নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালপুরুষ

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

কালপুরুষ

জন্মঃ নারিন্দা, ঢাকা। পেশাঃ নগর গবেষক। শখঃ আড্ডা, বিতর্ক, লেখালেখি, ফটোগ্রাফী, রান্না, বই পড়া, গান শোনা ও ছবি আঁকা। এক সময় রাশিফল ও হস্তরেখা বিদ্যা চর্চায় যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। বিশ্বাসঃ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে আমার ভীষণ ভয়।

কালপুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাউয়ের প্রতি ভালবাসা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৩০

লাউয়ের প্রতি ভালবাসা



লাউ আমাকে কখনো বৈরাগী করেনি। বরং অনেকদিন বউয়ের রাগের কারণ হয়েছি এই লিকলিকে কিংবা তন্বী লাউয়ের কারণে। বউ কী করে যেন টের পেয়েছিল আমার লাউ প্রীতি প্রবল। তাই বাজারে গেলেই একটা লাউ কেনার জন্য মন ব্যকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু কিনতে ভয় পাই। আমার কেনা লাউ কখনো কচি হয়না। যেগুলো কিনি সচারচর একটু পাকাপোক্ত গোছের। রান্না করার পর সেই লাউয়ের বিগলিত হাসি থাকেনা- বরং কটমট করে তাকিয়ে থাকে। কোন আদরেই গলতে চায়না। রান্নার পরে লাউয়ের বিচিগুলো এতিম পোলাপানের মতো সকরুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার কেন জানি এমন পরিস্থিতিতে ভীষণ লজ্জা করে, মায়া হয় বউয়ের জন্য। আহা! বেচারা কষ্ট করে রান্না করলো অথচ সতীনের মন গলাতে পারলো না। লাউ আমার বউয়ের সতীন।



আমার বউয়ের সাথে লাউয়ের সেই সতীনসুলভ সম্পর্ক আজও অব্যাহত। চিরকাল বুড়ী গোছের লাউয়ের প্রতি আমার প্রগাঢ় প্রেম দেখে বউ শুধু রাগে ফুসতে থাকে। আমি যখন গদগদ চিত্তে, ঘর্মাক্ত শরীরে এক হাতে বাজারের ব্যাগ আরেক হাতে লাউ ঝুলিয়ে বাজার থেকে ফিরি- বউ তখন আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। কপাল বেয়ে ঘাম চুইয়ে পড়ে, ভাবি- বউ হয়তো আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। বলবে বাজার করা সত্যিই ঝকমারি কাজ। এই কাজটা করে তুমি আমাকে উদ্ধার করছো। কিন্তু তা নয়। সে আমার হাতের লাউয়ের দিকে তাকিয়ে বলবে- আজ দুপুরটা আমার গেল মনে হয়। কারণ লাউ গলতে কতক্ষণ লাগবে সেই ভয়েই সে অস্থির। অন্য রান্না সে কখন সাড়বে মাথায় সেই চিন্তা। আমি অভয় দিয়ে বলি- আজকের লাউটা দারুন পেয়েছি। একদম কচি। লাউ বিক্রেতা নিজের হাতে বেছে দিল। বউ প্রত্যুত্তরে বলে- তাহলেই হয়েছে। ঠিক ঐ বেটা তোমার ঘাড়ে একটা বুড়ী লাউ গছিয়েছে। এমন কথা শুনলে কার না আঁতে ঘা লাগে! তবুও চুপ থাকি। উত্তরটা রান্নার পর জমবে ভাল, সেই আশাতেই থাকি। হাতের লাউটা মেঝেতে নামিয়ে বলি- কোন কিছু যাচাই না করে সেটা সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক না। বউ বলে- সেতো আমি আজ নতুন দেখলাম না। এই বলেই চুপ। আমি রান্নার প্রহর গুনি।



বউ আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দেয় লাউ কেনার আগে একটা চিমটি মেরে দেখে নেবে- কচি কি বুড়ী! আমি উত্তরে বলি, লাউয়ের এমন নাজুক শরীরে কেউ কী চিমটি মারে? আমি তো বিয়ের আগে তোমাকে চিমটি মেরে দেখিনি, তুমি কচি না বুড়ী! তাহলে লাউয়ের দোষটা কোথায়? তাছাড়া তোমার মতো লম্বা শানানো নখতো আমার নেই- কাউকে খোঁচা মারার মতো। আর খোঁচা দিলেই কী সব বোঝা যায়- ভেতরটা কেমন! কথা আর না বাড়িয়ে চুপ থাকাই ভাল মনে করি। কারণ এরপর কোন কথা বলে কোন বিপদের মধ্যে পড়ি ঠিক নেই। দু’বেলা চারটে রান্না করে দিচ্ছে, খাচ্ছি দাচ্ছি- এইতো বেশ! আর কী! লাউ কচি হোক আর বুড়ী হোক, সংসারে কোন ঝামালা না পাকালেই হলো।



