![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
চেক-ইন, ডাবল ইমিগ্রেশন ইত্যাদির ঝামেলা শেষ করে যখন প্লেনে বসেছিলাম, তখন বেশ ক্লান্ত বোধ করছিলাম। প্লেন আকাশে ওড়ার সাথে সাথে তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হয়তো আরও আগেই ঘুমিয়ে পড়তাম, কিন্তু আমি অনেকটা জোর করেই ঘুম ঠেকিয়ে রেখেছিলাম, কারণ আমি প্লেনের টেক-অফ এবং টাচ-ডাউন দেখতে ভালোবাসি। কিছুক্ষণ পরেই একজন কেবিন ক্রুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙলো। উনি আমাকে ফুড চয়েসের কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমি আমার পছন্দের কথা জানিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম এটা দেখতে যে সেখানে ওযু করা সম্ভব হবে কিনা। কারণ, ততক্ষণে যোহরের সময় সমাগত। সেটা সম্ভব নয় দেখে ফিরে এসে, আমি তৈয়্ম্মুম করে নিয়ে নিজ আসনে বসে যোহরের নামায পড়ে নিলাম।
তারপরে লাঞ্চ করে মদীনায় অবতরণের পর কী কী কাজ ক্রমান্বয়ে করতে হবে, সে বিষয়ে মানসিকভাবে একটি পরিকল্পনার ছক তৈরি করে নিলাম। এটা ছিল আমার দ্বিতীয় হজ্জ্ব, কিন্তু আমার স্ত্রী ও পুত্রের জন্য প্রথম। করণীয় সম্পর্কে যা যা মনে আসছিল, তা ওদেরকেও বললাম। আমি প্রথম হজ্জ্ব করেছিলাম ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। তার ২০ বছর পর এবারে করছিলাম ২০২৫ সালের জুন মাসে। আর্থাৎ শীতকাল আর গ্রীষ্মকাল, এ দুটো ঋতুর সবচেয়ে এক্সট্রিম সময়ে আমার দু’বার হজ্জ্ব পালনের অভিজ্ঞতা হচ্ছিল। দেখতে দেখতে আমাদের অবতরণের সময় ঘনিয়ে এলো। পাইলট ঘোষণা দিলেন যে আর ২০ মিনিট পর প্লেন ডিসেন্ট (অবতরণের প্রস্তুতি) শুরু করবে। সীট-বেল্ট বাঁধার নির্দেশ মনিটরে ভেসে উঠলো।
প্লেন নির্ঝঞ্ঝাট অবতরণ করলো। আগেই (ঢাকা বিমান বন্দরে) ইমিগ্রেশন করা থাকলেও আমাদেরকে লাউঞ্জে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল। পরে জেনেছিলাম, এর কারণ ছিল ভিড়ের কারণে সৌদি মুয়াল্লেম কর্তৃক আমাদের বাসের লাইন-আপ করাতে বিলম্ব হচ্ছিল। এদিকে আসরের ওয়াক্ত ঘনিয়ে আসছিল। যাহোক, একসময় বাস আমাদেরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো। মদীনা বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে বাসে ওঠা পর্যন্ত ঐটুকু সময়ের মধ্যে আগুনের ফুলকির মত হাওয়ার হলকা যেন আমাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিচ্ছিল। বিলাসবহুল এসি বাসে ওঠার পর দাবদাহ থেকে বাঁচলাম। এত গরম সত্ত্বেও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় শরীরে তেমন ঘাম হচ্ছিল না বলে রক্ষা! বাসে ওঠার সাথে সাথে সবাইকে ঠাণ্ডা পানি, জুস ইত্যাদি দেয়া হলো। গরমজনিত তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এটার খুব প্রয়োজন ছিল।
বাসে থাকাকালেই আমাদের হজ্জ্ব এজেন্ট জনাব শাহিন আমাদের সবার পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করে সৌদি মুয়াল্লেমের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করলেন। ফেরার দিন পর্যন্ত ওগুলো তাদের কাছেই রক্ষিত ছিল। সেদিন মদীনা শরীফে আসরের আযানের ওয়াক্ত ছিল ১৫৪০ ঘটিকায়। আযানের ৫/৭ মিনিট পরেই জামাত শুরু হয়ে যায়। সেদিন যখন আমরা মদীনার হোটেলে পৌঁছেছিলাম, তখন আর ওযু করে পায়ে হেঁটে গিয়ে মাসজিদে নবুবীতে আসরের জামাতে সামিল হবার কোন উপায় ছিল না। ফলে আমরা হোটেলেই আসরের নামায পড়ে মাগরিবের ওয়াক্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অল্পের জন্য আসরের জামাত মিস হয়ে যাওয়াতে মনটা খচখচ করছিল। মাসজিদে নবুবীতে সম্ভব হলে একটানা ৪০ ওয়াক্ত নামায পড়া একটা রেওয়াজ, যদিও এটা কোন অবশ্যপালনীয় কর্তব্য নয়। ৮ দিন পর যখন মদীনা ছেড়ে আসি, সেটাও ছিল আসরের ওয়াক্তের পূর্বক্ষণেই। সেদিনও সৌদি মুয়াল্লেমের তাগাদার কারণে অল্প একটু সময়ের জন্য মাসজিদে নবুবীতে আমাদের একটানা ৪০তম জামাত পড়া সম্ভব হয় নাই। ফলে প্রথম দিনের বুকের খচখচানিটা স্থায়ীভাবেই বুকে রয়ে গেল!
