নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেন জানি দিন দিন রাজনীতিবিদদের প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলছি **

এই স্বাধীনতা চাইনি আমি

ভবঘুরে হয়ে ঘুরতে ভালো লাগে

এই স্বাধীনতা চাইনি আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাম ভুলে গেছি, স্মৃতি নয়

০৯ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫২

নাম ভুলে গেছি, স্মৃতি নয়

বিদেশের মাটিতে অচেনা ভাষা, অচেনা মানুষদের ভিড়েও কিছু সম্পর্ক জন্ম নেয় নিঃশব্দে।
কিছু চোখের ইশারা, কিছু চুরি করা মুহূর্ত—যা কখনো নাম ধরে ডাকতে শেখায় না, কিন্তু মনে গভীর দাগ কেটে যায়।
এ গল্প তেমনই এক মেয়ের, যার নাম আমি ভুলে গেছি… তবু যার স্মৃতি আজও আমার হৃদয়ের এক কোণে বেঁচে আছে।

মালয়েশিয়ার কুইজবিতে আমার কাজের দিনগুলো।
প্রতিদিন সকালে রুম থেকে কাজে যাওয়ার পথে দেখি—একটা মেয়ে, রুমের ভিতর থেকে জানালার ফাঁক দিয়ে ইশারা করছে।
চোখের গভীরে অজানা এক ভাষা, ঠোঁটে নীরবতা।
প্রথমে অবাক হতাম, পরে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।

কয়েকদিন এমন চলল।
অবশেষে একদিন সাহস করে মোবাইল নম্বরটা একটা কাগজে লিখে, তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেখিয়ে রেখে এলাম।
সে কাগজটা তুলে নিল, আর কিছুক্ষণ পরই আমার ফোন বেজে উঠল—ওই নম্বর থেকেই।
সেদিন থেকেই আমাদের প্রতিদিন কথা হতে লাগল।
কখনও হেসে, কখনও অভিমান করে, আবার কখনও চুপচাপ থেকেও যেন অনেক কিছু বলতাম আমরা।

পরে জানতে পারি, তার এজেন্টের কড়া নিষেধ—মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।
তবুও সে চুরি করে ফোন ব্যবহার করত, শুধু আমার সাথে কথা বলার জন্য।
একদিন এজেন্ট সব জেনে যায়—আমাদের সম্পর্কের কথাও।
তখনই তার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়।

কিন্তু ভালোবাসার পথ কি এত সহজে থেমে যায়?
না, যায়নি।
সে কখনও সহকর্মীর ফোন, কখনও বন্ধুর, কখনও আবার অপরিচিত কারও মোবাইল থেকে যোগাযোগ করত।
প্রতিবার নতুন নম্বর, কিন্তু কণ্ঠে সেই একই উষ্ণতা, সেই একই টান।

একদিন শতবার ফোন দিল আমাকে—
“আজ আমার সাথে বেড়াতে যাবে,” সে বলল।
আমি রাগ মিশ্রিত গলায় বললাম—“না, আমি যাব না।”
ফোন বন্ধ করলাম, সাইলেন্ট করে রাখলাম, এমনকি একবার রিসিভ করেও কেটে দিলাম।

অবশেষে মন গলল।
গেলাম দেখা করতে, সঙ্গে ছিল মাঠুয়াপাড়ার উত্তর পাড়ার নাসির উদ্দিন।
আমার মুখের সামনে সে আবার বলল—“চলো, বেড়াতে যাব।”
আমি আবারও বললাম—“আমি যাব না।”

হঠাৎ তার হাতের মোবাইল এমনভাবে আছাড় মারল মাটিতে, যে নাসির ভয়ে থমকে গেল।
আমি চুপচাপ মোবাইলের সিম, ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড কুড়িয়ে তার হাতে দিলাম, আর রুমে ফিরে এলাম।

শেষ পর্যন্ত এজেন্ট তাকে দেশে পাঠিয়ে দিল—ইন্দোনেশিয়ায়।
দেশে ফেরার আগে সে ফোন করেই কাঁপা কণ্ঠে অনুরোধ করেছিল—
“তুমি যেন মোবাইল নম্বর পরিবর্তন না করো… আমি আবার আসব, নতুন এজেন্টের মাধ্যমে। নম্বরটা চালু থাকলে আমি তোমাকে খুঁজে নেব।”

কিছুদিন পর আমিও দেশে ফিরে এলাম।
আজও ভাবি—হয়তো সে ফিরে এসেছে মালয়েশিয়ায়, হয়তো বছরের পর বছর পেরিয়েও আমার নম্বরে কল করার চেষ্টা করছে।
তার নাম ভুলে গেছি, কিন্তু তার সেই চোখ, সেই কথা, সেই কান্না…
এখনো মনে উঠলেই আমার দু’চোখ ভিজে যায়।

কিছু মানুষ নামহীন থেকেও জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে যায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:১১

এই স্বাধীনতা চাইনি আমি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.