত
- ছিঃ , তোর চিন্তা-ভাবনা এত খারাপ ? মানুষ সম্পর্কে এত নোংরা চিন্তা-ভাবনা করতে তোর লজ্জা লাগে না ?
- হুম … এখন তো আমার চিন্তা-ভাবনা তোর কাছে নোংরা লাগবেই ! তুই তো তোমার ফেরেশ্তা পেয়ে গেছ , আমাকে কি দরকার ?
এই বলে আদনান কপট অভিমানের ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে ।এ দেখে সাবিহা আর থাকতে পারত না । আদনানকে জরিয়ে ধরত । গালে , ঘাড়ে , কানে কিস দিত আর কানে ফিসফিস করে বলত , আরে আমার আদু মণি , তুই তো আমার কিউট,সুইট বেবি , আমার জানপাখি , কেউ কি তার জান ছাড়া থাকতে পারে ? আদনান বলে , দেখ , আমাকে আদু বলে ডাকবি না
কালকে ক্রিকেট খেলবি ?
আসাদের কথায় আদনানের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল । সে পালটা প্রশ্ন করল , ‘কী?’
“কালকে শুক্রবার , ক্লাস নেই , চল ক্রিকেট খেলি” –আসাদ বলল
আদনান নিজেকে আবিষ্কার করল ক্লাসের বাইরে । কখন যে ক্লাস শেষ করে সে বেরিয়ে গেছে টেরই পেল না। ইদানিং সাবিহার চিন্তায় সে এত বেশি মগ্ন থাকে আশেপাশের কোন কিছু খেয়ালেই করে না ।আদনান তাই একটু লজ্জা পেল । আদনান , আসাদকে তার সম্মতি জানাল । সে ক্রিকেট খুব ভাল খেলে । ইনফ্যাক্ট, সে তার এলাকায় ক্লাবের হয়ে খেলত ।সাবিহা তার প্রত্যেকটা খেলা দেখত আর তাকে খুব উৎসাহ জানাত । সে যে টাকা পেত তা ফোন আর রিক্সা ভাড়ার পিছনে খরচ করত ।তারা রিকশা করে যে কতবার পুরা শহরটা একত্রে ঘুরে বেরিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । আদনান , সাবিহাকে প্রায় বলত ,আমাদের বিয়ের পর তোর জন্য একটা রিকশা কিনে দিব ,আর একটা ড্রাইভার রাখব যে আমাদের সারা শহর ঘুড়াবে।
সাবিহা বলত, উহু , সামান্য একটা রিকশা দিয়ে তুই আমার মন ভুলাবে , তা হতে পারে না । মার্সিডিস না হইলে এটলিস্ট বি.এম.ডব্লিউ তো দিতে হবে, মাস্ট ।
- না , ওটা তো যৌতুক হিসেবে পাচ্ছিই । আমি নিজের টাকা থেকে তোকে রিকশা কিনে দিব
- ছিঃ তুই যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবি ?
