নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হব সকাল বেলার পাখি

দিব্যেন্দু দ্বীপ

সংশয়ে সংকল্প সদা টলে

দিব্যেন্দু দ্বীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবু সেই দিনগুলোই ভাল ছিল

১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৫

ছোট বেলায় আমার ভবিষ্যতের জন্য কোন স্বপ্ন ছিল না, কোন লক্ষ্যও ছিল। তবে প্রতিদিনের কিছু ইচ্ছে ছিল, কিছু ইচ্ছে ছিল মৌসুমি। যেমন, জৈষ্ঠ মাসের ইচ্ছেটা ছিল- দিদিমার আগে ঘুম থেকে উঠে সবচেয়ে টেস্টি আম গাছ তলায় পৌঁছে আমটি (ঐ গাছ থেকে প্রতিদিন একটি আমা তলায় পড়ত) কুড়িয়ে নেওয়া। বর্ষাকালের ইচ্ছেটা ছিল- সবাইকে ভুং চুং বুঝিয়ে ঠাকুর বাড়ি ক্রাম খেলতে যাওয়া। সুবিধা ছিল- তেমন কাউকে কিছু বোঝাতে হত না। শাসন বলতে- এক মামা রাতে একবার পড়তে বসতে বলত। সারাদিন মুক্তই থাকতাম। আরেকটা সুবিধা ছিল- পড়াশুনা করতাম না, পারতাম নাও কিছু, কিন্তু কেন জানি টিচারদের কাছে ‘ভাল ছাত্র’ হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। এর একটি কারণ ছিল- কিছু চমক। যেমন, আমি প্রতি ক্লাসে উপপাদ্য এবং সম্পাদ্যের একস্ট্রা বানিয়ে লিখে মার্কস পেয়েছি। এরকম কিছু চমক থাকত। ইংরেজি ভাল পারতাম না, কিন্তু যতটুকু পারতাম তা দিয়েই প্যারাগ্রাফ/রচনা বানিয়ে লিখতে পারতাম। মার্কস্ও খুব কম পেতাম না, মানে ফেলটেল করতাম না। গ্রামের স্কুলে একটা চলনসই অবস্থা। ক্লাস এইটে পড়ি তখন, একটা উপাদ্যের ‘একস্ট্রা’ এসেছিল বৃত্ত থেকে। আমি বিষয়টা যুক্ত তর্ক দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। পুরো কাজটা করেছিলাম লিখে, কোন a b c d ছিল না। কালিপদ স্যার নম্বর দিয়েছিলেন। কেন নম্বর দিয়েছিলেন, সেটি ক্লাসে ব্যাখ্যাও করেছিলেন। কোন সাবজেক্টেই খুব বেশি নম্বর পেতাম না, কিন্তু ওরকম কিছু চমক থাকাতে স্যারেরা মন্দ ছাত্র ভাবতে পারতেন না, আবার রেজাল্ট ভাল না হওয়াতে ভাল ছাত্রও বলতে পারতেন না। এক্ট্রাকারিকুলামও ছিল। একবারও তো কবিতা অাবৃত্তি করে ফাস্ট হলাম, একইসাথে সমালোচিতও হলাম। কারণ, কবির নাম ভুল বলেছিলাম। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি আবৃত্তি করতে গিয়ে কবির নাম বলেছিলাম- কাজী নজরুল ইসলাম। বিচারকগণ বিষয়টি খেয়াল করেননি। এভাবে ধিরে ধিরে বড় হয়েছি শুধু, কিন্তু কোনদিন কিছু হতে চাইনি।
ক্লাস নাইনে ওঠার পরেই দাবা খেলায় পেয়ে বসল। বাইরে যেতে হত না। মামাদের বাড়িতেই দাবার আড্ডা শুরু হয়ে গেল। গেমের পরে গেম, একেবারে সারাদিন। এভাবে একটা বছর একেবারে সারেখারে গেল। আমাদের উল্লাসের সাথে এক মামা যোগ দেওয়ায় আমাদের পায়াও খুব ভারি হল। বাড়িতে একটা ক্রাম বোর্ডও কেনা হল। পড়াশুনা একেবারে গোল্লায় গেল। মাঝেমাঝে দিদিমা বকা দিতেন, কিন্তু উনি স্কুল থেকে ফিরে, বাড়ির কাজবাজ করে এত বেশি ক্লান্ত থাকতেন যে, আমাদের শাসন করার শক্তি আর তার থাকত না, তাছাড়া ওনাকে খুব বেশি ভয় পাওয়ার মত কিছু উনি করতেন না। শান্ত স্বভাবের মহিলা উনি।
বর্ষাকালে আরেকটা ইচ্ছে খুব হত। স্কুলের বড় মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলতে ইচ্ছে করত। কিন্তু আমি বাইশ জনের মধ্যে চান্স পেতাম না। কারণটা সংগতই ছিল। ছোটবেলায় আমি খুবই দুর্বল ছিলাম। ফুটবল নিয়ে দৌঁড়ানোর শক্তি আমার ছিল না। তারপরও খেলতে ইচ্ছে করত। মাঝে মাঝে সুযোগ পেতামও। আমি যে দলে থাকতাম তারা আমাকে গোণায় না ধরেই খেলত। আমি অপমান বোধ করতাম। তো, একটা ফন্দি এঁটেছিলাম- কোন দৌঁড়াদৌঁড়ি করব না। গোলের আশেপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। সুযোগ পেলেই গোল দিয়ে দেব। এতে হল আরেক বিপদ। প্রায়ই আমি অফসাইডে চলে যেতাম। ফলে দলে চান্স পাওয়ার সুযোগ আরো সংকুচিত হল।
খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলাম। পড়াশুনায় সুনাম নেই। খেলাধুলা ভাল পারি না, সবার ঘুড়ি আকাশে ‍ওড়ে, কিন্তু আমি ঘুড়ি বানালে সেটি আকাশে ওড়ে না। একটু উঠেই তেড়াব্যাকা হয়ে পড়ে যায়। নিজের প্রতি অনাস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সত্যি কথা বলতে- আমি ছিলাম ‘গুড ফর নাথিং’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.