নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নতমুখ,পাথরের নিচের করুণ বেদনার জল, আমি সেই অভিমান

ফ্রেয়া রুনি

.............

ফ্রেয়া রুনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরা

১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২১







শুন্য দৃষ্টি অবলোকন করা ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার । এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর কাজটা আমাকে করতে হচ্ছে । নাহিদ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । কিন্তু হাসিটা চোখ পর্যন্ত প্রসারিত তো হচ্ছেই না বরং ভয়ঙ্কর রকমের শূন্যতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে নেত্রদয় । এই রকম প্রাণহীন হাসি সহ্য করার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দেন নি। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম ।



অফিস থেকে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে আমার সবসময় মনেহয় অফিসের বাইরে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে । আমি তড়িঘড়ি করে লিফট ধরার চেষ্টা করি । কিন্তু ছুটির সময় চৌদ্দ তলার লিফট ধরার মত প্রায় অসম্ভব কাজ করে বিজয়ী হলেও নীচে নেমে আমি কিছুক্ষন অফিসের সামনের করিডরে দাড়িয়ে থাকি । আশেপাশে চোখ বুলাতে থাকি। জানি না কাকে খুঁজি তবে মনেহয় কেউ না কেউ আমার জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে আছে । অবশেষে কাউকে না পেয়ে নিজে নিজেই হেসে উঠি আর আশেপাশের মানুষের প্রশ্নসূচক দৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ীর পথ ধরি । অভ্যাসবশত আজকেও অফিসের সামনে দারিয়ে আছি । শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদের সাথে হিমেল হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া আমার চুল ঠিক করতে করতে কিছুটা দূরের একটা কালো রঙের টয়োটা কার-এর দিকে আমার দৃষ্টি আটকে গেলো । গাড়ীটা যেমন স্টাইলিশ গাড়ির চালকটাও তেমনি সুদর্শন এবং মার্জিত । ভদ্রলোকের ব্যাক্তিত্বের সাথে গাড়ীটা বেশ মানিয়েছে। মনেমনে প্রশংসাসূচক হিংসা না করে পারলাম না । হিংসাটা আরও বাড়ল যখন উনি ইশারায় আমার দিকে হাত উঁচিয়ে কাউকে অভিবাদন জানালো । আশেপাশে তাকিয়ে আমি দেখার চেষ্টা করলাম কে সেই ব্যাক্তির পরিচিতজন । কিন্তু তেমন কাউকেই দেখতে পেলাম না । মনের মধ্যে হতাশা নিয়ে করিডর ছেড়ে পথে নেমে ওই গাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আড়চোখে তাকাতে ভুল করলাম না । পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্য দেখার অধিকার প্রকৃতি মানুষ কে দিয়েছে। কাছ থেকে ভদ্রলোককে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। " কোথাও দেখেছি দেখেছি" এমন অনুভূতি মনকে আরও হতাশ করে তুলছে। যেন অনেক আগে থেকেই এমন একটা প্রতিচ্ছবির সাথে পরিচিত আমি। আনমনা আমি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনি পেছন থেকে মৃদু একটা ডাক শুনতে পেলাম,

-- এক্সকিউজ মি !!

আমি ঘুরে দাড়িয়ে ভয়ঙ্কর রকমের চমকে গেলাম । ওই সুদর্শন ভদ্রলোক আমাকে ডাকছেন । আমি বিস্মিত হয়ে বোকার মত উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমাকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলল,

--- হাই ! কোথায় চললে ????????

কেউ আমাকে ইলেকট্রিক শক দিল মনেহয় । কণ্ঠটা নাহিদের। মানুষটাও অবশ্যই নাহিদ । কিন্তু নাদুস নুদুস ছেলে এমন সুদর্শন হবে কল্পনাও করি নি । অবশ্য প্রায় দশ বছর পর দেখলাম । কিশোর নাহিদ আর যুবক নাহিদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই স্বাভাবিক ব্যাপারটাই আমাকে বিস্মিত করছে।



ও আবার বলল ," আমাকে চিনতে পেরেছিস ! আমি নাহিদ ।"- বলেই এত চমৎকার স্মিত হাসি দিল যে আমার হৃদয়ের কোন এক গহীন কোনে চিনচিন করে ব্যাথা শুরু হল। ওর হাসিটা আগের চেয়েও আরও নিষ্পাপ তবে নিষ্প্রাণ । এখনও একাকি জীবনে অভ্যস্ত হতে পারে নি পাগলটা । একটা মেয়ে কে ভালবেসেছিল । কিন্তু ওকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে । ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল মেয়েটির শরীরে । দুইজনের বসবাস নিউইয়র্কে হলেও কিছুই জানানোর অথবা জানার আগেই চলে গেলো । এরপর নাহিদ কাউকে না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলো প্রায় দুই বছর হল। কোথায় আছে, কি করছে কেউ জানে না । ছেলের শোকে নাহিদের মা পরপারের পথ ধরেছিলেন বছর দুয়েক হল । মৃত্যুর কিছুদিন আগে দেশে এসেছিলেন । উনার কাছ থেকেই এইসব জেনেছিলাম । অ্যান্টির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী উনার কবর দেয়া হয়েছিল ওদের বাসার বাগানে । নাহিদের রুমের বারান্দা থেকে বাগান দেখা যায় । অ্যান্টির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নাহিদ ফিরে আসবে এবং মা বাসায় নেই বলে মন খারাপ করবে ।