- তো ! এমনি এমনিই তোকে আমার বউ বানাব নাকি ? শখ কত ? তোর বাপরে বলে দিবি একটা ফ্ল্যাট , এটলিস্ট একটা গাড়ি , আর নগদ ৪০ লাখ টাকা রেডী করে রাখে ।কী , পারবে না ।
- পারবে , খুব ভাল পারবে । তোকে ঝাটার বাড়ি দিয়ে ঘর থেকে বের করবে
এভাবে তাদের দিন কেটে যেত । প্রতিদিন কোন না কোন বিষয়ে ঝগড়া-ঝাটি । শুধু দিনের বেলাতেই তাদের কথা হত তা নয় , বাসায় এসেও সারাক্ষন মেসেজিং , চ্যাট , ফোন কল তো আছেই । কতবার যে তারা ফোনে কথা বলতে গিয়ে আম্মুর কাছে ধরা খেয়েছে । বাসায় সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রাত ২ তায় আদনান চুপিচুপি সাবিহাকে ফোন দিত । কথা বলতে বলতে সারারাত কেটে যেত ।দেখতে দেখতে কিভাবে ২ টা বছর কেটে গেল , আদনান টেরই পেল না । তার জীবনের শ্রেষ্ট ২টা বছর , যে সময়ের কথা সে জীবনেও ভুলতে পারবে না , তার জীবনের সব স্ম্রিতি মুছে ফেললেও যে স্ম্রিতি গুলো ভুলতে পারবে না ।
“উফফ , ভার্সিটি লাইফের মত পেইনফুল লাইফ আর নাই” , বাসায় পৌছান মাত্র ফাহাদের স্বগতোক্তি ।
“হুম , চাপ দিয়ে মেরে ফেলতেছে ।প্রতিদিন বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস, ভাল্লাগে না !” , ইতিমধ্যে আদনান তার ল্যাপটপে মুভি দেখতে বসে গেছে।
- আসার সাথে সাথে মুভি দেখতে বসে গেলি ? কোন মুভি দেখিস
- কিংডম অফ হেভেন
আদনান মুভির অনেক বড় ভক্ত । মন খারাপ হলেই সে মুভি দেখতে বসে যায় ।মুভির কাহিনিতে ডুবে ভুলে যেতে চাই জগতের সকল বাস্তবতাকে । সাবিহাকে । তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়কে । আর ফাহাদ পড়তে বসে গেল । রোববার Radiation and Statistical Mechanics এর উপর পরীক্ষা । পড়তে বসার জন্য আদনান এর কানে একটু ঘ্যানর-ঘ্যানর করার পর সে নিজের পড়ায় মনোযোগ দিল ।
আদনানের আবার সাবিহার কথা মনে পড়ল । মেয়েটা প্রচুর পড়াশুনা করত ।সাবিহা অঙ্কে একটু কাচা ছিল বলে প্রতিদিন তাকে পড়াত আদনান ।দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা তাদের দরজায় কড়া নাড়তে লাগ্ল । একজন , আরেকজনকে প্রচুর উতসাহ দিত । কার কদ্দুর পড়া হয়েছে দেখত । একমাস পর তাদের পরীক্ষার রেসাল্ট আউট হল । আদনানের জিপিএ ৪.৭ আর সাবিহার ৪.১ । টেস্টে ৪ এর উপরে পেলেই মোটামুটি ধরে নেয়া যায় বোর্ড এক্সামে এ+ পেতে যাচ্ছে , তাই তারা তাদের রেসাল্ট নিয়ে খুব খুশি ।বাসায় তাদের বাবা-মা খুশি হলেও , টিপিকেল বাবা-মার মত তারা খুশী না হয়ার ভান করল । রেসাল্ট দেয়ার পর ১ সপ্তাহ আদনান শুধু সাবিহার সাথেই ঘুরে বেড়ালো । প্রতিদিনের মত আদনান সেদিনও সাবিহাকে ফোন দিয়ে বলল, জানু , নিচে নাম , তোকে নিয়ে খেতে যাব
- না , আমি নিচে নামতে পারব না , আমি বিজি
আদনান তো অবাক, সাবিহা তাকে মানা করছে । সে বলল, “ সাবু , কোন সমস্যা , কিছু হয়ছে ? আমাকে খুলে বল ?
- কিছু হয়নি , আজকের থেকে তুই আমাকে ফোন দিবি না
- কেন ? কি করছি আমি ?, আদনানের বিস্মিত
- শোন, সা্মনে আমাদের পরীক্ষা , অনেক ইম্পরটেন্ট একটা পরীক্ষা । এখন আমাদের ফুল কন্সেন্ট্রেশন পড়ালেখার উপর দেয়া উচিত
- তার জন্য কথা বন্ধ করার দরকার নাকি ?
