নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার শেষ অস্ত্র

তুমি স্বপ্ন যখন দেখ, আমি দুঃস্বপ্নের কবি তুমি আশায় বাঁধো বুক, আমি নৈরাশ্যে ডুবি সব মৃত্যু ছায়ার ছবি, যা চতুর্দিকে দেখি সে দৃশ্যকল্পের প্রতিচ্ছবি শব্দ দিয়ে আঁকি ।

ডিজাস্টার

Dreams and reality I deal with both. One is a psycho the other is a rouge. Dreams take my soul reality get my body. I'm turned into a robot, my footprints are bloody....

ডিজাস্টার › বিস্তারিত পোস্টঃ

যোদ্ধা [[সাই ফাই]]

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৩

পাতা গুলো ঝরে যাচ্ছিল এক একঘেয়ে ছন্দে । প্রায় নিঃশব্দে । মৃদু মচ মচ আওয়াজ ।

একা আমি দাড়িয়ে আছি বনের শেষ প্রান্তে , পাহাড়ের ঠিক কিনারায় । মনে হচ্ছিল নুবিয়া’র কথা । আগে আমরা প্রায়ই হেটে হেটে আসতাম এখানে । অনেক কথা হত আমাদের । বেশিরভাগ কথাই অপ্রয়োজনীয় । কিন্তু অনেক ভাল লাগত । এসবই যুদ্ধের আগের কথা ।



মাত্র এক বছরের ভিতর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেল ।



সব কিছু আবার আগের মত হয়ে গেছে , হয়ত আসলে আগের চাইতেও ভাল । তবে তা কারো কারো কাছে । আমার কাছে আগের সময়টাই ভাল ছিল । তবে এটা আসলে স্বার্থপর চিন্তা ভাবনা । আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে যেই যুদ্ধটায় আমরা জিতেছি সেটা আমাদের সবার জন্যেই ভাল । কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা আমার মত নীতিবান যোদ্ধাকেও কাপুরুষ আর স্বার্থপর বানিয়ে দেয় । নুবিয়া’র ব্যাপারটা আমার জন্য ঠিক সেই রকম একটা ব্যাপার ।



ঘটনাটা খুব অল্প কথায় বলি , আমার হাতে সময় খুব বেশি নাই ।

প্রাচীন কাল থেকে রোবট নিয়ে মানবজাতি যেই ভয়টা করে এসেছে , সেটাই সত্যি হয়ে উঠেছিল । রোবটদের আমরা মানবিক করে তুলেছিলাম আমাদের নির্দেশ ভালমত আত্মস্থ করার জন্য । তাদের মাঝে বুদ্ধিমত্তা ছাড়াও সংযোজন করা হয়েছিল আবেগ , যেন তারা তাদের মানব প্রভু’র আবেগ কে বুঝতে পারে । তারা দেখতেও ছিল মানুষের মত । সব কিছু করা হয়েছিল আমাদের , মানে মানবজাতি’র কথা ভেবে । কিন্তু কখনো ভাবা হয়নি যে একটা আবেগসম্পন্ন বুদ্ধিমান সত্ত্বা, সে রোবট হলেও, একটা ন্যূনতম সম্মান আশা করে । একটু সহমর্মিতা চায় । হয়ত একটু ভালবাসাও চায় । কিন্তু মানুষ নিজেদের মাঝেই সহমর্মিতা, সম্মান, ভালবাসা সব শেষ করে ফেলে সব সময় । অবশ্য স্বজাতি‘র প্রতি মানুষ আসলে কতটা সহনশীল তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু আমি সেদিকে যাব না । আসল ব্যাপার হল মানুষ রোবট কে একটা যন্ত্র ছাড়া আর কিছু কখনই ভাবতে পারে নি । তাই যা হবার তাই হল । রোবটরা বিদ্রোহ করল । তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হল মানুষকে ।



আমি নিজেও সেই যোদ্ধা দের একজন । গত দশ মাসে কতগুলো রোবট মেরেছি তার হিসাব রাখিনি । একটু ভুল হল । রোবটকে মারা যায় না, তারা তো আর জীবিত নয় । বড়জোর ধ্বংস করা যায় । যেই মানুষ তাদের সৃষ্টি করেছিল , সে মানুষই নিজের হাতে ধ্বংস করেছে তাদের । মানুষ ও মরেছে অনেক । মানুষের রক্ত আর রোবটের গ্রীজ মাখামাখি হয়ে ছিল শহরের পর শহর । আর সেই সময়ই... হায় নুবিয়া !!





