নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে এখনো সঠিকভাবে জানা হয়নি। অনেক কিছু জানার বাকি। আপাতত মানুষ দেখি। মানুষ দেখে নিজেকে যাচাই করছ

ইমতিয়াজ ইমু

আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মাঝে মাঝে শখের বশে ফটোগ্রাফিও করি।

ইমতিয়াজ ইমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি খুনের পূর্বকথন

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৭

চ্যাপ্টার ১ঃ

"তু শায়ের হ্যা, ম্যা তেরি শায়েরী" পাশের দোকানে হালকা সাউন্ডে ভারতীয় 'সাজান' ছবির হিট গানটা বাজছে। চায়ের দোকানটায় রিক্সাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালা দের ভিড়। তাদেরই কোন একজনের মোবাইলে হয়তো বাজছে। চায়নিজ মোবাইলের বদৌলতে জোরে গানটা শোনা যাচ্ছে। শওকত আস্তে আস্তে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। অনেক সময় এখানে থাকতে হবে ওকে। হাতব্যাগে রাখা বোমাটাকে আরেকবার হাত বুলিয়ে দেখলো সে। বোমাটা এমনভাবে মারতে হবে যাতে হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়। সংবাদপত্রিকা, ফেসবুকে অনেক রকম নিউজ, পোস্ট হবে। শওকতের নিজের কীর্তি ছাপার হরফে দেখতে বেশ লাগে।

ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদের নাটক "কোথাও কেউ নেই" তে বাকের ভাই চায়ের দোকানে বসে হিন্দি গান "হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দুপাট্টা" গান শুনতো। শওকতকে দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। হাতে শিকলওয়ালা চাবির রিং টা নেই। কিন্তু সে বাকের ভাইয়ের মতো প্রেমিক না। এমনকি সে নায়কও না। অবশ্য নায়ক হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি বাকের ভাইয়ের।

যাক একটা জ্যাম লেগেছে। শওকত হেটে গিয়ে বোমাটা ফেলে চলে যেতে ঠিক ১ মিনিটের বেশি লাগবে না। এসব কাজে ৫ ফিট ৮ ইঞ্চির দ্যা ডেইলি পোর্টাল এর সাব-এডিটর শওকতের অভিজ্ঞতা অনেক। ৩৬ বছরের এ জীবনে সে কয়েকটা বড় হত্যাকান্ডের সাথেই জড়িত। ১ মিনিটেরও কম একটা কাজের দাম ৪৫ হাজার টাকা। এই টাকা একান্তই শওকতের। ওকে কাজটা দিয়েছে ফারুক। ফারুককে কাজটা দিয়েছে কামরুল। কামরুলকে কাজটা দিয়েছে জয়ন্ত। জয়ন্তকে কাজটা দিয়েছে কাউসার। কাউসার কাজ পেয়েছে ইব্রাহীমের কাছ থেকে। ইব্রাহীম কাজটা পেয়েছে লতিফের কাছ থেকে। প্রত্যেকেই তাদের ভাগের টাকা আগে নিয়ে নিয়েছে। ৬ জনের লেয়ার পার করে শওকতকে ধরা সহজ না। এই ৬ জন তার উপরের জন আর নিচের জন ছাড়া কাউকে চেনে না। তাই মাঝখানের কাউকে প্রশাসন ধরলে তার পরের জনকে সরিয়ে দিলেই সব ঠান্ডা। চেইন ধরে এগিয়ে শওকতকে ধরা অসম্ভব। এরকম হয়েছিল একবার। জয়ন্তর জায়গায় আগে ছিল মোবারক। আর কাউসারের জায়গায় দেবাশীষ। দেবাশীষ ধরা পড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে শওকত মোবারকের হাতের দুটা ধমনী কেটে ফেলে গিয়েছিল ওরই ঘরে। শওকতকে কেউ না চিনলেও, শওকত তার লিংকের লোকগুলোকে চেনে। নিজের খাতিরেই চেনে।

শওকতের বয়স যখন ৩২ তখন তার স্ত্রী আর ছেলেটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। শওকত কখনোই খুব আবেগী মানুষ ছিল না। স্ত্রী, পুত্রের শোক তাকে এই মরণঘাতী ব্যবসায় নামার প্ররোচনা দিয়েছে সেটা কখনোই না। সে আগেই গুটিয়ে ছিল, এখন পুরোপুরি নিজের ভেতর ঢুকে গেছে। মোটিভটা যে কি তা সে নিজেও জানে না। মানুষ মেরে টাকা আসছে খারাপ কি? প্রতিদিনই তো কত মানুষ মরে। মানুষ মারাও একটা কাজ এবং শওকত সেটা সুচারুভাবেই করে।