- এই সময়টায় আমাদের কথা বন্ধ থাকলে আমাদের দু-জনেরই লাভ । তুই কি আমার জন্য মাত্র ৩ টা মাস কষ্ট করতে পারবি না ।
- পড়ালেখা তো আমরা করতেছিই , যা কিছুই করি না আমরা পড়ালেখা তো ঠিক রাখতেছি ।
- এইতো কয়েকটা দিন জান । দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে যাবে ।
- আমি তোর সাথে কথা না বলে থাকতে পারব না । প্রতিদিন কি ? আমি প্রতিঘন্টায় তোকে ফোন দিব ।
- আমি তোকে না করছি তাই তুই ফোন দিবিনা , এই বলে সাবিহা ফোন রেখে দিল
আদনান আবার তাকে ফোন দিল । ফোন অফ । তবুও আদনান হাল ছাড়ল না , বারবার ট্রাই করে যেতে লাগল । অবশেষে রাতের বেলা আদনান আবার সাবিহাকে লাইনে পেল ।
- তোর সমস্যা কি ? তোকে না ফোন দিতে মানা করছি
- প্লিস , আমরা প্রতিদিন একবার কথা বলি , রাতে জাস্ট ১ বার কথা বলব
- যেদিন আমাদের পরীক্ষা শেষ হবে , সেদিন আমি নিজেই তোকে ফোন দিব , এর আগে আমাকে ফোন দিবি না
- তোর সাথে আমি দিনে প্রায় ২৪ তা ঘন্টায় কাটাই । তোর সাথে সারাদিন কন্টাক্ট না করে কেম্নে থাকব ? আচ্ছা তুই বল , তুই আমার সাথে এতদিন কন্টাক্ট না করে থাকতে পারবি ?
- ওকে , প্রতিদিন আমরা জাস্ট ১ বার কথা বলব , ৫ মিনিটের জন্য । ঠিকাছে ?
কিন্ত আদনান তার প্রমিস রাখতে পারে না । আগের মত দেখা হয় না বলে আর বেশি ফোন দিত । এইতো একটু কথা বলব , আর ৫ মিনিট , এইত রেখে দিচ্ছি কিন্ত তার কথা ফুরাত না । কিছুদিন পর সাবিহা তার ফোন রিসিভ করে বন্ধ করে দিল । সাবিহা তাকে মেসেজ পাঠাল , তুই যদি আমাকে আবার ফোন দিস , আমি ফোন টা ডিরেক্ট আম্মুকে দিয়ে দিব।আদনান এক্টুপরেই সাবিহাকে কল করল এবং কলটা সাবিহার আম্মু রিসিভ করে । আদনান নিঃশব্দে কলটা কেটে দেই । সাবিহার নাম্বারটা মোবাইল থেকে ডিলিট করে ফেলল ।যদিও সাবিহার নাম্বার তার মুখস্ত কিন্ত সাবিহাকে আর এক্টিবারের মত ও আর ফোন দেইনি । সাবিহাকে ছাড়া একেকটা দিন তার কাছে একেক বছরের মত লাগে ।আদনানের খাওয়া-দাওয়া , ঘুম মাথায় উঠল , পড়াশুনাতো দুরের কথা ।
অবশেষে , এইচ.এস.সি পরিক্ষা শুরু হল ।কিন্ত আদনান পড়ায় মন বসাতে পারে না । টেস্টে যতটুকু পরেছে তার উপর ভরসা করে পরীক্ষা দিতে যায় । দেখতে দেখতে একসময় তাদের পরীক্ষাও শেষ হয় । সাবিহা আদনান কে বারবার ফোন দেয় , কিন্ত আদনান ফোন রিসিভ করে না । সাবিহা তাকে বারবার মেসেজ পাঠায় , প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর । জান , একবার দেখা করি আমরা , প্লিইইইইজ । কিন্ত আদনানের তরফ থেকে নো রিপ্লাই । যদিও সাবিহাও তার বাবা-মার ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তার হবে , সে মেডিকেল কোচিং এর সাথে সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং এ ভর্তি হল ।আদনান যে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইছে সেখানে , যদি আদনানকে কোনমতে বুঝানো যায় ।
