![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
@লোমহর্ষক ঘটনা ও বন্ধুর অপমৃত্যু@
ঘটনাটি আমার বন্ধুর মুখে শুনা, আমার বন্ধু যেভাবে বর্ণনা করেছে আমি ঠিক সেভাবেই বলতেছি............
কিভাবে লেখাটা শেষ করবো জানিনা তবে এটাই পারতো জীবনটাকে শেষ করে দিতে। কখনো ভুলবোনা। ঘটনাটা ১৯শে মার্চ। সকাল এগারোটা। আমরা সাতটা সাইকেলে রওনা দিলাম উদ্দেশ্য পদ্মাতে গোসল করব ও চরে ফুটবল খেলবো। সাতটা সাইকেলে মোট পনেরটা ফ্রেন্ড। প্রত্যেক সাইকেলে দুজন। আমারটাতে তিনজন। নদীটা শহর থেকে সাত কিলো দুরে। পৌছালাম রাস্তার শেষ প্রান্তে। দুটা দোকানে কেক, সিগারেট, কলা, রুটি যার যা খুশি খেলো। যে বন্ধুটা মারা গেল ও খেল একটা কেক। ও বা আমরা কেউই জানতাম না এটা জীবনের শেষ খাওয়া। পদ্মা পুরো শুকিয়ে গেছে। যে নদীটা বর্ষায় কানায় কানায় পূর্ন থাকে সেটাই এখন সাহারা মরূভুমি। চরের বালুর মাঝে সাইকেলে চড়ে যাওয়া তো দুরে থাক হেটে যাওয়া ও কষ্টকর। সবাই আস্তে আস্তে রওনা হলাম। কেউ সামনে কেউ পেছনে। প্রায় এক কিলো যাওয়ার পর চরের মাঝে কিছু পানি পেলাম একটা বদ্ধ জায়গায়। পানি একটু কম সবাই এখানেই নামতে চাইলাম। তবে আমার দুতিনটা বন্ধু আর যে বন্ধুটা মারা গেছে ওই (রানা) বলল দোস্ত এখানে না সামনে অনেক পানি আছে ওখানেই গোসল দিবো। মৃত্যু যে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা বুঝলে তখনি ব্যাক করতাম। ওদের অনেক গালি দিয়ে ওদের পিছন পিছন সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। রানা সবার সামনে। হাটছি তো হাটছি বালুর মাঝে পানির দেখা পাই না। আমার পাঁচটা বন্ধু একটু পিছে পড়লাম। রানা সহ ওরা দশজন সামনে। ফুটবলটাও ওদের কাছে। প্রায় তিন চার কিলো হাঁটার পর অবশেষে কুষ্টিয়ার বাড়িঘরগুলো দেখা যাচ্ছে। নদীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। ততক্ষনে রানা সহ ওরা পানিতে নেমে গেছে। অবশেষে আমরা পাঁচজন নদীর তীরে পৌছালাম। ততক্ষনে ওরা সবাই পানিতে সাঁতার কাটছে ঝাপাঝাপি করছে। পানিতে বল ছোড়াছুরি করছে। যখন ওদের কাছে পৌছালাম দেখলাম কেউ একজন পানিতে মাথা নিচু করে আছে। মানে পানিতে ডুব দিলে যেমন দেখা যায় আরকি। পিঠটা উপরে ভাসছে আর পা মাথা পানির নিচে। আমি ভাবলাম কেউ পানিতে ডুব দিছে একটু পর উঠবে। খেয়াল করলাম না সবাই তো মজা করতে গেছে। কেউ কারও দিকে খেয়াল নাই। আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছি পানিতে নামার। কেক পানি খেয়ে ধুলোতে পেপার পেরে ব্যাগটা রাখলাম। ঘড়িটা ব্যাগে রেখে পানিতে নামবো। পাঁচ মিনিট হয়েছে ওখানে পৌছানোর। সবাই কথা বলছি। রানা কোন কথা বলছে না। ওকে দেখাও যাচ্ছে না। সবাই ডাকতেছি তবুও কথা শুনেনা। হঠাত্ কে যেন বললো পানিতে ভেসে আছে কে। কে যেন বললো এটাই রানা। তিন চারজন তারাতারি ওকে তুলে নিয়ে আনলো। পাড় থেকে প্রায় পনের হাত দুরে ছিল। তখনো ভাবছি ও ফাজলামো করছে। তবে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমিই ভয় পেয়ে গেলাম। মুখটা নীলচে আর মুখ থেকে লালা বের হচ্ছে। সবাই তো হতবাক।কেউ কাঁদছে কেউ ওর হাত কেউবা পা ডলছে গা গরম রাখার জন্য।