![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রযুক্তিবিদ এবং প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা ।মূলত কাজ করি অনলাইনে,পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ও অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।চাইলেই ইঞ্জিনিয়ারিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পার করে দিতে পারতাম। কিন্তু যাযাবরের জীবন আমাকে টানে খুব। তাই সব ছেড়ে যাযাবরের মতো চষে বেড়াচিছ এক দেশ থেকে আরেক দেশ। আমি যখন যেদেশে আমার স্যুটকেস রাখি সেটাই তখন আমার দেশ,আমার ঘর-বাড়ি।আমি একজন বিশ্ব নাগরিক।এবং কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বেশিদিন থাকি না।।
প্রতিটা মানুষের ভালো -মন্দ দুইটা দিক আছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবুল কালাম মারা গেছেন। কিন্তু চার দিন ধরে ফেইসবুকের নিউজ ফিড জুড়ে তাকে ঘিরে সমালোচনা আর শোকের মাতম দেখতে দেখতে খুবই ত্যক্ত বিরক্ত। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কেউ কেউ যা করছেন , সেটি শ্রদ্ধা নয়। নিরেট উপাসনা। মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশেরই রাষ্ট্রপতি ছিলেন।এমন কি কয়েক জন বামপন্থীকে ও দেখলাম এই মাতমে শামিল হতে। শুধু মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়া শিশুটির বেলায় কোন মাতম দেখলাম না কারো !! তিনি বিজ্ঞানী ছিলেন, নিউক্লিয়ার বোমা- মিসাইল বানিয়েছেন তার দেশের জন্য। কিন্তু আমাদের দেশের লোকজন চার দিন ধরে হায় মিসাইল ম্যান হায় মিসাইল ম্যান বলে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এর কোন মানে হয়!!
এ. পি. জে. আবুল কালাম একজন কট্টর জাতিয়তাবাদী ছিলেন। ভারতের সব নদীর পানি (মেগা রিভার প্রোজেক্ট) আটকে রেখে সুজলা সুফলা ভারত গড়ার জন্য ভাটির দেশ বাংলাদেশকে পানিশুণ্য শুষ্ক করে ফেলার যে প্রক্রিয়া , সেটির তিনি তীব্র সমর্থক ছিলেন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ে এই প্রকল্পের আদর্শিক ভিত্তি দেয়ার জন্য তিনি বিরামহীন প্রচারণাও চালিয়ে গেছেন।যা তার মতন একজন বিশ্বব্যক্তিত্বের জন্য ছিল বেমানান। তিনি ভারতীয় হয়ে উঠেছিলেন, পৃথিবীর সকল মানুষের হতে পারেন নি। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অসাধারণ ছিলেন কিন্তু তিনি তার সেই ব্যক্তিত্বকে ব্যয় করেছেন ভারতীয় পুঁজির দাসত্বে। এখানেই এ, পি. জে. আবুল কালাম মহাকালের কাছে হেরে যাবেন।
এদিকে আবার চার দিন ধরে তাকে সমালোচনার নামে কেউ কেউ যা করছেন , সেটি সমালোচনা নয়। নিরেট গালাগালি।কারো কারো লেখা পড়ে মনে হচ্ছে,কালামের চাইতে খারাপ লোক আর একজনও ছিলনা। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত বোমা বানানো হয়েছে সব কালাম বানিয়েছেন। যত মানুষ মারা গেছে বা যাবে তার জন্য কালামই দায়ী থাকবেন!! কালাম একটা বাতিল মাল- মউতের ফেরিওয়ালা।তার জীবন থেকে শেখার কিছু নেই !!
ভাইরে,তিনি জ্ঞানী ছিলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার কাছে থেকে শুধু নয় , পৃথিবীর সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষার বিষয় আছে।আর আঞ্চলিক ও বিশ্ব পরাশক্তি হওয়ার জন্য ভারতের ঐসব জিনিস দরকার ছিল, আবুল কালাম না বানালে ঐ জিনিস ভারত অন্য কাউকে দিয়ে ঠিকই বানিয়ে নিত । তবে তাকে আমার ভালো লেগেছে এই কারণে যে, তিনি ব্যক্তি জীবনে অসম্ভব অধ্যাবসায়ী, স্বপ্নবাজ এবং প্রবল মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন। যিনি শুন্য থেকে শীর্ষে উঠেছিলেন। পেশাগতভাবেও তিনি অত্যন্ত সফল একজন মানুষ ছিলেন।নিজেকে আশাবাদী করতে, হতাশা ঝেড়ে ফেলে স্বপ্ন দেখতে তার জীবন, তার বক্তব্য, তার জীবনের গল্প হতে পারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইচ্ছা করলেই তিনি দেশের বাইরে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি দেশেই থেকেছেন। এটা আমাদের মেধাবীদের জন্য একটা উদাহরণ।
একজন নির্লোভ, দেশপ্রেমী, নি:স্বার্থ, কর্মবীর ও অতি সাধারন জীবন যাপনকারি হিসেবে অামি তাকে সম্মান করি।তিনি বলেছেন,স্বপ্ন তা না, যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, বরং স্বপ্ন হল তা-ই, যার জন্য মানুষ ঘুমাতে পারে না',। তিনি আরও বলেছেন,বিজয়ী হওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বিজয়ী হওয়ার দরকার নেই মনে করা। তুমি যখন স্বাভাবিক আর সন্দেহমুক্ত থাকবে, তখনই তুমি ভালো ফলাফল করতে পারবে। তার আত্মজীবনী ‘ উইংস অব ফায়ার ’ এক কথায় অসাধারণ, অনবদ্য – যেন অকল্পনীয় এক রুপকথা। এর প্রতিটি শব্দ আপনাকে শিহরিত করবে !!
আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি, ভারতবাসীকে তাদের এই ক্ষতির জন্য শোক ও সমবেদনা জানাই।
পুনশ্চঃ মানুষের মৌলিক চাহিদা বাদ দিয়ে ভারতের মত আমরা কোন অস্ত্র চাই না। অামাদের কালামদের কাছে আমরা কোন বোমা চাই না। আমরা চাই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসা এবং শিক্ষা। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ,উগ্র জাতীয়তাবাদহীন , জাতপাতহীন অভিন্ন এক মানব সমাজ।
©somewhere in net ltd.