![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীল চিরকুট
লেখক : আমি (৭৪২৫)
.
সাবিহা,একসময় ছিলো দুরন্ত একটা মেয়ে। আজ তার লক্ষ্য স্থির। আজ সে পৌছে গেছে গাম্ভীর্যতার শীর্ষে। যে করেই হোক বিসিএস ক্যাডারের সম্মানটা তাকে অর্জন করতেই হবে। অবশ্য অন্য ছাত্রীদের মত সে শুধু পড়ালেখা বা শুধু ভাল চাকরির জন্য বিসিএস কমপ্লিট করছে না, বিসিএস কমপ্লিট করার পেছনে তার অন্য একটা কারন রয়েছে। ফেসবুকের নীল জগতে তার প্রবেশ প্রায় বছর দুয়েক। সে আজো জানে না এই ফেসবুক তার উপকার করেছে নাকি ক্ষতি করেছে ? ফেসবুক না থাকলে হয়তো সে আজ বিসিএস দেওয়ার মনোবল পেতোনা। কিন্তু মাঝে মাঝে সে নিজেই ভাবে যদি ফেসবুক না থাকত তাহলে হয়তো সে নিজের ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনে গুমরে গুমরে মরতো না।
সাবিহা অ্যানড্রয়েড ব্যবহার করে কিন্তু বাংলা লিখতে পারেনা বলে কখনো স্টাটাস আপলোড করেনা। সে কারোর স্টাটাসও কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় না। তবে সে বসে থাকে না, সে অন্যদের পোস্ট শেয়ার করে। ভালো একটা পোস্ট পেলেই সেটা শেয়ার করেদেয় তার টাইমলাইনে। সে ফেসবুকে আসে অনেক কম, কেবল যখন মন খারাপ থাকে তখনই ফেসবুকে আসে কিছু ভালো ভালো স্টাটাস পড়ে মন ভালো করে। এভাবেই চলছিলো তার জীবন সংগ্রাম। এই সংগ্রাম নিজের জন্য। নিজের বিরুদ্ধে নিজের সংগ্রাম।
আজও এর ব্যতিক্রম ঘটলনা। মন ভালো করার জন্য একটা ভালো স্টাটাস খুজছিলো। একটা পেজ এ স্টাটাসটা পেলো। পোস্টটা পড়া মাত্রই যেনো একমুহুর্তের জন্য থমকে গেলো সাবিহা। মনে হচ্ছে ওকেই উদ্দেশ্য করে পোস্টটা লেখা। কিন্তু স্টাটাসটা কার এটা ওই পেজে লেখা নেই। স্বভাবতই সাবিহা নিজের টাইমলাইনে স্টাটাসটা শেয়ার করলো। পোস্টটা সত্যিই অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ঠিক সাবিহার মনের কথা লেখা। একমুহুর্তের জন্য সাবিহা ফিরে গেলো অতীতে। নিজের দুর্বিষহ অতীত থাকে খালি হাতে বর্তমানে ফেরত পাঠালো না। উপহার স্বরুপ পাঠিয়ে দিলো এক ফোটা চোখের জল আর বুক ভরা হাহাকার। চোখের জলের ফোটাটা তার গাল বেয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলো সে। না, সে কোনো কষ্ট পাচ্ছে না। তার জীবনে অতীত বলে কিছুই নেই। তার জীবনে যেটা আছে সেটা হল ভবিষ্যত। একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এটা শুধুই একটা মন ভুলানো ভাবনা সেটা সাবিহা ভালো করেই জানে। সে চাইছে প্রণপনে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে। কিন্তু এটাও সে ভালো করেই জানে যে বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার মত স্পর্ধা তার নেই। একবার মনের কৌতুহল মেটাতে ওই স্টাটাসের কমেন্টে লিখেই ফেললো, " Ei post ta ke likhece ektu bolben...plz??
সাবিহা ধরেই নিয়েছিলো যে তার কমেন্টের রিপ্লাই সে পাবে না। তার ধারনাই সঠিক। পোস্টটাতে কমেন্ট ছিলো ৩০০০+। তাই সাবিহার কমেন্টের প্রতি কেও ভ্রুক্ষেপও করলো না।
দুদিন পর সাবিহার আইডিতে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসলো। আইডিটার প্রতি সাবিহা কোনো আগ্রহ প্রকাশ করলো না। এরকম অসংখ্য রিকোয়েস্ট সে এতদিন অগ্রাহ্য করেই এসেছে। সন্ধ্যার দিকে দেখলো আইডি থেকে একটা মেসেজ এসেছে। সাবিহা আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও রিপ্লাই দিতে লাগলো...
"আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে যাওয়া আমার জন্য খুব দরকার...একটু জায়গা দেবেন প্লিজ?"
"Keno?"
"ফ্রেন্ডলিস্টে না আসলে বলবো কিভাবে?"
"Ami unknown kaoke amar list e rakhi na."
"আমি জাস্ট একটা কাজে এসেছি... কাজ শেষ হলেই চলে যাবো।"
"Ki kaj??"
"সেটা লিস্টে এলেই বুঝবেন। বললাম তো আমার কাজ শেষ হলে নিজ দ্বায়িত্বে বিদায় হবো।"
সাবিহা বুঝতে পারছেনা যে এই ছেলেটা আসলে চাচ্ছে কি? আচ্ছা দেখাই যাকনা কি করে। উল্টাপাল্টা কিছু করলে ব্লক করে দিলেই হবে।
রাফায়েতের আইডিতে একটা নোটিফিকেশন আসলো... "Sabiha tasnim accepeted your friend request...."
এই সময়টার জন্যই রাফায়েত অপেক্ষা করছিলো। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট হওয়ার সাথে সাথে সাবিহার টাইমলাইনে একটা শেয়ার করা স্টাটাসে কমেন্ট করল।
সাবিহা একটা নোটিফিকেশন পেলো "Rafayet rahman khan commented on a post you have shared..."
ছেলেটা কি তাহলে এই কমেন্টের জন্যই তার লিস্টে এসেছে ? দেখা যাক কি লিখেছে ?
সাবিহা দেখলো কমেন্টে লেখা "আমার পোস্টটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ... "
এটাতো সেই পোস্টটা যেটা সাবিহার খুব পছন্দ হয়েছিলো। আজ দুদিন পর সে তার কমেন্টের রিপ্লাই পেল ঠিকই, কিন্তু একটু নাটকীয় ভাবে।
সাবিহার আইডিতে মেসেজ আসলো,
"আমার কাজ শেষ...। এবার তাহলে বিদায় হই?"
"Ektu sunbe??"
"জ্বি বলেন। "
"Post ta tomar lekha??"
"জ্বি,সন্দেহ আছে?"
"Na... amnie..."
"আর কিছু জানতে চান?"
"Tumi android use koro??"
"হ্যাঁ"
"Android e bangla likhte hoy kivabe bolbe??"
"বাংলা লেখার জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে বাংলা লেখার একটা সফটওয়্যার, 'মায়াবী কি বোর্ড' ইনস্টল দেন। তরপর........."
রাফায়েত অনেকটা সময় নিয়ে সাবিহাকে বাংলা লেখার উপায় বুঝিয়ে দিলো।
অতঃপর,
রাফায়েত মেসেজে লিখলো,
"তাহলে, শেষমেশ বাংলা লেখা শিখেই ফেললেন?"
"হুম... তোমাকে ধন্যবাদ। "
"তাহলে এবার আমার যাওয়ার পালা। আনফ্রেন্ডটা কি আপনিই করবেন ? নাকি আমি করবো? "
"আনফ্রেন্ড করতে হবে কেনো??"
"আপনার লিস্টে আসার আগে বলেছিলাম যে আমার কাজ শেষ হলেই আমি চলে যাবো। "
"যাওয়াটা কি খুব জরুরী?? "
"আপনার লিস্টে থাকতে আমার আপত্তি নেই। আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে...। "
"তোমার স্টাটাস গুলো বেশ সুন্দর। সত্যি বলতে আমি এই স্টাটাস গুলো মিস করতে চাই না। "
"আচ্ছা,তাহলে থাকছি। "
"থ্যাঙ্কস "
"একটা কথা বলবো ?"
"হ্যাঁ বলো "
"আমি আপনার অপরিচিত। আর সত্যি বলতে অপরিচিত কাওকে তুমি করে সম্মোধন করাটা আমার অপছন্দনীয়। "
"কিন্তু আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। "
"আচ্ছা,মেনে নেলাম। "
"ভালো "
"আচ্ছা আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো? আন্ট বলে? "
"হ্যাঁ "
"আচ্ছা,আন্ট। "
কথা বলা পর্যন্তই থেমে গেলো।
পরদিন সকালে,
"আস্সালামু আলাইকুম, আন্ট "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম "
"ভালো আছেন? আন্ট?"
"হ্যাঁ "
অনেক্ষন কথা বন্ধ থাকার পর রাফায়েতই আবার শুরু করলো,
"আন্ট কি ব্যস্ত? "
"না,আমি অধিকাংশ সময় ফ্রি থাকি। "
"ও..."
"সকালে ফজরের নামাজ পড়েছো?? "
"জ্বি আন্ট পড়েছি। "
তারপর আবার কথা বন্ধ। যদিও তারা উভয়ই চ্যাট এ ছিলো।
আবার কথা হল সন্ধ্যায়।
"আস্সালামু আলাইকুম,আন্ট "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম "
"ভালো আছেন আন্ট?"
"হ্যাঁ "
"ও..."
"নামাজ পড়েছো?? "
"না,আন্ট"
"কেন?? "
"আন্ট,একটু বাইরে ছিলাম। "
"কোথায় ছিলে? "
"ডেন্টিস্টের কাছে "
"ডেন্টিস্ট?? কেনো??"
"আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে গেছিলাম "
"ও..."
"আন্ট"
"কি? "
"আমি নামাজ না পড়ার একটা অজুহাত দিলাম,ইচ্ছা করলেই নামাজ পড়তে পারতাম। "
"আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। "
"ও..."
"তুমি কোথায় থাকো?? "
"সেটা আমার প্রোফাইলের এবাউট পেজে গেলেই দেখতে পারবেন। "
"আচ্ছা "
রাফায়েত এর প্রোফাইলের এবাউট পেজটা সাবিহা এই প্রথমবারের মত পড়ল। সেখানে লেখা আছে, "ফেক একাউন্ট ইউজ করা আমার নেশা। হ্যাঁ যেটা ভাবছেন সেটাই। এই আইডিটা ফেক। আমার নামটাও ফেক। যদি ভালো লাগে তাহলে লিস্টে থাকবেন আর ভালো না লাগলে আনফ্রেন্ড করেন সমস্যা নাই। এর থেকে বেশি কিছু এবাউট পেজে লিখবো না, কারন এক আইডি আমি বেশি দিন ইউজ করি না তাই কষ্ট করে আর সুন্দর এবাউট সাজাইনি। "
লেখাটা দেখে পড়েই সাবিহা একটু অন্যরকম হয়ে গেলো। ও এ জাতীয় কিছু আশাই করেনি। আরো আগেই ছেলেটার প্রফাইলটা ভালো করে দেখার প্রয়োজন ছিলো।
"এটা তোমার ফেক আইডি? "
"জ্বি আন্ট "
"ফেক আইডি ইউজ করো কেনো? "
"শুধু নামটাই ফেক আর বাকি সব ঠিকই আছে"
"তোমার ঠিকানা দেয়া নাই, কি করো সেটা দেয়া নাই,তাহলে আইডিটা ঠিক আছে বলছো কিভাবে? "
"আন্ট... আপনার আইডিটা ঠিক আছে ? "
"হ্যাঁ "
"কই আপনার আইডিতে তো আপনার ঠিকানা দেয়া নাই,কি করেন সেটা দেয়া নাই। "
"এটা আমার প্রাইভেসি "
"হ্যাঁ... আন্ট, এটা আমার কাছেও প্রাইভেসি "
"ছেলে হয়ে এতো প্রাইভেসি মেইনটেইন করো কেন? "
"আমার জায়গায় আপনি থাকলে আপনিও হয়তো এটাই করতেন "
"কেনো তোমার জায়গাটা এমন কোথায় যে সেখানে একটা ছেলে হয়ে তোমাকে পরিচয় গোপন করতে হয়? "
"সেটা বলা যাবে না আন্ট... ব্যক্তিগত ব্যপার "
"নাম ঠিকানা জানতে চাওয়াটা কারোর ব্যক্তিগত প্রশ্নের মধ্যে পড়ে? "
"হ্যাঁ আন্ট। আপনাদের কাছে ব্যক্তিগত ব্যপার বলতে যা বোঝায় আমার কাছে সেরকমটা না। আমার কাছে ব্যক্তিগত হল সেটাই যেটা আমি অন্য কাওকে জানাতে চাই না। "
"তাহলে তোমার নাম ঠিকানা বলবে না? "
"না আন্ট, আবারো বলি এটা আমার কাছে ব্যক্তিগত ব্যপার। আন্ট... আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... আচ্ছা আন্ট আপনার কাছে যদি কেও জিজ্ঞাসা করে যে গতরাতে আপনি আপনার হাজবেন্ড এর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন? তাহলে আপনি কি সে প্রশ্নের জবাব দেবেন? অবশ্যই না... কারন সেটা আপনাদের কাছে ব্যক্তিগত প্রশ্ন। একইভাবে আমার নাম ঠিকানা আমার কাছে ব্যক্তিগত। আমি দুঃখিত আন্ট, এমন কিছু কথা লিখে ফেলেছি যা লেখার যোগ্য আমি নই। "
সাবিহা ভেবে পাচ্ছিলো না কি এমন কারন থাকতে পারে যার জন্য ছেলেটা তার পরিচয় গোপন করছে? তাছাড়া ছেলেটা কথার বিপক্ষে কোনো কথাই তার মাথায় আসছে না। তাই বিষয়টা ঘোরানোর জন্য লিখলো,
"এই রকম উল্টাপাল্টা কথা লেখো কোন সাহসে?? "
"আমি দুঃখিত আন্ট "
"ভবিষ্যতে এরকম কথা লিখলে আনফ্রেন্ড করে দেবো "
"আচ্ছা আন্ট... আমি এরকম কথা আর বলবো না "
"ঠিক আছে "
"আন্ট "
"কি? "
"আমাকে মাফ করেছেন? "
"করেছি "
"ধন্যবাদ আন্ট "
"হুম "
"আন্ট "
"আবার কি?? "
"আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত "
"আচ্ছা... এবারও মাফ করলাম। "
"ধন্যবাদ আন্ট "
"রাত অনেক হয়েছে ঘুমাতে যাও। "
"আচ্ছা আন্ট "
পরদিন কথা হল বিকালে,
"আস্সালামু আলাইকুম আন্ট "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম "
"ভালো আছেন আন্ট?? "
"হ্যাঁ "
"ও..."
"আজকে কত জন কে সালাম দিছো? "
"আন্ট আমিতো গুনে রাখিনি... তবে ২০ থেকে ২৫ জন হবে। "
"ও.. আমি ভাবলাম শুধু আমাকেই সালাম দাও মনে হয়। "
"আচ্ছা আন্ট, তাহলে আপনাকে আর সালাম দেবো না। "
"কেনো? "
"আপনার এই কথাটা লেখার অর্থ হল আপনি আমার প্রতি বিরক্ত... তাই আপনাকে আর সালাম দিয়ে বিরক্ত করবো না "
"সলাম দেবে না? তাহলে কি হাই,হ্যালো বলা শুরু করবে? না থাক হাই হ্যালো আমার ভালো লাগে না। সালাম দিয়েই কথা বলবে। কিন্তু দিনে বেশি বার সালাম দেয়ার প্রয়োজন যেন না পড়ে। আমি কি বলতে চাইছি বুঝেছো?? "
"জ্বি আন্ট আপনি বলতে চাইছেন আমি যেন আর আপনাকে বারবার নক না দিই...তাইতো?? "
"এইতো বুঝেছো "
"আচ্ছা আন্ট আল্লাহ হাফেজ "
"হুম "
রাতে আবার নক দিলো রাফায়েত,
"আস্সালামু আলাইকুম আন্ট "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম "
"ভালো আছেন? "
"হুম..."
"আন্ট এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম "
"তোমাকে বারবার নক দিতে নিষেধ করছি না? "
"আমি দুঃখিত আন্ট,একটা প্রশ্ন ছিলো তাই। "
"আচ্ছা আর বিরক্ত করবা না। বলো কি বলবা? "
"আন্ট মেহেরপুর কি একটা জেলা? "
"আমি জানিনা,মনে হয় উপজেলা "
"আপনি সত্যিই জানেন না? "
"না "
"মেহেরপুরে আপনার আত্মীয় থাকে? "
"না, মেহেরপুরে আমার আত্মীয় থাকবে কোন দুঃখে? "
"আন্ট আপনি Bcs দেয়ার আগে মেহেরপুর সম্পর্কে পড়েননি? "
"এত প্রশ্ন করো কেনো?আমি Bcs দিতে যাবো কেনো? আর মেহেরপুর সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে দেখে নাও,আমার কাছে জানতে চাইছো কেনো? "
"আচ্ছা আন্ট আমি দুঃখিত,মাফ করে দেন "
"আচ্ছা যাও এবারের মত মাফ করে দিলাম। ভবিষ্যতে মাফ চাইলে... মাফ নাও পেতে পারো। "
"আচ্ছা আন্ট "
"শোনো "
"জ্বি আন্ট বলেন "
"এত এলাকা থাকতে মেহেরপুর সম্পর্কে জানতে চাইছো কেনো? আর এত পরিক্ষা থাকতে Bcs এর কথা বলছো কেন? "
"আন্ট আমার অবচেতন মন বলছে আপনি যে জেলাটা সব থেকে ভালোভাবে চেনেন সেটা হল মেহেরপুর। আর হয়তো আপনি Bcs দেবেন বা দিয়েছেন। "
"তোমার অবচেতন মন মিথ্যা বলেছে। "
"হয়তো "
"আচ্ছা তোমার আগের মেসেজে তুমি লিখেছো (আন্ট আমার অবচেতন মন বলছে আপনি যে জেলাটা সব থেকে ভালোভাবে চেনেন সেটা হল মেহেরপুর। ) এখানে তুমি জেলার কথা লিখেছো। তারমানে তুমি জানো যে মেহেরপুর একটা জেলা। "
"জ্বি আন্ট আমি জানি "
"তাহলে আমার কাছে লুকাচ্ছো কেন? "
"আপনি লুকিয়েছেন তাই..."