আমরা একই পরিবার থেকে মোট তিনজন হজ্জ্বযাত্রী ছিলাম। মদীনার হোটেলে পৌঁছে দেখলাম যে আমাদের তিনজনের জন্য একটি চার বেডের কক্ষ বরাদ্দ হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সেখানে দুটো বেড থাকে। তবে হজ্জ্বের সময় সবখানেই এরকম প্রায় লাগালাগি বেড-বিন্যাস থাকে। কেবলমাত্র উচ্চবিত্তদের জন্য উচ্চ ভাড়ার হোটেলগুলোর কথা আলাদা। ৮/৯ দিনের জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন একটি আলাদা বেডের মাশুল গুণতে হয়েছিল। ঢাকায় থাকতে এটা আমাদের পরিকল্পিত খরচের মধ্যে আন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে অন্য খরচ কাঁটছাট করে আমাদেরকে এ মাশুলের সাশ্রয় করতে হয়। ঢাকায় থাকতেই আমরা Nusuk Apps এর মাধ্যমে রিয়াজুল জান্নাত জিয়ারা করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। একই সময়ে তিনজনের জন্য স্লট খালি পাওয়া যায় নাই বিধায় তিনজনের জন্য মধ্যরাতের তিনটে আলাদা স্লটে রেজিস্ট্রেশক্সন সম্পন্ন করেছিলাম। আমাদের তারিখটি ছিল ৩১ মে ২০২৫ তারিখে।
আমরা যেদিন মদীনার হোটেলে পৌঁছেছিলাম, সেদিনই সৌদি হজ্জ্ব মন্ত্রণালয়ের লোকজন এসে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদেরকে “NUSUK ID CARD” বিলি করে গেলেন। কি একটা যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য যেন মাত্র কয়েকজন সে রাতে এই কার্ডটি পেলেন না। তাদেরকে বলা হলো, পরেরদিন তারা কার্ডটি পাবেন। তাদের মধ্যে আমাদের পুত্রও ছিল। যারা কার্ডটি পেলেন, তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হলো যে এই কার্ডটি বিনে তারা হজ্জ্ব আনুষ্ঠানিকতার কোন স্থানেই প্রবেশাধিকার পাবেন না। এ ছাড়াও পথে ঘাটে যে কোন স্থানে পুলিশ চেকের সময় এই কার্ডটি সাথে না থাকলে পুলিশ আর এক কদমও এগোতে দিবে না। এসব শুনে আমি রীতিমত শিউরে উঠেছিলাম। কারণ, আমি ভুলোমনের মানুষ। সবসময় এখানে সেখানে চশমা, ঘড়ি ইত্যাদি ফেলে রেখে অনর্থক খোঁজাখুজিতে সময় ব্যয় করে নিজের এবং অন্যদের জন্য বিরক্তি ও বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতাম। তাই প্রথম কয়েকদিন ঘুমের মধ্যেও আমি কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছি ভেবে চমকে উঠতাম।
আগেই বলেছি, প্রাক রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী আমাদের তিনজনের “রিয়াজুল জান্নাহ” এ উপস্থিত হবার সময় ছিল ৩০/৩১ তারিখের মধ্যরাতে, সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে। এদিকে জনাব শাহিনও আমাদের সকল হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ২৭ মে ২০২৫ তারিখ পূর্বাহ্নে। তবে সেখানেও সময়ের একটু ব্যত্যয় ঘটেছিল। আমার স্ত্রী ও পুত্রসহ প্রায় সবাই জনাব শাহিনের নেতৃত্বে সেদিন পূর্বাহ্নেই রিয়াজুল জান্নাহ জিয়ারাহ করেছিলেন। শুধু বাদ পড়েছিলাম আমি এবং আমাদের সহযাত্রী জনাব নূরুজ্জামান। জনাব শাহিন আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, “আংকেল, আপনি চিন্তা করবেন না। জনাব নূরুজ্জামান ইতোমধ্যে একবার জিয়ারাহ করেছেন। উনি সবকিছু জানেন। উনি বিকেল চারটায় আপনাকে নিয়ে যাবেন।“ এই বলে উনি জনাব নূরুজ্জামান এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বয়সের দিক দিয়ে জনাব নূরুজ্জামান আমার বড়ছেলের সমবয়সী কিংবা তার চেয়ে সামান্য বড় হবেন। তিনিও আমাকে “আংকেল” সম্বোধন করে নিশ্চয়তা দিলেন।
ঠিক সময়মত জনাব নূরুজ্জামান এবং আমি রওনা হ’লাম। মাথার উপরে তখন গনগনে সূর্য। ছাতাতেও তেমন কাজ হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি বোধহয় মগজ মাথা থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসবে। হাতে ছাতা নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হলো। সৌদি পুলিশের ভাষা আমার বোধগম্য ছিল না, না ছিল আমারটা তাদের। জনাব নূরুজ্জামান সেদিন সাথে না থাকলে আমার একার পক্ষে রিয়াজুল জান্নাহ ভিজিট করা সম্ভব হতো না। উনি আমাকে আগলে রেখে তাকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন। আমি তাই করেছিলাম। একসময় সংশ্লিষ্ট গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশাধিকার পেলাম। প্রথমে একটি ফিতা ঘেরা এলাকায় অবস্থান করতে হয়েছিল। সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে একজন বাংলাদেশি ক্লীনার এর কাছ থেকে রিয়াজুল জান্নাতের আনুষ্ঠানিকতা সম্বন্ধে জেনে নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমাদেরকে রিয়াজুল জান্নাতের দিকে অগ্রসর হবার জন্য পুলিশ নির্দেশ দিল।