আদনানকে দেখে সাবিহার অনেক খারাপ লাগে । একদম শুকিয়ে গেছে আদনান । অগোছালো চুল , মুখে খোচা-খোচা দাড়ি , চোখের নিছে কালি পড়েছে , দ্রিষ্টিতে কেমন জানি বিষন্নতা ও নির্লিপ্ততাভাব । সাবিহা আদনানের কাছে ক্ষমা চাই কিন্তু আদনান তাকে সাফ জানিয়ে দিল, তোকে ছাড়া আমি বাচা শিখে গেছি । আমার দুঃসময়ে যে আমার পাশে ছিল না তাকে আমার লাগবে না । সাবিহা প্রচুর কান্না-কাটি করে কিন্ত তা আদনানের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না ।
আদনানের ফ্রেন্ড রিফাত,সাদিবরা তাকে অনেক বুঝায় রাগ ছেড়ে দেয়ার জন্য । তারা বলে , তোদের রিলেশনশিপ ছিল আমাদের মধ্যে সবচে বেস্ট , তুই এত ছোট কারণে রিলেশন ব্রেক করবি তা হতে পারে না । তোদের দুজনকে কাপল হিসেবে দেখতে আমার অনেক ভাল লাগত । দেখ সাবিহা আজকেও এসেছিল ,প্রচুর কান্না-কাটি করছে , ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলছে । এটা ওটা অনেক কিছু বলত আদনান তো শুনতোই না উলটা তাদের আর ঝাড়ি দিত ।
২ মাস পর তাদের এইচ-এস-সি পরীক্ষার রেসাল্ট এর ঘোষণা দিল । আদনান তার বন্ধুদের সাথে রেসাল্ট নিতে কলেজে গেল । রিফাত,সাদিব,উতপল,বাপ্পি একেকজন এ+ পাওয়ার পর তারা একজন আরেকজনকে জরিয়ে ধরে নাচতে লাগল । আদনান রিফাতকে বলল , দোস্ত ,আমার রেসাল্টটা একটু দেখ তো
“ধুর, তোর রেসাল্ট কি দেখব ? তুই ত এম্নিই এ+ পাবি , পলাশ,রিয়াদ ওদের রেসাল্ট গুলা আগে দেখি”,রিফাত বলল । অবশেষে রিফাত , আদনানের রোল দেখল । আদনানের জিপিএ-৪.৮ ।রেসাল্ট দেখে আদনানের বুক ভেঙ্গে গেল । আদনানের আজীবনের স্বপ্ন বুয়েট । তার এত সাধের বুয়েটে সে এপ্লাইয়ে করতে পারবে না । তার অবস্থা দেখে বন্ধুরা তাকে অনেক সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করল , কিন্ত সে চুপচাপ একাকি বাসায় চলে আসে । তাকে তার আম্মু রেসাল্ট জিজ্ঞাসা করে । সে কোন জবাব না দিয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে । আদনানের খুব খারাপ লাগছে এবং গলা ছেড়ে কাদতে ইচ্ছা করছে । আল্লাহর উপর খুব রাগ হল তার । তার সাজানো-গুজানো জীবনটা তিনি কেন এরকম করে দিলেন । আদনান আরেকটি সিগারেট ধরাল । সে বাসায় কখনো সিগারেট খায় না , এই প্রথম খাচ্ছে । ইতিমধ্যে আদনানের আব্বু ও ঘরে উপস্থিত । কিন্ত ছেলের অবস্থা দেখে তাকে ঘাটানোর সাহস পেলেন না ।
আদনান আর ভাবতে পারল না । সে দুঃসহ স্ম্রিতির কথা মনে পরে চোখ বন্ধ করল ।বাসায় তার একটুও মন বসত না । টিপিক্যাল বাব-মার মত তার বাবা-মা তার কানভারী করতে থাকে । আদনান বাসায় আসার পর , তার আব্বু , আম্মুকে বলে , “ ছেলেকে তো বেশি স্বাধীনতা দিয়ে নষ্ট করে ফেলছ, লেখাপড়ার নাম গন্ধ নাই , সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে ” আম্মু বলে , “আমার কি দোষ , ও কি আমার কথা শুনে ? আমার কথার ত কোন দামেই নেই অর কাছে” । আদনানের আম্মু আদনানের কাছে যেয়ে বলে , তোর সমস্যাটা কি