শৈশবে যখন বন্ধুত্বের গুরুত্ব বুঝতাম না তখন থেকেই পাশের বাসার ছেলে নাহিদ আমার সাথী । মুখোমুখি বাড়ির আমাদের মধ্যে কেমন করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা মনে নেই । সকল পাগলামি, ফুল চুরি, গল্পের বই ভাগাভাগি, হোমওয়ার্ক করা, স্কুল পালানো, ঝগড়া করা থেকে মান ভাঙ্গানো পর্যন্ত ইত্যকার কাজের সাথী আমরা । আমাদের দুই পরিবারে আমরা দুইজন বেশ ভালো রকমের সমাদৃত ছিলাম । শৈশব, কৈশোরের সব স্মৃতির বাহক আমরা দুইজনে আলাদা হয়েছিলাম যখন ওর ও-লেভেল পরীক্ষার পর পুরো পরিবার নিউইয়র্ক বসবাসের জন্য চলে যায়। এরপর আমরাও ওই এলাকা ছেড়েছিলাম । এরপর দেশে এলে অবশ্যই দেখা করে যেত আমাদের সাথে । মেইলের দীর্ঘ চিঠি তো ছিলই সব সময় সব কিছু শেয়ার করার জন্য । কিন্তু ২০০৪ এর একটি দুর্ঘটনার কারনে আমার সাথে অভিমান করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল । আমিও চেষ্টা করি নি সেটা ভাবতে ইচ্ছে করছে না এই মুহূর্তে ।



এতগুলো বছর পর আমাকে কেমন করে খুঁজে পেলো সেটা বিস্ময়কর না হলেও ওর এই নিষ্প্রাণ প্রত্যাবর্তন আমাকে কষ্ট দিচ্ছে । ওর মাঝে ওকে আমি খুঁজে পাচ্ছি না । হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে পেলেও সে আর আগের মত থাকেনা ।



(আর লিখতে ইচ্ছে করছে না )



মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মনের গহীনের অব্যক্ত অনুভুতির চমৎকার বহিপ্রকাশ! সুন্দর হয়েছে বর্ণনা শৈলী।

১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং বোঝার জন্য ।

২| ১২ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এইটা একটা কথা বললেন আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা ?

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: আমি দুঃখিত কিন্তু অনুভূতিকে শব্দে প্রকাশ করতে পারি না আমি । এই লেখাটি লিখতে লিখতে আমি থেমে গেছি বহুবার । অনেকদিন আমার ড্রাফ্‌টে ছিল । ভেবেছিলাম আজ হয়তো শেষ করতে পারবো কিন্তু হল না ।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১১

সুমন কর বলেছেন: ভালই লাগছিল, আরো লিখতে পারতেন।

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৬

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: চেষ্টা করবো । ধন্যবাদ ।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩

সোজা কথা বলেছেন: ইশ্! আশির্বাদ করি নাহিদ ভাই যেন আগের মতো হয়ে যায়, উনার হাসিটা যেন প্রাণবন্ত হয়!

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৭

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রার্থনার জন্য ।

৫| ১৩ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩

মিনুল বলেছেন: ভালো লাগল। হ্যা আমি বিশ্বাস করি সময়ের প্রেক্ষাপটে বদলে যায়, তাই বলে কি সবাই?

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: সময় মানুষকে বদলাতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করি না । মানুষ নিজের ইচ্ছেতেই বদলায়, শুধু সময়ের উপর দায় চাপিয়ে দেয় । ধন্যবাদ এমন একটা প্রশ্নের জন্য ।

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:১১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে পেলেও সে আর আগের মত থাকেনা ।

খুব খাঁটি একটা কথা লিখেছেন।

গল্প পড়ে খারাপই লাগছে- নাহিদের জন্যে, আপনার জন্যে , জানা না হয়ে ওঠা ওর না ফেরার দেশের তারা হয়ে যাওয়া প্রেমিকা ও মায়ের জন্যে। ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা রইলো।

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০০

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: এটাইতো জীবন । কষ্টের সাথে প্রতিনিয়ত বসবাস আমাদের, তবুও আমরা ভালো আছি । ধন্যবাদ ।

৭| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: হারিয়ে যাওয়া মানুষ খুজে পেলেও আর আগের মত থাকে না.... চরম সত্য কথা...
লেখা ভাল্লাগছে...

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০১

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: ধন্যবাদ । যদিও কথাটি আমার নয়, হুমায়ূন আহমেদের । আমার জীবনের সাথে মিলে যায় তাই স্মরণ রাখা ।

৮| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

ফুসকা বলেছেন: ভালো লাগল,
বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৩

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: ভেবেছিলাম বাকি অংশ লিখবো না । কিন্তু জীবনে সম্পর্কগুলোর স্বার্থপরতা দেখে মনেহয় এই বন্ধুরাই আপন । তাই এমন বন্ধু নিয়েই থাকা প্রয়োজন । ধন্যবাদ ।

৯| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২২

নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন: খুব সুন্দর
বেশ ভাল লেগেছে
চালিয়ে যান
দোয়া রইল

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৪

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: ধন্যবাদ । :)

১০| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

হাসান মাহমুদ ১২৩৪ বলেছেন: কাহিনী বড় হলে আর সুন্দর হত :)

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

ফ্রেয়া রুনি বলেছেন: কাহিনী হলে নিশ্চয়ই বড় হত ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.