রিয়াজুল জান্নাত থেকে বের হয়েই জনাব নূরুজ্জামান আমাকে নিয়ে ঠিক পাশের গেইট দিয়ে মাসজিদে নবুবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। সেখানে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। কোনরকমে আমরা দুজন পাশাপাশি বসে যার যার সাধ্য ও ইচ্ছে অনুযায়ী দোয়া দরুদ পাঠ করতে করতে মাগরিবের আযানের অপেক্ষায় থাকলাম। একসময় জনাব নূরুজ্জামান এবং আমি আমাদের সেলফোন নাম্বার সেভ করে নিলাম। সেভ করার সময় উনি জানতে চাইলেন, আমার নাম্বারটা তিনি কী নামে সেভ করবেন। আমি আমার নামের বানানটা তাকে বলে জানালাম, আমি তার নাম্বারটা সেভ করেছি “Nuruzzaman Khan, Partner of Riyadhul Jannah” নামে। নামায শেষে উনি মাসজিদে আরও কিছুক্ষণ অবস্থান করতে চাইলেন। আমার একটু হোটেলে ফেরার তাড়া ছিল বলে আমি তার থেকে বিদায় নিলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আংকেল, বের হবার পথ চিনতে পারবেন তো ঠিকমত?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, পারবো।“ তবুও তিনি আমার সাথে বের হয়ে আসলেন। একটা জায়গায় এসে তিনি আমাকে অঙুলি নির্দেশ করে দেখালেন, “এই রাস্তা ধরে নাক বরাবর সোজা ৪০০ মিটারের মত গেলে আপনি ‘গেইট নং ৩১৬’ পাবেন। উনি নিশ্চিত ছিলেন, ‘গেইট নং ৩১৬’ পর্যন্ত যেতে পারলে আমার আর হোটেলে ফেরার বাকি পথটুকু চিনতে কোন অসুবিধে হবেনা। সেদিন উনি আমাকে যে সার্বক্ষণিক সৌজন্য প্রদর্শন করেছিলেন, তার জন্য আমি তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন তাকে এই সহৃদয়তার জন্য উত্তম বিনিময় দান করুন!
ঢাকা
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শব্দসংখ্যাঃ ১১৫৬
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম 'লাইক'টি দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। কোন কোন প্রশ্নের জবাব মিললো এই পোস্টে?
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
বিজন রয় বলেছেন: প্রথম পর্ব পড়ে এসে দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। না হলে ধারাবাহিকতা থাকত না।
সমৃদ্ধ হলাম।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১১
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম পর্ব পড়ে এসে দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। না হলে ধারাবাহিকতা থাকত না - জ্বী, ঠিক কাজটিই করেছেন।
"সমৃদ্ধ হলাম" - আপনার উদারতা। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১২
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনার হজ্জ বৃত্তান্ত পড়ে সমৃদ্ধ হচ্ছি।
শুভকামনা জানবেন।
৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৫
সুলাইমান হোসেন বলেছেন: মাশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আপণার হজ্জকে মকবুল করুন। আমিন
৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২৭
কামাল১৮ বলেছেন: পৌতলিকদের প্রচলিত প্রথা কিছুটা প্রবর্তিত হয়ে এখনো টিকে আছে।কিছু আছে অবিকৃত।যেমন পাথরে চুমু খায়া সাত পাক ঘুরা সংক্ষিপ্ত কাপর পরা ইত্যাদি।
৬| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯
শেরজা তপন বলেছেন: দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার কাছ থেকে খুঁটিনাটি অনেক বিষয় জানা যায়।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৭
করুণাধারা বলেছেন: অনেক প্রশ্নের জবাব মিলল এই পোস্টে। তাই শুধু লাইক দেবার জন্য লগইন করলাম।