নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার শেষ অস্ত্র

তুমি স্বপ্ন যখন দেখ, আমি দুঃস্বপ্নের কবি তুমি আশায় বাঁধো বুক, আমি নৈরাশ্যে ডুবি সব মৃত্যু ছায়ার ছবি, যা চতুর্দিকে দেখি সে দৃশ্যকল্পের প্রতিচ্ছবি শব্দ দিয়ে আঁকি ।

ডিজাস্টার

Dreams and reality I deal with both. One is a psycho the other is a rouge. Dreams take my soul reality get my body. I'm turned into a robot, my footprints are bloody....

ডিজাস্টার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্যের মাঝে বন্দী [[ সাই ফাই ছোট গল্প ]]

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

এক

>>>>>>>>>>>>>>



“এটা সায়েন্স ফিকশন প্রফেসর, সায়েন্স নয়!”

বিরক্তির

চরম সীমায় থেকে কথাটা বললেন ডক্টর জাবের আল রাইয়ান । জাতে আরব । ওয়েইন

এন্টারপ্রাইজ এর এটমিক এন্ড এনার্জি রিসার্চ উইং এর ডিরেক্টর । তাঁর সামনে বসে আছে

( ডিরেক্টরের ভাষায় সময় নষ্ট করছে ) বাংলাদেশী প্রফেসর ঈসা মুহাম্মাদ । লোকটা এমআইটিতে দশ বছর ছিলো, না হলে

এতক্ষনে চেম্বার থেকে তো বটেই, কোম্পানি থেকেই হয়ত বের করে দিতেন ডক্টর জাবের ।

প্রফেসর অবশ্য শান্তই থাকলেন ।



- দয়া

করে আইডিয়াটা শুনুন মিস্টার ডিরেক্টর । ওয়ার্ম হোল বলতে আমি টাইম ট্রাভেল করার সুড়ঙ্গ বুঝাচ্ছি না । আমি বলছি স্পেস,

মানে স্থানের মধ্যে ফুটো ।

- কথা তো

একই হল তাই না? আপনি দশ আলোকবর্ষ দূরে একটা ফুটো করলেন, সেখানে যাই আদান প্রদান

করেন না কেন, আপনার সাপেক্ষে সেই জায়গার সময়...

- প্লিজ

ডক্টর! থিয়োরী অফ রিলেটেভিটি সম্পর্কিত যাবতীয় প্যারাডক্স আমরা ছয় মাস আগেই সুয়ারেজে ঢেলে

দিয়েছি ।

- ওকে,

তাহলে এক কথায় বলেন, আপনি আর আপনার টিম আসলে চাইছেনটা কি?

- আমরা

কিছু পাঠাব না । স্পেসে যে ফুটোটা করা

হবে, তা দিয়ে উলটো কিছু প্রোটন ইলেক্ট্রন, নিদেনপক্ষে কিছু এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি

টেনে আনব । এক্সপেরিমেন্ট সফল

হলে কোম্পানি কিছু হাইপার স্পেস রিসিভার তৈরি করতে পারবে যাতে সৌরজগতের শেষ সীমা

থেকে অন্তত আমাদের স্যাটেলাইটের পাঠানো ডাটা আলো আসার আগেই পাওয়া যায় । আমরা শুধু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এর গতির সমস্যা সমাধান

করে সত্যিকারের ‘লাইভ’ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে চাইছি ।

- ভাল,

কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে শুধু রিসিভার কেন? ট্রান্সমিটার এ কোন ঠাটাটা পড়ল ?

- ট্রান্সমিটার

অপচয় । রিসিভারে আমরা ট্রান্সমিটার বা স্যাটেলাইট নেই এমন জায়গা থেকেও তথ্য পাবো,

যেমন ধরেন আলফা সেঞ্চুরি । হাবল আমাদের যেই মহাবিশ্ব দেখায় সেটা কয়েক হাজার বছরের পুরানো । আমরা

রিসিভারটা বানাতে পারলে মহাবিশ্বের বর্তমান চেহারাটা দেখতে পারব আশা করি ।

- বেশ ।

তো পরীক্ষাটা করুন আর তারপর রিপোর্টটা একটা ফাইলে ঢুকিয়ে আমার ডেস্কে দিয়ে যান ।

আগেই কেচ্ছা শুনাতে এলেন কেন?

