![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী এবং পরীক্ষাবঞ্চিত তাঁর ষোল ছাত্র
ইলমে হাদিসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি? সবাই নিশ্চয় স্বীকার করবেন ফয়েজ এবং বরকত। দাওরা হাদিসের সনদের স্বীকৃতি আর ফয়েজ ও বরকত এক কথা নয়। কোথাও যদি একই সাথে সনদের স্বীকৃতি, ফয়েজ ও বরকত পাওয়া যায় তবে সোনায় সোহাগ। কিন্তু ফয়েজ ও বরকত ব্যাতিত শুধু সনদের স্বীকৃতি চাকুরীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও ইলমে হাদিসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার বরকত ব্যাতিত ফয়েজও ইলমে হাদিসের ক্ষেত্রে মূল গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। আমাদের একটি রোগ হলো, আমরা খুব দ্রুত যেকোন বিষয়ে মন্তব্য করে হৈ হুল্লোড় শুরু করে দেই। কিন্তু কোন কিছুর ধাতুগত দিকে না গেলে যে তার মৌলিক বিষয় বুঝে আসে না তা আমরা অনেকেই জানি না। ফলে আমরা জানি না কোথায় কোন জিনিষ গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ যখন কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে লিয়াজু তৈরি করেন তখন বিএনপি-জামায়াত গ্রুপের জমিয়তি-খেলাফতি-হেফাজতি অনেকেই তাঁকে দালাল ইত্যাদি গালি দিতে থাকেন। তখন আমি লিখেছিলাম,‘তুমি করলে হালাল এবং আমি করলে দালাল’ শীর্ষক লেখাটি। এরপর ধারাবাহিকভাবে আমি বেশ কিছু লেখায় মাওলানা মাসউদের পক্ষে কথা বলি। তখন অনেকেই আমাকে আওমী লীগের দালাল বলে গালি দিয়েছিলেন। গালাগালিতে আমার কোনদিনও সমস্যা নেই। কারণ, উসূলে ফিকহে আমি ইমামুল ফিকহ হযরত আবু হানিফা (র.) এর অনুসারী। সেদিন মাওলানা মাসউদের ভূমিকা ছিলো মৌলিক, তাই আমি তাঁর পক্ষ নিয়ে অনেকের গালাগালির মুখোমুখি হয়েছিলাম। পরবর্তীতে দেখা গেলো অনেকের ভুল ভেঙেছে। অবশ্য জামায়াতিরা বাদে এখন সবার কাছে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত আল্লামা।
কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে আমি যেমন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.)-এর সাথে ছিলাম, এই দাবিতে তাঁর সাথে মুক্তঞ্চালে অনশনেও গিয়েছি, তেমনি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের পক্ষেও যুক্তি-তর্ক করেছি। আমি চাই কওমি মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণী থেকে দাওরা হাদিস পর্যন্ত প্রত্যেক সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। মন্দের ভালো হিসেবে দাওরা হাদিসের স্বীকৃতি এসেছে। এবার প্রথম পরীক্ষা হয়েছে। এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে। কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফির প্রতি।
এবছর এক বোর্ডের অধীনে একই প্রশ্নে দাওরা হাদিসের প্রথম পরীক্ষা হয়। এতে যেকোন কারণে অংশ নেয়নি হবিগঞ্জের উমেদনগর মাদরাসা। এই মাদরাসার প্রধান হলেন আল্লামা তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জি। এই অংশ না নেওয়ায় তাকে নিয়ে ফেসবুকে, অলাইন পত্রিকায় বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হচ্ছে। অনলাইন মিডিয়া থেকে যারা বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে, তারা মিডিয়ার আদর্শ থেকে খুব খারাপ কিছু করেনি। মিডিয়ার কাজই হলো, যা দেখে তা সবাইকে হুবহু দেখানো। যদি কেউ কোন বিষয়ে নিউজের বাইরে ‘ভিউজ’ তৈরি করে তবে সে বিষয়ের কারণ এবং লাভ ও ক্ষতি বর্ণনা করতে পারে। অনেক সময় তথ্যগত ভুলে মিডিয়ায় ভুল কথা প্রচার হয়। এজন্য মিডিয়াকে গালি না দিয়ে লিখিত প্রতিবাদ দেওয়াই উচিৎ। তবু যদি প্রতিকার না হয় তবে সংশ্লীষ্টরা নিজেদের বক্তব্য লিখে প্রচার করতে পারেন। যারা মিডিয়ার সংবাদে ফেসবুকে হৈ চৈ করেন তাদের জানা উচিৎ খবর সত্য এবং মিথ্যার মধ্যখানে থাকে। নিজে কিংবা নিজস্ব সূত্রে খবর না নিয়ে হৈ চৈ করা অনুচিৎ। যারা মিডিয়া পরিচালনা করেন, তাদেরও উচিৎ সংবাদের যথাযথ উত্স সম্পর্কে সবরকমের যাচাই-বাছাই শেষে খবর পরিবেশন করা। একটা কিছু শুনেই প্রচার করতে লেগে যাওয়া, হাদিসের ভাষায় মিথ্যেবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
উমেদনগর মাদরাসার ১৬জন ছাত্রকে সনদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। এজন্য অনেকে মাওলানা তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জির সমালোচনা করছেন। আমি ইলমে হাদিসের ফায়েজ ও বরকতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে মনে করি না এই বিষয়টি সমালোচনার যোগ্য। কারণ, এখানে ইলমে হাদিসের ফায়েজ ও বরকত বলে কথা। মাওলানা তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জি শুধু মাদরাসার প্রধান নয়, তিনি এই ছাত্রদের হাদিসের শিক্ষকও। তাঁর ফয়েজ অর্জিত না হলে এই ছাত্ররা হাদিসের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। আর কারো ইলমে হাদিসে যদি ফয়েজ ও বরকতই না থাকে তবে সে হাদিসের ইলম থেকে কোন উপকার লাভ করতে পারবে না।