"আমি কি লুকিয়েছি?? "
"আন্ট আপনি ও জানতেন মেহেরপুর একটা জেলা... কিন্তু আপনি আমাকে বলেছেন যে এটা একটা উপজেলা। আমার কাছ থেকে লুকানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো? "
"তোমাকে কে বললো যে আমি মেহেরপুর সম্পর্কে জানি? "
"আমার অবচেতন মন। "
"মিথ্যা বলেছে "
"হয়তো "
"আর কিছু বলবা? "
"আচ্ছা আন্ট আপনার আইডিতে একটা বাচ্চার ছবি দেখলাম... ওটা কে?? "
"আমার ভাগনি "
"ও... ওর নাম কি? "
"ছবিটা যখন দেখেছো,তখন নামটাও নিশ্চয়ই দেখেছো "
"হ্যাঁ... ছবিটার ক্যাপশনে লেখা My sweet little nephew,Amreen... "
"হুম "
"আমরিন নামের অর্থ জানেন? "
"না। তুমি জানো? "
"আমরিন শব্দের অর্থ আকাশ। "
"নামটা কি সুন্দর? "
"আমার তো মনে হয় সুন্দর। আকাশ যেমন বিশালতার প্রতিক আপনি দেখেন আমরিনও হয়তো এই নামের গুনে বিশাল মনের অধিকারি হবে"
"আমি তো জানতাম আমরিন নামটা ভালো না "
"কেনো? "
"আমার আব্বার একজন পরিচিত হুজুর আছেন তিনি বলেছেন যে নামটা খারাপ,ইসলামিক নাম না। তাই ওর নাম চেন্জ করে আমেনা রাখা হয়েছে। "
"তাই নাকি? "
"হুম..."
"আন্ট... জীবন শব্দটা কি ইসলামিক? "
"মনে তো হচ্ছে, না "
"জীবন শব্দের আরবী হল উমর "
"উমর মানে হযরত উমর (রা এর নাম? "
"হ্যাঁ "
"তারমানে তুমি বলতে চাইছো উমর নামটা অনৈসলামিক??? "
"সেটা বলতে চাইছি না। আমি বলতে চাচ্ছি যে আমরিন নামটা খারাপ না। এবিষয়ে একজন ভালো হুজুরের সাথে আলাপ করে তারপর শিওর দিতে পারবো। "
"আচ্ছা "
"আন্ট আমরিন তো ছোট বোন তাই না? "
"হ্যাঁ, ওরা একভাই একবোন।ভাইটা বড়। ওর ভাইটার বয়স দুই বছর "
"ও..."
"আর কিছু বলবা? "
"না, আন্ট।"
"রাত অনেক হয়েছে। ঘুমাতে যাও..."
"জ্বি আন্ট। আপনাকে আজকেও বিরক্ত করলাম দুঃখিত। "
"হুম "
সাবিহা নিজের অজান্তেই ভাবতে শুরু করলো। ছেলেটা বলছে ওর নাম রাফায়েত না। নাম নিয়ে মিথ্যা বলার কি আছে? ইচ্ছা করলেই তো একটা ছদ্মনাম রাখতে পারতো যেমন "নিদ্রালস বালক " বা "পাহাড় চূড় " ইত্যাদি।
সাবিহা ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার ডায়েরিটা নিল। সেখানে যা লিখলো তার সারসংক্ষেপ ছিলো এরকম যে সে বুঝতে পেরেছে যে ছেলেটা কেনো এই নাম রেখেছে। পাশাপাশি সে ছেলেটার প্রতি কিছুটা আগ্রহ বোধ করছে। ছেলেটা তার পরিচিত কিনা এব্যাপারেও সে কিছুটা সন্দেহের মধ্যে আছে।
পরদিন সাবিহা দেখলো যে রাফায়েত চ্যাটে আছে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলো না। অবশ্য সে কিছুটা নিশ্চিত ছিলো যে রাফায়েত এসে তাকে নক দেবে।
সবসময় অনুমান সঠিক হয় না। সাবিহার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে তার অনুমান সঠিক হয়নি। রাফায়েত তাকে নক দেয়নি। সাবিহার একটু মন খারাপও হল, ছেলেটাকে এভাবে সব সময় এড়িয়ে চলাটা উচিত হয় নি। হয়তো রাগ করেই নক দিচ্ছে না।
সন্ধ্যায় রাফায়েত নক দিলো,
"আস্সালামু আলাইকুম আন্ট "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম "
"ভালো আছেন?"
"হ্যাঁ "
"আন্ট কি ব্যস্ত?? "
"না, বলেছি না যে আমি কখনো ব্যস্ত থাকিনা?? "
"হ্যাঁ, দুঃখিত। "
"হুম, শোনো "
"জ্বি আন্ট বলেন "
"তুমি বলছিলে গতদিন ডেন্টিস্টের কাছে তোমার বন্ধুকে নিয়ে গেছিলে। ওর দাতে কি সমস্যা?? "
"আন্ট আপনি ডেন্টিস্ট নাকি? "
"যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার জবাব দাও। "
"জ্বি আন্ট "
"বলো তোমার ফ্রেন্ড এর কি সমস্যা?? "
"ও অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলো। "
"তাই নাকি?? কিসে?? "
"বাইকে... ও পেছনে ছিলো। ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে। একপাশের দাঁতগুলোর সমস্যা হইছিলো। এতদিন ঠিকছিলো। কিছুদিন আগে আবার সমস্যা শুরু হইছে তাই শহরে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। "
"ও... আমারও ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে। "
"আপনার কি সমস্যা আন্ট?"
"চোখে কম দেখি "
"তাহলে চোখের ডাক্তারের কাছে যান "
"গেছিলাম... চোখের ডাক্তার বলছে যে আমার দাত নাকি দুর্বল। আর সেই প্রভাবটা কি নাকি চোখে পড়েছে। "
"সেটা কিভাবে সম্ভব? "
"প্রথমে আমিও বিশ্বাস করি নি কিন্তু ডাক্তার রীতিমতো একটা পরিক্ষা করে দেখালেন। "
"পরিক্ষা?? কেমন পরীক্ষা?? "
"প্রথমে একটা কাগজে কিছু অপরিচিত ইংরেজি শব্দ লিখলেন। তারপর সেটা দুহাত দূরে ধরে রেখে আমাকে শব্দগুলো পড়তে বললেন। আমি প্রায় সব কয়টাই পারলাম। তারপর আমাকে কিছু সুপারি দিলেন, অর্ধেক করে কাটা সুপারি। আমাকে সুপারিগুলো চিবিয়ে খেতে বললেন। আমি সুপারি চিবালাম। তারপর ডাক্তার আবার দুহাত দূরে সেই কাগজটা ধরে বললেন এবার পড়ার চেষ্টা করো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে আমি পড়তে পারছিনা। "
"বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যপার তো ..."
"ইদানিং আবার হাটুর ব্যথাটাও বেড়েছে। কানেও কম শোনাও ধরেছি "
"আন্ট আপনার ডায়াবেটিস আছে?"
"হুম.."
" তাহলে আন্ট, ডাক্তারের কাছে যেয়ে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। "
"কেনো?? "
"আপনার যে কয়টা সমস্যা দেখছি সবগুলোই মনে হচ্ছে বার্ধক্য জনিত সমস্যা। "
"হুম.. তাহলে ডাক্তারের কাছে যেয়ে লাভ নেই। "
"আন্ট একটা প্রশ্ন করবো? "
"হুম... "
"আন্ট আপনার কাছে কোন লাইফটা সব থেকে বেশি ভালো? স্কুল লাইফ,কলেজ লাইফ নাকি ভার্সিটি লাইফ? "
"নাহ... আমার কাছে যে লাইফটা ভালো সেটা তুমি লেখো নি। আমার কাছে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগের লাইফটাই ভালো। "
"না মানে আন্ট এই তিনটার মধ্যে কোনটা? "
"তিনটার মধ্যে কলেজ লাইফ। "
"এই প্রথম এমন একজনকে পেলাম যে আমার সাথে একমত "
"মানে?? "
"আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে এটা নিয়ে তর্ক হয়েছিলো। তার মতে স্কুল লাইফই বেস্ট আর আমার মতে কলেজ লাইফটাই বেস্ট। আমার কথার পিছনে কিছু লজিক দেখিয়াছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষে সিদ্ধান্ত হল তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে প্রশ্ন করা হবে সে যেটা বলবে সেটাই মেনে নেওয়া হবে। অবশ্য অন্য কারোর কাছে প্রশ্নটা করা হয়নি। কারন ওই ঘটনার কিছুদিন পরেই আমি ওখান থেকে চলে আসি। "
"তাই নাকি?? তা কলেজ লাইফকে তোমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হল কেনো শুনি??"
"আন্ট, আমাদের স্কুল লাইফ এবং ভার্সিটি লাইফ অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেক সুখের দুঃখের স্মৃতি থাকে কিন্তু মানুষ শুধু দুঃখের স্মৃতি গুলোই মনে রাখে আর সুখের স্মৃতি গুলো ভুলে যায়। তাই স্কুল লাইফ আর ভার্সিটি লাইফ অনেকের কাছেই পছন্দনীয় না। তাহলে বাকি থাকলো যেটা সেটা হল কলেজ লাইফ। কলেজ লাইফটা অনেক কম সময়ের জন্য আর এই কম সময়ে পরিবর্তনটা অনেক বেশি হয়। নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু সব মিলিয়ে ভালো একটা সময়। "
"হুম...তোমার কথাও ঠিক। তবে কলেজ লাইফটা কিছুটা হলেও বিপর্যয় মূলক। এই সময় অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা কৌতুহল বসত এমন কিছু কাজ করে ফেলে যা তাদের পরবর্তী লাইফের ওপর প্রভাব ফেলে। "
"আসলে আন্ট এটা বয়সের দোষ। এই বয়সে ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি আবেগ প্রবণ হয় তাই তারা সব কিছু কেই আবেগ এর মধ্যে ফেলায়। শেষে যখন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় তখন তারা এই লাইফটাকে জীবনের সব থেকে খারাপ সময় হিসাবে ভেবে নেয়। "
"হুম... তা এতই যখন জানো? তখন কলেজ লাইফটাকে ভালো হিসাবে তুলে ধরতে চাইছো কেনো??"
"ঠিক যে কারনে আপনি কলেজ লাইফটাকে ভালো বলেছেন,সেই একই কারনে আমিও কলেজ লাইফটাকে ভালো প্রমাণ করতে চাচ্ছি। "
"মানে?? "
"আন্ট, আমরা প্রত্যেকেই চাই নিজেদেরকে সবার সামনে একটু ব্যতিক্রমী হিসাবে তুলে ধরতে। স্কুল লাইফটা জীবনের সব থেকে ভালো সময় এটা যেমন আপনিও জানেন তেমনি আমিও জানি। কিন্তু আমরা প্রমাণ করতে চাইছিলাম যে আমরা অন্যদের মত না। "
"হুম... ভালোই অনুমান করেছো। "
"না আন্ট এটা অনুমান না "
"তাহলে?? "
"এটা হল লজিক। "
"তা তোমার কাছে আর কি কি লজিক আছে শুনি "
"আন্ট আপনার মনে আছে? আমরিন যে ছোট বোন সেটা কিন্তু আমিই প্রথমে বলেছিলাম? "
"হ্যাঁ... আমি অবশ্য একটু অবাক হয়েছিলাম কিন্তু প্রকাশ করি নি। "
"আমরিনকে ছোট বোন বলার পেছনে আমার লজিকটা শুনবেন? "
"বলো "
"আপনি আমরিনের ফটোর ক্যাপশনে লিখেছিলেন My sweet little nephew,Amreen... আমরিন ছোট বলেই আপনি ওখানে little শব্দটা লিখেছিলেন। "
"আমি কিন্তু অতটা ভেবে পোস্টটা করিনি। "
"হ্যাঁ... আন্ট। এটা করেছে আপনার অবচেতন মন। আপনার অবচেতন মনই আপনাকে ক্যাপশনে little শব্দটা লিখতে বাধ্য করেছে। "
"হয়তো "
"আন্ট আরো কিছু লজিক শুনতে চান? "
"বলো... শুনতে ভালোই লাগছে। "
"আন্ট আপনি তো আমরিনের খালা তাই না? "
"হ্যাঁ "
"আমরিনের মা আপনার বড় তাই না? "
"এটাও কি লজিক দিয়ে বের করলে?? "
"হুম "
"লজিকটা কি?? "
"ক্যাপশনেই লজিকটা রয়েছে। "
"কই?? ক্যাপশনে তো আমার বোনের কথা লিখিনি। "
"আন্ট,আপনি ক্যাপশনে sweet শব্দটা ব্যবহার করেছেন। সাধারণত বড় বোনের ছেলেমেয়ে হলেই আমরা এতটা এক্সাইটেড থাকি। আর অনেক খুশি থাকার কারনেই আপনার অবচেতন মন ওখানে sweet লিখতে বাধ্য করেছে। "
"হয়তো..."
"আন্ট আরেকটা লজিক শুনবেন? "
"না। কাল বোলো। "
"পরে হয়তো লজিকটা আর বলা হবে না "
"কেনো?? "
"আমি আইডি ডি এক্টিভেট করে দেবো আন্ট "
"কেনো? "
"ফেসবুকের জগত থেকে বিদায় নেবো "
"অন্য কোনো আইডি চালাবা?? "
"না আন্ট "
"আচ্ছা লজিকটা বলো। আমি শুনবো। "
"আন্ট লজিক থেকে কিন্তু আপনার বয়সটা অনুমান করা যায়। "
"তাই নাকি?? আমার বয়স কতো?? "
"শিওর না তবে মনে হচ্ছে ২২ - ২৩। "
"লজিকটা বলো। "
"আন্ট আপনার বড় বোন বা আমরিনের মায়ের বয়স আনুমানিক ২৫- ২৬। আর আপনি তার থেকে ছোট।"
"আমি কিন্তু একবারও বলিনি যে আমি আমরিনের মায়ের থেকে ছোট। ওটা তুমি বলেছিলে। লজিকটা সঠিক কিনা সেটা কিন্তু তুমি জানোনা "
"আচ্ছা আপনার কথাও মানলাম। আন্ট আমার কাছে আরো কিছু লজিক আছে আপনার বয়স সম্পর্কে। "
"সেগুলো বলো শুনি "
"আন্ট সাধারনত বয়স্করা যখন কোনো বাচ্চার নাম বলে বা লেখে তখন সেখানে সম্পূর্ণ নামটা লেখে। আপনি কিন্তু শুধু ডাকনামটা লিখেছিলেন। "
"ও... এটা জানতাম না। আমরিনের পুরো নাম ছিলো 'মোসা: জান্নাতুল আমরিন'। অবশ্য এখন নামটা পাল্টে রাখা হয়েছে 'মোসা: আমেনা খাতুন' তবে লজিকটা কিন্তু পছন্দ হল না"
"আচ্ছা.. আরো একটা লজিক আছে এখানে। "
"আরও একটা?? আচ্ছা বলো শুনি "
"আন্ট আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন। "
"কই?? "
"আপনি বললেন যে আপনার চোখে সমস্যা,হাটুতে সমস্যা,কানে সমস্যা। আপনি ডেন্টিস্টের কাছে যাবেন এ সবগুলোই মিথ্যা "
"কিভাবে এতটা শিওর হচ্ছো?? "
"আন্ট আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা? "
"হ্যাঁ আমি বলেছি তো আমার ডায়াবেটিস আছে। তো সমস্যাটা কোথায়?? "
"আন্ট আপনার যদি সত্যিই ডায়াবেটিস থাকতো তাহলে আপনি সব রোগের আগেই ডায়াবেটিসের কথা বলতেন। যাদের ডায়াবেটিস সহ অন্য রোগ আছে, তারা তাদের রোগের বর্ননা ডায়াবেটিস দিয়েই শুরু করেন। কারন এই ডায়াবেটিস রোগটাকেই তাদের সারাদিন মনে রাখতে হয়। "
"তোমার ধারনা মতে, আমার ডায়াবেটিস নেই। মানলাম। কিন্তু হাটুর ব্যথা,কানের সমস্যা গুলোতো আছে?? "
"আন্ট আপনি আমার কাছে বয়স্ক সাজতে চাচ্ছিলেন। তাই চোখে কম দেখা, কানে কম শোনার কথা বলেছিলেন। আর আমি যখন সব থেকে মারাত্মক বার্ধক্য জনিত রোগ ডায়াবেটিস এর কথা জিজ্ঞাসা করলাম তখন আপনি হ্যাঁ বলে দিলেন।আসলে আপনার এই রোগ গুলার মধ্যে কোনটাই নেই। তাই স্বভাবতই প্রথমে আপনার ডায়াবেটিস এর কথা মনে আসেনি। আর আপনি যেহেতু আমার কাছে বয়স্ক থাকার চেস্টা করছিলেন তার মানে এটাই বোঝা যায় যে আপনার বয়স বেশি না। কারন যে সত্যিই বয়স্ক তার নিশ্চয়ই বয়স্ক সাজার কোনো প্রয়োজন নেই"
"এতটা যখন বলতে পেরেছো তখন এটা বলো যে আমি কেনো মিছে মিছি এই অসুখ গুলোর কথা বললাম?? "
"আন্ট আপনি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলেন তাই আমার কাছে প্রথমে ডেন্টিস্টের কথা জানতে চাইলেন। আর বাকিটা আপনার উর্বর মস্তিস্ক দিয়ে তৈরি করেছেন। তবে চোখের ডাক্তারের পরিক্ষাটা আমার কাছে সত্যিই ভালো লেগেছে,যদিও আমি জানতাম যে সবটাই মিথ্যা। "
"আমার দাতে সমস্যা থাকতেই পারে তাই বলে আমি ডেন্টিস্টের কথা জিজ্ঞাসা করতে পারিনা?? "
"হ্যাঁ আন্ট তা পারেন। কিন্তু, আপনার দাতে সত্যিই সমস্যা থাকলে আপনি নিশ্চয়ই আমার কাছে ডেন্টিস্ট সম্পর্কে জানতে চাইতেননা। আপনি আপনার পরিচিত কারোর কাছে জিজ্ঞাসা করতেন। "
"হুম... তোমার সব কয়টা লজিকই সঠিক। এবার বলো আমার বয়সটা এত নিখুঁতভাবে বললে কিভাবে?? "
"এটা স্রেফ অনুমান ছিলো। "
"তোমাকে তাহলে লজিক ম্যন বলা যায়, কি বলো?? "
"না আন্ট আমার লজিক সবসময় কাজ করে না। "
"হুম..."