- কারণ

স্পেসে ফুটো করা, সত্যি যদি করে ফেলে আমার ছেলেরা আরকি, একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার । কি ঘটবে আমরা জানি

না । প্রায় ডজন খানেক বিপদের ঝুঁকি থাকবে, কোনটাই ফেলনা নয় । তাই এক্সপেরিমেন্টটা পৃথিবীতে না, বরং খাটি

স্পেসে, মানে মহাশূন্যে করতে চাই আমরা । এই ব্যাপারে ডক্টর জাবের, ব্যবস্থা

আপনাকেই নিতে হবে । সময়

দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ ।



হতবুদ্ধি

ডিরেক্টরের চোখের সামনে থেকে উঠে দরজা খুলে নির্বিকার ভাবে বেরিয়ে গেলেন প্রফেসর

ঈসা মুহাম্মাদ ।







দুই

>>>>>>>>>>>>>>>>>>



বেস ক্যাম্প ‘লুনা

এম’



অবস্থান মঙ্গলের বাইরের দিকের একটা

অরবিটে ।

বেস ক্যাম্পটা আসলে মঙ্গল

গ্রহের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ । অবশ্যই মানব নির্মিত এবং মনুষ্যবাহী । ক্যাম্প

কমান্ডার কাইল জরডান । লুনা এম এ কর্মরত ডক্টর জাবের, প্রফেসর ঈসা আর তাদের দলবলকে

দেখে হঠাত কাইল জরডানের মনে হল সে এতদিনে ইংরেজী ‘লুনাটিক’

শব্দটাকে ঠিকমত উপলব্ধি করতে পারছে । কি একটা ওয়ার্ম হোল

বানানোর জন্য এইরকম একটা মানুষবাহী স্যাটেলাইট । পৃথিবীর

নিরাপত্তা বলে কথা! ভাবটা এমন, মঙ্গল দরকারে জাহান্নামে যাক ।



ঘড়ি দেখল কাইল । আর

দশ মিনিট । তারপরেই সেই পরীক্ষা শুরু যার জন্য এত আয়োজন ।

বিশাল আকারের তিনটা জেনারেটর শূন্যে

ভেসে আছে পরস্পরের সমান্তরালে, একটা বিশাল ত্রিভূজ তৈরি

করে । তিনটাই লুনা এম থেকে সমান দূরত্বে । পুরোটা মিলে

যেন একটা মোচা তৈরি হয়েছে মঙ্গলের অরবিটে ।

ঈসা মুহাম্মাদ তাকালেন জাবের আল রাইয়ানের দিকে । ছোট করে মাথা ঝাঁকিয়ে সায়

দিলেন জাবের । সুইচ চাপ দিলেন ঈসা ।



খালি চোখে কিছু দেখা

যাচ্ছে না । কিন্তু কমান্ডার জরডান ঠিক তার সামনের স্ক্রীনে দেখতে পাচ্ছে তিন

জেনারেটরে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সমূহ । বিজ্ঞানীরাও দেখছে যার যার স্ক্রীনে ।

তিন জেনারেটরের মাঝ দিয়ে পেছনে, অনেক দূরে অবশ্যই, শনির সবচে’

বিখ্যাত সন্তান টাইটানকে দেখা যাচ্ছে । হঠাত একটা ত্রিভূজ সাদা স্ক্রীন তৈরি হল

শূন্যে । তিন কোনায় ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের তিন জেনারেটর । হঠাত করেই আবার সাদা

স্ক্রীন গায়েব । তারার রাজ্য আবার ফিরে এল । কিন্তু এবার সেখানে টাইটান নেই ।

অ্যাস্ট্রোনট হিসেবে তারা ভালই চেনে কমান্ডার কাইল

জরডান । কিন্তু সামনে এখন যেই তারার রাজ্য - স্টার ফিল্ড দেখা যাচ্ছে সেটার কোন

নাম বা চিত্র সম্ভবত গ্রীকরাও দেয়নি, আর আরব নাবিকরাও

এই স্টারফিল্ড কোনদিন দেখেনি । এ মহাবিশ্বের এমন কোন অংশ যা মানবজাতির সম্পূর্ণ

অচেনা । কেমন যেন একটা ঘোর আর জয়ের আনন্দ আচ্ছন্ন করে

ফেলল কাইলকে । এর মাঝেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ধরতে পারল কিছু একটা গন্ডগোল আছে

চিত্রটায় ।

কিন্তু কী?

তারা গুলো কি একটা অদৃশ্য কেন্দ্রকে

লক্ষ্য করে ঘুরছে?

এমন সময় একটা জেনারেটর হঠাত বিস্ফোরিত

হল । বায়ু শূন্য মহাকাশে কোন শব্দ বা আগুন অনুপস্থিত

। তবু কেপে উঠল কাইল জরডান । কারণ অন্য । এর ভিতরেই গায়েব হয়ে গেছে সেই অচেনা স্টারফিল্ড ।

লাফ দিয়ে উঠল কমান্ডার কাইল । মানে

কৃত্রিম গ্র্যাভিটিতে যতটুকু লাফানো যায় আরকি । ছুটল সে ঈসা মুহাম্মাদের কনসোলের

দিকে । চেচিয়ে উঠল দৌড়াতে দৌড়াতেই - “ডপলার

বিশ্লেষণ!! জলদি! এক্ষুনি!”







