মফিজ ক্যানভাসার ২৬

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৪১

২৬

আমার ভায়রা আজমল তালুকদারের নামে নারী ধর্ষণের মামলা হয়েছে। আমার ও ময়না বিবির কাছে বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আজমল তালুকদার এখন একজন পালাতক আসামী । তাকে প্রশাসনের লোকেরা খুঁজছে। সে আশ্রয় নিয়েছে আমার বাসায়।

১৬ ডিসেম্বর বন্দরের কলেজ মাঠে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক এসেছে কলেজ মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে। শত শত মানুষের মাঝে মরিয়ম ও সখিনাও এসেছে অনুষ্ঠান দেখতে। তাদের বাড়ি তালতলা গ্রামে। কলেজ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে । কলেজ মাঠের অনুষ্ঠান শেষ হতে ১ টা বেজে গেল। মরিয়ম ও সখিনা পালদের বাগানের পথে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। করিম, রহিম, পিন্টু ও বেল্লাল বাগানে বসে তাস খেলছে। মরিয়ম ও সখিনা তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পিন্টু তাদের জিজ্ঞাসা করলো , ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছো ?’

সখিনা বললো, ‘তা দিয়ে আপনার দরকার কি ?’

এ কথা শুনে করিম আর রহিম তাদের পথরোধ করে।

এবার মরিয়ম বললো, ‘আমরা তালতলা যাচ্ছি , আমাদের পথ ছেড়ে দেন।’

বেল্লাল আর পিন্টু তাদের হাত ধরে। তারা হাত ছাড়ানোর শত চেষ্টা করেও পারে না। টেনে-হিছড়ে নিয়ে যায় পালদের পোড়া বাড়িতে। এমতাবস্থায় সেখান দিয়ে আজমল তালুকদার যাচ্ছিল। সে মেয়ে মানুষের চাপা চিৎকার শুনে দাড়িয়ে গেল। একটু খেয়াল করে শুনলো চিৎকারটা ঠিক পালদের পোড়া বাড়ি থেকে আসছে। সে পোড়া বাড়ির দিকে আগাতে থাকে। যতই আগাচ্ছে চাপা চিৎকারের কণ্ঠ স্পষ্ট হচ্ছে। চিৎকারের আওয়াজ হঠাৎ বেরুচ্ছে আবার একদম থেমে যাচ্ছে। সে পোড়া বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। গিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে দুটি মেয়ের মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ধর্ষণ করছে। সে চিৎকার দিয়ে বললো, ‘এই তোমরা এখানে কি করছো ?’ আজমল তালুকদারের উপস্থিতিতে মেয়ে দুটি বাঁধন থেকে একটু ছাড়া পেয়ে জোড়ে চিৎকার দিতে শুরু করলো। আশে-পাশের লোকজন দৌড়ে আসতে লাগলো।

মেয়ে দু’টি চিৎকার দিয়ে বলে যাচ্ছে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে, কে কোথায় আছেন আমাদের বাঁচান। কিছুক্ষণ চিৎকার দিতে দিতে তারা বেহুশ হয়ে গেল। করিম , রহিম দৌড়ে পালালো। পিন্টু আর বেল্লালকে লোকজন ধরে ফেললো। কিছু লোক ছুটলো আজমল তালুকদারের পিছনে। কি কারণে আজমল তালুকদার দৌড় দিল তা সে নিজেই বুঝলো না। তাকে ধরতে পারলো না তবে দৌড়াতে দেখে অনেকেই চিনলো। বিষয়টা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালো।

থানায় মেয়ের গার্ডিয়ানরা পাঁচজনকে আসামী করে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করলো। জনসাধারনের কথা মতো আসামী করা হলো। পিন্টু ও বেল্লালকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হলো। মরিয়ম ও সখিনা নির্যাতনকারী কাউকে চিনে না, নাম জানে না তবে চেহারা দেখলে চিনতে পারবে।

আজমল তালুকদার আসামী। সে গা ঢাকা দিলো। ঢাকা এসে আমাকে সব ঘটনা খুলে বললেঅ। আজমল তালুকদার গা ঢাকা দেওয়ায় তার প্রতি সকলের সন্দেহ আরো বেড়ে গেল। এলাকার সকলে আজমল তালুকদারের এ ঘটনায় ছি ছি করলো। সবার এক কথা, তার মত লোক এ কাজ করতে পারে!

আমি ও আতাহার আলী বোরহারউদ্দিন গেলাম। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবকে সব ঘটনা খুলে বললাম।

চেয়ারম্যান সাহেব সব ঘটনা শুনে বললো, ‘ঘটনা যাই ঘটুক আজমল তালুকদারকে প্রশাসনের হাতে ধরা দিতে বলেন। যদি সে নির্দোষ হয় সাজা হবে না ।’

আমি বললাম, ‘চেয়ারম্যান সাহেব, আজমল তালুকদারা সুখী মানুষ। কখনও জেল-হাজতে থাকে নাই। এক দু’দিনও জেল-হাজতে থাকা তার জন্য খুবই কষ্টের হবে। বিষয়টা যদি সিরিয়াসলি ভেবে দেখতেন।’

এ কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব বললো, ‘ভুলের মাসুল দিতে হবে। তা না হলে বারবার একই ভুল করবে।’

তার কথায় বুঝা গেল আজমল তালুকদারের সাথে চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ভাল না। তাই সে সুষ্ঠ কোন সমাধান দিবে না। তার এক কথা, ‘ভুল যেহেতু করেছে প্রশাসনের হাতে ধরা দিয়ে ভুলের প্রাঃশ্চিত্ত করে নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করুক।’

আমি ঢাকায় এসে আজমল তালুকদারকে প্রশাসনের হাতে ধরা দেওয়ার পরামর্শ দেই। এদিকে করিম ও রহিম প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে। একদিন আজমল তালুকদারও প্রশাসনের কাছে আতœসমর্পণ করে।

তাদের মামলার শুনানী শুরু হলে মেয়ে দু’টির সত্য স্বীকার উক্তিতে আজমল তালুকদার নির্দোষ প্রমাণিত হলো। মাঝে দু’দিন জেলখানাতে থাকতে হলো। করিম, রহিম, পিন্টু ও বেল্লাল প্রত্যেকের বার বছরেরর স্বশ্রম কারাদন্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদন্ড হলো।



আগের প্রশ্নের উত্তর: পাকিস্তানের হাসান রাজা ( ১৪ বছর ২৮৭ দিন বয়সে)

প্রশ্নঃ টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ গড় কোন ক্রিকেটারের ?

উত্তর:

আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন ।

২ টি +০/-০