নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুলগুলো সব নষ্ট হোক।

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ

fb-www.facebook.com/nabi.mamun

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বাস্তব জীবনের গল্প । গল্পের নাম -"অবশেষে"

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২২


গলির মোড়ের দোকান থেকে সস্তার এক
প্যাকেট সিগারেট নিয়ে লিচু তলায় এসে
বসলাম। এই লিচু তলা প্রেমিক-প্রেমিকাদের
জন্য একটি আদর্শ স্থান। কত শত মানুষের
প্রেমের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই লিচুতলায়।
কারো প্রেমের শুরু এখান থেকে। আবার
কারো সমাপ্তি হয় এখান থেকেই। বিকেল
হলেই এখানে জোড়া জোড়া ছেলে-মেয়ে
আসে। তারপর সন্ধ্যা অবধি আড্ডা দেয়।
প্রেম প্রেম খেলা খেলে।
.
মুন্নির সাথে আমার প্রথম দেখা হয় এই লিচু
তলাতেই। প্রথম পরিচয়েই ভালো লেগে যায়
মেয়েটাকে। তখন থেকেই রিলেশন শুরু।
মুন্নি অসম্ভব ভাল একটি মেয়ে।সুন্দরী, নম্র,
ভদ্র, মিষ্টভাষী সবগুনাগুণই ওর মধ্যে আছে।
আমার সকল অত্যাচার নিরবে সহ্য করে
মেয়েটা। আমার মতো বাউন্ডুলের সাথে এত
ভালো মেয়েটা যে কেন প্রেম করে বুঝি না!
এই তিন বছরে ওকে অনেক বার বলেছি,
আমার মতো বাউন্ডুলের সাথে রিলেশন রেখে
কী করবা! তার চেয়ে ভালো ছেলে দেখে
বিয়ে করে ফেলো।জীবনটা সুখের হবে।
টাকা না থাকলে ভালবাসা জানালা দিয়ে
দৌড় দিবে। আর এই বাউন্ডুলের কাছে টাকা
পয়সা কোন কালেই ছিলো না। আর
ভবিষ্যতেও থাকবে না। বিয়ের পর সারাক্ষণ
অভাব পেছনে লেগেই থাকবে। তখন আমাকে
ভালো না বেসে অভাবকে ভালবাসতে হবে।
কিন্তু মুন্নি সব দুঃখ কষ্ট মানতে রাজী আছে,
আমাকে ছাড়তে রাজী নয়।
.
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি প্রায় দেড় বছর
হলো। সেই তখন থেকেই চাকুরীর ইন্টারভিউ
দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।
মামা চাচা না থাকলে চাকুরী পাওয়া খুবই
মুশকিল। চাকুরী এখন সোনার হরিণ হয়ে
গেছে। আর এই হরিণের পেছনে হাজার
হাজার শিক্ষিত বেকার ছুটছে। কিন্তু এই
হরিণের নাগাল কেউ ধরতে পারছে না।
টাকা ছাড়া এই সোনার হরিণ ধরা দিবে না।
কারণ টাকাই এই সোনার হরিণের একমাত্র
খাদ্য।
.
আজকেও একটা চাকুরীর ইন্টারভ্যু দিয়ে
আসলাম। জানিনা চাকুরীটা হবে কি না।
চাকুরীটা হলেই মুন্নিকে বিয়ে করব।
অনেকক্ষণ থেকেই সিগারেট খাইনি।
টেনশনে মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। এখান
সিগারেট টেনে মাথাটা হালকা করে নিতে
হবে।
.
-আসিফ এ্যাই আসিফ?
পেছনে তাকিয়ে দেখি মুন্নি এসেছে। বিষন্ন
চেহারা। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।চোখের
নিচে কালিও পড়েছে। মনে হয় সারারাত
ঘুমায়নি ও।বললাম,
-কখন আসলা? আর তোমার চেহারা এরকম
দেখাচ্ছে কেন?
-এই মাত্র আসলাম। একমনে কী ভাবছো?
এবারো চাকুরীটা হয় নি?
কিছু বললাম না। চুপচাপ সিগারেট টানছি।
আমার কী বা বলার আছে। অভাব চারদিকে
থেকে ঘিরে ধরেছে আমাকে। বাড়িতে
বাবা অসুস্থ্য। ছোট বোনটার বিয়ে দিতে
হবে।
ছোট ভাইটার কোচিং এর বেতন না কি বাকী
পড়েছে। বাবা রিটায়ার্ড করেছেন বছর
দু'য়েক হলো। তার সামান্য বেতনে এখন
সংসার প্রায় অচল। প্রতিমাসে বাড়িতে কিছু
টাকা পাঠানো দরকার। কিন্তু টিউশনি
করিয়ে যে টাকা পাই তাতে আমার নিজেরই
চলে না। বাড়িতে টাকা পাঠাবো কীভাবে!
.
-আসিফ, বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য খুব চাপ
দিচ্ছে। এখন কী করব?
-আমি চাকুরীর জন্য খুব চেষ্টা করতেছি
মুন্নি।চাকুরীটা হয়ে গেলেই তোমাদের
বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আমাকে
আর কিছুদিন সময় দাও।
-কিন্তু বাড়িতে আমি আর কোনভাবেই
বোঝাতে পারছি না। চলো আমরা পালিয়ে
বিয়ে করি। তারপর যেকোন একটা ব্যবস্থা
হয়ে যাবে।
-এটা সম্ভব নয় মুন্নি। আমি তোমাকে সুখী
দেখতে চাই।সুখে রাখতে চাই। প্রতিষ্টিত না
হয়ে বিয়ে করলে অভাব অনটন লেগেই
থাকবে। আমি চাইনা তুমি আমার জন্য কষ্ট
পাও।
.
মুন্নি আর কিছু বললো না। শুধু আমার হাতটা
শক্ত করে চেপে ধরলো। নিরবে ওর চোখ
থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
.
.....
...........পাঁচ বছর পরে.........
.....
বেশ কয়েকদিন থেকেই মায়ের শরীরটা ভাল
যাচ্ছে না। ওনাকে আজ ডাক্তারের কাছে
নিয়ে যেতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি অফিস
থেকে ছুটি নিয়ে আসলাম।
.
মাকে পপুলার ক্লিনিকে নিয়ে এসেছি। মা
ডাক্তারের সাথে কথা বলতেছে। আমি
ওয়েন্টিং রুমে বসে আছি। ওয়েটিং রুমে
লোকজন গিজ গিজ করছে।
হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখে চোখ আটকে
গেলো। মেয়েটি দেখতে অবিকল মুন্নির মত।
.
আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম,
-মুন্নি?
আমাকে দেখে ও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
কয়েকমিনিট কথাই বলতে পারলো না।
বললাম,
-এতদিন কোথায় ছিলে? সেদিন লিচুতলায়
তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে
তোমার ফোন অফ। কত জায়গায় তোমাকে
খুঁজেছি! তোমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম ।
কিন্তু শুনলাম তোমরা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে
ঢাকায় চলে এসেছো।
.
মুন্নি বললো চলো বাইরে গিয়ে বসি।
বাইরে এসে একটা বেন্ঞ্চিতে বসলাম দুজনে।
বললাম , এতদিন কোথায় ছিলে? তোমার
ফোনটা এখন পর্যন্ত অফ। তোমাকে পাগলের
মত খুঁজেছি সব জায়গায় কিন্তু পাইনি। শেষে
ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছি। কিন্তু
এখানে এসেও তোমাকে খুঁজে পাইনি।
মুন্নি আমার কথাগুলো চুপচাপ শুনলো। তারপর
বলতে শুরু করল,
-সেদিন লিচুতলায় ভাইয়া আমাদেরকে
দেখেছিলো। তারপর ভাইয়া বাড়িতে এসে
বাবাকে সব বলে দেয়। বাবা খুব রাগী মানুষ।
ওনি সেদিন আমাকে খুব মেরেছিলেন।
তারপর আমার মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলেন।
পরদিনই তিনি আমাকে নিয়ে ঢাকায় চলে
আসেন। পরে ভাইয়া সবাইকে নিয়ে ঢাকায়
আসে।
.
এমন সময় আমার সমবয়সী একটি ছেলে আসলো
।ওনার কোলে ফুটফুটে সুন্দর একটি মেয়ে।
ছেলেটি মুন্নিকে বললো,
-এ্যাই, একে ধরোতো। আমি একটু আসতেছি। ও
ইনিকে তোমার পরিচিত?মুন্নি বল্লো,
-এ আমার বন্ধু আসিফ। পরিচিতো হও।
ভদ্রলোক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
বললেন,
-আমি অভ্র চৌধুরী। মুন্নির হাজব্যান্ড।
আপনারা বসে গল্প করুন। আমি একটা কাজ
সেরে আসতেছি। এই বলে ওনি চলে গেলেন।
.
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।কিছুই বলতে
পারলাম না। মনে হচ্ছিলো কান্না চলে
আসবে। অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম।
মুন্নি বললো,
-তুমি চাকুরী পেয়েছো? তোমার বউ কোথায়?
ওকে নিয়ে আসোনি?
বললাম,
-সেদিন যে চাকুরীটার ইনটারভ্যু
দিয়েছিলাম। ঐটাই হয়ে গেছে। আর বিয়েটা
এখনো করা হয়ে ওঠেনি। বলতে গিয়ে গলাটা
ধরে এলো আমার।চোখটা নামিয়ে নিলাম।
কারণ ছেলেদের কাঁদতে নেই।
★★★