রানার কোন হুশ শক্তি কোনটাই নেই। আমি সহ আরো দুজন মুখে ফু দিচ্ছি অনবরত। কেউবা বুকে চাপ দিচ্ছে পানি খেয়ে থাকলে যেন পানিটা বের হয়ে যায়। তবে ওর মুখ থেকে একটি ফোটাও পানি বের হলোনা। তখন প্রায় দুপুর একটা। সবাই প্রায় কান্না শুরু করছে। কি করবো এ মূহুর্তে কেউ বুঝতেছি না। ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে এটা জানি শুধু ওকে বাঁচাতে হবে। কোথায় নেব ছোট নদীর ওপারেই কুষ্টিয়া তবে কিছুই চিনিনা। পাবনাতে নিয়ে আসতে গেলে পাড়ি দিতে হবে পাঁচ কিলো বালির পথ। কি যে করি কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা। একটা ঘোডার গাড়ি পেলাম সেটাতে করেই রানাকে নিয়ে রওনা দিলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ঘোড়ার গাড়িতে জীবনে চড়ি নাই। তার ওপর একটা মানুষকে বয়ে নিয়ে যাওয়া। নিজেকে ঠিক রাখাই মুশকিল। তবে এ মূহুর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে আল্লাহকে ডাকছি। পরনে হাফপ্যান্ট আর শার্ট, আরেক বন্ধু খারি গায়ে আরেকজন সহ যে যে অবস্থায় ছিরাম রানাকে নিয়ে রওনা দিলাম। রাস্তা যেন ফুরোয় না। আব্বুকে ফোন দিলাম। হসপিটালে যেতে বললাম রানার বাসাতে খবর দিতে বললাম। পাকা রাস্তাতে এসে ইন্জিন চারিত ভ্যানে করে ওকে হসপিটালে নিয়ে আসলাম তখন আমি প্রায় সেন্সলেস। ডাক্তার ওকে মৃত ঘোষনা করলো। ততক্ষনে রানার বোন আমার আম্মু আব্বু পৌছে গেছে হাসপাতালে। আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হল। বন্ধুর মৃতদেহকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বাসায় নিয়ে আসল ওর বাড়ীর লোকজন। তখন প্রায় আড়াইটা। আমার বাসার পাশেই নানু বাড়ি। ওখানেই গেলাম। প্রায় পাঁচটায় বাসায় পুলিশ আসলো। সব ঘটনা শুনে আমাকে আর আমার এক বন্ধুকে নিয়ে গেল থানাতে। আমার আব্বুই তুলে দিল। জীবনের প্রথম থানাতে যাচ্ছি। থানাতে পৌছে গেলাম পাঁচ মিনিটে। আমাদের দুজনকে দুটো চেয়ারে বসিয়ে রাখলো আফিসারের রুমে। মনে অনেক ভয়। দুজনকে আলাদা আলাদা ডেকে কয়েকটা রুমে সব ঘটনা শুনল। বলে রাখি একটা টাচ পর্যন্ত করা হয়নি আমাদের। যা সত্যি সেটাই বললাম। কথা শেষে ওসি দুজোনকে অনেক কিছু জেনে বসতে বলল। ভাবলাম আজ রাতটা থানাতেই কাঁটাতে হবে। তবে রাত তিনটাতে মুচলেকা দিয়ে বের করে নিয়ে গেল আব্বু সহ আরো কয়েকজন। পরের দিন আবারো নটায় আসতে বলল। গেলাম সেদিনো রাত বারোটা পর্যন্ত বসে থাকতে হলো। ঘটনাটা আরো অনেকবার বলতে হল। অবশেষে আসলে সত্যের জয় হল বন্ধু হিসেবে ওকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম তবে পারিনি। কেস করার কথা ছিল তবে ওরা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমরা নির্দোষ। তাছারা পুলিশ যে জিনিস কখনোই আমাদের ছারতোনা। বন্ধুর জানাজা পর্যন্ত দিতে পারিনি। বরং অনেক কথা হয়েছে আমরাই মেরে নাকি ফেলেছি। এর চেয়ে লজ্জার কিছু বোধয় নেই। তবে ও যে কিভাবে মারা গেল একমাত্র আল্লাহ আর ওই জানে। জানি জীবনেও দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারবোনা। পরিশেষে শুধু সবাইকে বলবো মৃত বন্ধুটার জন্যে দোয়া করতে সাথে আমাদের জন্যেও।
©somewhere in net ltd.