"আন্ট "
"হুম... বলো?? "
"আন্ট, সত্যিই মেহেরপুরে আপনার কোনো আত্মীয় নেই?"
"আছে "
"আন্ট, আপনার বাড়ি কি মেহেরপুর? "
"এর পেছনে কি লজিক আছে?? "
"না "
"তাহলে এত জায়গা বাদ দিয়ে মেহেরপুরের কথা কেনো বলছো?? "
"আগে বলেন আপনার বাড়ি মেহেরপুর কিনা? "
"না আগে তুমি এই অনুমানের কারনটা বলো। "
"আন্ট আপনি Bcs দেবেন?"
"এটা কি লজিক থেকে বলছো ?? "
"না "
"আগে এগুলো অনুমান করার কারনটা বলো। তারপর বলবো যে এগুলো সঠিক কিনা?? "
"আন্ট এর কারনটা শুনলেও আপনি বিশ্বাস করবেননা "
"আগে বলোতো দেখি বিশ্বাস হয় কিনা?? "
"না থাক আন্ট। আপনি মনে মনে হাসবেন। "
"হাসলে হাসবো তাতে তোমার কি?? কারনটা বলো। "
"আচ্ছা আন্ট বলছি। "
"হুম..."
"আন্ট আমি জানি আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেননা তারপরও বলি। আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেখানে দেখি আমি Bcs পরিক্ষার ডিউটি করছি। হঠাৎ রুমের সামনে একটা মেয়ে এসে দাড়ালো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'আপনার নাম কি? ' মেয়েটা বললো,'আমার নাম সাবিহা।' আমি বললাম,'আন্ট আপনি? আপনার বাসা কোথায়? 'আপনি বললেন,'আমার বাসা মেহেরপুর।আমাকে পরিক্ষাটা দিতে দিন প্লিজ।' আমি বললাম,'আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো উত্তরটা বলতে পারলে পরিক্ষা দিতে দেবো। ' তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম,'মেহেরপুর কি একটা জেলা?' এপর্যন্তই স্বপ্নটা দেখলাম। "
"তাই নাকি?? "
"জ্বি আন্ট আমি জানি আপনি বিশ্বাস করেননি। "
"হ্যাঁ... ঠিকই ধরেছো। আমি তোমার মেসেজ পড়ে হাসছিলাম। "
"আন্ট আমি সত্যি বলছি "
"আচ্ছা স্বপ্নটা তোমার সম্পূর্ণ মনে আছে?? "
"জ্বি আন্ট "
"তাহলে বলোতো আমার গায়ের রং কি?? "
"সেটা মনে নেই আন্ট "
"আচ্ছা বলো আমার গায়ে কি কালারের ড্রেস পরা ছিলো?? "
"সেটাও মনে নেই। "
"আচ্ছা তুমি Bcs পরিক্ষার গার্ড দিচ্ছিলে কেনো?? "
"সেটা তো জানিনা "
"আর Bcs এক এক্সাম হল এ যেতে দেয়ার জন্য আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করবো কেনো?? "
"সেটা আমি কিভাবে বলবো? স্বপ্ন তো আমি তৈরি করিনি। "
"ও... তাইতো। "
"আন্ট "
"হুম "
"আমিতো আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু বললাম। এবার আপনি বলুন আমার সম্পর্কে আপনার কি ধারনা? "
"তুমি তো তাহসানের ফ্যান তাই না?? "
"হ্যাঁ... আন্ট। "
"সাধারনত ছেলেরা তাহসানের ফ্যান হয়না। ছেলেরা তাহসানকে হিংসা করে। কিন্তু তারপরও তুমি তাহসানের ফ্যান। আর আমি সেটা অনুমান করে বলে দিলাম। এতে তুমি অবাক হওনি?? "
"আপনি অনুমান করে বললে আমি অবাক হতাম। কিন্তু আপনি লজিক থেকে বলেছেন। "
"আর সেই লজিকটা তুমি ধরে ফেলেছো?? "
"জ্বি আন্ট। আমার নামটার মধ্যেই ছিল লজিক। "
"হ্যাঁ... তোমার নামটা তাহসানের নামের সাথে মেলানো। তাই বুঝতে পারলাম যে তুমি তাহসানের ফ্যান। "
"জ্বি আন্ট ঠিক ধরেছেন। তবে আমি তাহসানের গানের ফ্যান নই। আমি তাহসানের পার্সোনালিটির ফ্যান। "
"তবে রাফায়েত নামটা কেনো পছন্দ করলে?? অন্য কোনো নামওতো দিতে পারতে। "
"আমি একটা গল্প লিখেছিলাম সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম রাফায়েত। তাই ওটাই রেখেছি। "
"ও... বুঝলাম। "
"আন্ট আমার সম্পর্কে আর কি মনে হয়?"
"আমার মনে হয় তুমি অনেকটা কষ্টের ভেতর আছো। কারন আচরন দেখে মনে হয় তুমি তোমার নিজের ভেতর লুকানো কথা অন্য কাওকে বলার জন্য ছটফট করছো কিন্তু বলতে পারছো না। "
"আন্ট, কিছুটা ঠিক।"
"আমাকে বলো তোমার সমস্যাটা কি?? "
"আন্ট আমি একটা যুদ্ধে নেমেছি। এই যুদ্ধে দুই রাজা রয়েছে। একজন চাইছেন নিজের রাজ্য টিকিয়ে রাখতে। অন্যজন চাইছেন ওই রাজ্যটা ধংস করতে। আর আমি চাইছি যার রাজ্য তাকে ফিরিয়ে দিতে। তবে মনে হয় আমি পারবো না। দিন দিন হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। মানুষ অনেক কিছু পারে, কিন্তু সব কিছু পারেনা। মানুষের পারার ভেতরেও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আর সেই সীমাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রকৃতি। প্রকৃতি সব জয় মানুষকে দেয়নি কিছু জয় তার নিজের জন্যও রেখে দিয়েছে। "
"হুম... কিছুটা বুঝতে পারছি। তবে হাল ছেড়ো না। অলৌকিক কিছু ঘটতে সময় লাগেনা। হয়তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। "
"না আন্ট সে আশা ক্ষীণ। ওই যে বললাম না প্রকৃতি কিছু জয় তার নিজের জন্য রেখেছে। "
"তুমি এখন কোথায়?? "
"দুঃখিত আন্ট এটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। "
"আরেহ... তুমি কি বাসার ভেতরে নাকি বাইরে?? "
"বাইরে "
"খোলা মাঠে নাকি অন্য কারোর বাসায়?? "
"মাথার ওপর ছাদ আছে। কিন্তু এটা বাড়ি না। "
"তুমি কি কোনো রুমের মধ্যে?? "
"না রুমের বাইরে। "
"রুমের বাইরে কি করছো?? "
"বসে আছি আন্ট। "
"বারান্দায় বসে আছো?? "
"না আন্ট এখানে বসার জাগয়া আছে। "
"রুমের ভেতরে লোক আছে?? "
"হ্যাঁ "
"কতজন?? "
"১ জন "
"রুম কি একটাই?? "
"আমার সামনে একটা। এর পাশে আরো অনেক রুম আছে। "
"সব রুমে ১ জন করে?? "
"হ্যাঁ, অবশ্য নরমাল রুমে একসাথে তিন - চার জন। "
"তোমার সামনের রুমে যে আছে। সে কি করছে?? "
"ঘুমাচ্ছে, আন্ট "
"ও কি অধিকাংশ সময় ঘুমায়?? "
"হ্যাঁ, তবে কখন উঠবে সেটা বলা যায়না। মাঝ রাতেও উঠতে পারে, আবার শেষ রাতেও উঠতে পারে। "
"তোমার সামনে যে ঘুমাচ্ছে, তার বেডসিটের কালার কি?? "
"আন্ট আপনি যেটা ভাবছেন, সেটাই। "
"তুমি জানো যে আমি কোনটা ভাবছি?? "
"জ্বি... জানি। বিনা কারনে আপনি বেডসিটের কালার জানতে চান নি। আর আপনি যেটা ভাবছেন সেটাই সঠিক। "
"তার মানে বেডসিটটা সাদা রংয়ের। আর তুমি এখন হসপিটালে। "
"জ্বি আন্ট। "
"সামনে যে রয়েছে সে তোমার কি হয়?? "
"অনেক কাছের কেও। "
"তুমি সারাক্ষণ হসপিটালেই থাকো? "
"মাঝে মাঝে বাইরে যাই। সেদিন যেমন বন্ধুকে নিয়ে ডেন্টিস্টের কাছে গেলাম। মাঝে মাঝে বাসায় যেয়ে ঘুমাই। এখানে ঘুম ভালো হয়না। আর সারাদিন সময় কাটেনা বলেই ফেসবুকে থাকি। "
"ও...."
"আন্ট "
"বলো "
"আমি আপনাকে বিরক্ত করতাম একটা রহস্যের সমাধান করার জন্য। রহস্যটা আপনাকে নিয়েই। আমাকে সাহায্য করবেন??"
"কি রহস্য?? "
"আমার ওই পোস্টে প্রায় ৩০০০+ কমেন্ট পড়েছে। কিন্তু কেও আমার নাম জানতে চায়নি। কিন্তু দেখলাম একমাত্র আপনি আমার নাম জানতে চাচ্ছিলেন। আর আমি যখন আপনার লিস্টে আসলাম তখন আপনি আমাকে নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। এটা সত্যিই আমার কাছে অনেক বড় রহস্য। "
"না আমি ভেবেছিলাম পোস্টটা আমার পরিচিত কেও করেছে তাই লেখককে খুজচ্ছিলাম। "
"ও... এত সাধারন একটা ব্যপার আর আমি বুঝতে পারছিলাম না?? "
"অনেক সময় অতি সহজ জিনিসও মাথায় আসে না। "
"হ্যাঁ আন্ট এটা হতেই পারে। "
"তুমি সব কয়টা কমেন্ট পড়েছিলে ?? "
"জ্বি আন্ট পড়েছি। "
"এতগুলো কমেন্ট তো কেও সাধারণত পড়েনা। "
"আমি পড়েছিলাম আন্ট। কারন এই পোস্টেই আমি সব থেকে বেশি লাইক পেয়েছি। প্রায় ৩৫০০০+ "
"ও..."
"জ্বি আন্ট। আর কমেন্টগুলোও অনেক ভালোছিলো। চেষ্টা করছিলাম সব কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার জন্য। "
"ও..."
"হুম "
"তুমি এই আইডিটা খুলেছো কবে?? "
"আন্ট আমি এক আইডি বেশিদিন ইউজ করিনা। কিন্তু এই আইডিটা সব থেকে বেশিদিন চালাইছি। আইডি খুলছি প্রায় ৬ মাস হইছে। "
"মনে হয় ১৮ ই জুলাইয়ে খোলা। তোমার টাইমলাইনের ফার্স্ট স্টাটাস এটা। "
"হতে পারে আন্ট। "
"১৮ই জুলাই তারিখটা আমি কখনো ভুলবোনা। "
"কেনো আন্ট? "
"১৮ জুলাই তারিখটা ছিলো ঈদের আগের রাত। তাই ঘুমাতে গেছি অনেক রাত করে। রাতে ফেসবুকে যেয়ে দেখি চ্যাটে কেও নি। হঠাৎ দেখলাম আমার টাইমলাইনে একটা পোস্ট এসেছে। পোস্টটা যে করছে তিনি নিশ্চয়ই চ্যাট অফ করে চালাচ্ছে। পোস্টটা পড়ে ভালো লাগলো । তাই ওই পোস্টে কমেন্ট করলাম। দেখি প্রায় সাথে সাথে রিপ্লাই আসলো। তারপর আসলো মেসেজ। ধীরে ধীরে আমিও মেসেজ দিতে লাগলাম। দুজন দুজনকে বুঝতে শিখলাম। কাছাকাছি আসতে লাগলাম। আমাদের কথা হত ফোনে। ও প্রথমে ওর নাম্বারটা দেয়। তারপর আমি ওকে কল দিই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমরা ভালোবাসার বন্ধনে আটকা পড়েছি। রাতজেগে চলতে লাগলো আমাদের প্রেমালাপ। "
"তারপর আন্ট? "
"আমি কখনো ওকে দেখিনি। জাস্ট ওর ছবিটা দেখেছি ফেসবুকে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম অনেকটা বেশি। তাই ওর অবজ্ঞাটাও আমার কাছে ধরা দিলো অনেক বড় হিসাবে। "
"আন্ট সে আপনার সাথে যোগাযোগ রাখেনি? "
"না... ও এখন Bcs cader, তাছাড়া চাকরি পেয়েছে। অনেক ভালো বেতন। এখন আর আমি কেওনা। আমার সাথে যেটা করেছিলো সেটা ছিলো টাইমপাস মাত্র। "
"আপনি ওর সাথে যোগাযোগের চেস্টা করেননি? "
"করেছি। ওর ফোনে কল দিতাম প্রায়। ও রিসিভ করতো না। একদিন ফোন রিসিভ করল। আমাকে অনেক ঝাড়ি দিলো। তাতে অবশ্য আমার ততটা মন খারাপ হয়নি। কিন্তু এক পর্যায়ে ও আমার বাবা মা কে গালাগালি দিলো। আমার চরিত্র নিয়েও বাজে বাজে কথা বললো। "
"আন্ট আপনি চান যে আবার সব আগের মত হয়ে যাক? "
"নাহ... আমি সেদিনই ওর সামনে যেয়ে দাড়াবো যেদিন আমি নিজেও Bcs cader হব। "
"আপনার মনোবলের কারনে আশা করি আপনি সার্থক হবেন। "
"তাই যেনো হয় "
"আন্ট "
"বলো "
"আপনি এখনো তাকে ভালোবাসেন? "
"না "
"আমাকে সত্যি বলেন "
"আমি সত্যি বলছি "
"আন্ট, আমার পোস্ট দেখে কি আপনরা ওই ছেলেটার কথা মনে হয়নি? "
"হয়েছে। কেঁদেছিলাম তোমার পোস্টটা পড়ে। "
"তারমানে আন্ট আপনি এখনো ছেলেটাকে ভালোবাসেন। "
"হয়তো... কিন্তু আমার জীবনের লক্ষ্য এখন একটাই সেটা হল Bcs cader। "
"আন্ট আপনি এখনো কাঁদছেন? "
"হ্যাঁ "
"মিছেমিছি কষ্ট পেয়ে লাভ কি? আমাদের জীবনটা ভালোখারাপ মিলিয়েই চলে। আশা রাখেন দেখবেন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। "
"হুম...সেটাই যেনো হয়। "
"আন্ট, আমি আইডি ডি এক্টিভেট করে দেবো। "
"এখনই?? "
"আধা ঘন্টার মধ্যেই। "
"তোমার লজিকগুলো কিন্তু সত্যিই দারুন ছিলো। "
"হতে পারে আন্ট। তবে সব সময় কিন্তু আমি লাজিকের পেছনে ছুটিনা। "
"ও..."