তিন

>>>>>>>>>>>>>>>>



মস্কো ।

এসোসিয়েশন অফ সায়েন্টিফিক ইন্সটিটিউটস

এর জরুরী সভা । সভাপতিত্ব করছেন প্রাক্তন কসমোনট এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির

চেয়ারম্যান আন্দ্রেই লিওনভ মাইকেলোভিচ । তাঁর ইশারায় ডায়াসে উঠে দাঁড়ালেন ডক্টর

জাবের আল রাইয়ান । বলা শুরু করলেন,



“ভূমিকা

দেব না । কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেও যাব না । সে সব

কিছুই এখন অপ্রয়োজনীয় । গত মাসে আমাদের কোম্পানির চালানো এক্সপেরিমেন্টটা ব্যর্থ

হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে আমরা কিছু ডাটা পাই ।”



অডিটরিয়ামের প্রজেক্টরে সেই ত্রিভুজ

স্ক্রীন তথা ঈসা মুহাম্মাদের করা স্পেসের ফুটোর ভিডিও

দেখা গেল । সবাই তাকাল সে দিকে, চেয়ারম্যান মাইকেলোভিচ ছাড়া । তিনি একদৃষ্টে

তাকিয়ে আছেন জাবের আল রাইয়ানের দিকে । জাবের বলছেন,





আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনট কমান্ডার কাইল জরডান প্রথম আবিষ্কার করেন যে তারাগুলি একটা

অদৃশ্য কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে । ডপলার বিশ্লেষণে ধরা পরে যে তারাগুলি, যারা আসলে অনেকেই ক্লাস্টার, একটা ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে

ঘুরছে । ভাল করে বললে এরা ব্ল্যাক হোলে পড়ে যাচ্ছে । তারাগুলি যদি মারবেল হয় তাহলে

ব্ল্যাক হোলটা একটা ফুটবল । এতবড় ব্ল্যাক হোল আমরা

কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি । কথা হল যত পদার্থ এতে

ঢুকছে, তত এর শক্তি বাড়ছে । আবার যত এর শক্তি বাড়ছে তত এটা পদার্থ গিলছে । চলছে

চেইন রিয়েকশন । সঙ্গত কারণেই এর ডাকনাম রেখেছি আমরা দ্য গ্রেট হোল । আমাদের ধারণা

সম্ভবত বেশ কয়টি ব্ল্যাক হোল পর্যন্ত হজম করেছে এই কালো দানব । এর আনুমানিক

অবস্থান আমাদের পাশের কোন একটা ক্লাস্টারে । আর এই হারে গিলতে থাকলে আমাদের

গ্যালাক্সি, আবার বলছি, গ্রহ বা সৌরজগৎ নয়, এই গ্যলাক্সি কেও খেয়ে নেবে এই গ্রেট

হোল । আমাদের হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ এক শতাব্দী ।”



“এক

মিনিট ডক্টর”,

বললেন চেয়ারম্যান আন্দ্রেই লিওনভ মাইকেলোভিচ, “ আমরা কি অন্য

গ্রহে বা অন্য গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপন করতে পারি না এই সময়ের ভিতর ?”

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে এক এক করে সবার

দিকে তাকালেন ডক্টর জাবের । বাকিরাও তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে , উত্তরের অপেক্ষায় ।

একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন জাবের । তারপর বললেন,

“পারি

না । কারণ আমাদের এই মহাবিশ্বটাই ঢুকে যাবে ওই গ্রেট

ব্ল্যাক হোলে । আমরা মহাবিশ্বের প্রকৃত সীমানা জানি না তাই নিশ্চিত নই । কিন্তু

সময়টা যাই হোক, খুব বেশি নয় ।”



আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন আন্দ্রেই

লিওনভ মাইকেলোভিচ । মানবজাতি সমসময় ভেবেছে পৃথিবীর কিছু হলে তারা মঙ্গলে চলে যাবে

। সূর্যটা নোভা হয়ে গেলে আবাস খুজে নেবে অন্য তারায় । কিন্তু

কখনো ভাবে নি, এই মহাবিশ্বটাই যদি না থাকে তাহলে তারা কোথায় যাবে ?



:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

গল্পটা আমার লেখা । প্রথম ফেসবুকে নোট হিসেবে - April 17, 2014 at 7:49pm

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.