![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এলাকার সাধারন ঘর বাড়ির মতো স্কুলঘরও ছিল টিলার উপর। বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত রাস্তা ছিল বেশ খারাপ। দুই পাশে টিলা তার মধ্যে রাস্তা। টিলার সব গাছ,বাঁশ রাস্তাটাকে দিনের বেলাও অন্ধকার করে দিতো। সাধারনত গ্রুপ বেধেই স্কুলে যেতাম। কখনো একা যেতে হলে বেশ ভয় হতো। মাঝে মাঝে শোনা যেতো ছেলেধরার কথা। ভয়ের মাত্রাটা আরও বেশে যেতো। বাড়ি থেকেই স্কুলের ঘন্টা শোনা যেতো।
গ্রামের স্কুল। কি বা তার সম্পদ। কয়েকটি রুম।তাও আবার বাঁশের বেড়া। এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাস দেখা যেতো।কারো শাস্তি হলে তো খবর হয়ে যেতো। হয়ত শিক্ষক বেত দিয়ে পেটাচ্ছেন অন্য ক্লাসের শিক্ষক সহ সবাই চুপ। বেড়ার ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে আজকে কার উপর ধুলাই হচ্ছে। ছিল না কোন বৈদ্যুতিক বাতি/পাখা। গরমে সাধারনত বাঁশ ঝাড়ের নীচেই হতো ক্লাস।
টিলাটা ছিল মোটামুটি বড়ো। একপাশে স্কুল । অন্যপাশে কিছু লোকের আবাস।ঠিক অন্যপাশের টিলাকে আমরা নাগা টিলা বলতাম এবং এখনো বলা হয়। নাগা শব্দটা কোন জাতি হিসেবে ব্যবহার হতো না।এটা এক রকমের গালি বিশেষ। যারা খুব ময়লা, তাদেরকে নাগা বলা হয়। ঐ টিলার লোকগুলোর জিবিকা ছিল কষাই, পাখি শিকার, বিভিন্ন বিয়ে বাড়িতে বাদ্য যন্ত্র (ঢুল, বাঁশি)বাজানো। টিলার এপার ওপার তাই স্কুলে গেলেই দেখে আসতাম কতো বড়ো গরু আনা হয়েছে জবাই করার জন্য অথবা কি পাশি শিকার করা হয়েছে। অথবা কোন ষাড় দিয়ে পরের সপ্তাহে লাড়াই হবে। বেশির ভাগ সময়েই দেখতাম ডাহুক পাখি। ওদের বউয়েরা বিস্কুট, হজমি, আচার বিক্রি করতো স্কুলের ছাত্রদের কাছে। কতোই বা বিক্রি ছিলো।মাত্র ৭০/৮০ জন ছাত্র-ছাত্রির স্কুল। আর তখন এক টাকা মানে অনেক কিছু। ৫/১০ পয়সার যুগ।এক টাকায় ৪ পিস বিস্কুট। ১০ পেকেট হজমি ।
সবাই বলে বেড়াতো ঐ টিলার পুরুষ লোকগুলো নাকি সব সময় নেশা করে থাকতো। যদিও ওদের মাথায় সব সময় টুপি ছিলো।তখন ভাবতাম হয়তো ব্যবসার জন্য মাথায় টুপি। টিলাটা ছিলো প্রচন্ড নোংরা। তবে আমাদের জন্য সব সমান। কোন নতুন কিছুর খবর পেলেই দে দৌড়।
ওদের সবচে যে জিনিসটা লোকজন খারাপ পেতো তা হচ্ছে ওরা গরু/ছাগলের ভুড়ি খায়।সিলেটের অন্য এলাকার খবর খুব একটা জানি না। তবে আমাদের এলাকায় ভুড়ি কোন ভদ্রলোকে খায় না বলেই প্রচারিত ।আমি আমার কলেজ লাইফ পর্যন্ত কোন বন্ধুকে পাইনি যে কিনা ভুড়ি খায় (এম.সি কলেজে অনেক এলাকার ছেলেরা থাকে। সেই হিসেবে)।ওরা ওদের বাচ্চাদের কোন রকমের যন্তই নিতো না। গরীবের আবার যত্ন কিসের। কিন্ত কিভাবে যেনো ওদের ছেলে-মেয়েগুলো পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো। যেখানে আমাদের লজিং মাস্টার আছে সেখানে ওদের একমাত্র স্কুলের পড়াই ভরসা। তারপরও ওদের রোল ২/৩ এর মধ্যেই ছিলো। ওদের অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে। প্রচন্ড গিন্জি এলাকা। যেখানে এলাকার সবারই এক একটা করে টিলা আছে। কারো বা ২/৩ টা। সেখানে এক টিলাতেই ওদের ৮/১০ ফ্যামেলি।