"এইযে আন্ট যেমন ধরেন, আমি জানি যে আপনি আমার থেকে বয়সে ছোট। কিন্তু তারপরও আমি আপনাকে আন্ট বলছি। আপনি করে সম্মোধন করছি। আর আপনিও দেখুন চেস্টা করলেও আপনি আমাকে তুমি করে সম্মোধন করতে পারবেননা। এটাও একটা রহস্য। "
"তাই তো... এর কারনটা কি তোমার জানা?? "
"না আন্ট, জানার চেস্টাও করিনি। "
"কেনো?? "
"সব রহস্যের সমাধান হওয়া ঠিক না। প্রকৃতি রহস্যের আধার। সে নিজেও চায় না যে সব রহস্যের সমাধান হোক। আর তাই মানুষের জ্ঞানের মধ্যে দিয়ে দিয়েছে সীমাবদ্ধতা। প্রকৃতিতে এমন অসংখ্য রহস্য আছে যার সমাধান মানুষের পক্ষে সম্ভব না। "
"হয়তো..."
"আন্ট "
"হুম..."
"আমি দুঃখিত আন্ট আমি আপনাকে অনেকগুলো মিথ্যা বলেছি। "
"মিথ্যা?? কোন বিষয়ে?? "
"হাসপাতাল সম্পর্কে যা বলেছি সবটাই মিথ্যা। "
"মিথ্যা তুমি এখন বলছো। তুমি আমার কাছ থেকে সব লুকাতে চাচ্ছো। "
"আন্ট, নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি তার সামনে অসুস্থ রোগীকে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুকে কাটাবে না?"
"এসব কি হচ্ছে?? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না "
"আমি দুঃখিত আন্ট। "
"হুম..."
"আন্ট "
"হুম "
"আমাকে মাফ করেছেন? "
"করেছি। কারনটা হল তুমি সত্যিটা স্বীকার করেছো। "
"ধন্যবাদ। "
"হুম "
"আন্ট "
"বলো "
"একটা প্রশ্ন করবো? একটু ভেবে জবাব দেবেন? "
"করো "
"আপনি কেমন আছেন? এই মুহুর্তে? "
"মন খারাপ। "
"আমার জন্য? "
"হ্যাঁ "
"আমাকে মাফ করেননি? "
"করেছি "
"আন্ট আমি নিজেও জানিনা আমি কেনো এই মিথ্যাগুলো বললাম? "
"তুমিতো স্বীকার করেছো। সেটাই অনেক। আমি তোমার ওপর রাগ করিনি। জাস্ট মন খারাপ ছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। "
"আমি স্বীকার না করলে আমাকে ঘুমাতে দিতোনা। "
"ঘুমাতে দিতো না?? কে ঘুমাতে দিতো না?? "
"স্বপ্ন "
সাবিহা রিপ্লাই দিতে যাবে এমন সময় দেখতে পেলো সেখানে লেখা "You can not replay this conversation...."
হ্যাঁ, রাফায়েত আইডি ডি এক্টিভেট করেছে। রাতটাও অনেক হয়েছে সাবিহা ফোনে সময় দেখলো রাত ৪:১৫ সাবিহার ঘুম আসছে না। উঠে গিয়ে ডায়েরিটা নিয়ে বসলো। ঘরটা অন্ধকার ছিলো। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালালো। সাবিহা ওর পরিবারের সাথেই থাকে। আগে একা ঘুমাতে ভয় পেতো। কিন্তু এখন সবসময় একাই থাকে। দিনরাত পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অর্থনীতিতে অনার্স করছে ফাইনাল ইয়ারে। এখন থেকে Bcs এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। হয়তো আগামী বছর Bcs দেবে। সাবিহা ডায়েরীতে লিখতে শুরু করলো,
'২১-০২-২০১৮
তারিখটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছিলাম। কারন রাত ১২টার পর তারিখ চেন্জ হয়। আবার ডায়েরি লেখার আদর্শ সময় হচ্ছে রাত ১০-১১। এই সময়ে ডায়রি লিখলে সারাদিনের বর্ননা ভালোভাবে দেওয়া যায়। গতকালও সময় মতো ডায়রি লিখতে পারিনি । যা হোক মুল ঘটনা লিখেই ফেলি। রাফায়েত (ছদ্মনাম) ছেলেটা হয়তো আমার থেকে বয়সে বড় কিন্তু আমি কিছুতেই ওকে আপনি করে বলতে পারলাম না। হয়তো এর পেছনে কোনো লজিক লুকিয়ে আছে। লজিক খোঁজাটা আমার কাজ না, ওটা রাফায়েতের কাজ। ওর লজিক গুলো কিছুটা হলেও আমাকে অভিভূত করেছে। বুঝতে পারছিনা ছেলেটা আমাকে এত গুলো মিথ্যা বললো কেনো? হয়তো ও সত্যি বলেছিলো। পরবর্তীতে আবার কথা ঘুরানোর জন্য হয়তো বলেছে যে, ও যা বলেছে সবটাই মিথ্যা। তবে ও আমাকে ওর স্বপ্ন সম্পর্কে অভিভূত করতে চাইছিলো কেনো সেটা বুঝতে পারছিনা। তবে এটুকু নিশ্চিত যে স্বপ্নের ব্যপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ও হয়তো আমার পরিচিত কেও। তাই সহজেই আমার বাড়ি কোথায় পাশাপাশি আমার বয়স কত এগুলো বলতে পেরেছে। তারপরও প্রত্যেকটা জিনিসকে ও সুন্দরভাবে লজিক দিয়ে ব্যখ্যা করেছে এটাতেই আমি মুগ্ধ। আমি ওর নাম দিয়েছি লজিক ম্যান। ইদানিং ফেসবুক চালানো একটু বেশিই হয়ে গেছে। ভাবছি ফেসবুক চালানোটা কিছুদিনের জন্য অফ রাখবো। '
সাবিহার ঘুম আসছে ঘড়িতে দেখলো রাত ৪:৪০। বিনাছায় শুতেই ঘুম এসে গেলো।
রাফায়েত মোবাইলটা অফ করে ঘুমাতে গেলো। পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে ছোট একটা কাজের ছেলে, রাফায়েতের সাথেই থাকে। রাফায়েত শুয়ে পড়েছে কিন্তু ঘুমায়নি। ডায়েরিতে কিছু কথা লিখতে ইচ্ছা করছে কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। আচ্ছা কাজের ছেলেটাকে দিয়ে লেখালে কেমন হয়? রাফায়েত ভাবছে পাশের রুম থেকে কাজের ছেলেটা উঠেছে। অন্ধকারের ভিতরে হাটতে হাটতে টেবিলের ওপর বসেছে। অন্ধকারে লিখতে হয়তো কোনো সমস্যা হবে না। রাফায়েত ভাবতে লাগলো ছেলেটা ওর কাছে জানতে চাইছে যে ডায়েরিতে কি লেখা হবে। রাফায়েত বলে দিলো,
'২১-০২-১৮
আজ আন্ট এর সাথে মেসেজিং হয়েছিলো। আন্টকে কিছু কথা বলা হয়নি। সে কথা গুলোই এখানে লিখছি। আন্ট আপনি নিজেকে কিছুটা চালাক ভেবেছিলেন। কিন্তু আমার ফাঁদ থেকে আপনি বাঁচতে পারেননি। আমি ঠিক যেভাবে আপনাকে ভাবাতে চেয়েছি আপনি ঠিক সেভাবেই ভেবেছেন। এই কাজ গুলো আমি কেনো করেছি সেটা আপনাকে বলিনি। এখন বলছি, প্রথম থেকেই দেখছিলাম আপনি আমাকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই আপনার কাছে গুরুত্ব পাওয়ার জন্য আমি আপনাকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করেছি। আন্ট সব থেকে হাস্যকর কথা কি জানেন? যে কাহিনীটা আপনি সব থেকে বেশি সত্য হিসাবে ভাবছেন সে কাহিনীটাই মিথ্যা আর যে কাহিনীটাকে আপনি জোর দিয়ে মিথ্যা বলছেন সে কাহিনীটাই সত্য। আন্ট আপনি স্বপ্নের ব্যপারটাকে মিথ্যা প্রমান করার জন্য আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে আপনার গায়ের রং কি? আপনার গায়ের রং কালো। আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনার গায়ে কি রংয়ের ড্রেস পরা ছিলো? আপনার গায়ে হালকা আকাশী রং এর একটা জামা ছিলো। আমি আপনাকে এগুলো বলিনি। যদি বলতাম তাহলে আপনি আমার স্বপ্নকে আরো বেশি অবিশ্বাস করতেন। আপনি জানেননা আমার স্বপ্ন অন্যদের থেকে আলাদা। অন্যরা স্বপ্নে কোনো রং দেখেনা কিন্তু আমি দেখি। অন্যরা স্বপ্নের খুব অল্প অংশই মনে রাখতে পারে কিন্তু আমি সবটাই মনে রাখতে পারি। অন্যরা দিনে স্বপ্ন দেখে না কিন্তু আমি দেখি। ঘুম আসছে আন্ট। আর কিছু লিখবো না।' রাফায়েত ভাবছে কাজের ছেলেটা উঠে দাড়ালো, কলমটা টেবিলের ওপর রেখে ওর ঘরের দিকে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
তানিম ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো সকাল ৬:৩০। প্রতিদিন সে এ সময় ঘুম থেকে ওঠে আজও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। পাশের রুমে কাজের ছেলেটা ঘুমাচ্ছে। ওর নাম মানিক। বাড়ির কাজকর্ম করে। অনেকদিনই আছে। সপ্তাহে একদিন বাড়ি যায়। তানিম ওকে স্কুল ভর্তি করিয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে মানিক। প্রতিমাসে দু হাজার টাকা বেতন দেয়। যদিও টাকার অঙ্কটা বেশি না, তবুও মানিককে ওর বাবা মা এখানে রেখেছে কারন কিছু না হোক মানিক পড়ালেখাটা শিখছে। এবার সে ক্লাস ফোরে। তানিমের বাবা মা উভয়ই অনেক আগেই মৃত্যুবরন করেছেন। সংসার জীবনে জড়াবে না এটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে তানিম। তাই তার জীবনে পিছুটান বলতে কিছুই নেই।
সকালে এক কাপ চা তনিমের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। চা সে নিজেই বানায় আজকেও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। সোফায় বসে চা খেতে লাগলো মনযোগ দিয়ে। এর মধ্যেই মানিক ঘুম থেকে উঠেছে। তানিমের কাছে এসে দাড়িয়ে বললো,
'স্যার, চা ডা আমি বানাই দিতাম। '
'না থাক। তুই বরং একটা ডিম ভাজি কর, আর কিছু পরোটা বানা । ১০:৪৫ এ একটা ক্লাস করাতে হবে। তার আগে বাজার থেকে কিছু ময়দা কিনে দিয়ে যাবো। '
'জ্বি স্যার আমি বানাইতাছি। আপনে খাইয়া যান। '
মানিক এখানে আছে প্রায় দুই বছর। প্রতিদিনই সকালে তানিম চা বানায় আর প্রতিদিনই মানিক এসে বলে, স্যার চা ডা আমিই বানাই দিতাম। হয়তো কৃতজ্ঞতা থেকেই বলে। তানিমকে ও স্যার বলে ডাকে। তানিম একটা সরকারি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।
সকাল ১০:৪৫
অনার্স তৃতীয় বর্ষের শ্রেণীতে প্রবেশ করলো তানিম মাহমুদ। তার সাবজেক্ট হল Classical Mechanics and Special Theory of Relativity. ক্লাস করাতে শুরু করলো তানিম। টপিক ছিলো Special Theory of Relativity এর মধ্যের Michelson-Morley experiment .। সে সম্পূর্ণ পরীক্ষাটার বিবরন বর্ননা করলো। এই কলেজের সর্বকনিষ্ঠ অধ্যক্ষ তানিম। কিন্তু পরিচিতির দিক থেকে অন্যদের ছাপিয়ে গেছে। খুব সহজ ভাষায় বোঝানোর অসম্ভব ক্ষমতা রয়েছে তার। কলেজের প্রত্যেকটা ছাত্রছাত্রী তাকে যতটা সম্মান করে ঠিক ততটাই ভালোবাসে। কলেজের অন্যান্য টিচাররাও তাকে যথেষ্ট স্নেহ করে।
ক্লাসে পড়ানো শেষ হলে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট সে পাঠ্যবইয়ের বাইরের বিষয় নিয়ে আলোচনা। এই সময়টা ছাত্রছাত্রীদের কাছেও আনন্দদায়ক। অবশ্য পরের পিরিয়ড গ্যাপ থাকলে সময়টা পাঁচ মিনিটে সীমাবদ্ধ থাকেনা। মাঝে মাঝে এই সময় সে ছাত্রদের কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। ছাত্রছাত্রীরাও অবাক হয়ে ভাবে, পদার্থবিজ্ঞানের মত একটা সাবজেক্টের টিচার কবিতা পড়তে ভালোবাসে!! আজকের ক্লাসের পরের পিরিয়ড খালি। তাই সবাই একটু খুশি। ক্লাস শেষ হওয়ার পর শুরু হল 'গল্প ক্লাস'। আজকের গল্প ক্লাসটা শুরু হল একটা ছাত্রের প্রশ্ন দিয়ে। ছাত্রটা প্রশ্ন করলো আর তানিম জবাব দিতে লাগলো ,
''স্যার, পদার্থ বিজ্ঞানে যে সকল বিষয়ের ব্যখ্যা নেই সে সকল বিষয়ের অস্তিত্ব নেই, এটা কি বলা যায় না?''
"তুমি সব বিষয়কে পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করতে পারবে? "
"এই মুহুর্তে হয়তো পারবো না। একটু খুজলেই পেয়ে যাবো। "
"আচ্ছা, তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখোতো পদার্থবিজ্ঞানে মানুষের মৃত্যুর ব্যখ্যাটা কি? এত মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে মানুষ পৃথিবীতে বাস করছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেও আজীবন জীবিত থাকতে পারেনি। মানুষের মৃত্যুর ব্যখ্যা কি পদার্থবিজ্ঞানে আছে? যদি না থাকে তাহলে কি এটা বলা যায় যে মৃত্যুর কোনো অস্তিত্ব নেই?? "
" স্যার,ইন্টারনেটে হয়তো 'পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে মৃত্যুর ব্যাখা' এইটাইপের কিছু থাকতে পারে। "
ছাত্রটির এই কথা শোনা মাত্রই ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তানিম বললো,
"আচ্ছা যদি কখনো মৃত্যুর রহস্যটা খুজে বের করতে পারো, তাহলে আমাকে সেই রহস্যটা জানিও। মৃত্যু নিয়ে আমার আগ্রহ বেশি। তোমার কথাটা ঘুরিয়ে বললেই সেটা সঠিক হবে, আমরা পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে যে সকল বিষয়ের পরীক্ষা মূলক ব্যখ্যা করতে সক্ষম হয়েছি সে সকল বিষয়ের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু যে বিষয় গুলো ব্যখ্যা করা যায়নি সে বিষয়গুলোর অস্তিত্ব থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। শুধু পদার্থবিজ্ঞানেই নয়। সমগ্র বিজ্ঞানে এমন কিছু বিষয় আছে যার কোনো ব্যখ্যা নেই। আজকে এই ব্যখ্যাতীত একটা বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আজকে কথা বলবো প্যারাসাইকোলজি নিয়ে।
'প্যারাসাইকোলজি মনোবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা আপাত অব্যাখ্যাত মানসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। প্যারাসাইকোলজিকে সাইকোফিনোমিনাও বলে।
প্যারাসাইকোলজির উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় গুলো হলো :
প্যারানরমাল ফিনোমেনা,
এবনরমালিটি ডিসঅর্ডার,
টেলিপ্যাথি,
সিক্সথ সেন্স
প্রিকোগনিশন,
মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার,
এন্টি হিউম্যান,
এক্সিটেন্স অব এন্জেইল,
প্যারানরমাল ইনসিডেন্ট,
অতি-প্রাকৃত ক্ষমতা ,
ন্যাচারালিস্টিক এ্যাবিলিটি (অটোসাজেশন),
মেডিটেশন,
মৃত্যু-সন্ধিক্ষণের অভিজ্ঞতা,
ইএসপি (Extra Sensory Perception) বা অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি,
প্ল্যানচেট,
ফ্যান্টাসি অব সাবকনশাস,
হেলুসিনেশন,
মিথলোজি,
মোহাম্মেডান মিথলোজি,
মেন্টাল ইন্টারফেস কানেক্টিভিটি,
বায়োকারেন্ট,
মাইন্ড রিডিং,
এনোমেলাস সাইকোলজি,
সাইকোলজিক্যাল ক্রিটিজম ইত্যাদি।'
অন্যকোনোদিন সময় পেলে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এই কয়টা বিষয়ের মধ্যে আমার সব থেকে ভালোলাগে যেটা সেটা হল ন্যাচারালিস্টিক এ্যাবিলিটি বা অটো সাজেশন। এই ক্ষমতা তোমার মধ্যে বেশি পরিমানে থাকলে তুমি ইচ্ছা করলেই অন্য কারোর ব্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এটা খানিকটা হিপনোটিক সাজেশনের মত। কিছু কিছু মানুষ এই ধরনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আচ্ছা, আজকের গল্প ক্লাস এখানেই শেষ। "
সন্ধ্যা ৬:৩৩
তানিম বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ছে। বইটা বিছানার ওপর রাখা। হাতে এক কাপ চা। বইটার নাম Parapsychology: The Controversial Science। যদিও সে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক কিন্তু প্যারাসাইকোলজির অসংখ্য বই তার মুখস্ত। পৃথিবীতে রহস্যময় অনেক কিছুই ঘটে তার ব্যখ্যা সব সময় পাওয়া যায়না।
সকাল ৮:১২
অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আকিব। মা ছেলের ছোট পরিবার। আকিবের বাবা মারা গেছেন বছর দুয়েক হল। পড়ালেখায় খুবই ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। সে এখন Bcs cader.। সকালের ব্যস্ততা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। পোশাক পরতে পরতে মায়ের সাথে কথা বলছে সে,
"মা, আমার সাদা শার্টটা কই? "
"আলমারীর মধ্যে রাখছি। ২ নাম্বার তাকে সাজানো আছে দেখ "
"পাইছি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি নাস্তা রেডি করো। ৯:০০ টায় একটা মিটিং আছে। "
"করছি... আজকে রহিমাও কাজে আসেনি। খোঁজ নিজে দেখিস তো, বেচারি অসুখে পড়েছে কিনা? সুস্থ থাকতে তো কাজে ফাকি দেয়না। "
"আচ্ছা অফিস থেকে আসার সময় খোঁজ নেবো। "
"এই অসময়ে আবার কে আসলো? আকিব দেখতো কলিং বেল চাপছে কে? "
"আচ্ছা মা দেখছি। "
দরজা খুলতেই দেখাগেলো মাঝবয়সী একটা লোক। সুদর্শনও বটে। আকিবের মনে হচ্ছে কোথায় যেনো লোকটাকে দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারলোনা। তাই জানতে চাইলো,
"আপনাকে ঠিক চিনলাম না "
"আমি আকিব সাহেব কে খুজছি। তিনি বাসায় আছেন? "
"জ্বি আমিই আকিব "
"ও তুমি? "
"হ্যাঁ "
"আমার নাম তানিম মাহমুদ। আমি A.B.F. ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। "
"স্যার আপনি?? ভিতরে আসুন..."