অগত্যা খেতে বসে লাউয়ের সেই চিরন্তন দশা দেখে নিজেই লজ্জিত। লাউয়ের বদমাইশ বিচিগুলো বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছে। দেখেই মেজাজ গরম। লাউয়ের টুকরো গুলোকে দিলাম আচ্ছামতো ডলা। ডলা খেয়ে টুকরোগুলো গললো বটে- তবে আদরে নয় রাগে। আমি মনে মনে পণ করলাম এবার থেকে বিক্রেতার ধরিয়ে দেয়া যেনতেন কোন লাউ দেখে আর ভুলবোনা। লাউয়ের শরীর দেখতে যতই তন্বী তরুনীর মতো কোমল আর নরম হোকনা কেন, একটা চিমটি আমি দেবোই।



লাউয়ের গায়ে চিমটি কাটার বাসনা নিয়ে নখ বড় করা শুরু করেছি। লাউ বিক্রেতার চটকদার কথায় আর ভুলছি না। বিক্রেতার পছন্দের লাউ আর ঘরে তুলছি না। এবার পছন্দ হবে আমার। চিমটি হবে লাউ যাচাইয়ের মাপকাঠি। নখ যখন রাখছি তখন লাউয়ের একটু কষ্ট হলেও খোঁচা আমাকে মারতেই হবে- নইলে লাউ খাওয়া ছাড়তে হবে। আর লাউ খাওয়া যেহেতু ছাড়তে পারবো আর বউ ছাড়াও যেহেতু চলতে পারবো না- তখন লাউয়ের গায়ে চিমটি মারা ছাড়া আর উপায় কী! আমি জানি, লাউ আমার চিমটি নীরবে সইবে কিন্তু সতীনের অত্যাচারে সে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হবে। নিজেকে বিলিয়ে সে আমাকে তুষ্ট করে যাবে চিরকাল। লাউ, তোমার প্রতি আমার অগাধ ও অকৃত্রিম ভালবাসা। ভালবাসা দিবসে আমি তোমার কথাই স্মরণ করি।

মন্তব্য ২৯ টি রেটিং +১১/-১

মন্তব্য (২৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৫২

ত্রিভুজ বলেছেন:
লাউ রচনা মচৎকার হইছে... ১০/১০ :)
+

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০০

সত্যদা বলেছেন: বেশ বেশ ...

আপনি বৈরাগী না হলেও বেশ মনে করিয়ে দিলেন গানখানা

আমার মাটির গাছে লাউ ধইরাছে....
আমার মাটির গাছে লাউ ধইরাছে....
লাউ যে বড় সোহাগী...

লাউয়ের পিছে লাগছে বৈরাগী
আমার লাউয়ের পিছে লাগছে বৈরাগী...

চিমটি দেয়ার গল্পটাও চাই কিন্তু..

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:১৭

মাহবুব সুমন বলেছেন: আমিও লাউ ভালোবাসি

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৩

মাতব্বর বলেছেন: সব/সব

৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৪

প্রচেত্য বলেছেন: রম্য লাউ বিষয়ক পোষ্টটি সত্যি উপভোগ্য

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:২৪

প্রতিশোধ বলেছেন:
গাছ থিকা পাড়া লাউয়ের বদলে দুপেয়ে লাউ কে চিমনি মেরে বসবেন না যেন।

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:৫৪

বিহঙ্গ বলেছেন: হাঃহাঃহাঃ

৮| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:১২

নিবেদীতা বলেছেন: হা হা হা..
মজা পাইছি..

৯| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:১৯

ভাঙা চাঁদ বলেছেন: হা হা হা হা :-)

১০| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৩৬

বিবর্তনবাদী বলেছেন: মজা পাইলাম বহুত।

এইবার লাউ ক্রয়ের ব্যাপারে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ টিপস:

লাউ দুই প্রকার। এক প্রকার লাউ গাছে ঝুলে, অন্য প্রকার লাউ মাটিতে শায়িত থাকে। খাদ্য হিসেবে উৎকৃষ্ট হইল গাছে ঝুলা লাউ। অতএব, লাউ ক্রয়ের সময় লাউয়ের গায়ে দাগ আছে কি না (মাটিতে থাকবার ফলে) চেক করিয়া লইবেন।

১১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৩৯

নাদান বলেছেন: মজা পাইলাম অনেক।

১২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৫৩

মৈথুনানন্দ বলেছেন: আগা-ডগা দুটোই কি খেলেন নাকি?

১৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৪

ফারহান দাউদ বলেছেন: "আমি তো বিয়ের আগে তোমাকে চিমটি মেরে দেখিনি, তুমি কচি না বুড়ী! তাহলে লাউয়ের দোষটা কোথায়?"
হাহাহাহাহা,হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পরে গেছি।:)

১৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩২

মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: লাউয়ের গায়ে চিমটি কাটার বাসনা নিয়ে নখ বড় করা শুরু করেছি। লাউ বিক্রেতার চটকদার কথায় আর ভুলছি না। বিক্রেতার পছন্দের লাউ আর ঘরে তুলছি না....................


ফাট্টাফাট্টি ...................

সন্ধ্যায় দুইটা বুকডন দিতে গিয়ে পেটে ব্যাথা , এমন একটা লেখা আসবে জানলে বুকডন স্থগিত করলাম , এখন হাসতে কষ্ট হচ্ছে

১৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:০৬

ফারজানা মাহবুবা বলেছেন: ধন্য লাউ!! ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে তাকে স্মরন করার মত মানুষও আছে!
ভাবী লাউকে সতীন ভাবতেই পারেন তাতে! :)

১৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:১২

নিলু বলেছেন: দাদা কেমন আছেন?

১৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৩৮

কালপুরুষ বলেছেন: নিলু, ভাল আছি দিদিমনি। তুমি কেমন আছো? পিকনিকের কথা মনে আছে তো!

১৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:০৭

আহমেদ শারফুদ্দীন বলেছেন:
আইচ্ছা কালাবাই ঘটনা তাইলে হেই। আপনে তাইলে এখনঅ কচি আর বুইরা চিনেননা।

বেলেন্টাইন ডে কেমন চলছে। কদুর মত ত না অবশ্যই !

১৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৩

কাল্‌বেলা বলেছেন:
হা হা......!!!
কালপুরুষ-দা,
ব্যাপক মজা পাইসি......

২০| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:৪৪

মুহিব বলেছেন: ভাবীর জন্য সহানুভূতি জানাই

২১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৪২

আবু সালেহ বলেছেন: এক লাউ নিয়া এত কিছু!!!!!!!!!!!!!!


মজা পাইসি কালপুরুষদা...........মজা পাইসি...

২২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:০৩

কণা বলেছেন: হি হি হি...... হাসতে হাসতে পড়ে গেছি... হি হি হি... :)

২৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:২২

ভাইটামিন বদি বলেছেন: জট্টিল লাউ কাহিনি.......

২৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:২২

মানবী বলেছেন: ইদানিং খাদ্যবস্তু নিয়ে বেশ লেখালেখি করছেন মনে হয় :)
ব্লগে কবি কালপুরুষে কবিতা কমে গেছে।


মজার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ কালপুরুষ।

২৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:২২

মানবী বলেছেন: *কবি কালপুরুষের কবিতা * হবে

২৬| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:০৯

সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন: যে কোন বিষয়ে এমন টানা লেখা আপনাকে দিয়ে সম্ভব........অনেক হাসলাম।
একটা কথা জানায় রাখি.।লাউকে চিমটি দিয়েন না.....।কারন লাউএর ছিলকা ভাজিও কিন্তু খেতে অনেক মজার।
অনেক শুভেচ্ছা।

২৭| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:২৬

চিকনমিয়া বলেছেন: লেকা ভালা লাগচে
পেলাচ:(

২৮| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৫০

কালপুরুষ বলেছেন: এইবার আমি চিকনা মিয়ার নেহাল এউগা লাউ কিনুম। মুনে লয় কচি হৈবো। চিমটি দেওন লাগবো না। চিমটি দিমু আর কৈ? শরীরে গুশতো থাকলে না চিমটি দিমু। চিমটি গিয়া লাগবো হাড্ডিতে।

২৯| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৫৪

কালপুরুষ বলেছেন: সুলতানা শিরীন সাজি
আমি খেয়েছি লাউয়ের ছিলকা ভাজি
আরও খেয়েছি ছিলকা দিয়ে চিংড়ি ভর্তা
বউ জানে এটাও পছন্দ করে তার কর্তা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.