- আমার কোন সমস্যা নাই
- আমাকে বল , আমাকে বলবি নাতো কাকে বলবি
আদনান ধমক দিয়ে বলে, তুমি যাও তো ,আমাকে ডিস্টারব কর না তো
আম্মু ও রাগ বলে , তোদের জালায় কি করব বুঝতেছিনা , যা ইচ্ছা কর গা
আদনান রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে যেত
ভাগ্যিস , এই সময় ফারিয়া সর্বক্ষণ তার পাশে ছিল । ফারিয়া তাকে বুঝাতো , জি.এফ নিরবাচনে ভুল হতেই পারে , তাই বলে এভাবে ভেঙ্গে পড়া তো ঠিক না । আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে । হয়তো তোর জন্য আর ভাল কোন মেয়ে অপেক্ষা করছে । সে যদি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে তো সাবিহারেই জয় হবে । তাকে তুমি দেখিয়ে দাও ও না থাকলেও তোর কিছু আসে-যায় না
আদনান সব কিছু ভুলে আবার তার পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করল । সাবিহা প্রতিদিন ফোন করে কান্নাকাটি করে । সে শুধু ফোনটা রিসিভ করে কথা শুনেই যাই কিন্তু কোন কথা বলে না । একদিন সাবিহা তাকে ফোন দিয়ে বলল , আদনান প্লিস আমার সাথে একবার কথা বল, আজকে তুই আমার সাথে কথা না বললে এই জীবনে আমার সাথে আর কথা বলতে পারবি না । আদনান কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দিল ।
“এ্যাই , শুনেছিস সাবিহা হাসপাতালে ভর্তি হয়ছে ?” - পরদিন রিফাত আদনানকে জানাল
“ক্যান , কি হইছে ?”
“পাচ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিছে”
আদনানের মাথা ঘুরতে লাগল । তার মনে হল তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে । সাবিহা এরকম করবে জানলে সে কখনোই তার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করত না । আদনানের প্রচন্ড মন খারাপ হল আর নিজের উপর রাগ উঠল । যে মেয়ে তার জীবনটা ভালবাসা দিয়ে ভরে দিয়েছে তার সাথে সে কেম্নে এমন করল । সাবিহা তাকে এতটা ভালবাসে, এতটা … ।তার জন্য অবলীলায় নিজের জীবনটা দিয়ে দিতে পারে । সাবিহার সাথে দেখা করার জন্য সে হাস্পাতালে ছুতে গেল । সাবিহার তখনো জ্ঞান ফিরেনি । তার অবস্থা খুব আশংকাজনক । সাবিহার শরীরের অনেক হাড্ডি ভেঙ্গে গিয়েছে ।
আদনান সাবিহার পাশে বসে রইল কখন তার জ্ঞান ফিরবে এ আশায় । সারাটা দিন কেটে যায় কিন্ত সাবিহার জ্ঞান ফিরেনা । পরদিন আদনান আবার আসলো ,কিন্ত না , সাবিহার জ্ঞান ফিরে না । আদনান সব কাজ-কর্ম ফেলিয়ে সাবিহার পাশে বসে থাক্ত এই আশায় সাবিহার সাথে একটু কথা বলবে , বেশি না এই অল্প একটু ।বিধাতা কি তাকে এ সু্যোগ দিবে ?কিন্ত শত চেষ্টার পরেও ডাক্তাররা তাকে কোমা থেকে বের করতে পারল না । এক্সিডেন্টের সাত দিনের মাথায় , হুম , বরাবর ঠিক সাত দিন পর সাবিহার জ্ঞান ফিরল । সাবিহা চোখ খুলে আদনানকে দেখতে পেল ।কি বলে শুনার জন্য আদনান , সাবিহার মুখে কান পাতল ।
- আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি ,তাই না রে ?