প্রত্যেক ক্লাসেই ওদের ছেলেমেয়ে পড়তো। আমার সাথেও ছিলো এরকম ৪/৫ জন। ২ জন ছিলো আমার বেশ ভালো বন্ধু।একজনের রুল সব সময় ২ নাম্বার। আমাদের বাড়িতে ওর আসা যাওয়া ছিলো মোটামুটি। তবে পড়াশোনার জন্য নয়। আমাদের ছিলো প্রচুর পেয়ারা গাছ। স্কুলে পলিথিন ভর্তি করে ফ্রি ডিষ্ট্রিবিউশন করতাম। আর বন্ধু হলে তো কথাই নেই। যতো খুশি খাও। তবে শর্ত ছিলো পেট ব্যথা করলে আমি জানি না । (আমাদের একেক গাছের পেয়ারা ছিলো একেক রকম মজা।ভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে জীবনে প্রথম লবন দিয়ে পেয়ারা খেয়েছিলাম।বন্ধুরা শুনে তো বিল্লা দেয়। বলি হালার পোতেরা এক বার এসো আমার বাড়িতে পেয়ারা কি জিনিস দেখবে
)।
কার বাড়িতে কখন বাদ্য বাজবে সেটা নাগা টিলার বন্ধুদের কাছ থেকেই আগে খবর পেয়ে যেতাম। হয়ত গিয়ে দেখতাম বন্ধুদের কেউ একজন ঢোল বাজাচ্ছে।তখন আমাদের পায় কে। চান্সে আমরাও একটু ট্রাই মারতাম। তবে ঢোলেই সীমাবদ্ধ ছিলো আমাদের বাদ্য বাজানো। ঐ লম্বা বাঁশি বাজানো প্রচন্ড কষ্ট।
এতো টেলেন্টেড ছেলেমেয়েগুলো হাইস্কুলে উঠেই হারিয়ে যেতো।জীবিকার তাগিদে অথবা শিক্ষা ব্যয়ের জন্য। তবে তখন পর্যন্ত বেতন খুব একটা বেশি ছিলো না। হয়তো প্রপার গাইডের অভাবে হারাতো। প্রাইমারী স্কুল থেকে হাইস্কুলের দুরত্ত খুব বেশি না। এলাকাও ছোট। তাই কে কোন ক্লাসে কি রেজাল্ট করছে তা সহজেই জানা যেতো।ওদের অবস্হা সবাই জানতো। একদিন কথা প্রসঙ্গে এক শিক্ষক একটি উপমা দিলেন। উপমাটা ছিলো- "একটা ভালো জাতের গাছ যদি কখনো কোন আগাছা বা লতাপাতা দ্বারা বেষ্টিত অবস্হায় থাকে এবং গাছটা যদি আগাছাগুলোকে নীচে ফেলে একবার মাথাটা তুলতে পারে তাহলে আগাছাগুলো গাছের নীচেই পড়ে থাকবে। গাছটা সূর্যের আলো পেয়ে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাবে। আর আগাছা যদি একবার গাছের উপর মাথা তুলে তাহলে গাছ আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না"। কথাগুলো তিনি আমার ঐ বন্ধুকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেছিলেন (অনেক স্মৃতিশক্তি(ধরাখাইশু্ত্রঙ্গছ) )। সত্যি সত্যি দেখলাম বন্ধুটা ক্লাস সেভেনেই হারিয়ে গেলো। ক্লাস সেভেনের পর আর দেখা হয়নি। আমরাও তখন উপরের নির্দেশে টাউনের বাসিন্দা হলাম। হোস্টেল জীবন। ৫/৬ মাসে একবার গ্রামে যাওয়া হতো। একবার খোজ নিয়ে জেনেছিলাম কোন এক আরব দেশে আছে।
স্কুলে বেশ ভালো একটা বিল্ডিং হয়েছে।কিন্ত ওদের বাচ্ছাদের কোন উন্নতি হয়নি। আগের মতোই ওরা পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু অল্পদিনেই ঝরে পড়ে।
২| ১৩ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:০১
ঝড়ো হাওয়া বলেছেন: পোষ্ট বড় হলেও ভালো লাগছে। প্রাইমারি স্কুলের কত জন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ আছে ?