নুবিয়া ছিল আমার সবচে আপনজন । আমি ভালবাসতাম তাকে । সেও ছিল আমার জন্য পাগল । আমাকে সবসময় শাসন করত , “এটা কর না - ওটা কর না - ঠিক মত হাট - সুন্দর করে দাড়াও” আরও কত কি ! আমার মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগত । কিন্তু কখনো কিছু বলতাম না, কি জানি! আবার যদি কষ্ট পায়!!

যুদ্ধের একদম প্রথম দিকে, আমি তখনও যাই নি । যাব যাব করছি । তখন শেষ বারের মত আমরা এসেছিলাম এই জায়গায় । অনেক নিচু স্বরে ও বলেছিল, “ জানি তুমি যাবেই । যাও । কিন্তু যদি ফিরে এসে না পাও আমায় তবে একটা কথা জেনে রেখ, আমার ভালবাসা ভান ছিলনা কখনো । আমার ভালবাসা কৃত্রিম নয়।”

আমি জানতাম সেটা ।



আমি তাকে নিরাপদে রেখে যেতে চেয়েছিলাম । এই বনের মাঝেই একটা গোপন পুরনো কেবিন আছে । সেখানে রেখে গিয়েছিলাম ওকে । যাবার আগে বলেছিলাম, “তুমি অপেক্ষা কর । আমি মরব না । শুধু তোমার জন্য বেচে থাকব । দশ বছর পর হলেও ফিরে আসব এখানে, তোমার কাছে, তোমার অকৃত্রিম ভালবাসার কাছে ।” নুবিয়া শুধু হেসেছিল ।



দশ বছর নয় , আমি দশ মাস পরেই ফিরে এসেছি ।

কিন্তু... আমার নুবিয়া... সে এই কেবিনেই ছিল । কোথাও যায় নি । আস্থা রেখেছিল আমার উপর । কিন্তু অন্য মানুষেরা তাকে বাঁচতে দেয় নি । তার একটাই দোষ ছিল ।

সে যে একটা রোবট!

নুবিয়া স্বাধীনতা চায় নি । সে চেয়েছিল সারাটা জীবন আমার অধীন থাকতে । আমিও তাকে ভালবেসেছিলাম রোবট হওয়া সত্তেও । রোবট মেয়েরা মানব মেয়েদের মত স্বার্থপর নয় । তারা শুধু ভালবাসার প্রতিদান দিতেই ভালবাসে । তারা হয়ত কৃত্রিম , কিন্তু আমি জানি আমার নুবিয়া’র ভালবাসা কৃত্রিম ছিলনা ।



মানুষ মারা গেলে তো মৃত্যুর ওপারের জগতে চলে যায় । রোবট রাও কি যায়? আমি জানি না । শুধু জানি নুবিয়া নামে একজন ছিল যে আমার বেচে থাকার সমস্ত অনুপ্রেরণা সাথে করে চলে গেছে । কোথায় গেছে আমি জানি না । কিন্তু যেখানে নুবিয়া একদিন ছিল, এখন নেই, সেখানে আমি কিভাবে থাকি!



পাতাগুলো ঝরছে এখনো । সেই একঘেয়ে মৃদু মচ মচ শব্দ । আমি এগিয়ে গেলাম বনের একেবারে প্রান্তে । এখানে শেষ হয়েছে পাহাড়ের ধার । ওপাশ টা অনেক নিচু, স্পষ্ট দেখা যায় না । আমার পরবর্তী গন্তব্যের মতই অস্পষ্ট ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগল। :)

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:১৪

ডি মুন বলেছেন:
ভাল লাগল রোবটের সাথে ভালবাসার বিয়োগান্তিক পরিণতি।

+++

ভালো থাকুন
শুভেচ্ছা

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার লেখা।

এত কম কমেন্ট পাওয়াটা বিস্ময়কর।

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:০২

ডিজাস্টার বলেছেন: আমি অনিয়মিত , তাই বোধহয় :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.