নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক স্বপ্নদেখা ছবিভাল লাগে আকাশ বাতাসভাল লাগে সবি।

আব্দুল্লাহ আল তানিম

আমি এক স্বপ্নদেখা ছবি ভাল লাগে আকাশ বাতাস ভাল লাগে সবি।

আব্দুল্লাহ আল তানিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয় মানুষের জয়! জয় মানবতার জয়! জয় শিক্ষার জয়!

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৯


একটা পরিচিত বকার কথা বলি, ‘অশিক্ষিত, মুর্খ কোথাকার!’ আপনি কী আসলেই অশিক্ষিত? মুর্খ?না, হয়তোবা আপনি কোন স্কুলে পড়েন, হয়তোবা কোন কলেজ বা ভার্সিটি। চাকরিও শুরু করে দিয়েছেন হয়তো। তবুও নাকি আপনি অশিক্ষিত! মুর্খ! আসলে শিক্ষিত আর অশিক্ষিত এই ব্যাপারটা কী? সেদিন একটা সিএনজি করে বাসায় ফিরছিলাম। এ কথা সে কথায় চালক সাহেব বললেন, “বুঝলেন, এই যে বাংলাদেশ, এখানের সবচাইতে বড় সমস্যা কী জানেন? এদেশের বেকার মানুষ বেশি। শুধু বেশি না, অনেক বেশি। যদি ধরেন সরকার আরও বেশি এই বেকারগো চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করত তাইলে ধরেন এই দেশে ইভটিজিং থেকে শুরু কইরে সব ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যাইত”।
চালক সাহেবের কথাবার্তার ধরন বেশ সুন্দর। চিন্তাভাবনাগুলোও সুন্দর বটে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী জিজ্ঞেস করাতে বললেন তিনি স্বল্পশিক্ষিত। এসএসসি পাস। অবাক হলাম। আজকাল বড় বড় ডিগ্রিধারীরাও এ ধরনের কথা বলেন না। সেখানে আজকের দিনে এসএসসি পাস তো কোন ছাড়!
হ্যাঁ, আজকের দিনে এসএসসি পাস কমই অবশ্য। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষিতের সংখ্যাটাও মন্দ নয়। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা আজকে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে।পাসের হার বেড়েছে। বাংলাদেশিরা আজ রকেট সায়েন্স থেকে শুরু করে মাইক্রো বায়োলজি কোন বিষয় নিয়েই পড়তে ছাড়ছে না। ছনের চালার ঘরে ঘুমানো ছেলে-মেয়েরাও আজ অসম্ভব ভালো ফলাফল করছে। এত কিছুর পরেও কীভাবে বাঙালিকে বলা হতে পারে, ‘শিক্ষা তো তোর কখনওই হবে না!’
আরে, আসলেই তো! আমার পরিচিত একজন আছেন যিনি দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন।বেশ কয়েকটা ডিগ্রিও আছে তার।কিন্তু তার চিন্তার ধরণ কথাবার্তা শুনে মনে হবে, কখনও তিনি শিক্ষা নামক বস্তুটির দেখা পান নি। অথচ তিনি কিন্তু শিক্ষিত। ভালোভাবেই শিক্ষিত। না, ভুল বললাম। তিনি আসলে লেখাপড়ায় শিক্ষিত। শুধু শিক্ষিত নন, যথেষ্ট শিক্ষিত। কিন্তু তবুও আমি বলব, তিনি শিক্ষায় শিক্ষিত নন।ভাবছেন, মানে?!
আচ্ছা এবার বলি শিক্ষা কাকে বলে।শিক্ষা হলো তা, যা মানুষকে শুধুমাত্র পড়তে শেখায় না; সেইসাথে জীবনে চলতেও শেখায়। আর লেখাপড়া? এটা হলো তা, যা মানুষকে পড়তে শেখায়। পাঠক ভাবছেন, হঠাৎ শিক্ষা আর লেখাপড়া নিয়ে পড়লাম কেন? কারণটা হলো আমরা অনেকেই জানিনা কোনটি কী। জানি না কোনটা বেশি দরকার। আর এজন্যই একজন ডিগ্রিধারী তার আচার-আচরণ ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছেন না।
লেখাপড়া শিখে গাড়ি হয়, বাড়ি হয়, টাকাপয়সা হয়। কিন্তু ভালো আচরণ নাও হতে পারে। শিক্ষা তেমনি শেখায় সঠিক আচরণ করতে। আর এই কারনেই একজন সিএনজি চালক বোঝেন কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক কাজ। আবার এই কারনেই একজন শিক্ষক অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে জোর করে তার শিক্ষার্থীদের পড়তে বাধ্য করেন তার নিজস্ব প্রাইভেট।
আমাদের দেশের অলিগলি এমনকি জনসম্মুখেও কিছু বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন তারা কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ছে বা পড়েছে। তাহলে তারা কি শিক্ষিত নয়? না, অবশ্যই না। কারণ শিক্ষা কখনই একজনকে বখাটে করে তুলতে পারে না। কখনই না। তবে হ্যাঁ, এরা ‘লেখাপড়া’ – য় শিক্ষিত বটে!