৩| ১৩ ই মে, ২০০৭ দুপুর ২:৩৪
আনোয়ার সাদাত শিমুল বলেছেন: চমৎকার লেখা।
প্রাইমারী স্কুলের বন্ধুরা কেন জানি হারিয়ে যায়। অথচ ওদের সাথেই হৃদ্যতা ছিল বেশী। একটা চকলেট কামড়ে কয়েক টুকরো...। আহারে শৈশব, ফিরে আসে না!
৪| ১৩ ই মে, ২০০৭ বিকাল ৩:০৫
ফ্রুলিংক্স বলেছেন: ঝড়ো, কারো সাথেই এখন আর যোগাযোগ নাই (
শিমুল ভাই, সত্যিকারের কঠিন ভালোবাসা ছিলো তখন। আমার মনে আছে তখন একটা বিস্কুট ৪ জনে ভাগ করে খেয়েছি। এখন ভাবলে খুবই অবাক লাগে।তবে মজা পাই।
৫| ১৩ ই মে, ২০০৭ বিকাল ৩:১১
আনোয়ার সাদাত শিমুল বলেছেন: কিছু কিছু সময় হয়তো হারিয়ে যায় সোনালী হওয়ার জন্য, আমাদের স্মৃতিকাতর করার জন্য। আপনার লেখাটি পড়ে অনেক বন্ধুকে মনে পড়ে গেলো। ঠিক বলেছেন - তখনকার ভালোবাসাটাই হয়তো আসল, কোন মোহ ছিল না, জাগতিক দেয়া-নেয়া ছিল না।
আমার নামের শেষে 'ভাই'-টা বাহুল্য। শুধু শিমুল-ই কাম্য।
৬| ১৩ ই মে, ২০০৭ বিকাল ৩:২১
আপন তারিক বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে গেলো।
প্রাইমারী স্কুলের বেশ কয়েকজন বন্ধুকেই মনে পড়ছে।
এইতো গত ইদে গ্রামে গিয়ে দেখাও হলো কয়েকজনের সঙ্গে। কিন্তু মাঝে সময় যেমন গেছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বদলে গেছে সবাই!
৭| ১৩ ই মে, ২০০৭ বিকাল ৪:০০
ফ্রুলিংক্স বলেছেন: শিমুল, সময়টা আসলেই সোনালী ছিলো। স্কুলের টংটয় ঘন্টিটা কে বাজাবে সেইটা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে হাতাহাতি, মাঠে গোল্লাছোট, কখনো মেয়েদের সাথে দড়িলাফে প্রতিযোগিতা। সবই এখন সোনালি স্মৃতি।
আপন তারিক, অনেক বন্ধুর নাম ও মনে নেই। হয়ত পাশের গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটছি। হঠাত একজনের সাথে দেখা। এগিয়ে এসে নাম ধরে জিঞ্জেস করছে কেমন আছি। আমাকে ঠিকই নাম ধরে ডাকছে কিন্তু আমি নাম ভুলে গেছি।লজ্জায় মাথা হেট।ওরা কিন্তু ঠিকই মনে রাখে। আমরা ভুলে যাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:২৪
এই আমি মীরা বলেছেন: