নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুধু দেখি আর লিখি, কী আছে আর জীবনে!

জেডিপি

লিখতে ভালোবাসি, প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী।

জেডিপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কদম ফুল

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪৮




তুলির নতুন প্রেম হয়েছে। চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল সে, কিন্তু এরই মাঝে কী থেকে যেন কী হয়ে গেল। নতুন প্রেমিক তাকে সেই সব ধরণের আদর যত্ন করে, যা তার পুরনো প্রেমিক করেনি চার বছরেও। তুলির এখন সবকিছু খুব সুন্দর লাগে, নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়। বান্ধবীরা বলে, সে নাকি সুন্দর হয়ে গেছে। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে তার। এখন সাজতে ভালো লাগে তুলির, চোখে কাজল দিলে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে ছেলেটি। তুলি আলতো করে হাত ছুঁয়ে দিলেই যেন ঢেউ বয়ে যায় তার মনে।

মনের কথা বলার মানুষ পেয়েছে তুলি, কথা বলতে বলতে কখন ভোর হয়ে যায় খেয়াল থাকে না। রান্নার প্রতি নাক সিটকানো ভাবটিও দূর হয়েছে, এখন রান্না করতে ভালই লাগে। মাঝে মাঝে তাকে বাড়িতে দাওয়াত করে তুলি। আনাড়ি হাতের রান্না মুখে তোলার যোগ্য না হলেও যখন খুব মজা করে খায় ছেলেটি, তখন তুলির নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়।

তুলির চুল লম্বা হয়েছে বেশ, পিঠ পর্যন্ত ছড়ায়। সেদিন গোসল করে বের হয়ে চুল মুছার সময় তার মনে হল, এখন যদি ছেলেটির মুখে ভেজা চুলগুলো একটু ঝেড়ে দেয়া যেতো! ভাবতেই গাল দুটো লাল হয়ে এলো। ঠিক তখনই বেজে উঠলো ফোন, যেন ওপাশ থেকে সে জানতো, তুলি তার কথাই ভাবছে।

ছেলেটি পাগল, তুলির জন্য পাগল। সেদিন বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফেরার সময় তুলি দেখল, ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটে আসছে ছেলেটি। জানা গেলো, তুলিকে এক পলক দেখার জন্য পাঁচ মাইল হেঁটে এসেছে সে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় তুলি তৈরি হচ্ছে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। বান্ধবীর বিয়ে, শাড়ি পড়েছে তুলি। ছেলেটি জেদ ধরল, তাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে অনুষ্ঠানে। সন্ধ্যাবেলা একা একা প্রেমিকাকে অনুষ্ঠানে যেতে দিবে না, রাস্তাঘাটের যা অবস্থা।

শাড়ির ফাঁক দিয়ে তুলির পেট খানিকটা দেখা যাচ্ছে, তার শরীর থেকে মিষ্টি গন্ধ আসছে। রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন। কোন কথা নেই কারও মুখে, শুধু হাত দুটো ধরা। তুলির চুল বাতাসে ছেলেটির মুখে এসে লাগছে, ছেলেটির কাছে সবকিছু স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

বান্ধবীর বাড়ির গলিতে ঢুকতেই টের পাওয়া যায় উৎসবের আমেজ। স্পিকারে মিউজিক বাজছে, মরিচবাতি দিয়ে সাজানো পুরনো দালান রাতের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে। মোড়ের পান সিগারেটের দোকানের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটি, ওদিকটায় আলো পৌছায় না। জ্বলন্ত সিগারেটের আলোর উঠানামা জানান দিচ্ছে ওদিকে কারও উপস্থিতি।

গলির মাথায় রিকসা থামিয়ে ভাড়া মেটালো প্রেমিক, তুলির সঙ্গে টুকটাক করা বলে বিদায় নিলো। ফেরার সময় তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলো। দৃষ্টিতে একরাশ কামনা নিয়ে আরেকবার তুলির ডানহাতের আঙুলগুলো ধরে একটু চেপে দিয়ে প্রেমিক উল্টো দিকে হাঁটা দিলো।

পুরো ঘটনাটি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দেখল জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ধরা একজন। দিনের চৌত্রিশতম সিগারেটটা শেষ করে আরেকটি ধরাল সে। মুখ তেতো হয়ে গেছে, কিন্তু কমছে না অন্তরের দহন।

তুলির পড়নের শাড়িটা তাকে মনে করিয়ে দিলো এক বছর আগের কথা। ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকাকে এই শাড়িটা উপহার দিয়েছিল সে। লাল রঙ তুলির খুব পছন্দ, এরপর অনেকবার এই শাড়ি পড়ে তার সঙ্গে ঘুরেছে তুলি। ছেলেটা তুলির হাত ধরার পর সে দেখল, তুলি তার দেয়া সেই ম্যাচিং চুড়িগুলোও পড়েছে।

‘এই তুলি, শোন না!’