আমাদের বাড়ির দেখভাল করেন একজন মধ্যবয়স্ক দারোয়ান। তিনি লেখাপড়া করেছেন ফাইভ পর্যন্ত। বাবা মারা যাওয়ার পর আর পড়াশোনাটা করা হয়নি তার। একদিন কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘আমি বোঝতেই পারি না যে, মাইনষে মানুষ কেমনে খুন করে? হায়রে, ওরা কি জানে না ওরা কত বড় ভুল করতাসে? কী লাভ তাগো এইসব কইরা? কোনই লাভ নাই। জীবন দুই দিনের এইগুলা কইরা কোন লাভ নাই।’
এই চাচা কিন্তু কোন স্কুলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই শিক্ষা লাভের সুযোগ পান নি। এগুলো তিনি বুঝেছেন বিবেক দিয়ে, চারপাশ দিয়ে, আশেপাশের মানুষের সাহায্যে। লোকে বলেন তিনি মুর্খ। কিন্তু আসলেই কী তা? আমার মনে হয় না। তিনি শিক্ষিত, অবশ্যই শিক্ষিত। তবে লেখাপড়ায় শিক্ষিত তিনি নন।
এক হাতে তালি বাজে না। তেমনি এক লেখাপড়া শিখেই জীবন হয় না, আবার নীতিবান মানুষটিও নিজের চিন্তাভাবনা, দর্শন অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন না, যদি তিনি স্বাক্ষরতাজ্ঞানটাও না রাখেন। একজন সচেতন নাগরিক নিজে লেখাপড়া শিখে, অন্যকেও শিখতে উৎসাহিত করেন। আবার সেইসাথে তিনি জীবনের শিক্ষাও নিজের মাঝে ধারণ করেন, অন্যকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করেন।
আমাদের ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বেশ কয়েকটা ডিগ্রিধারী হলেই সে ‘বিরাট শিক্ষিত’ লোক। কিন্তু আসলেই কি তাই? লেখাপড়াই শুধুমাত্র শিক্ষা? আর কিছুই চাই না?
বস্তির একটি শিশুও হয়তোবা বোঝে অন্যায় আর ন্যায়। আর একজন সরকারি চাকুরীজীবিও অনেক সময় গ্রহণ করেন ঘুষ। তাই বলে কী বস্তির স্কুলে না যাওয়া শিশুটি শিক্ষিত?
বঙ্গদেশেই জন্ম নিয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি লেখাপড়ায় খুব একটা শিক্ষিত নন। কিন্তু জীবন শিক্ষায় তিনি শিক্ষিত কি না তা বলার ক্ষমতাটি আমার নেই। আবার আমাদের দেশেই জন্ম নিয়েছে নিবরাস ইসলামের মত নরপশু, যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ খুন করে। সে কি শিক্ষিত ছিল না? নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আর যাই বলুন, অশিক্ষিত বলতে পারেন না।
এতক্ষণ ধরে শিক্ষা আর লেখাপড়া নিয়ে আপনাদের শিক্ষা দিয়ে গেলাম।কিছু তো নিশ্চয় বুঝেছেন। যদি আপনি লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হয়ে থাকেন তাহলে পড়তে পেরেছেন অবশ্যই। আর যদি সেই সাথে শিক্ষাও পেয়ে থাকেন এর মর্মার্থও বুঝেছেন।অথবা শুধু শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কিছুই আপনি পড়তে পারেননি, বুঝবেন কী? আবার শুধু লেখাপড়ার
সার্টিফিকেটধারী হলে শুধুমাত্র পড়তেই পেরেছেন, মাথায় কিছুই ঢুকে নি।
এতদ্বারা আপনি কী বুঝলেন? আবারও বলি এক হাতে তালি বাজে না। তালি বাজাতে হলে আপনাকে স্কুলে যেতে হবে, লেখাপড়া শিখতেই হবে। আবার সেইসাথে সঠিক জীবনাচারও শিখতে হবে, ঠিক শিক্ষায়-দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হবে।জীবনে তালি বাজাতে চাইলে এছাড়া আর কোনো উপায় আপনার সামনে নেই, কোনো পথের শুরুর ফিতাটিও নেই। শিক্ষিত হতে হবে শিক্ষার মত করে, কঠোর শিক্ষা।
সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে জীবনের শিক্ষায় শিক্ষিত যেমন হতে হবে, পড়ালেখাও শিখতে হবে ঠিক তেমনিভাবে। মানেটা এই দাঁড়ালো যে, শুধুমাত্র জীবন শিক্ষা বা শুধুমাত্র পুঁথির শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই শিক্ষিত হয় না, হতে হবে দুই পথেরই শিক্ষার্থী। তবেই না পৃথিবীটা আলোকিত হয়ে উঠবে, তবেই পৃথিবী হবে শান্তিময়।তাহলে আজ থেকেই সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন না কেন? মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই।
মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা। কথাটা প্রমাণিত হবে হয়তোবা আপনারই দ্বারা। তাহলে শিক্ষার মশালটা ধরছেন এবার। তাইতো?
জয় মানুষের জয়! জয় মানবতার জয়! জয় শিক্ষার জয়!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.