- না সাবু না , তুই আমাকে কোন কষ্ট দিস নাই
- আমি জানি , আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি । আমাকে মাফ করে দিস , নইলে আমি মরেও শান্তি পাব না ।
- না সাবু , তুই আমাকে ছেড়ে এভাবে যেতে পারিস না , তোকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব ? তুই আমার জান , তুই আমার লক্ষিটি , তুইই আমার সব ।
সাবিহা স্মিতভাবে হাসার চেষ্টা করল । বলল , “তুই অনেক ভাল ছেলে , দেখবি অনেক সুন্দর একটা বউ পাবি , আমার চেয়েও অনেক সুন্দর । তোর অনেক যত্ন করবে , তুই তো নিজের কাজটাও ঠিক মত করতে পারিস না ।
-প্লিস সাবিহা প্লিস ।
-আদু আমাকে শক্ত করে ধরে রাখ , আমি আমার জীবনের শেষ সময় গুলো তোর কোলে কাটাতে চাই
- না সাবু , না
- অনেক শখ ছিল তোর সাথে রিক্সায় ঘুরে বেড়াব , ফুচকা খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যাব , বিনা টিকিটে সারা শহর ঘুরে বেড়াব
- না সাবু , তোকে আমি মরতে দিব না । দেখিস , আমি ঠিকই তোকে বাচাব ।
সাবিহা চুপ ।
-আমি অনেক দুঃখিত । আমি তোর সাথে প্রচুর খারাপ ব্যবহার করেছি , আমার এমনটা করা মোটেও উচিত হয় নাই । আমাকে মাফ করে দিস প্লিস । এমনটা আর জীবনেও হবে না , দেখিস ।
সাবিহা চুপ ।
-আরে বোকা, তুই আমার শুধু জীবনেই না , তুই আমার প্রিথিবি , আমার চিন্তা ,আমার চেতনায় শুধু তুই ।তুই আমার চৈতন্য । আমিতো তোরেই জন্য।
আদনান কথা বলেই যাচ্ছে । সাবিহা যে কখন তাকে ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গেছে টেরই পেল না ।
বাহঃ গানটা বেশ সুন্দর তো । কার গান এটা ? – ফাহাদের গলার স্বরে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে এল আদনান
- জানি না । এক জায়গায় শুনেছিলাম
- আরেকটু জোরে গা । আমিও শুনি
তখন আমি , সবে কলেজে
কিশোর এই মন বেড়িয়েছিল এক কিশোরির খোজে এ
কত-শত হৃদয় দিয়েছিল ধরা
ইচ্ছে করে তখন দেইনি সাড়া
কত-শত মন ভেঙ্গে
এই মনটি ধরা দিয়েছিল
এক কিশোরীর ফাদে এ এ
সাবিহা , সাবিহা আ আ
সা সা বি … বি বি হা
তুমি জানলেও না তোমায়…
সাবিহা সাবিহা
সা সা বি … বি বি হা
ফুলপরী , হুরপরী
প্রেয়সী আমাআআর
তোমারি কারণে বরবাদ
হয়েছে আজ …
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬
চৌধুরী সাকিব বলেছেন: সাহিত্য জিনিস টাই এমন । মন খারাপ করিয়ে আনন্দ দিতে হয় ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭
এক্সপেরিয়া বলেছেন: মনটাই খারাপ করে দিলেন ।