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৯

সজিব হাওলাদার বলেছেন: অনেক ভালবাসা এমনই হয়।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা! জীবনটা খালি এইরকম মোচরায় কেন????????

সময়ের একটু হেরফের- সব এলোমেলো হয়ে যায়!!!!

+++

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: আহারে ভাই ,আমার ই তো কান্না আসতেছে, জীবন কেন যে এমন হয়।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩১

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: সজিব হাওলাদার, গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যিবাহাদক

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: বিদ্রোহী ভুখন্ড, টাকা এমন একটা জিনিস যা প্রয়োজনের সময় খুব কম পাওয়া যায়।

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: মাহবুবুল আজাদ, জানিনা ভাই জীবন কেন এমন। প্রকৃতির মতিগতি বোঝা বড়ই মুশকিল।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: মাহবুবুল আজাদ, জানিনা ভাই জীবন কেন এমন। প্রকৃতির মতিগতি বোঝা বড়ই মুশকিল।

৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: লাইফ এত প্যারাময় কেনু কেনু কেনু?
মহাপুরুষ, প্রতিটা মন্তব্যের ডানে কতগুলি চিহ্ন থাকে, সেই চিহ্নগুলির সবচেয়ে বামেরটায় ক্লিক করলে একটা ফাঁকা ঘর আসবে, সেখানে প্রতিউত্তর করুন| এটাতে মন্তব্যকারীর কাছে নটিফিকেশন চলে যাবে

৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: আরণ্যক রাখাল, ভাই আমি এই মুহূর্তে যে ফোনটা ইউজ করছি, তাতে রিপলাই অপশন টা আসে না। গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যিবাহাদক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.