![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর কোন ঘটনার ফলাফল আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। যদি বলা যেত তাহলে হয়তো পৃথিবী এখন অনেক উন্নত থাকতো। যদি মানুষ ভবিষ্যতবাণী করতে পারতো তাহলে হয়তো আজ তাদের অনুকূলে এসে পড়তো গোটা পৃথিবী।
আনুকুল্যের কথা উঠলো কারণ এখন এমন একটা সময়ে এমন একটা দলের কথে বলবো যারা নিজেদের অনুকূলে সবকিছু পেয়েও হারিয়েছে সম্ভাব্য সব। নিজেদের মাঠ, পরিচিত দর্শক, যেকোন প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার মতো স্কোয়াড পেয়েও কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তারা বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সফলতম দল ব্রাজিল। নিজেদের লোগোর উপরে তারার সংখ্যা ৫টা না থেকে হয়তো ৬টা থাকতো। থাকলোনা এক বিভীষিকার কারণে। '৫০ এর মারাকানা ফাইনালের কারণে।
১৬ জুলাই ১৯৫০। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল। অন্য যেকোন ফাইনাল থেকে এটা বেশ আলাদা ছিলো। ২টা দল না থেকে এতে ছিলো ৪টা দল। অনেকটা গ্রুপ পর্যায় এর মত। নিয়ম একটাই, যে দলের পয়েন্ট বেশী হবে তারাই জিতবে। তথাকথিত সেই ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছিলো স্বাগতিক ব্রাজিল ছাড়াও উরুগুয়ে, স্পেন ও সুইডেন। সাধারণ গ্রুপ পর্বের মতই প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের খেলা হবে। প্রতি খেলায় জয়ীদের পয়েন্ট ২। ড্র করলে ১। এভাবে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারীকেই দেয়া হবে ১৯৫০ বিশ্বকাপ শিরোপা।
ফাইনাল পর্বের প্রথম দুইটি ম্যাচে ব্রাজিল দল তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। প্রথম ম্যাচে সুইডেনকে ৭-০ গোলে হারিয়ে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে স্পেনকে ৬-১ গোলে হারিয়ে ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের ইংগিত জানিয়ে রাখে।
অপরদিকে স্পেনের সাথে ২-২ গোলে ড্র আর সুইডেনের সাথে ৩-২ গোলের কষ্টার্জিত জয় উরুগুয়েকে ৩ পয়েন্ট দিয়ে ২য় স্থানে এনে দেয়। চূড়ান্ত স্বীদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ১৬ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে যারা প্রথম ২ম্যাচে নিজেদের দাপটে ঘরের মাটি গরম করে রেখেছে তাদের বিশ্বকাপ জয় যেন শেষদিনে আনুষ্ঠানিকতা। না হারলেই চ্যাম্পিয়ন।
অবশেষে আসলো সেই মুহুর্ত। কতো ১৬ জুলাই আসলো-গেলো মনে রাখার মত কিছুই ছিলনা। তবে এইবারের জুলাই মাসের ১৬ তারিখ যেন এক অবিস্মরণীয় দিন। রিও ডি জেনিরোতে অবস্থিত মারাকানা স্টেডিয়াম তৈরী হলো মহাকাঙ্খিত ফাইনালের জন্য। তবে সেদিন কেউ কিছু ভাবার আগেই যে একটা রেকর্ড হয়ে যাবে তা কে-ই বা জানতো। সেদিন প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারাকানাতে নিজেদের প্রিয় দলের শিরোপা তোলা দেখার জন্য উপস্থিত ছিলো। যা যেকোন সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণেও বেশী।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলকে তাদের পরিচিত রূপে দেখা যায়। ব্রাজিলকে তাদের আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে আর উরুগুয়েকে তাদের রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতেই দেখা যায় পুরো ম্যাচ জুড়ে। তবে উরুগুয়ে যেন এবার ভালোভাবেই নিজেদের এলাকা রক্ষা করতে পারলো। ফলাফল হিসেবে প্রথমার্ধ ০-০ তে সমাপ্ত হলো।
দ্বিতীয়ার্ধে ৪৭ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রিয়াচ্চা জালে বল জড়িয়ে দর্শকদের আশা আরো একটু বাড়িয়ে দিলো। উরুগুয়ের অধিনায়ক ভ্যারেলা গোলের বিপক্ষে অফসাইডের প্রতিবাদ করতে লাগলো। অবশ্য সেই প্রতিবাদ বৃথাই যায়। ভ্যারেলা বল কুড়িয়ে সেন্টারে নিয়ে এসে তার দলের উদ্দেশ্যে বলল, "Now, it's time for us to win!" অধিনায়কের কথায় নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়ে উরুগুয়ে এটাকিং ফর্মেশনে খেলতে থাকে। এবং সাথেসাথেই ৬৬মিনিটে জুয়ান আলবার্তো শিয়াফিন্নো চমতকার এক গোলে উরুগুয়েককে সমতায় ফেরায়। গোটা টুর্নামেন্টে এই প্রথমবারের মত ব্রাজিলকে ভীত মনে হচ্ছিল। নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার কারণে তারা চরম রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। তবে যাদের কাজ গোলের বন্যায় পৃথিবী ভাসানো তারা কিভাবে গোল প্রতিরোধ করে??? এইজন্যই ম্যাচের যখন মাত্র ১১ মিনিট বাকি তখন আলসিদেস ঘিগিয়া ডান প্রান্ত থেকে জালে বল জড়িয়ে উল্লাসে মেতে উঠে। তবে পুরো মাঠে হয়তো তার সতীর্থরাই উল্লাস করছিলো। ব্রাজিলবাসী তখন শোকে কাতর। শেষ বাশি দেয়া পর্যন্ত স্কোরলাইন একই থাকলো। উরুগুয়ে ২-১ এ জিতে তুলে নিলো বিশ্বকাপ। ব্রাজিলীয়রা যেন দুঃস্বপ্নে বিভোর।
ব্রাজিলিয়ানদের অবস্থা সম্পর্কে একটি উক্তিতে বলা হয়েছে, " The once roaring crowd of 200,000
people stood in disbelief as they were being
'stripped' of a title they had already considered
rightfully theirs." ততকালীন ফিফা'র প্রেসিডেন্ট জুলস রিমেট বলেছিলেন, "The silence was morbid, sometimes too difficult to bear."
তবে ম্যাচশেষে আরো কিছু ট্রাজেডি ঘটে। শোকাহত দর্শকের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেন। অনেক গণমাধ্যম তাদের পরাজয় অস্বীকার করে মিথ্যা প্রচার করতে থাকে। কেউ কেউ অকালে অবসর নেয়। মোটকথা, ব্রাজিলের পরাজয় যেন গোটা দেশটাতে অন্ধকার এনে দিয়েছিলো। কষ্ট দিয়েছিলো পুরো জাতিকে।
আবার সেই মারাকানায় ফিরছে বিশ্বকাপ। ব্রাজিল কি এবার চাপা দিতে পারবে তাদের পুরানো স্মৃতি??? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৪ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল পর্যন্ত।
©somewhere in net ltd.