"আমার মনে হচ্ছে তুমি কোথায়ও বেরোচ্ছো। তাহলে আমি না হয় অন্যদিন আসবো। "
"না স্যার, তেমন কিছুনা, অফিসে একটা মিটিং ছিলো। আমি এক্ষুনি ক্যানসেল করে দিচ্ছি। "
"না, মিটিং ক্যানসেল করতে হবে না। আমি জাস্ট আধা ঘন্টা থাকবো। "
"আমার বাসায় এসেছেন নাস্তা না করে কিন্তু যেতে পারবেননা স্যার। "
"না আমি নাস্তা করেই বেরিয়েছি। সকাল ৯:১৫ একটা ক্লাস আছে "
"তাহলে অন্যদিন আসবেন কিন্তু। "
"আচ্ছা। তুমি কি আমার স্টুডেন্ট ছিলে? "
"না স্যার... আমাদের ব্যাচ কলেজ থেকে বের হবার দু বছর পর আপনি জয়েন করেছেন। আর আপনাকে কে চেনেনা বলুন? সারাদেশে আপনার প্রচুর খ্যাতি। "
"আচ্ছা আমি একটা কাজে এসেছিলাম। "
"জ্বি স্যার বলুন। "
তানিমের কথা গুলো শুনে আকিব যেন বজ্রাহত হলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা। তামিন বললো "আজ তাহলে আমি আসি। " আকিব হ্যাঁ / না কিছুই বললো না। তানিম দরজা খুলে চলে গেলো ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্য। আকিব কিচ্ছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকলো। তারপর ফোন দিলো ওর পারসোনাল অ্যাসিসট্যান্ট এর কাছে,
"ফারুক ভাই। "
"জ্বি স্যার বলেন। "
"মিটিংটা ক্যানসেল করে দেন "
"জ্বি স্যার "
"আর সবাইকে বলে দেন আমি একসপ্তাহের জন্য অফিসে আসবো না। "
"স্যার আপনার শরীর খারাপ নাকি? "
"না একটা জরুরী কাজে ঢাকার বাইরে যাবো। "
"জ্বি স্যার আমি সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি। "
ফোনটা রেখেদিয়ে তানিম ট্রাভেল ব্যাগে ওর জামা কাপড় রেডি করলো। বেরোনোর আগে মাকে বললো আমি মেহেরপুর যাচ্ছি। এসে সব বলবো। বেরোনোর আগে মা বললো,
"কবে ফিরবি,বাবা?"
"তিন চার দিন লাগতে পারে। যদি সব কিছু ঠিকটাক হয় তাহলে তোমাকেও নিয়ে যাবো। "
"কি এমন কাজ যে আমাকে যেতে হবে? "
"আগে ওখানে যেয়ে দেখি পরিস্থিতি কি? "
"থাকবি কোথায়? "
"হোটেলে "
"আচ্ছা সাবধানে যাস "
"আচ্ছা মা, দোয়া কোরো যেনো সবকিছু ঠিক থাকে। "
"আমি সব সময় তোর জন্য দোয়া করি। "
আকিব বেরিয়ে গেলো। ঢাকা থেকে ফ্লাইট নিয়ে সোজা যশোরে এসে নামলো। রাতটা কাটালো একটা হোটেলে। পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে গেলো মেহেরপুরের উদ্যেশ্যে।
রাত চারটার দিকে ঘুমিয়েছিলো সাবিহা। টানা চার ঘন্টার ঘুম দিয়ে উঠলো সকাল আট টায়। পানি গরম করে টি ব্যাগ দিয়ে এক কাপ চা বানালো। চা খাওয়ার পাশাপাশি 'আজকের বিশ্ব ' বইটাতে চোখ বোলাতে লাগলো। ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে সাবিহা। ইদানিং তার ফোন সবসময় অফ থাকে। ফোন ইউজ করতে ভালো লাগেনা। সারাদিন বাসায় থাকে। তাই কেও ফোন করলে বাসার নম্বরেই ফোন দেয়। অবশ্য অনেকদিন কেও সাবিহাকে ফোন দেয়না। বাইরের জগতের সাথে তার যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফেসবুক আইডিটাও ডিএক্টিভেট। তার লক্ষ্য একটাই Bcs cader.। হঠাৎ সাবিহার বাবা এসে বললেন ওকে কে যেনো ফোনে খুজছে। ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে বললো,
"আপনি কি সাবিহা? পিতা : জাফর হোসেন? "
"জ্বি.. আপনি কে? "
"আমি মেহেপুর D.C. অফিস থেকে বলছি। আপনি একটু দেখা করতে পারবেন? স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন। "
"কোনো সমস্যা? "
"সেটা তো আমি জানিনা না। স্যার বলতে পারবেন। আপনি একটু আসুন প্লিজ"
"আচ্ছা আমি আসছি "
"ধন্যবাদ "
ফোনটা রেখেদিয়ে কিছুটা চিন্তিত বোধ করছে সাবিহা। পাশের ঘর থেকে সাবিহার বাবা জানতে চাইলেন,
"কে ফোন করেছিলো, মা?? "
"D.C. অফিস থেকে বাবা। "
"D.C. অফিস?? কি হয়েছে, মা?? "
"জনিনা বাবা। এখনই যেতে হবে। "
"আমি যাবো তোর সাথে?? "
"না বাবা, আমি একাই যেতে পারবো।"
"দেখ। যা ভালো বুঝিস। "
দ্রুত ফ্রেশ হয়ে একটা পেস্ট কালারের জামা পরলো সাবিহা। অনেকদিন পর আয়নার সামনে বসলো আজ। বেশি সাজগোজ করার অভ্যাস ওর কখনোই ছিলোনা। চুলটা আচড়ালো। কপালের মাঝে খানে কালো একটা টিপ পরলো। হাতে একটা পার্টস নিলো। সাথে ফোনটাও নিলো।তারপর বেরোনোর সময় বললো,
"বাবা, মা কোথায়? "
"পাশের বাড়িতে গেছে। "
"আচ্ছা, মাকে বলো যে আমি বেরিয়েছি। "
"ঠিক আছে মা, সাবধানে যাস। "
"আচ্ছা বাবা। "
সকাল ১০:৪৫
গাড়ি থেকে নেমে D.C. অফিসে ঢুকলো সাবিহা। সোজা যেয়ে বাম দিকে গেলো। D.C. স্যারের রুমের সামনে একজন দাড়িয়ে আছেন। সাবিহা যেয়ে বললো,
"আমি স্যারের সাথে দেখা করতে চাই। "
"আপনার নাম? "
"সাবিহা "
"ও... আপনি?? আমি স্যারের অ্যাসিসট্যান্ট। আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম। আপনি ভেতরে যান। স্যার অপেক্ষা করছেন। "
"আচ্ছা "
সাবিহা ঢুকেই দেখলো D.C. স্যার তার সিটে বসে আছেন। লোকটার বয়স বেশি না। হয়তো ৩৪-৩৫ হবে। তার সামনে দুটো চেয়ার। একটাতে অন্য একটা লোক বসে আছে। স্যারের দিকে মুখ করে বসে আছে। সাবিহা ঢুকতেই স্যার সাবিহার দিকে তাকালো। সাবিহা বললো,
"আস্সালামু আলাইকুম। "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম। আপনি? "
"আমি সাবিহা। "
নামটা শোনা মাত্রই স্যারের সামনে বসে থাকা লোকটি দ্রুত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সাবিহার দিকে। না... চিনতে ভুল হয়নি। সাবিহা কখনো ভাবেনি যে এরকম একটা মুহুর্ত তার জীবনে আসবে। সবকিছুই যেনো গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। সাবিহা যতটা অবাক হয়েছে। ঠিক ততটাই অবাক হয়েছে লোকটা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গলা ঝেড়ে শব্দ করলেন D.C. স্যার। তারপর বললেন,
"সবিহা, এখানে বসো। "
"জ্বি স্যার "
"আমাকে স্যার বলা লাগবে না। ভাই বলবা। আমি আকিবের বড় ভাই বলতে পারো। একই জায়গায় বাড়ি আমাদের। ও আমার অনেক জুনিয়র । কিন্তু আমরা অনেক ফ্রি। আজকে সকালে আমার কাছে এসে তোমার কথা বললো। আমি ওকে সারপ্রাইজড করার জন্য বলেছিলাম যে তোমার ঠিকানা পাওয়া যায়নি। ও খুব টেনশনে ছিলো। তোমার ফোনটাও তো অফ তাই না? "
"আসলে স্যার...."
"আবার স্যার?? ভাই বলবা ঠিক আছে?? "
"আসলে ভাইয়া পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই..."
"থাক বলতে হবেনা বুঝে গেছি। তোমরা দুহটাই একই গোয়ালের গরু। পড়ালেখা সামনে থাকলে দুনিয়ার সব কিছু ভুলে যাও। "
সাবিহা মুচকি হাসলো। ওর পাশের সিটে বসে আছে আকিব। আকিবের সাথে সাবিহার পরিচয় হয় ফেসবুকে। তারপর আকিব হঠাৎ সাবিহার প্রতি আকর্ষণ হারাতে শুরু করে। সাবিহা ফোন করলে ওকে প্রচুর বকাবকি করতো। আর সেই রাগেই সাবিহা Bcs cader হতে চেয়েছিলো। আকিবের কারনেই এতদিন সে নিজের ভেতরে থাকা আগুনে জ্বলেছে। কিন্তু আজ ওর জন্য ঢাকা থেকে মেহেরপুরে এসেছে। D.C. অফিসকে পর্যন্ত কাজে লাগিয়ে দিয়েছে সাবিহাকে খুজে বার করবার জন্য। D.C. স্যার আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
"আকিব "
"জ্বি ভাই "
"আমি একটু বেরুবো। তোমরা থাকতে চাইলে এখানে থাকতে পারো। আর এখানে ভালোনা লাগলে আমার বাসায় যেতে পারো। তোমার ভাবীকে আমি সব বলে রেখেছি। "
"না ভাই,একটু বাইরে যাবো। আটকা জায়গায় থাকতে আর ভালো লাগছে না। একটু পার্কের দিকে যেতে পারি। "
"আচ্ছা। তোমরা আসো তাহলে। আমি বেরোচ্ছি। "
"আচ্ছা ভাই। "
D.C. স্যার চলে গেছেন পাঁচ মিনিট হল। কেও কোনো কথা বলছে না। আকিব প্রথমে বলা শুরু করলো,
"একটা প্রশ্ন করবো? "
"হুম..."
"কেমন আছো?? "
প্রশ্নটা শুনে সাবিহা তাকালো আকিবের দিকে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে এক ফোটা অশ্রু এসে হাজির হয়েছে। সে অশ্রু দুঃখের নয়, আনন্দের। একথাটাই সাবিহার সাথে সবসময় বলতো আকিব। যে কোনো কথার মাঝে হঠাৎ করেই এভাবে জিজ্ঞাসা করতো। তখন অবশ্য সাবিহা খুব বিরক্ত হতো। মাঝে মাঝে রাগ করে বলতো,'এত ঢং করে বলার কি আছে? সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেই তো পারো যে আমি কেমন আছি ' কিন্তু আজ ওই কথাটাই তার চোখের কোনে অশ্রু এনে দিলো। সত্যিই সময় বড়ো খারাপ জিনিস। আকিব আবার বললো,
"বাইরে যাবে? "
"কোথায়? "
"চলো পার্কে যেয়ে বসি।"
"কেনো? "
"তোমার সাথে কিছু কথা আছে। "
"আচ্ছা চলো। "
পার্কে যেয়ে একটা বেঞ্চে বসলো ওরা দুজন। আবার কিছুক্ষণ চললো নিরবতা। তারপর আকিবই আবার শুরু করলো,
"কেমন আছো বললেনা যে? "
"এইতো আছি কোনো রকম। "
"আমি দুঃখিত। "
"কেন?? "
"তোমার সাথে যা কিছু হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী।"
"আমি তো কখনো বলিনি যে তুমি দোষী। যা হয়েছে সবটাই ছিলো আমার ভাগ্যের লিখন। "
"আমাকে মাফ করা যায় না? "
"এখানে কি কাজে এসেছিলে? "
"তোমার কাছে এসেছিলাম। "
"এতদিন পর হঠাৎ আমার কথা মনে পড়লো কেনো?"