তাদের অ্যানিভারসারি ছিল ঘোর বর্ষার সময়। চার বছর আগে একদিন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তুলির ক্যাম্পাসে এসে ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেছিল ছেলেটা, বাদলা দিনের প্রথম কদম ফুল হাতে তুলিকে মনের কথা জানাবে বলে। হাত-পা ঠান্ডায় নীল হয়ে গিয়েছিল সেদিন, তুলিকে মনের কথাটা বলে ফেলার পরপরই এক সপ্তাহ জ্বর। পুরোটা সময় তুলি তার পাশে ছিল।

চতুর্থ অ্যানিভারসারির আগে অনেকদিন ধরে তুলি কদমফুল এনে দিতে বলছিল, কিন্তু পুরো শহর চষেও কোন কদম ফুল পাওয়া যায়নি। চাকরি, পড়াশুনা, ক্লাসের ফাঁকে কদম ফুল খোঁজার সময়ও তেমন পায়নি ছেলেটা।

‘তুমি আসলে খোঁজার চেষ্টাও করো নি। গতকাল মাত্র লামিয়ার বয়ফ্রেন্ড ওর জন্য এতোগুলো কদমফুল এনে দিয়েছে। আমি সেই কবে থেকে চাইছি, আর তুমি পারলে না আনতে।’ গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল তুলি। অভিমান করলে তুলিকে আরও সুন্দর দেখাতো, তাই ওর অভিমান সহজে ভাঙ্গাতো না সে। কিন্তু তখনও জানা ছিল না এই অভ্যাসটাই একদিন কাল হবে।

সেদিন কদম ফুলের জন্য তাদের পুরো সময়টা কেটে যায় ঝগড়া করেই। বাড়ি পৌঁছে দেয়ার পুরোটা সময় তুলি চুপচাপ ছিল। তার এখনও মনে পড়ে। এই কদম ফুলের খোটা ব্রেক-আপের দিনও শুনতে হয়েছে। কিন্তু সে আজও বুঝেনি, সামান্য কদম ফুলের জন্য এতোটা মন খারাপ করার কী আছে!

প্রেমিককে বিদায় দিয়ে সিঁড়িতে পা রেখে পড়নের শাড়ির দিকে চোখ পড়তেই দমকা হাওয়ার মত তুলির মনে পড়ল কদম ফুলের কথা। এক মুহূর্তের জন্য বিস্বাদে ছেয়ে গেল তার মন, কিছুক্ষণের মধ্যেই যোগ হল এক রাশ অভিমান। এরপর ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখের হাসি ফিরিয়ে আনলো তুলি, মিশে গেলো বিয়ে বাড়ির ভিড়ে।

এদিকে বৈদ্যুতিক খুঁটির পেছনের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির ফোনে রিং বেজে উঠলো।

‘কি রে, কই তুই? নিজের বোনের বিয়ে আর তুই হারিয়ে গেছিস! শোন, মিষ্টি শর্ট পড়েছে। গেস্ট সব আসার আগেই আনতে হবে। বড় চাচার সঙ্গে একটু যা তো।’ একটানে কথাগুলো বলে জবাবের অপেক্ষা করতে থাকলো ওপারের তীক্ষ্ণ নারীকন্ঠ।

‘আচ্ছা আসছি।’ বলে ছেলেটা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত কয়েকটি টান দিলো সিগারেটে, পুরোটা শেষ না করেই পা দিয়ে মাটিতে চাপা দিয়ে নিভিয়ে দিল। তার ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসে সন্ধ্যার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল তামাকের গন্ধ। উপরে সাউন্ড সিস্টেমের ভলিউমের মাত্রা বাড়ছে, দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলো সে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.