![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফুটবলের দেশ ইংল্যান্ড। ফুটবলের জন্মও ইংল্যান্ডে। তবে প্রায় অন্য সব খেলার মতই ইংল্যান্ডের জন্য ফুটবল বিশ্বকাপ অনেকদিন অধরা ছিলো। ১৯৬৬ সালে অবশেষে তাদের ভাগ্যে আসে একমাত্র বিশ্বকাপ। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন ইংল্যান্ড এই একবারই বিশ্বকাপ জিতে...তবে এই কাপ জিতার পিছনে যার অবদান রয়ে গেছে তাকে আমরা কয়জনই বা চিনি। চলুন জেনে আসি তার জীবন কাহিনী যা অনেক অত্যাশ্চার্য সব ঘটনা দ্বারা ভরপুর।
স্যার রবার্ট ববি চার্লটন (জন্ম-১১ অক্টোবর ১৯৩৭) ইংল্যান্ডের একজন সাবেক ফুটবলার। তাকে ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ইংল্যান্ড ফুটবল দলের একজন অপরিহার্য অংশ ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন বলে ১৯৬৬ সালে তাকে ব্যালন ডি ওর পুরষ্কার দেয়া হয়। তিনি তার ক্যারিয়ার এর প্রায় সম্পুর্ণ অংশ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর হয়ে খেলেন। এসময়েই আক্রমণাত্মক ভংগী, নিখুঁত পাসিং এবং নিখাদ দূরপাল্লার শট এর জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত হন। তার অসাধারণ শক্তি এবং ফিটনেসের জন্যও খ্যাতি লাভ করেন। তার বড় ভাই জ্যাকও কাপজয়ী দলে ছিলেন। উনি লিডস ইউনাইটেড এর সাবেক ডিফেন্ডার এবং আন্তর্জাতিক ম্যানেজার।
স্যার ববি চার্লটন এশিংটন, নর্থাম্বারল্যান্ড এ জন্মগ্রহণ করেন। ম্যান ইউ এর হয়ে তার অভিষেক হয় ১৯৫৬ সালে। ২সিজনের মধ্যেই তিনি দলের নিয়মিত অংশ হয়ে যান। তিনি সুপরিচিত বাসবি বেবস এর অংশ ছিলেন। Munich air disaster এ তিনি প্রথম উদ্ধারকৃত যাত্রী । তাকে তৎকালীন গোলকিপার হ্যারি গ্রেগস উদ্ধার করেন। ১৯৬৫ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে Football League জিততে সহায়তা করার পর ১৯৬৬ সালে তিনি World cup medal অর্জন করেন এবং পরবর্তী বছরেই আরেকটি Football League জয় করেন। ১৯৬৮ সালে তার অধীনেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড European Cup জয় করে। ফাইনালে তিনি ২টি গোল করে তার দলকে সর্বপ্রথম ইংলিশ দল হিসেবে প্রতিযোগিতা জিতান। রায়ান গিগস এর আগে তিনিই সর্বাধিক ম্যাচ খেলে রেকর্ড গড়েছিলেন। তিনি ৪টি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন(১৯৫৮,১৯৬২,১৯৬৬ এবং ১৯৭০)। এর মধ্যে ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করেন। তিনি সর্বাধিকবার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। পরবর্তীতে অবশ্য জেরার্ড, বেকহাম, কোল এই রেকর্ড ভাঙেন।
তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে অবসর নিয়ে ১৯৭৩-৭৪ সিজনে Preston North End এর ম্যানেজার হন। উল্লেখ্য, তিনি খেলোয়াড় থেকে সরাসরী ম্যানেজার পদপ্রাপ্ত হন। অতঃপর তিনি উইগান অ্যাথলেটিক এর ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হন। সেখান থেকে তিনি তার প্রিয় ক্লাব ম্যানচেস্টারে ফিরে গিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বোর্ড অফ ডিরেক্টর এর সদস্য হন এবং এখনো পর্যন্ত কর্মরত আছেন।
তার খেলোয়াড় জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় Munich Air Disaster। ১৯৫৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী বেলা ৩:০৪ মিনিটে ঘটে যাওয়া এই দূর্ঘটনায় তৎকালীন ম্যানচেস্টার ইউনাটেড দলের প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেন। স্যার ববিই প্রথম উদ্ধারকৃত জীবিত যাত্রী ছিলেন। যেই উড়োজাহাজটি তাদের 'যেমুন' এয়ারপোর্ট থেকে রওনা হয়েছিলো মিউনিখে এসে সেটি রিফুয়েলিং এর জন্য অবতরণ করে। যেকোন সময়ের থেকে খারাপ আবহাওয়া সেদিন সবার মনেই আতংক এনে দিয়েছিলো। যাই হোক, তেল গ্রহণ শেষে সকল যাত্রীকেই আবার বিমানে উঠতে আমন্ত্রন করে হলো। ইউনাইটেড এর দলটিও ফিরে আসে বিমানে। তবে উড়োজাহাজটি 'টেক-অফ' করার কিছুক্ষন পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
২য় বারের চেষ্টাতেও ব্যর্থ হওয়ায় পাইলট বিমানটিকে এয়ারপোর্টে ফিরিয়ে এনে যান্ত্রিক জটিলতা খতিয়ে দেখতে বাধ্য হন। যাত্রীদের সাথে গোটা টীমকেই আবার টার্মিনালে ফিরে যেতে হয়। তবে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আবার বিমানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান আসায় যাত্রীদের অনেকেই শঙ্কিত হয়। বিমানে ফিরে যাওয়ার পর শঙ্কার কারণে স্যার চার্লটন বিমানের সামনের অংশে বসেন এবং একই কারণে তার সতীর্থ Tommy Taylor ও David Pegg নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে পিছনের দিকে চলে যান। কে জানতো এই ইচ্ছাই কেড়ে নিবে তাদের জীবন............