"আমাকে তুমি মাফ করে দাও সাবিহা। অহংকার আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো। আমার অহংকার আজ চূর্ণ হয়েছে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। "
"আর কিছু বলবা? "
"হ্যাঁ "
"বলো, আর কি বলার আছে তোমার? "
"আমি তোমাকে ভালোবাসি। "
একমুহুর্তের জন্য সাবিহা যেনো স্থির হয়ে গেলো। সত্যিই বাস্তব জগতটা একদম আলাদা। এই একই কথা আকিব ওকে ফোনে অসংখ্যবার বলেছে। কিন্তু আজ যখন সামনাসামনি বলছে তখন সত্যিই তা অন্যরকম শোনাচ্ছে। সাবিহা অনেক শক্ত মনের কিন্তু আজ সে সহ্য করতে পারছেনা, অশ্রুরা হয়তো থামতে শেখেনি। চোখের পাতাদুটো ভারি হয়ে উঠেছে। তবুও অভিমান এতটা সহজে ভাঙ্গেনা। সাবিহা বললো,
"আমাকে ভালোবাসো? এত দিন কোথায় ছিলো তোমার ভালোবাসা? "
"আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ.... আর কোনোদিন তোমাকে কষ্ট দেবোনা। সত্যি বলছি। প্রমিজ। "
"সত্যি? "
সাবিহাকে একহাত দিয়ে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিলো আকিব। অন্যহাতে চোখের পানি মুছে দিলো। সাবিহাও মাথা গুজে দিলো আকিবের বুকে।
এইদিনটার স্বপ্নই একদিন দেখতো সে। একটা ঝড় যেনো ধংস করে দিয়েছিলো সবকিছু। সব কিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে এটা সে কখনো ভাবেওনি। কিন্তু আজ সব ঠিক হয়ে গেছে এটাই বাস্তবতা। আকিব বললো,
"তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে তোমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারি? "
"কিসের প্রস্তাব? "
"গাধী কোথাকার, আমাদের বিয়ের প্রস্তাব। "
সাবিহা যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবটাই তার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। একমুহুর্তের জন্য তার মুখে ভয়ের ছায়া নেমে আসলো। ভয় একটাই যদি স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আকিব ডাকলো,
"সাবিহা, কি হয়েছে?? "
"তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবেনা তো?? "
"তোমাকে ছেড়ে আর কখনো যাবোনা। সত্যি বলছি।"
"মনে থাকবে তো? "
"অবশ্যই মনে থাকবে। আমার গাধীটাকে আমি কখনো ছেড়ে যেতে পারি?? "
"কি?? আমি গাধী?? তুমি গাধা। "
"তুমি গাধী নওতো কি?? জলহস্তী?? "
"আর একবার জলহস্তী বললে তোমার সাথে আর কথাই বলবো না। "
"আচ্ছা সরি... আর বলবো না। "
"হুম... মনে থাকে যেনো। "
"আচ্ছা। কালকে মা কে নিয়ে এসে তোমাদের বাসায় যাবো। "
"আচ্ছা "
"চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। "
"আচ্ছা চলো। "
আকিবের মা মেয়ে দেখে পছন্দ করলেন। তার ভাষ্য মতে কালো মেয়েরা এতটা সুন্দরী হতে পারে তা তিনি এই প্রথম জানলেন। পাত্র হিসাবে আকিব ছিলো উপর্যুক্ত। চেহারাও ভালো। পাশাপাশি একজন Bcs cader সে। ওদের বিয়েটা হলো মহা ধুমধামে। বিয়েতে রীতিমতো মেহেরপুরের D.C. অফিসার স্বয়ং এসেছেন, বিয়েতো জাঁকজমকপূর্ণ হবেই। সাবিহাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসলো আকিব।
বিয়ের মাস ছয়েক পরে আকিবের মা মারা গেলেন। পুরো পরিবারটাতে নেমে আসলো শোকের ছায়া। কিন্তু দিন যত পার হয়, স্মৃতির পাতায় ধূলোটা তত বেশি জমে। একসময় ধূলোর আড়ালে চাপা পড়ে যায় পুরোনো স্মৃতিগুলো।
সাবিহা পড়ালেখা করছে। Bcs cader সে হবেই।
৩০-০৫-২০১৯
আকিব আজ সকাল সকাল উঠেছে। সাবিহার আজ Bcs পরিক্ষা। আকিব আজ অফিসে যাবেনা। আজ সারাদিন সাবিহার সাথে থাকবে। সাবিহা সাধারণত সাজগোজ করেনা, আজো সাজলো না। একটা হালকা আকাশি কালারের জামা পরলো। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে তারা উভয়ই বেরিয়ে গেলো। অবশ্য বেরুতে একটু দেরি হয়েছে। সমস্যাটা হল রাস্তায়। প্রচুর জ্যাম। শেষে আকিব ড্রাইভারকে বললো গাড়ি বাসায় নিয়ে যেতে। আর ওরা দুজন গাড়ি থেকে নেমে হাটতে শুরু করলো। অবশেষে ওরা পৌছালো কিন্তু পাঁচ মিনিট দেরিতে। সাবিহা দ্রুত হল এর দিকে গেলো। আকিব বাইরে বসলো। অন্য শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরাও সেখানেই অপেক্ষা করছে। সাবিহা একটু চিন্তিত। যদিও তার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে। রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় রুম থেকে বেরিয়ে এল একজন লোক। দেখতে বেশ স্মার্ট। মাঝ বয়সী, তবে বয়সের ছাপটা এখনো পড়েনি। সাবিহাকে দেখেই ছুটে এল। মনে হচ্ছে এখানে গার্ড দিচ্ছে। লোকটা সাবিহাকে জিজ্ঞাসা করলো,
"আপনার নাম কি? "
"আমার নাম সাবিহা। "
"আন্ট আপনি? আপনার বাসা কোথায়? "
সাবিহার মনে হল লোকটার মাথায় গন্ডগোল আছে। যা হোক যত তাড়াতাড়ি ঝামেলা মেটানো যায় ততই ভালো। তাই তড়িঘড়ি করে জবাব দিল,
"আমার বাসা মেহেরপুর। আমাকে পরীক্ষাটা দিতে দিন প্লিজ। "
"আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো উত্তরটা বলতে পারলে পরিক্ষা দিতে দেবো। মেহেরপুর কি একটা জেলা? "
"হ্যাঁ, এবারতো যেতে দিন। "
"আচ্ছা আন্ট, যান। "
সাবিহা রুমে ঢুকলো। ৭ মিনিট দেরি। এই সময়ে ১টা সেকেন্ডের মূল্য অনেক আর সেখানে ৭টা মিনিট নষ্ট হল। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে সাবিহার। ও অবশ্যই পারবে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে পরীক্ষায় মন দিলো। একটানা পরীক্ষাটা দিয়ে বাইরে বের হল। দূরে আকিবকে দেখা যাচ্ছে। সাবিহা আকিবের দিকে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেও ডেকে উঠলো,
"আন্ট, একটু দাড়ান। "
আরে এ তো সেই লোকটা। এখানে যেহেতু গার্ড দিচ্ছে সেহেতু হয়তো কোনো সরকারী কলেজের শিক্ষক। পাগল কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। এমনিতেই সাবিহার দেরি হয়ে গেছিলো তার ওপর এই লোকটা আরো দুই মিনিট দেরি করালো। অবশ্য পরীক্ষাটা ভালো হয়েছে। এখন আবার কি চায় কে জানে? লোকটা এসে সাবিহাকে বললো,
"আন্ট, আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না? "
"আপনি আমার বয়সে বড়। আমাকে আন্ট বলছেন কেন?? আর আমাকে আপনি আপনি করে বলছেন কেনো?? "
"আন্ট আমি রাফায়েত "
"নামটা চেনা চেনা লাগছে "
"আন্ট... ফেসবুক.... স্বপ্ন..."
"ওহো..... আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তুমি?? মানে আপনি?? রাফায়েত?? "
"হ্যাঁ, আন্ট "
"কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? "
"আন্ট পৃথিবীতে অনেক কিছুই সম্ভব। "
"আপনি আমাকে আন্ট ডাকবেননা প্লিজ। "
"আচ্ছা, চলুন। আকিব দাড়িয়ে আছে। "
"আপনি আকিবের নাম জানলেন কিভাবে? "
"ওখানে চলুন... গেলেই বুঝতে পারবেন। "
"আপনি আমাকে তুমি করে বলুন। "
"আচ্ছা, এখন চলো। "
আকিবের কাছে এসে দাড়াতেই, আকিব বললো,
"স্যার, আপনি?? "
"হ্যাঁ, এখানে গার্ড দিতে এসেছিলাম। "
"স্যার আপনি গার্ড দেন? "
"আগে কখনো দেইনি। কিন্তু এবার দিতে ইচ্ছা হল তাই দিলাম। "
ওদের কথা শুনে সাবিহা কিছুটা অবাক। সাবিহা আকিবকে বললো,
"তুমি রাফায়েত স্যারকে চেনো?? "
"রাফায়েত?? সেটা আবার কে?? "
"কেন ইনিই তো রাফায়েত? "
"আরেহ না,ইনার নাম তানিম। খুব ভালো টিচার। পুরো দেশে ইনার বেশ খ্যাতি। "
সাবিহা আর আকিবের কথা শুনে মিচকি হাসলো তানিম। তারপর বললো,
"আমার কথা শোনো। আমার নাম তানিম মাহমুদ। আর রাফায়েতটা ছিলো আমার ছদ্মনাম। আমি A.B.F. ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক। আচ্ছা আমার মনে হয় তোমরা ক্লান্ত। আজ বাসায় যাও অন্যকোনোদিন কথা বলবো। "
আকিব বললো,
"স্যার, আপনাকে সেদিন আমি ধন্যবাদও দিতে পারিনি। "
"ধন্যবাদটা অন্যদিন নেবো। আজ তোমরা বাসায় যাও। "
রাতে সাবিহা আর আকিবের মধ্যে কথা হল তানিমকে নিয়ে। তারা দুজনই বেশ অবাক হল তানিমকে নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে ওদের কাছে। যার উত্তর কেবল তানিমের কাছেই রয়েছে।
সকাল ৯:২১
তানিমের আজ ক্লাস নেই। তাই ও আজ বাড়িতেই থাকবে। সকাল থেকে পাঁচকাপ চা খেয়েছে। অন্যদিন এত কম সময়ের মধ্যে পাঁচকাপ চা খাওয়ার সময় পায়না বা খায়ওনা। আজকে খেয়েছে। মানুষ কিছুকাজ করে কারন ছাড়া তানিমের এই কাজটাও তারমধ্যে একটা। মানিক ঘুম থেকে ওঠার সাথেই ও মানিককে বলে দিয়েছে, আজ বাড়িতে আত্মীয় আসছে। রান্নার মেনু হিসাবে থাকছে ডিমভুনা, আর কবুতরের মাংস।
সাবিহা আর আকিব তৈরি হচ্ছে। আজ তানিম স্যারের বাসায় যেতে হবে। অনেকদিন ধরেই যাবে যাবে ভাবছে কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না। তানিম স্যারের সাথে লাষ্ট দেখা হয়েছিলো পরীক্ষার সময় প্রায় ছয় মাস আগে। সাবিহা আজ শাড়ি পরেছে। হালকা নীল কালারের শাড়ি। স্বভাবসুলভ কপালের মাঝে একটা কালো টিপ। এটা তার সাধারন সাজ। তবে একটা বিশেষ বিষয়ে আজ সে ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। চুলগুলো আচড় দিয়েছে বাম দিক থেকে। আগে কখনো এভাবে চুল আচড়ায় নি। একদিক থেকে চুল আঁচড়ানোয় ভালোই লাগছে তাকে। গাড়ি নিয়ে বেরুলো তারা। তানিম স্যারকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি, এটা সাবিহার দাবি ছিলো। সে তানিম স্যারকে সারপ্রাইজড করতে চায়। গাড়িটা পার্ক করে গেলো তানিম স্যারের রুমের দিকে। কলিং বেলে চাপ দিতে যাবে এমন সময় দরজাটা খুলে গেলো। ছোট একটা ছেলে বেরিয়ে এল। বয়স ০৯-১০ হবে। আকিবের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,
"ভেতোরে আসেন "
ভেতরে যেতে যেতে তানিম বললো,
"তোমার নাম কি? "
"মানিক"
"তুমি স্যারের সাথে থাকো? "
"জ্বি "
ছেলেটা হয়তো কম কথা বলে। অথবা অপরিচিত লোকদের সাথে কথা বলতে হয়তো সাচ্ছন্দ বোধ করেনা। একটা বিষয় নিয়ে প্রথমেই খটকা লাগলো সাবিহার । তানিম স্যার কি জানেন যে, আজ তারা বেড়াতে আসছেন? হয়তো সিসি টিভি ক্যামেরা রাখা আছে বাড়ির সামনে। যদিও ক্যামেরা তাদের চোখে বাধেনি। রুমগুলো সত্যিই দারুন। মানিক তাদের গেস্ট রুমে পৌছে দিয়ে গেছে। গেস্ট রুমে সোফা সাজানো তার একটায় তানিম স্যার বসে আছেন হাতে বই নিয়ে। তানিম স্যারকে দেখে আকিব বললো,
"আস্সালামু আলাইকুম,স্যার "
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম। আকিব কেমন আছো? "
"স্যার আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? "
"হ্যাঁ, সবার চেহারা মনে রাখিনা কিন্তু তোমারটা মনে রেখেছি। সাবিহা,কেমন আছো? "
"জ্বি স্যার ভালো আছি। "
"Bcs কমপ্লিট করেই ফেললে তাহলে? "
"জ্বি স্যার। "
"দাড়িয়ে আছো কেনো?? বসো। "
"জ্বি স্যার। "
তারা দুজন সোফাতে বসলো। তাদের সামনের সোফায় তানিম স্যার। আকিব বললো,
"আরো আগেই আসতে চেয়েছিলাম স্যার। কিন্তু বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। সাবিহার রেজাল্টের খবরটাও আপনাকে জানানোর ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে জানানো হয়নি। "
"আচ্ছা,সমস্যা নেই। রেজাল্ট আমি জানি। "
"স্যার, আমরা আপনার সাথে কিছু ব্যপার নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলাম "
"আমি জানি তোমরা কি বলতে চাও। সে ব্যপারে পরে আলোচনা করবো। তোমাদের জন্য চা বানানো হয়েছে। এই নাও। "
"স্যার, আপনি কি জানতেন যে আমরা আজ আসবো? "
"হ্যাঁ "
"স্যার,আপনি সাবিহাকে পরিক্ষার আগে কখনো দেখেছেন? "
"না। পরিক্ষার দিনই প্রথম দেখলাম। "
"তাহলে স্যার আপনি আমার বাসায় প্রথম যেদিন গিয়েছিলেন, সেদিন সাবিহার কথা আমাকে বোঝালেন কেনো? সাবিহাকে বিয়ে করার পরামর্শ আপনিই আমাকে দেন। অথচ আপনি সাবিহাকে চিনতেননা আবার আমাকেও চিনতেন না। তাহলে স্যার আপনি এটা করেছিলেন কেনো? "
"সাবিহার সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয়। সে ব্যপারে তুমি নিশ্চয়ই জানো। সাবিহার কাছ থেকেই আমি তোমার কথা জানতে পারি। "
তখন সাবিহা বললো,
"কিন্তু স্যার, আপনাকে তো আমি আকিবের নামটা বলিনি। তাছাড়া আপনি আমাকে যেরকম স্বপ্নের কথা বলেছিলেন, পরিক্ষার দিন ঠিক সেরকমই সবটা হল। এটা কিভাবে ঘটতে পারে? "
"সাবিহা। সব কিছুকে লজিক দিয়ে বিচার করা যায়না। লজিকের বাইরেও অনেক কিছু ঘটতে পারে।"
"কিন্তু স্যার আমার মনে হচ্ছে। আপনি রহস্যটা জানেন। আমাদেরকেও বলুননা স্যার, প্লিজ... "
"আচ্ছা বলবো। আপাতত আমার বেডরুমে টেবিলের ওপর কিছু ডায়রি আছে সেখান থেকে আমার পছন্দের ডায়েরিটা নিয়ে আসো। "
আকিব অবাক হয়ে দেখলো যে সাবিহা উঠে চলে গেলো পাশের একটা রুমে অথচ ও জানতে চাইলোনা যে বেডরুমটা কোথায়। সাবিহা এমনভাবে গেলো যে দেখে মনে হচ্ছে এটা তার নিজের বাড়ি, সবকিছুই যেনো তার পরিচিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবিহা ফিরে আসলো হাতে লাল রংয়ের কভারের একটা ডায়েরি। ডায়েরিটা সাবিহা চিনলো কিভাবে? নাহ কোনো কিছুই হিসাবে মিলছেনা। তানিম স্যার, সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
"সাবিহা, আমার হাতে এই ডায়েরিটা দেখছো? "
"জ্বি স্যার লাল কালারের ডায়েরি। "
"তুমি জানো এই ডায়েরিটা তুমি আমাকে এনে দিয়েছো। "
"মানে? "
"তুমি আমার বেডরুমে যেয়ে টেবিলের ওপর থেকে এই ডায়েরিটা নিয়ে এসেছো। "
"স্যার কি বলছেন এসব? আপনার বেডরুম কোথায় সেটা আমি বলবো কিভাবে? "
"তুমি আকিবের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখো। "
সাবিহা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকালো। আর আকিব যেনো কোনো কিছুই মাথায় ঢোকাতে পারছেনা। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সাবিহার দিকে তাকিয়ে একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
"হ্যাঁ, সাবিহা উনি যা বলছেন সেটা সঠিক। আমি নিজে দেখেছি যে তুমি এই ডায়েরিটা পাশের ঘর থেকে নিয়ে এসেছো। "
"কিন্তু আমি বললাম তো আমি ওনার বেডরুম চিনিনা। তাহলে ওনার বেডরুমে গেলাম কিভাবে। "
"সাবিহা এটা ঘটেছে। তোমাকে মানতেই হবে। "
তানিম বলে উঠলো,
"কি সাবিহা এবার বিশ্বাস করছো? "
"কিন্তু স্যার...."
"সাবিহা চিন্তিত হওয়ার কারন নেই। আমি সব বুঝিয়ে বলবো। "
তানিম, আকিবকে বললো,
"আকিব,তোমার পাশের ছোট টেবিলটার ওপরে কাগজ কলম রাখা আছে ওটা নিয়ে লেখা শুরু করো। "
সাবিহা দেখলো আকিব মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাগজটা নিয়ে লিখতে শুরু করলো। কি লিখতে হবে সেটা তানিম ওকে বলেনি কিন্তু তারপরও ও লিখে চলেছে। কিছুক্ষণ পর কাগজটা সাবিহার দিকে বাড়ালো। সাবিহা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো ইংরেজিতে কিছু লাইন লেখা। কি হচ্ছে এসব কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। তানিম বলে উঠলো,
"আকিব "
"জ্বি স্যার "
"সাবিহার হাত থেকে কাগজটা নাও। "
"স্যার এখানে ইংরেজিতে কিছু লাইন লেখা "
"আকিব লাইনগুলো তুমি লিখেছো। "
"কি বলছেন স্যার? কাগজ কলম তো সাবিহার কাছেই ছিলো। আমি লিখলাম কখন? "
"হাতের লেখাটা তোমার না? "
"স্যার, হাতের লেখাটা আমার কিন্তু আমিতো এটা লিখিনি। "
"সাবিহা তোমাকে লিখতে দেখেছে। ওর কাছে জিজ্ঞাসা করো। "
সাবিহা কিছুটা লাফিয়ে উঠে বললো,
"স্যার,আমি নিশ্চিত এই ঘটনার সাথে আপনার স্বপ্নের ঘটনার সম্পর্ক আছে। প্লিজ বলুন। "
"হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো। আমি সব বলবো, সাবিহা এই বইটা নিয়ে, প্রথম পৃষ্ঠার সাথে আকিবের হাতের ওই কাগজের লেখা মিলিয়ে দেখো। "
সাবিহা বইটা হাতে নিলো। এই বইটা এতক্ষণ তানিম স্যারের হাতেই ছিলো। বইটা ইংরেজিতে লেখা, নাম 'Perspectives of clinical parapsychology.' বইটার প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা 'As long as people have reported paranormal experience there must have.....' সাবিহা আর আকিব অবাক হয়ে দেখলো কাগজের পৃষ্ঠাটাতেও ঠিক এই কথা গুলোই লেখা। অথচ আকিব এই বইটার নাম পর্যন্ত কখনো শোনেনি। তানিম বললো,
"আকিব আমি বলেছিতো আমি তোমাদের সব বলবো। সাবিহা এই ডায়েরিটা নাও এখানে তোমার কথা লেখা আছে এটা পড়ো। "
তানিম ২১-০২-১৮ তারিখটা বের করে দিলো। সাবিহা পড়তে শুরু করলো,
"আজ আন্ট এর সাথে মেসেজিং হয়েছিলো। আন্টকে কিছু কথা বলা হয়নি। সে কথা গুলোই এখানে লিখছি। আন্ট আপনি নিজেকে কিছুটা চালাক ভেবেছিলেন........."
