![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রযুক্তিবিদ এবং প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা ।মূলত কাজ করি অনলাইনে,পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ও অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।চাইলেই ইঞ্জিনিয়ারিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পার করে দিতে পারতাম। কিন্তু যাযাবরের জীবন আমাকে টানে খুব। তাই সব ছেড়ে যাযাবরের মতো চষে বেড়াচিছ এক দেশ থেকে আরেক দেশ। আমি যখন যেদেশে আমার স্যুটকেস রাখি সেটাই তখন আমার দেশ,আমার ঘর-বাড়ি।আমি একজন বিশ্ব নাগরিক।এবং কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বেশিদিন থাকি না।।
প্রথমে একটা ক্ষমতাবান দেশের প্রধানমন্ত্রী আর তার অধীনস্ত এক মামুলি কর্মচারীর (ডা.) একটা ঘটনা বলি। ইংল্যান্ড এর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একবার ডাক্তারের অনুমতি না নিয়ে ভিজিটিং আওয়ার এর বাইরে এক রোগী দেখতে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার বলতে গেলে ঝেটিয়ে বের করে দেন তাকে। ডেভিড ক্যামেরন এই ঘটনায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং ব্রিটিশ মিডিয়াও খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই ধুইয়ে দেন।
এবারে আসুন আরেক ঘটনায়। ঢাকা মেডিক্যালে এক রোগী দেখতে গেছেন বাংলাদেশের এক মহিলা সংসদ সদস্য, একা নয় সন্ডা-পন্ডা সহ। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী দেখতে গিয়ে তিনি দলবল নিয়ে হাজির হয়েছেন জরুরি বিভাগে!সারাদিন জনগনের খেদমত করতে গিয়ে ক্লান্ত ছিলেন বোধহয় তাই গিয়েই বসে পড়েছেন সরাসরি ডাক্তারের চেয়ারে। ডাক্তার এসে তাকে উঠতে বলায় বেজায় চটে যান তিনি। তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে অবৈধ সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির মহিলা শাখার সভাপতি এবং মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে ডাক্তার তাকে বলেন পরিচালকের অফিসে গিয়ে বসতে।তাকে কেন চেয়ার ছেড়ে পরিচালকের ঘরে গিয়ে বসতে বলা হলো এতে তার আঁতে ঘা লেগে যায়, সূর্য্যের চেয়ে বালি গরম এই অমোঘ বাক্য সত্যি প্রমাণ করতে আরো বেশি চটে যায় তার চামচার দল। জরুরি বিভাগের নারী ডাক্তারকে সেই সংসদ সদস্যের সামনে তারা তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দেয়।এখানেই শেষ নয়, ক্ষুব্দ হয়ে অনেকে যেমন কুকুর লেলিয়ে দেয়, তেমনি তিনি তার মালিকানাধীন মিডিয়া লেলিয়ে দেন। তিনি তার স্বামীর মালিকানাধীন যমুনা টিভি এবং যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিকদের ডেকে বার্জার কালার ব্যাংকের সবগুলো রং মিশিয়ে একের পর এক সংবাদ বানাতে থাকেন।মালকিনকে খুশি করতে হিংস্র কুকুরের মতোই ডাক্তারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বেতনভুক্ত সাংবাদিক নামধারীরা। মানুষের প্রতিহিংসা কোন পর্যায়ের হতে পারে, মানুষ ক্ষমতার জোরে কতটা নীচে নামলে নিজের করা একটা অন্যায়ের জন্যে ক্ষমা না চেয়ে উল্টো একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একরাশ বানোয়াট অপপ্রচার করতে পারে,ভাবা যায়না!
বাংলাদেশের এই মহিলা্ সাংসদের নাম সালমা্ ইসলাম।আর কর্তব্যরত ডাক্তারটি ছিলেন,নুনজেরুল মোহসেন মীম।ডা: মীম ফরিদপুর মেডিকেল থেকে পাশ করেন। তার সম সাময়িক ডাক্তারা জানান, তিনি অত্যান্ত শান্ত প্রকৃতির মানুষ, আর কাজে অত্যান্ত সুনিপুন। ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এ তার জুড়ি নেই। তার বিরুদ্ধে এমন নেতিবাচক সংবাদে তারাও হতবাক।মিডিয়ার নেতিবাচক সংবাদের কারনে মেয়েটার সামাজিক জীবন তো হুমকির মুখে পড়েছেই, এবার চাকুরিটাও যায় যায়। অলরেডি সিঙ্গাপুর থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম ফোন করে মীমের চাকুরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে দিয়েছেন।মাফিয়াদের একটা নীতি আছে। নিজেদের দলের বা কোয়িালিশনের লোকদের কোন অন্যায়ই অন্যায় না। রিগার্ডলেস অফ ন্যায়-অন্যায়, তাকে প্রটেক্ট করতে হবে। আর বিপক্ষকে খুন করতে হবে।সেজন্য উনি বিদেশে বসে কোন তদন্ত ছাড়াই তার অধীনস্ত কর্মচারী ডাঃ মীমের চাকুরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে দিয়েছেন।ফাসীর আসামীও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান। কিন্তু উনি যে একজন ডাক্তার। তার আবার কিসের অধিকার। তার উপর এমপি সাহেবকে জ্ঞানদানের মত ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ তার। কত বড় সাহস!!