জাকিরের হাতে সিগারেটটা শেষ। ওইযে শওকত উঠছে। একটু এগিয়ে গেলেই পিছু নেবে জাকির। শওকত বোমাটা মারার পর ও নিজেও একটা মারবে। ব্যাগটা শক্ত করে চেপে সিগারেটের মোথাটা পা দিয়ে পিষে এগোয় জাকির।


চ্যাপ্টার ২ঃ

"তু শায়ের হ্যা, ম্যা তেরি শায়েরী" চায়ের দোকানে হালকা সাউন্ডে ভারতীয় 'সাজান' ছবির হিট গানটা বাজছে। শওকত এ ছবিটা দেখেছে। আজকাল সে আর হিন্দি দেখে না, হলিউডের কাটতি ভালো। চায়ের দোকানটায় রিক্সাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালা দের ভিড়। তাদেরই কোন একজনের মোবাইলে হয়তো বাজছে। চায়নিজ মোবাইলের বদৌলতে জোরে গানটা শোনা যাচ্ছে। জাকিরের হাতের সিগারেটটা শেষের দিকে। অনেক সময় এখানে থাকতে হবে ওকে। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটার নিচে হাত দিলো জাকির। বোমাটা ঠিক আছে। বোমাটা এমনভাবে মারতে হবে যাতে শওকতের চিহ্নও খুঁজে না পাওয়া যায়। সংবাদপত্রিকা, ফেসবুকে অনেক রকম নিউজ, পোস্ট হবে। শওকত তার কীর্তি দেখে যেতে পারবে না।

৪০ বছর বয়সের জাকির বিগত ৫ বছর কেবল ছদ্মবেশে মানুষই মেরে গেলো। তার শওকতের মতো এত এজেন্ট নেই। একদিন মাইনুদ্দিন নামক এক লোকের দোকানে চা খেতে খেতে দেখলো মাইনুদ্দিনের ৮ বছরের ছেলেটা স্কুল থেকে আসছে। সে তখন থেকেই চিন্তা করে ফেললো এই ছেলেটা ওর কাজ হ্যান্ডেল করবে। এ বয়সেই। ক্লায়েন্টরা কাজের ডিটেইল মন্তাজ মিয়ার স্কুল ব্যাগে করে দিতে লাগলো জাকিরকে। জাকির টাকার খোজ নিয়ে কাজটা করে দিতো। ঘাঁটানোর কেউ নেই ওকে। সাতে পাঁচে নেই কারো। সুতরাং পাঁচ বছর দিব্যি কেটে গেল। এখন খুনি হয়ে আরেক খুনিকে মারতে হবে। অবশ্য এটা জাকিরের কাছে চ্যালেঞ্জ। বনে দুই বাঘ থাকার দরকার কি? মানুষ মারার একচেটিয়া ব্যবসা শুধু জাকিরের দখলেই থাকুক।

যাক একটা জ্যাম লেগেছে। শওকত হেটে গিয়ে বোমাটা ফেলে চলে যেতে ঠিক ১ মিনিটের বেশি লাগবে না। উঠতে নিলেই জাকির পিছু নেবে। জাকির হয়তো ভেবেছে শওকত তাকে চেনে না। একই ব্যবসায় যারা জড়িত তাদেরকে ঘাঘু ব্যবসায়ীরা সবসময় চোখে চোখে রাখে। এটা হয়তো জাকির জানে না। জিন্সের প্যান্ট আর হাফ হাতা পোলো শার্ট পড়া জাকিরের পরিবার বলতে কিছু নেই। এ ব্যাপারে শওকত খোঁজও নেয় নি। শওকত জানে মুগদার ৩২/১ নাম্বার বাড়িতে শুয়ে বসেই সময় কাটায় জাকির। চাকরি বলতে একটাই সেটা হলো মানুষ মারা। আজকে কি জাকির ওকে মারতে পারবে? জাকিরের হাতের সিগারেটটা শেষ। শওকতকে উঠতে হবে।

সময় হয়েছে। মানুষের ভিড় বাড়ছে। শওকত দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। ব্যাগের ভেতরের হাতবোমাটা চেক করে। কয়েকটা মানুষই তো মরবে। প্রতিদিনই মানুষ বাড়ছে। কয়েকজন মরলে আবাদী কমবে। লালনের গানটা সুর করে ভাজতে ভাজতে শওকত এগোয়,
শুনি মরলে পাবো বেহেশত খানা-
তা শুনে তো মন মানে না।
বাকির লোভে নগদ পাওনা,
কে ছাড়ে এ ভুবনে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস বলেছেন: সুন্দর

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:৩৮

সুমন কর বলেছেন: ৬ জনের লেয়ার পার করা গল্প ভালোই লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.