ডায়েরিটা শেষ করা মাত্রই তানিম বললো,
"সাবিহা, তোমার সাথে শেষ যেদিন ফেসবুকে কথা হয়েছিলো সেদিন রাতেই এগুলো লেখা। সাবিহা তুমি ভাবছো লেখাটা অনেক আগের,তাহলে ডায়েরির কভারটা এত পরিষ্কার কেনো। তোমাকে ডায়েরিটা পড়তে দেবো ভেবেছিলাম। তাই সকালেই ডায়েরির কভারটা পরিষ্কার করেছি। সাবিহা-আকিব, চলো তোমাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছি আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আসি তারপর সব বলবো। "
সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেলো। মানিককে এতক্ষণ পরে আবার দেখা গেলো। হয়তো রান্না নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। খাবার টেবিলে কবুতরের মাংস দেখে সাবিহা প্রায় লাফিয়ে উঠে বললো,
"স্যার,কবুতরের মাংস আমার সব থেকে প্রিয় খাবার।"
"আমি সেটা জানি। "
সাবিহা-আকিব অবাক হয়ে দেখলো তানিম,মানিককে চেয়ারে বসিয়ে নিজে মানিকের প্লেটে খাবার তুলে দিলো। অন্যরা যেরকম খেলো,মানিকও ঠিক সেভাবেই খেলো। তার প্লেটেও কোনো কিছু বাদ পড়েনি। বর্তমানে কাজের ছেলের প্রতি এরকম খেয়াল রাখার মত মানুষ খুব কম। খাওয়াদাওয়া শেষ করে হালকা রেস্ট নিলো সবাই। তারপর আবার শুরু হলো আলোচনা। ধীরে ধীরে সব বলতে লাগলো তানিম,
"তোমরা আমার আচরণ দেখে খুব অবাক হচ্ছো তাইনা? "
"হ্যাঁ,স্যার "
"আমিও অবাক হয়েছিলাম যখন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমরা কেও আমার মতো না। তোমরা প্যারাসাইকোলজি সম্পর্কে জানো? "
"জ্বি স্যার। জানি। "
"প্যারাসাইকোলজির মধ্যে যতগুলো ক্ষমতার কথা বলা হয়াছে তার প্রায় সব ক্ষমতাই আমার আছে। 'এবনরমালিটি ডিসঅর্ডার,টেলিপ্যাথি,প্রিকোগনিশন,মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার,এক্সিটেন্স অব এন্জেইল,প্যারানরমাল ইনসিডেন্ট,অতি-প্রাকৃত ক্ষমতা ,ন্যাচারালিস্টিক এ্যাবিলিটি (অটোসাজেশন),ইএসপি (Extra Sensory Perception) বা অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি,ফ্যান্টাসি অব সাবকনাস,সিক্সথ সেন্স,মেন্টাল ইন্টারফেস কানেক্টিভিটি,মাইন্ড রিডিং' প্রত্যেকটা ক্ষমতা আমার আছে। "
"স্যার সত্যিই এই সব ক্ষমতা আপনার আছে?"
"তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই আমি দিয়েছি। আমি প্যারাসাইকোলজি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি, সেখানে এমন কাওকে পাইনি, যে আমার মত ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের ব্যপারেই বিভিন্ন স্থানে লেখা হয়েছে,কিন্তু তারা সকলেই একটা অথবা দুটো ক্ষমতার অধিকারী। অবশ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমি আমার ক্ষমতা খুব কমই ব্যবহার করি। এখন বলো তোমরা আমার কি কি ক্ষমতা দেখতে চাও? "
"স্যার মাইন্ড রিডিংটা দেখাবেন? "
"সাবিহা,তুমি ভাবছো আমি যা বলছি তার সবটাই মিথ্যা। আর ঘটনা গুলোর পেছনে একটা লৌকিক ব্যখ্যা তুমি খুজছো। আর আকিব তুমি ভাবছো,'এখান থেকে বেরোতে পারলে বাঁচি' "
সাবিহা আর আকিব দুজনেই লজ্জায় পড়ে গেলো। তারা এটাই ভাবছিলো। তানিম বললো,
"সাবিহাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা ছিলো 'প্রিকগনেশন' এই ক্ষমতা দিয়ে আমি ভবিষ্যৎ জানতে পারি। তোমরা আজ আমার এখানে আসবে সেটাও এভাবে জেনেছি। এমনকি সাবিহা কি খেতে ভালোবাসে সেটাও এভাবে জেনেছি। সাবিহা পরিক্ষার রুমে ঢোকার আগে আমার সাথে দেখা হয়। কিন্তু আমাকে চিনতে পারেনি। আমিই ওর ব্রেন থেকে কিছু সময়ের জন্য আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিলাম। কারন পরিক্ষা দেয়ার সময় আমার কথা ওর চিন্তার মধ্যে আসলে হয়তো পরিক্ষাটা খারাপ হয়ে যেতো। এটা করেছি আমার ন্যাচারালিস্টিক এ্যাবিলিটর মাধ্যমে। এটার আরেক নাম অটো সাজেশন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অটো সাজেশনের মাধ্যমে রোগীর মনোবল বাড়ানো হয়। কিন্তু আমার অটো সাজেশন অন্যেদর থেকে আলাদা। আমি অটো সাজেশনের মাধ্যমে অন্যের ব্রেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। সাবিহাকে দিয়ে ডায়েরি আনিয়েছিলাম,আকিবকে দিয়ে কাগজে লিখিয়েছিলাম এই ক্ষমতা দিয়ে। আর আমি নিজের হাতে কখনো লিখি না। আমার যত ডায়েরি আছে সবগুলোই মানিক লিখেছে। আমি অটো সাজেশনের মাধ্যমে ওকে দিয়ে লিখিয়েছি। আর বাইরে সবকিছুই এখন ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। কাগজের ব্যবহারটাও উঠে গেছে। অটো সাজেশন দিতে গেলে সাধারন ক্ষেত্রে কথা বলা লাগে। আমি সেই কথাটা বলি টেলিপ্যোথির মাধ্যমে। অটো সাজেশনের ক্ষমতা দিয়ে আমি তোমাদের ব্রেনে প্যারাসাইকোলজির জ্ঞানটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। তোমরা কেউই প্যারাসাইকোলজি সম্পর্কে কিছু জানতেনা। কিন্তু এখন তোমরা সব জানো। পাশাপাশি মাইন্ড রিডিংয়ের ব্যপারটা তো দেখালাম তোমাদের। "
এতক্ষন যে কথা গুলো আকিব আর সাবিহা শুনলো তার জন্য ওরা কেওই প্রস্তুত ছিলোনা। এখনো তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তারা কি স্বপ্ন দেখছে? নাহ কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা যে, তাদের সামনে বসে থাকা সাধারন ব্যক্তিটি এ পৃথিবীর সব চেয়ে বড় অসাধারণ ব্যক্তি। তানিম আবার বলতে শুরু করলো,
"তোমরা আমাকে অসাধারণ ভাবছো। হ্যাঁ আমি অসাধারণ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,'যাহা চাই তাহা পাইনা,আর যাহা পাই তাহা চাইনা। ' এজিনিসটাই আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে। তোমরা সবাই চাও অসাধারন হতে। কিন্তু আমি চাই সাধারন হতে। আমার ক্ষমতা আমি খুব বেশি ব্যবহার করিনা। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানে এরকম লোক এই পৃথিবীতে আছো কেবল তোমরা দুজন। অন্তত কারোর না কারোর আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যাতে করে আমার মৃত্যুর পর এ পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে যে প্রকৃতিতে রহস্যময় অনেক কিছুই রয়েছে। "
কিছুক্ষন সব কিছু নীরব ছিলো। সেই নীরবতায় ছেদ পড়লো সাবিহার কথা দিয়ে,
"স্যার,আপনি আমাদেরকে কেনো বেছে নিলেন? "
"আমি তোমাদেরকে বেছে নিয়েছি কারন তোমরাই আমার ক্ষমতাকে সব থেকে বেশি অবিশ্বাস করেছো। আমার প্রয়োজন অবিশ্বাসীদের কারন অবিশ্বাসীরা একবার যে জিনিসে বিশ্বাস আনে তারা আজীবন সে জিনিসটাকে বিশ্বাস করে যায়। দেখো, এতগুলো প্রমান দেয়ার পরেও তোমরা আমার কথা গুলো এখনো অবিশ্বাস করছো। এরকম কাওকেই আমি খুজচ্ছিলাম। "
সাবিহা আর আকিব এবার একটু বেশিই লজ্জা পেলো। সত্যিই তারা এখনো কিছু বিশ্বাস করছেনা। কেন বিশ্বাস করছেনা তার কারনটাও তারা নিজেরাই জানেনা। সাবিহা বললো,
"স্যার, হঠাৎ করে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করাটা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক কঠিন। আশা করি ধীরে ধীরে বিশ্বাসটা চলে আসবে। এই বিষয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগছেনা। স্যার,আপনি একা থাকেন,আপনার ফ্যামিলি মেমবার কেও নেই? "
"না, আমার ফ্যামিলি মেমবার বলতে আমার বাবা মা ছিলেন। তারা অনেক আগেই মারা গেছেন। "
"স্যার, কিভাবে যে কথাটা বলি... আপনি আমাদের শ্রদ্ধেয়...।"
"আরেহ, আমাকে নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো, কোনো সমস্যা নেই। তুমি কি বলতে চাচ্ছো সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। প্রত্যেকটা মানুষই স্বপ্ন দেখে একটা সুন্দর পরিবারের। একজন মনের মত জীবনসঙ্গীর। ঘর আলো করে আসবে পরিবারের নতুন সদস্য। এসব স্বপ্ন আমিও দেখতাম। কিন্তু আজ আর ওই স্বপ্ন দেখি না। সত্যি বলতে ভালোবাসা নামক বস্তুটার শক্তি অসীম। সেই শক্তি দিয়ে অনেক কিছুই জয় করা যায়। এই যেমন ধরো ভালোবাসার জোরেই আমি আমার সংসার জীবনকে জয় করেছি। "
"স্যার আপনি কাওকে ভালোবাসতেন?? "
"হ্যাঁ"
"স্যার,তার সম্পর্কে একটু বলবেন প্লিজ? "
"শুনবে? আচ্ছা শোনো তাহলে,আমি তখন কলেজে পড়ি সালটা ছিলো ২০০৮। একটা মেয়েকে দেখে পছন্দ হয় প্রচুর। যদিও মেয়েটা পছন্দ করার মত নয়,গায়ের রং কালো ছিলো। কিন্তু চেহারার মধ্যে একটা মায়াবী আকর্ষণ ছিলো। ওর সব থেকে আকর্ষণীয় অংশ ছিলো ওর চোখ। সত্যি বলতে ওর দিক একবার তাকালে আমি চোখ ফেরাতে পারতাম না। আমি বুঝতে পারতাম না কেনো আমার এরকম হত। অবশ্য বোঝার চেস্টাও করিনি। আমি জানতাম না মেয়েটি আমাকে ভালোবাসতো কিনা? জানার চেস্টাও করিনি। তবে আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম এটা কিন্তু মেয়েটা বুঝতে পারতো। একসময় ও আমাকে এড়িয়ে চলতো। খুব খারাপ লাগতো তখন। ওর চোখের দিকে তাকিয়েই আবার চোখ নামিয়ে নিতাম। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করতো। বাসায় এসে কাঁদতাম। "
"স্যার, আপনি ইচ্ছা করলেই ওনাকে আপনার বশে আনতে পারতেন। "
"না আমি চেয়েছিলাম ও যেনো আমাকে নিজে থেকে ভালোবাসে। অবশ্য ও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু কখনো স্বীকার করেনি। জানিনা কেনো স্বীকার করেনি। আমরা কলেজ লাইফটা পার করলাম। তারপর আমি পদার্থবিজ্ঞানে অর্নাস করলাম আর ও অনার্স করলো রসায়নে। আমি পদার্থবিজ্ঞান সব থেকে খারাপ পারতাম তাই আমি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করি আর, ও রসায়ন ভালো পারতো তাই ও রসায়ন নিয়ে পড়ালেখা করেছিলো। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। ওর ব্যচে সব থেকে ভালো স্টুডেন্ট ওই ছিলো। "
"স্যার, উনি এখন কোথায়? "
"আমাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। "
তানিম কথাটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো। এতটাই স্বাভাবিকভাবে যে আকিব আর সাবিহার, এই কথাটা বুঝে উঠতে অনেকটা সময় লেগে গেলো। প্রিয় মানুষের মৃত্যুর কথা কেও এভাবে বলতে পারে সেটা তারা কখনো ভাবতেও পারেনি। সাবিহা বললো,
"স্যার, আপনি উনাকে এখনো ভালোবাসেন? "
"হ্যাঁ "
"স্যার উনি কি আপনাকে ভালোবাসতেন? "
"তারিখটা ছিলো ২৭-০৬-১৫ দুপুরের দিকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। অ্যাপোলো হসপিটাল থেকে। আমাকে জানানো হয়েছিলো যে একজন রোগী মৃত্যুসজ্জায় আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ভাবলাম হয়তো আমার কোনো শিক্ষক হবেন। কারন আমার শিক্ষকরাই আমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। তাড়াতাড়ি রেডি গেলাম হসপিটালে। কাউন্টারে আমার নাম বলার সাথেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হল ১০ তলার ৩০৩ নাম্বার কেবিনে। রুমে ঢোকা মাত্রই আমি আমার জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম। বেডে শুয়ে আছে আমার সব থেকে কাছের মানুষটি। "
তানিমকে থামিয়ে দিয়ে সাবিহা বললো,
"স্যার আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার ক্ষমতা দিয়ে আগেই এগুলো জানতে পারতেন। "
"সাবিহা,আমি সাধারন মানুষের মত থাকতে চাই। আমি সহজে আমার ক্ষমতা গুলো ব্যবহার করিনা। "
"দুঃখিত স্যার, আপনাকে কথার মাঝখানে থামানোর জন্য। আপনি বলুন স্যার তারপর কি হলো? "
"রুমে ঢুকে দেখি ও ঘুমাচ্ছে। রোগে শুকিয়ে গেছিলো অনেকটা। তারপরও অসম্ভব সুন্দরী লাগছিলো ওকে। তাছাড়া হয়তো মেয়েরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সত্যিই তাদের খুব সুন্দরী দেখায়। ডাক্তার এসে বললেন যে কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে। তাই ওকে ডিস্টার্ব না করে আমি বসে থাকলাম বেডের পাশে। ডাক্তার বললেন,
"ওর ব্লাড ক্যান্সার। মনে হচ্ছে সময় ফুরিয়ে এসেছে। শেষ মুহুর্তে আপনাকে দেখতে চেয়েছে,তাই আপনাকে ডাকা হয়েছে। "
আমার মনে হচ্ছিলো আমার ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে এমন একটা মুহুর্তের সম্মুখীন আমাকে হতে হবে। সারাটা দিন বসে থাকলাম ওর পাশে। বিকালে ওর ঘুম ভাঙলো। আমি ওর পাশে যেয়ে বসলাম। মনে হল আমাকে কিছু বলতে চায়। ও কথা বলতে পারছে না। ডাক্তার বললেন ওর নার্ভগুলো ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই কথা বলতে পারছে না। আমি ওকে কথা বলার চেষ্টা করতে নিষেধ করলাম। আর ঠিক তখনই ও একটা শব্দ বলে উঠলো,'ভালোবাসি'। তারপরই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমি হতভম্ব হয়ে বসে থাকলাম। রাতে আবার জ্ঞান ফিরলো শেষ মুহুর্তে। এত তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা ছিলোনা। তারপরও জ্ঞান আসলো। আমি ঢুকে গেলাম ওর ব্রেনে। ও আমাকে বলতে চাচ্ছে,
"আমার সময় শেষ। পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগে তোমাকে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কাছে হেরে গেছি। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আক্ষেপ থেকে গেলো তোমাকে কথাটা জানাতে পারলাম না। ভেবেছিলাম আরো কিছু সময় পাবো। কিন্তু আর পেলাম না। মৃত্যু কাছে হার মেনেই নিলাম। মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে আমি চলে যাচ্ছি মৃত্যুর জগতে। দুর থেকে মনে হচ্ছে জগতটা সুন্দর। কিন্তু জানিনা কাছে গেলে সে সৌন্দর্য থাকবে কিনা। আমি চলে যাচ্ছি নতুন এক জগতে। আমি যাচ্ছি। এ জগতটা সত্যিই সুন্দর। "