মাননীয় অবৈধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাদের কষ্টের বিনিময়ে ঊন্নয়নের বিলবোর্ডে আম-জনতার মুখ ঢেকে দিচ্ছেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন , WHO র্যাংকিং এ স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির গল্প শুনাচ্ছেন তিনি কি কখনো তাদের অভিযোগগুলো শুনার চেস্টা করেছেন। তার অধিনস্ত সরকারী কর্মকর্তারা যখন কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন,মার খেয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরান অভিভাবক হিসেবে কি তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন? কখনো একবার গিয়ে দেখে আসার তাড়না অনুভব করেন।তাদের কস্ট কি তিনি অনুভব করেন??
আমরা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়ারা যখন মেডিকেলের কাউকে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের গল্প বলি, তারা আফসোস করে বলে, আমাদের আর ক্যাম্পাস !! সত্যিই, যে হাসপাতালে অসুস্থ্য থেকে অথবা রোগীকে দেখতে যেয়েই কিনা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমাদের, সেখানেই তাদের পাঁচ বছরের পড়াশোনা। আমি এমন অনেকের গল্প জানি, যারা কি না লাশ দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।আবার কেউ মাঝরাতে সেই লাশের চেহারা সামনে ভেসে ওঠায় ভয়ে চিৎকার করে কেদেছে! তবুও নিত্যদিন শারিরীক অংগ নিয়ে কাজ করে, হাত দিয়ে ইচ্ছেয় অনিচ্ছেয় সেই মানুষ গুলোকে নাড়াচাড়া করতে হয়। সব ছেড়ে বাড়ি ফিরে খেতে বসেও সে হাতে ভাত মাখানো খাবার আর গলা দিয়ে নামেনা। এ যেনো পড়াশোনা না এক সংগ্রাম।এ রকম শত প্রতিকুলতা অতিক্রম করে একজন ডাক্তার এমবিবিএস পাস করলেও তাকে নামতে হয আরেক সংগ্রামে।নতুন এই সংগ্রামের নাম ইন্টার্নি।
অবৈধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি জানেন একজন ইন্টার্ন ডাক্তার দিনে কতঘন্টা ডিউটি করেন? সরকারি হাসপাতালে একজন ডাক্তার কে কত সময় থাকতে হয়? হিসেব আছে? প্রাত্যাহিক ছুটির দিনগুলোতে কিংবা ঈদের দিন কি হাসপাতাল বনধ থাকে? রোগিরা ছুটিতে যান? নামাযের সময়টাতে কি ইমারজেন্সী বিভাগ বন্ধ থাকে? থাকেনা।
একজন ডাক্তারকে কতদিক সামলাতে হয়? এরকম ও শুনেছি, একজন ডাক্তার ছেলের দাফন ফেলে রেখে ওটিতে এসে ইমারজেন্সী অপারেশন করেছেন ।চিন্তা করুন একজন ডাক্তার যখন একজন মা, যখন তিনি তার আদরের সন্তানকে অন্যের হাতে রেখে আরেকজনের সন্তানকে সুস্থ্য করতে ব্যস্ত, সেটা কি কেবলই টাকার জন্য ? সব সামলিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন বলেই তো আমরা সুস্থ্য থাকি!
মনে পড়ে একবার আমার এক ছোট বোন (ডাঃ) কে দেখতে গিয়েছিলাম, সে প্রথমে বিশ্বাই করেনি, পরে অনেক ক্ষন আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিল,ভাইয়া আমাদের কেউ দেখতে আসে না, সবাই দেখাতে আসে"। তার সেই দীর্ঘশ্বাস এখনো কানে লেগে আছে !!
ডা. মীম যদি কোনো অপরাধ করে থাকে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে।কিন্তু নিজ স্বামীর মালিকানাধীন মিডিয়াকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহারের বিচার করবে কে? মালকিনের লাঠিয়াল হয়ে ওঠা সাংবাদিকদের নৈতিকতা বিহীন মিডিয়া চর্চ্যার বিচার করবে কে? আর অবৈধ সাংসদ সালমা ইসলাম কোন যোগ্যতায় পত্রিকার সম্পাদক হয় সে কথা না হয় নাই বললাম, তিনি অবৈধ সরকারের সাথে আছেন তাই যোগ্য সম্পাদক, মাহমুদুর রহমানের মতো চান্স এডিটর না।অবৈধ সরকার এবং মাননীয় বিচারপতিদের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।
আজ রবিবার ২ আগস্ট বাংলাদেশের কোনো ডাক্তার এক ঘন্টার জন্য তার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসবেন না। রাউন্ডের সময়টা বাদ দিয়ে এই প্রতিবাদটুকু পালন করবেন এই অনুরোধ রইলো। এটা ডাঃ মীমের সম্মানে,আমাদের একজন বোনের সম্মানে, একজন ডাক্তারের ক্ষমতাবানদের হাতে নিগ্রহের প্রতিবাদে। ডাঃ মীমই হোক এই ক্ষমতার লড়াইয়ের শেষ বলি। কিংবা ডাঃ মীমকে দিয়েই শেষ হোক ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার অপব্যবহার।
https://www.facebook.com/jajabor.digital
©somewhere in net ltd.