![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের ক্লাসে একজন নতুন ম্যাডাম এসেছেন।
দেখতে অনেক সুন্দরী।টুকটুকে লাল চেহারা।
তবে ম্যাডাম যতটা সুন্দরী তার চেয়ে বেশি
বদমেজাজী। ক্লাসে প্রথমদিনেই তো
আমাদের রামু কে একপায়ে দাঁড়া করিয়ে রাখলেন।
রামুর অপরাধ তেমন কিছু না। ও শুধু একবার ম্যাডামের
দিকে চেয়ে মুচকি হেসেছিল। এতেই ম্যাডাম
প্রচন্ড রেগে গেলেন। আমরা তো সবাই অবাক।
রামু একটু বেশিই দুষ্টু। তবে আজ তো সে
কোন দুষ্টমি করেনি। তাহলে ম্যাডাম রেগে
গেলেন কেন?
.
আমরা পড়ি ক্লাস ফাইভে । স্কুলে সবার বড়।
জুনিয়রদের কাছে আমাদের একটা সম্মান আছে।
কিন্তু ম্যাডাম তো সেই সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে
দিচ্ছেন।জুনিয়ররা তো এখন আমাদের দেখলেই
ভেংচি কাটবে। কানমলা বা দু একটা মাইর খাওয়ার
চেয়ে
এভাবে এক পায়ে দাঁড়া করিয়ে রাখাটা আমাদের
কাছে
বেশি অপমানজনক।
.
রামু পড়ালেখায় যত কাঁচা দুষ্টুমিতে ততই পাকা। তিন
বছর
ধরে সে ফাইভে আছে। কোনবারই পাশ করতে
পারে না। তাই হাইস্কুলের মুখ আর দেখা হয়নি ওর।
.
সেই বিশ মিনিট থেকে রামু এক পায়ে দাঁড়িয়ে
আছে। কিন্তু ম্যাডাম ও কে একবারের জন্যেও
বসতে বলল না। এদিকে ওর পা অবশ হয়ে আসছে।
মনে হয়
একসাথে একশটা মশা কামড়ালেও ও টের পাবে না।
তো এমন অবস্থায় ম্যাডামের দিকে চেয়ে রামু
আবার হাসতে শুরু করল। ওর হাসি দেখে ম্যাডাম
এতটাই রেগে গেলেন যে, ও কে ক্লাস
থেকে বের করে লাল রোদের মধ্যে দাঁড়া
করিয়ে রাখলেন। কিন্তু যখনি ম্যাডাম ক্লাসে
ঢুকলেন, অমনি রামু দিল ভোঁ দৌড়।
.
শুক্রবার ছুটির দিন।তাই রামুর সাথে আর দেখা হল না।
শনিবারের দিন রামুর সাথে ক্লাসে দেখা হল। আমরা
সবাই ও কে চেপে ধরলাম। সেদিনের ঘটনা বলার
জন্য। সেদিন কি দেখে ও হেসেছিল?
সেদিনের কথা মনে হতেই রামু আবার হাসতে শুরু
করল। বললাম, ভাই হাসি বাদ দিয়ে বলনা কি হইছে?
রামু হাসি থামিয়ে বলল , ম্যাডামকে আমি আগে
থেকেই চিনতাম। একদিন কলা খেয়ে খোসা রাস্তায়
ফেলেছিলাম। ম্যাডাম সেই কলার খোসায় পা
পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন। তো ক্লাসে
ম্যাডামকে দেখে আমার সেদিনের ঘটনা মনে
পড়ে যায়। ফলে আর হাসি চেপে রাখতে পারিনি। তাই
মুচকি মুচকি হেসেছিলাম।
.
কিন্তু হঠাৎ আমার চোখে পড়ল ম্যাডামের
ব্লাউজের একটা বোতাম খোলা। এটা দেখে আমি
আর হাসি থামাতে পারলাম না। ম্যাডাম হঠাৎ টের
পেয়ে
যান আমি ওনাকে দেখে হাসতেছি। তারপর নিজের
দিকে তাকিয়ে দেখেন ওনার ব্লাউজের বোতাম
খোলা ।
ম্যাডাম মনে করেছিলেন
আমি ওনাকে ভেংচি কাটছি।তাই উনি রেগে
গিয়েছিলেন।
রামুর কথা শুনে তো আমরা হেসেই খুন ।হাসতে
হাসতে পেটে খিল ধরে গেল।
.