বিমানটি যাত্রা শুরু করার সাথে সাথেই শুরু হয় বিপত্তি। রানওয়ে তে লেগে থাকা বরফের আস্তরণে বিমানে চাকা আটকে জেতে থাকে এবং ক্ষণে ক্ষণে পিছলিয়ে যেতে থাকে। রানওয়ের শেষে থাকা বেড়ার সাথে বিমানের লেজ ধাক্কা খায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি কাছাকাছি থাকা বসতবাড়ির ভিতর দিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে বিমানটি মাঝ বরাবর বিভক্ত হয়ে যায়।
চার্লটন তার নিজের সিটে বেল্টবদ্ধ অবস্থায় আটকা পড়েছিলেন। হ্যারি গ্রেগ যিনি গোলকিপার ছিলেন কোনভাবে বিমান থেকে বের হতে সক্ষম হন এবং একক চেষ্টায় উদ্ধার অভিযান চালাতে শুরু করেন, ববিকে খুজে পান। গ্রেগ তাকে মৃত মনে করে চেয়ার সহ তাকে বিমান থেকে দূরে সরিয়ে আনেন এই ভয়ে যে বিমানটি ফেটে যাবে। তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় তাকে মিউনিখ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে (১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৮) তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে এসে তার পরিবারের সাথে বসবাস করতে থাকেন। তিনি পাড়ার পিচ্চিদের সাথে খেলায় মশগুল হন। সেই খেলার একটি বিখ্যাত ছবি তোলা হয়। তার বয়স তখন মাত্র ২০ বছর থাকায় তার প্রতি অনেক আশা ছিল যে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নতুন ভাবে সাজাতে সাহায্য করবেন। তিনি ১লা মার্চে আবার খেলায় ফিরেন। ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিওন এর সাথে এফএ কাপের ওই ম্যাচ টাই হলেও ফিরতি ম্যাচ এ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১-০ তে জয় লাভ করে।
আশাতীত ভাবে, মিলানের সাথে ৫-২ গোলে হারাতে ইউনাইটেড European Cup থেকে ছিটকে যায়। তবুও কোনভাবে তারা টানা ২য় বারের মত এফএ কাপ ফাইনালে উঠতে পারে। ওয়েম্বলি সেদিন স্যার বাসবি'র প্রত্যাগমন দেখলেও নতুন ইউনাইটেডকে জিততে দেখেনি। ম্যান ইউ বলটন ওয়ান্ডারার্স এর কাছে ২-০ তে হেরে যায়।
১৯৭৩ সালে তিনি পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নিলেও থেকে যান ফুটবলের মধ্যেই। Preston North End এর ম্যানেজার, Wigan Athletic এর ডিরেক্টর এবং প্রিয় ক্লাব Manchester United এর Board of Directors এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে নিয়োজিত হন। এখনো পর্যন্ত তিনি Manchester United এর Board of Directors এর সদস্য।
২০১১ সালে বাসবি বেবস এবং মিউনিখ এয়ার ডিজাস্টার কে কেন্দ্র করে United নামক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এ চলচ্চিত্রে Jack O'Connell স্যার চার্লটনের ভুমিকায় অভিনয় করেন।
২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪৮
নীড় খুঁজি বলেছেন: স্যার রবার্ট ববি চার্লটন এর নাম আগে শুনি নাই কখনও।
অসাধারণ লিখেছেন।ভাল লাগল...
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮
স্লিপওয়াকিং সাদমান বলেছেন: ফার্স্ট পোস্ট টা না??? ★
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৫
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভালো লাগলো , শুভেচ্ছা ভাই ।