তারপর আর কিছু শুনতে পেলাম না। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে। ডাক্তার এসে ওকে মৃত ঘোষণা করলেন। এই প্রথম বুঝলাম মৃত্যু জিনিসটা কতো বেদনাদায়ক। বাবা মা যখন মারা যান তখন আমি তাদের কাছে ছিলাম না। কিন্তু খুব কাছ থেকে নিজের প্রিয়তমার মৃত্যু দেখেছি। ওর পরিবারের লোকেরা পাশেই ছিলেন তারাই ওর সৎকারের ব্যবস্থা করলেন। ওর শেষ হাসিটা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। আমি কখনোই ওর হাসিটা ভুলতে পারবো না। প্যারাসাইকোলজির প্রত্যেকটা বিষয় আমি উপলব্ধি করেছি। কেবল একটা বিষয় আমার ধারনার বাইরে সেটা হল 'মৃত্যু সন্ধিক্ষণের অভিজ্ঞতা'। "
সাবিহা আর আকিব সত্যিই একটু ইমোশনাল হয়ে গেছিলো। সাবিহা অবাক হয়ে দেখলো, তানিম স্যার উনার চোখের পানি লুকাতে চাইছেন। কিন্তু এই চোখার পানি জিনিসটাই হয়তো ইচ্ছা করলেও লুকানো যায়না। সাবিহা বললো,
"সরি স্যার। আপনাকে কষ্ট দিলাম। "
"না,ইটস ওকে। "
"স্যার, আকিব আমাকে ভালোবাসে এটাও কি আপনার ক্ষমতার জোরে? "
"না সাবিহা সেরকমটা না। "
"আমি সবটা জানি স্যার,আপনি আকিবের বাসায় গেছিলেন সে ঘটনাও আমি জানি। "
"সাবিহা,আমি আকিবকে অটো সাজেশন দিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু অটো সাজেশনের মাধ্যমে আমি শুধু ওর বিবেক বোধকে একটু আলোড়িত করেছিলাম মাত্র। আর বাকিটা ও নিজেই করেছে। "
"ও... থ্যাঙ্কস স্যার। আপনি না থাকলে হয়তো আমরা কখনো এক হতে পারতাম না। "
"না... এরকমটা না। সবটাই প্রকৃতির খেলা। প্রকৃতি তোমাদেরকে মিলিত করতে চেয়েছে। আর আমি সেখানে একটা উপলক্ষ মাত্র "
"হয়তো, স্যার আপনি বলেছিলেন রাফায়েত আপনার গল্পের একটা প্রধান চরিত্র। সেই গল্পটা আমাকে পড়তে দেবেন প্লিজ?? "
"তুমি চাইছো যখন তখন দিতে পারি। আমার নিজের হাতের লেখা কেবল এই একটা জায়গাতেই আছে। তুমি চাইলে গল্পটা নিয়ে যেতে পারো। "
"থ্যাঙ্কস স্যার। "
তানিম একটা কালো কভারের পুরোনো ডায়েরি নিয়ে আসলো। দেখেই বোঝাযায় অনেক পুরোনো। তানিম সাবিহাকে বললো,
"এই ডায়েরিতে কেবল একটা গল্পই আছে। আর পুরো গল্পটাই আমার নিজের হাতে লেখা। "
আকিব বললো,
"স্যার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আজ তাহলে আসি। "
তানিম আপত্তি করলো না। আকিব সাবিহা চলে গেলো।
অনেকদিন হল আকিব আর সাবিহা, তানিম স্যারের সাথে যোগাযোগ করেনি। কেনো করেনি তারপেছনেও কোনো কারন নেই। হয়তো তানিম স্যার ওদের ব্রেনে কিছু একটা ঘটিয়েছেন, যার কারনে তারা তানিম স্যারের সাথে যোগাযোগ করেনি।
সাবিহা আর আকিব দুজনেই চাকরি করে। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা আজকেও ছিলো। কিন্তু আজ হয়তো তারা কেও অফিসে যেতে পারবে না। কারন সকালে বাড়ির দারওয়ান এসে বললো একটা লোক এসে এই চিঠিটা দিয়ে গেছে। আর বলেছে আকিব সাহেবকে চিঠিটা দিতে। চিঠি শব্দটার নামটাই আকিব আর সাবিহা ভুলে গেছিলো। এখন ২০২১ সাল। এই সময়ে কেও চিঠি দিতে পারে এটা কল্পনার বাইরে। সাবিহা আর আকিব দুজনই কৌতুহল প্রদর্শন করছে চিঠিটার ব্যপারে। সাদা খামের ভেতরে রয়েছে চিঠিটা। নীল একটা কাগজের ওপর চিঠিটা লেখা। কাগজটা হয়তো কোনো দামি ডায়েরি থেকে নেয়া। চিঠির উপরে মোটা কালি করে লেখা 'নীল চিরকুট' চিঠিটা প্রথমে আকিব পড়লো। তারপর সাবিহার কাছে দিলো। সাবিহা পড়া শুরু করলো,
" নীল চিরকুট
প্রিয় আকিব -সাবিহা,
আশাকরি তোমরা ভালো আছো। আমার কথা হয়তো ভুলেই গেছো। আমি তানিম মাহমুদ। বর্তমানে কেও চিঠি লেখেনা। কিন্তু আমি লিখেছি। জানিনা কেনো লিখেছি। সব কাজের কারন থাকা ঠিকনা। যা হোক মুল কথাটা বলেই ফেলি, তোমাদের জন্য দুটো সংবাদ আছে। আগে শুভ সংবাদটা বলি,'আমি স্বপ্নের মাধ্যমে জেনেছি,'তোমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসছে। ' প্রায় মাস খানেক আগে স্বপ্নটা দেখেছি। এতদিন জানাতে পারিনি একটা সমস্যায় পড়েছিলাম। "
এটুকু পড়েই সাবিহা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো। আকিব ওকে শান্ত করে বললো,"সাবিহা আগে পুরোটা পড়। " আকিবকে কোনো একটা কারনে বিমর্ষ দেখাচ্ছে। কারনটা হয়তো চিঠিতেই লুকিয়ে আছে। সাবিহা আবার পড়তে শুরু করলো,
"আশা করি তোমাদের নতুন জীবনটা আনন্দ আর সুখে ভরে উঠবে। এবার দ্বিতীয় সংবাদটা বলছি। জানিনা এটা তোমাদের কাছে সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ। আমি এখন হসপিটালে আছি। ঢাকা পিজিতে । মরতে মরতে বেঁচে গেছি। যদি একবার তোমরা দুজন আসতে তাহলে খুশি হোতাম।
- ইতি তানিম মাহমুদ। "
সাবিহা যেনো একটা ধাক্কা খেলো। দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো দুজন পিজি হসপিটালে। হাসপাতালে ঢুকে কাউন্টারে নাম বলার সাথেই একজন নার্স এসে তাদের নিয়ে গেলো। স্যারের রুমের দরজা বন্ধ। বাইরে অনেক ছেলেমেয়ে। মনে হয় স্যারের স্টুডেন্ট। ওরা দুজন ভেতরে ঢুকেই দেখলো স্যার শুয়ে আছেন বেডে। পাশে মানিক বসে আছে। ওরা দুজন স্যারের পাশে যেয়ে বসলো। সাবিহাকে স্যার বললেন,
"তোমরা এসেছো আমি অনেক খুশি হয়েছি "
"স্যার আপনি কথা বলবেননা। আপনি অসুস্থ। "
"সমস্যা নাই। আমি সুস্থ হয়েছি প্রায় দশদিন। আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়নি। হসপিটালের মালিকের মেয়ে আমার ছাত্রী। তার কড়া হুকুমের মধ্যে আমি আছি। "
"স্যার এখন আপনি পুরোপুরি সুস্থ? "
"হ্যাঁ সম্পূর্ণ। "
"স্যার আপনার কি হয়েছিলো সেটাই তো জানিনা। "
"ব্রেন স্ট্রোক করেছিলাম। দুইটা স্ট্রোক একসাথে। ব্রেনের আলাদা আলাদা দুটো শিরা ছিড়ে গেছিলো একইসাথে। ডাক্তাররা আমার মত রোগী আগে পাননি। তারা প্রথমে ভেবেছিলো যে আমি বাঁচবো না। যখন বেঁচে যাই তখন ডাক্তাররা ভাবেন আমি প্যারালাইজড হয়ে যাবো। আমি প্যারালাইজড হলাম না তখন ডাক্তাররা ভাবেন আমি মানসিক ভারসাম্য হারাবো। কিন্তু বিষ্ময়কর ভাবে আমার কিছুই হলনা। ডাক্তাররা বলতে লাগলেন সবটাই হয়তো মানিকের জন্য। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন মানিক নাকি দিনরাত আমার জন্য প্রার্থনা করেছে। আমার সুস্থতা কামনা করে রোজা পর্যন্ত রেখেছে। যাহোক, সাবিহা তোমাদেরকে এখানে আসতে বলেছি অন্য একটা কারনে। "
"কি কারন স্যার? "
"সেটা আমি বলবোনা। তুমিই অনুমান করো। লজিকদিয়ে ঠিক জায়গা মত যেতে পারবে। "
"নাহ স্যার, আমি কিছুই ধরতে পারছি না। "
"আচ্ছা আমি ক্লু দিচ্ছি। নীলচিরকুটের মধ্যেই লাজিকটা রয়েছে। "
কিছুক্ষণ ভাবার পর সাবিহা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বললো,
"স্যার আমি লজিকটা ধরে ফেলেছি। "
কথাটা বলার পরই সাবিহার মুখটা পাংশুবর্ন ধারন করলো। সাবিহা দুর্বল গলায় বললো,
"স্যার,আমি যেটা ভাবছি। সেটা কি সঠিক? "
"সাবিহা, তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি লজিকটা ধরে ফেলেছো। "
"স্যার, আপনি বলেছিলেন আপনি নিজের হাতে কখনো কিছু লেখেন না। শুধু একটা গল্প লিখেছিলেন। সেটা আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু স্যার আপনি নীলচিরকুট টা নিজের হাতে লিখেছেন। আমি নিশ্চিত। আপনার লেখা গল্পটা আমি অসংখ্যবার পড়েছি। আপনার হাতের লেখা আমি চিনি। আপনি নিজের হাতে চিঠিটা লিখেছেন এর অর্থ এটাই দাড়ায় যে,'আপনি আপনার সমস্ত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। ' "
"তুমি ঠিকই ধরেছো সাবিহা। আমি আমার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। তবে আমি পূর্নতা পেয়েছি। তোমাদেরকে বলেছিলাম যে প্যারাসাইকোলজির একটা বিষয় আমি কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি,সেটা ছিলো 'মৃত্যু সন্ধিক্ষণের অভিজ্ঞতা'। আর আমি এই অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি। "
"স্যার, এই অভিজ্ঞতা আপনার হয়েছে? "
"হ্যাঁ "
"স্যার, মৃত্যুর পূর্বের সময়টা কেমন? "
"সেটা বলবো না। কিছু জিনিস অজানা থাকাও ভালো। "
"আচ্ছা, ঠিক আছে স্যার। "
"সব থেকে অবাক করা বিষয় কি জানো? মানিককে আমি এত দিন আমার ক্ষমতা দিয়ে আমার কাছে আটকে রেখেছিলাম। এখন আামার ক্ষমতা নেই অথচ মানিক এখনো আমার কাছে আছে। মানিকের বাবা মারা গেছে বছরখানেক আর ওর মা মারা গেছে মাস ছয়েক। ভাবছি ছেলেটাকে আমার সব কিছু দিয়ে যাবো। "
"স্যার, আপনি সুস্থ হয়েছেন এতেই আমরা খুশি। আজ তাহলে আসি স্যার? "
"আচ্ছা, যাও তাহলে তোমরা। ভালো থেকো। আর ভালোভাবে শুরু করো তোমাদের নতুন জীবন। তোমাদের পরিবারে নতুন অথিতি আসছে। খুব শীঘ্রই সংবাদটা পেয়ে যাবে। "
সাবিহা আর আকিব দুজনেই চলে আসলো। ওরা আজ অনেক খুশি। আগমনটা সবসময় হয়তো আনন্দেরই হয়।
.
মানিককে নিয়ে তানিম চলে যায়। কোথায় যায় সেটা কেও জানেনা। সাবিহা -আকিব, তানিমকে অনেক খুজেছে কিন্তু কোথায়ও পায়নি।
.
২৯-০৬-২০২৩
সাবিহা মেয়েকে নিয়ে খেলছে। সব সময় সে মেয়ের কাছেই থাকে। মেয়ের জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। আকিব তৈরি হচ্ছে অফিসে যাবে। মেয়ের নাম রেখেছে 'আদিবা'। নামটা সাবিহা রেখেছে। তানিম স্যারের গল্প থেকে নামটা পেয়েছে। তানিম স্যারের গল্পের নায়িকা ছিলো আদিবা। হঠাৎ বাড়ির দারওয়ান এসে আকিবকে বলে যে একটা ছেলে এসে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। অনেকদিন পর আবার চিঠির ব্যপার। সাবিহা আর আকিব দুজনই অবাক। এটা সেই 'নীল চিরকুট'। সাদা খামের ভেতর নীল চিঠি। সাবিহা পড়তে শুরু করলো,
" নীল চিরকুট
আমি চিঠি লিখতে জানিনা। স্যার আমাকে কখনো শেখাননি। আপনাদের বাড়িটা খুজে পেতে হয়তো দেরি হবে। তাই চিঠিটা যথা সময়ে পৌছাতে নাও পারে। জানিনা কিভাবে কথাটা লিখবো। তারপরও লিখছি। স্যার গত ২৭-০৬-২০২৩ তারিখে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মৃত্যুর দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। স্যারের শেষ ইচ্ছা ছিলো নীল চিরকুটের মাধ্যমে আপনাদেরকে তার মৃত্যুর খবর যেনো জানানো হয়। আমার একটা কাজ শেষ। আরো কিছু কাজ আছে সে গুলো স্যার আমার দ্বায়িত্বে দিয়ে গেছেন।
-ইতি রাফায়েত রহমান খান ( স্যার আমাকে এই নামটা দিয়ে গেছেন) "
সাবিহা বুঝতে পেরেছে চিঠিটা মানিকের লেখা। কিছুটা মন খারাপ হল তানিম স্যারের জন্য।
.
২০৪১ সাল
সাবিহার বয়স হয়েছে। আকিবও চাকরী থেকে অবসর নিয়েছে। দেখতে দেখতে আদিবা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। তার প্রমাণ পেল যখন আদিবা নিজেই তার পছন্দের কথা তার বাবা মা কে জানালো। ছেলেটার নাম রাফায়েত। আকিব ছেলেটাকে বাড়িতে আনতে বলেছিলো। কথা বলতে বলতে একসময় জানা গেলো ছেলেটার আসল নাম মানিক। তখন সব কিছুই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত স্পষ্ট হয়ে উঠলো সাবিহা আর আকিবের কাছে।
.
মহা সমারহে বিয়ে হল আদিবা আর রাফায়েতের। তানিম স্যারের গল্পটাও যেনো সত্যি হল। গল্পটার নায়ক ছিলো রাফায়েত, নায়িকা ছিলো আদিবা। গল্পটা পূর্ণতা পেলো।
আদিবা -রাফায়েতের সংসার জীবনটাও চলছিলো সুন্দর থেকে সুন্দরতর ভাবে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়েছে রাফায়েত । আর আদিবা চাকরি নিয়েছে একটা বেসরকারি স্কুলে।
.
১৩-০৪-২০৪৩
নীল চিরকুটের দেখা মিললো আবার। সকালে বাড়ির দারওয়ান এসে দিয়ে গেছে চিঠিটা। চিঠি জিনিসটা কি সেটা আদিবা জানেনা। রাফায়েত চিঠি সম্পর্কে জানে। কিন্তু জাদুঘরের বাইরে চিঠি দেখবে এটা সে আশাই করেনি। চিঠিটার প্রেরক কে সেটাও জানা যায়নি। চিঠিতে লেখা,
"নীল চিরকুট
তোমাদের ঘর আলো করে আসছে পরিবারের নতুন সদস্য। "
.
১৭-১২-২০৪৪
আদিবার কোলে রয়েছে ফুটফুটে একটি মেয়ে। মেয়েটার নাম রেখেছে 'আসফিয়া'। আসফিয়া নামটা রেখেছে আদিবা। যদিও এটা কিছুটা সেকেলে নাম তারপরও এটাই তার পছন্দের ছিলো।
.
আদিবা বা রাফায়েত যেটা জানেনা সেটা হল তানিম স্যারের প্রিয়তমার নাম ছিলো 'আসফিয়া', সে ব্লাড ক্যান্সারে মারা যায়। তার ব্যপারে জানতো সাবিহা আর আকিব, কিন্তু নামটা জানতো কেবল তানিম স্যার। নামটা তিনি কখনো কাওকেই বলেননি।
সম্পূর্ণ খেয়ালী করে যে নামটা রাখা হয়েছে সে নামের পেছনেও এত বড় একটা রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা কেও জানেই না। সবটাই হয়তো প্রকৃতির খেলা। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে, সে নিজেও রহস্যময়। কিন্তু সব রহস্যের সমাধান হোক সেটা প্রকৃতি চায়না। সেজন্যই হয়তো শেষবার নীল চিরকুট কে পাঠিয়েছিলো বা আদিবা তার মেয়ের নাম রাখার সময় 'আসফিয়া' নামটা কেনো বেছে নিয়েছিলো তার সমাধান হয়নি। সব রহস্যের সমাধান হওয়া ঠিকনা, কিছু রহস্য অসমাধিত থাকাই ভালো ।
..
.
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২
অতৃপ্ত কল্পনার মানব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। আর তানিম স্যার আমাদের সবার মধ্যেই আছেন। কারন উপরে যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা গুলোর বর্ণনা করা হয়েছে তার অনেক গুলোই সাধারন মানুষের আছে। তবে সাধারন মানুষের মধ্যে এই ক্ষমতার পরিমান অনেক কম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৬
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: গল্পটা সুন্দর। তবে এতো বড় লেখা এক বসাতে পড়তে গেলে সামান্য চাপ পড়ে। দুই পর্বে প্রকাশ করলে বোধ হয় আরও ভালো হতো। শুভেচ্ছা রইল। এরকম স্যার সবার স্বপ্নে আসুক।