এমন সময় নতুন ম্যাডাম ক্লাসে আসলেন। তিনি
সম্ভবত শেষের কথাগুলো শুনেছিলেন। তিনি
বিকট শব্দে চিৎকার দিলেন। আমাদের হাসি কোথায়
যেন হারিয়ে গেল। আমরা সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে
গেলাম। চেয়ে দেখি রামু ভাঙা জানালা দিয়ে
পালিয়ে
যাচ্ছে।
ম্যাডামের চিৎকারে স্কুল ঘরটা যেন কেঁপে উঠল।
বারান্দায় একটা বিড়াল খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছিল।
সেটা
দৌড়ে পালিয়ে গেল। হেড স্যার পর্যন্ত ছুটে
আসলেন। অন্যান্য স্যারেরাও আসলেন। সবার
মুখে এক কথা, "এই বিকট চিৎকারটা করলো কে?"
ম্যাডাম তো "থ" বনে গেলেন। আমরা প্রচন্ড
ভয়ে তখন ঘামতে শুরু করেছি। হেডস্যার গম্ভীর
মুখে বললেন, সত্যি করে বল্ এই চিৎকার কে
করছিস? না বললে সবকটার হাড্ডি ভেঙ্গে গুঁড়ো
করে ফেলব।
.
হেডস্যারের কথা শুনে আমাদের মাথামোটা কালু
বলল, স্যার নতুন ম্যাডাম এই চিৎকার করেছেন। সে
পুরো ঘটনা স্যারদের বলল। ম্যাডাম তো লজ্জায়
লাল হয়ে গেলেন।স্যারেরা সবাই মুখ টিপে হাসতে
হাসতে চলে গেলেন।
.
.
দেখতে দেখতে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা
চলে এল।পড়াশুনা তেমন কিছুই করিনি ।হলে বসে
শুধু প্রশ্ন পড়েই ঘন্টাখানেক কাটাই
.
তারপর উত্তর দিতে না পারলে শুধু প্রশ্ন লিখে
চলে আসি। রামুর অবস্থা আরো করুন। তবে সে
প্রতিজ্ঞা করেছে, যেভাবেই হোক এবার পাশ
করবে।
.
প্রথম পরীক্ষার দিন। প্রশ্ন হাতে নিয়ে বসে
আছি। কিন্তু উত্তর লিখতে পারছি না। তাই চুপচাপ
প্রশ্নগুলো খাতায় লিখে যাচ্ছি। এদিকে রামু
প্যান্টের পকেটে এক গাদা নকল নিয়ে হলে
ঢুকেছে। সেদিন আবার নতুন ম্যাডাম গার্ড দিচ্ছেন।
তিনি প্রথমেই সবার প্যান্টের পকেটগুলো চেক
করে দেখছেন। আমরা সবাই ছোট ছোট
ছেলেমেয়ে। তাই নতুন ম্যাডাম নিজেই প্যান্টের
পকেটে হাত ঢুকিয়ে নকল বের করে নিচ্ছেন।
দু' একজন বাদে সবার কাছেই নকল পাওয়া গেল ।
নতুন ম্যাডাম তো রেগে আগুন। তিনি সবাইকে
সাবধান করে দিলেন। এরপর থেকে নকল ধরা
পড়লে পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হবে।
.
পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনেও রামুর কাছে নকল পাওয়া
গেল। তবে সেদিন অন্য স্যার ছিলেন তাই রামু মাফ
পেয়ে গেল।
,
তো শেষ পরীক্ষার দিনে আবারও নতুন ম্যাডাম
গার্ড পড়েছেন। তিনি সবাইকে চেক না করে শুধু
যাদেরকে সন্দেহ হচ্ছে তাদেরকেই চেক
করছেন। তিনি প্রথমেই রামুর প্যান্টের পকেটে
হাত ঢুকিয়ে দিলেন।
রামুর পকেট ছিল ছেঁড়া। নতুন ম্যাডামের হাত তো
সরাসরি জায়গামতো চলে গেছে। ম্যাডাম হতভম্ব
হয়ে গেলেন।
.
রামু হঠাৎ বলে উঠল, ম্যাডাম, সুড়সুড়ি লাগে তো।
রামুর কথা শুনে ম্যাডাম লজ্জায় লাল হয়ে
গেলেন। তিনি পরীক্ষার হল থেকে ছুটে
বেরিয়ে গেলেন। আর আমরা সবাই হো হো
করো হেসে উঠলাম।
.
.
সেদিনের পর থেকে নতুন ম্যাডামকে আর
স্কুলে আসতে দেখিনি। পরে শুনেছি নতুন
ম্যাডাম ট্রান্সফার নিয়ে অন্য স্কুলে চলে
গেছেন।
.
-----★-----
©somewhere in net ltd.