সাধারণ মানুষের সমালোচনায় আমি কষ্ট পাই না। কষ্ট পাই এবিষয়ে আলেম-উলামা কেউ সমালোচনা করলে। ষোল বছর মাদরাসায় পড়ে, হাদিসের ইলম অর্জন করেও যদি কেউ জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের সমন্বয় করতে না পারে তখন দুঃখ পাওয়ারই কথা। কারণ এই সমন্বয় ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না ‘ভাব এবং বস্তু’ কিংবা ‘দেহ এবং আত্মা’-র বিষয়টি।
হাদিসের জ্ঞান শুধু বস্তুগত বিষয় নয়। এখানে ভাব ও আত্মার বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। আর ভাব ও আত্মার জ্ঞান অর্জিত হয় না ফায়েজ ও বরকত ছাড়া। কি হবে সনদের স্বীকৃতি দিয়ে যদি ইলমে ফায়েজ ও বরকত না থাকে। আর সহবত ছাড়া ফায়েজ ও বরকত অর্জিত হয় না। যে ১৬জন ছাত্র পরীক্ষা দেয়নি, তারা যদি মনে এই বলে আনন্দ নিতে পারে, ‘আমি আমার শিক্ষকের নির্দেশ মেনে নিলাম, হে আল্লাহ তুমি এই মানাকে কবুল করো।’ আমি মনে করি তারা কামিয়াব। কারণ, গুরুকে মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইলম। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার যোগ্যতা কি? আমি বলি, আজীবন আমি আমার গুরুদের পায়ের কাছে বসেছি আর তারা আমার মাথায় হাত রেখেছেন, খোদার কসম এর থেকে বেশি যোগ্যতা আমার কিছু জানা নেই। যারা তাদের গুরুর দিকে চেয়ে পরীক্ষা দেয়নি ওরা যদি আনন্দচিত্তে মেনে নিতে পারে তবে অবশ্যই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি কাজ করেছে। এ বিষয়ে পৃথিবীর সবাই কথা বলুক, যদি তাঁর শিষ্যরা খামুশ থাকে তবে আর কারো কিছু বলার নেই। নুর জালাল তাঁর গুরুকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি/ মন্দ বলে পাড়া-পড়শী/ বলে বলুক যার যা খুশি/ আমি শোনবো না/ আমি তো জানি গো বন্ধু তুমি আপনা।’
যারা বস্তুবাদি তারা বুঝবেন না এসব কথা। মার্কসবাদকে অনুসরণ করে ভারতবর্ষে যে ইসলামের উত্থান ঘটিয়েছেন মাওলানা মাওদুদী এবং তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী সেখানে আটকে গিয়েছেন আরও অনেক। এরমধ্যে দেওবন্দীরাও আছেন। ফলে তারা আধ্যাত্মিক ফায়েজ ও বরকতের মর্মকথা আগের দেওবন্দীদের মতো বুঝেন না। মওদুদীর নিচক বস্তুবাদী ইসলাম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জামায়াতে ইসলামী সহ সবাইকে, নতুবা ‘আমও যাবে ছালাও যাবে’।
আমি মনে করি, উমেদনগর মাদরাসার ষোল ছাত্র ইলমে হাদিসের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিকে মোটেও পরীক্ষা বঞ্চিত নয়। তারা বঞ্চিত হবেন যদি হাদিসের শিক্ষক তাদের উপর নারাজ হয়ে যান। মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জির অনেক কাজের সাথে আমার মতবিরোধ রয়েছে। আমি তাঁর অনেক কাজই মেনে নিতে পারি না। মাঝেমধ্যে আমি তাঁর কিছু কিছু কাজের সমালোচনাও করি। তবে তাঁর শিষ্যদেরকে বললো, কারো সমালোচনায় তোমরা বিভ্রান্ত হতে যেও না। কারণ তিনি তোমাদের গুরু। গুরুকে মানতে হয় সার্বক্ষণিক। গুরু সবার জন্য ভুল করলেও শিষ্যের জন্য ভুল করেন না। নিচক বস্তুবাদিরা এসব বুঝবে না।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ মবনুর কলম থেকে।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০২
চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুমন্তব্যের জন্য, অসংখ্য ধন্যবাদ
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৮
প্রামানিক বলেছেন: ইসলামী আলোকে ষোল ছাত্রের ভবিষ্যত উজ্জল হোক।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:২৬
চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন:
আমীন ইয়া হুজুরে আলা
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:১৪
আবদুল মমিন বলেছেন: আমি চাই কওমি মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণী থেকে দাওরা হাদিস পর্যন্ত প্রত্যেক সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। মন্দের ভালো হিসেবে দাওরা হাদিসের স্বীকৃতি এসেছে। এবার প্রথম পরীক্ষা হয়েছে। এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে। কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফির প্রতি।